বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

কিয়েভে সবচেয়ে বড় বিমান হামলা

আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, ০৬:৩৩ এএম

তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অন্যতম বড় বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এই হামলাকে রাশিয়ায় ইউক্রেনের হামলার জবাবে ‘প্রতিশোধমূলক বোমাবর্ষণ’ বলে উল্লেখ করছে মস্কো। হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলীয় ওডেসা শহর। শহরটির কর্র্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার জানায়, রুশ হামলায় একটি মাতৃসদনে অন্তত তিন জন নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, কিয়েভে গভীর রাতে বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে শহর। আকাশ জুড়ে আগুনের ঝলকানি দেখা যায়। পরে ঘন ধোঁয়ার মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। কিয়েভের ১০টি জেলার মধ্যে অন্তত সাতটিতে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে শহর কর্র্তৃপক্ষ। চার জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এটিকে যুদ্ধ শুরুর পর কিয়েভে অন্যতম ভয়াবহ হামলা বলে অভিহিত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়াকে শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

কয়েক দিন আগে রাশিয়ার কয়েকটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল ইউক্রেন। এরই জবাবে রাশিয়া এই ভয়াবহ হামলা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি আলোচনার আহ্বানের পর এবং বন্দি বিনিময়ের মধ্যেই রাশিয়া এ হামলা চালাল। এদিকে, কিয়েভের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রাশিয়ার ছোড়া ড্রোনগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারেনি। মাত্র ১০টির মতো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে। ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবিলম্বে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও ইউক্রেনের জন্য আরও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছেন। যদিও সম্প্রতি মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে দুই দফা শান্তি আলোচনা হয়েছে। তবে বাস্তব অগ্রগতি শুধু যুদ্ধ বন্দিবিনিময়ের মধ্যেই সীমিত। পূর্ব ইউক্রেনের রণাঙ্গনে রাশিয়া এখনো এগিয়ে যাচ্ছে। দুই পক্ষই যুদ্ধ বন্ধে অগ্রগতির ব্যর্থতার জন্য একে অপরকে দায়ী করছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও উভয় পক্ষকে নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর রিভনের মেয়র ওলেকসান্ডার ট্রেটিয়াক বলেছেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এক রাতে ড্রোন হামলাটি ছিল তার অঞ্চলে সবচেয়ে বড় আক্রমণ। গত সপ্তাহের শেষের দিকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ড্রোন অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। রাশিয়ান বিমানঘাঁটিতে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম সামরিক বিমান লক্ষ্য করে ইউক্রেনের ওই ড্রোন হামলা প্রতিহত করার দাবি করে মস্কো। এ ঘটনার পর থেকেই মস্কো প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সে অনুযায়ী গত রবিবার ভোর থেকেই ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে রাশিয়া বিমান হামলা চালানো শুরু করে।

ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানায়, রাশিয়া সারা দেশে ৩১৫টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে ২৭৭টি ভূপাতিত করা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়ার ছোড়া সাতটি ক্ষেপণাস্ত্রও প্রতিহত করা হয়। গত সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কিয়েভসহ অধিকাংশ অঞ্চলে বিমান হামলার সাইরেন বাজতে থাকে। সেনাবাহিনী বলছে, মঙ্গলবার ভোর ৫টা পর্যন্ত এই সতর্কতা জারি ছিল। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরই মধ্যে ইউক্রেনের এক পঞ্চমাংশ ভূখ- দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী। চলমান এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ হাজার ইউক্রেনীয় বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।

সহস্রাধিক নিহত সেনার মরদেহ ইউক্রেনে : রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে নিহত ১ হাজার ২১২ ইউক্রেনীয় সেনার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে এনেছে কিয়েভ। গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্দিবিনিময় সমন্বয় কমিটি। টেলিগ্রামে প্রকাশিত ছবিতে দেখা  গেছে, অজ্ঞাত স্থানে রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির (আইসিআরসি) সদস্যরা বেশ কয়েকটি হিমায়িত ট্রাকের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। ট্রাকগুলোতে ইউক্রেনের সামরিক মরদেহ শনাক্ত ও ফেরত আনার সংগঠন অন দ্য শিল্ড-এর চিহ্ন ছিল। গত সপ্তাহে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে মৃতদেহ বিনিময় নিয়ে সর্বশেষ যে আলোচনা হয়েছিল সেখানেই এই বড় পরিসরের সমঝোতায় পৌঁছায় উভয় পক্ষ। যদিও বাস্তবায়ন নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছিল বলে জানা গেছে।

এর আগে ২ জুন এক ব্রিফিংয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, রাশিয়া প্রায় ৬ হাজার মরদেহ ফেরত দিতে চাইলেও মাত্র ১৫ শতাংশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ফেরত আনা মরদেহগুলো এখন ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা সংস্থা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তারা দ্রুত শনাক্তকরণের কাজ করবেন বলে জানানো হয়েছে। এর আগে সোমবার ইউক্রেন ও রাশিয়া ২৫ বছরের নিচে বয়সী বন্দিদের বিনিময় করে, যা ছিল যুদ্ধ শুরু পরবর্তী প্রথম পর্যায়ের বৃহৎ বন্দিবিনিময়ের অংশ।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত