বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

জনসেবায় উৎসাহিত করেছে ইসলাম

আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ০৩:৫৭ এএম

আজ আন্তর্জাতিক জনসেবা দিবস। জনসেবা দিবস বিশ্ব জুড়ে জাতিসংঘ কর্র্তৃক পালিত একটি বিশেষ দিন, যা এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে প্রতি বছর ২৩ জুন উদযাপিত হয়। মূলত জাতিসংঘের প্রস্তাবনা ও তত্ত্বাবধানে পালিত হয় বলে এই দিবসটি জাতিসংঘ জনসেবা দিবস নামেও পরিচিত।

ইসলামে জনসেবা ও সামাজিক কল্যাণের ধারণাকে প্রধান মূল্যবোধ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে জনসেবার বিষয়টিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। একজন মুসলমানের ধর্মীয় জীবন অপূর্ণাঙ্গ থেকে যায় যদি তিনি মানবকল্যাণে অংশগ্রহণ না করেন। জনসেবা ও সমাজকল্যাণ সম্পর্কে কোরআনের এই আয়াতটি উল্লেখ করা হয়, ‘আর সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ ফেরাবে। বরং বড় সৎকাজ হলো এই যে, ইমান আনবে আল্লাহর ওপর, কেয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং সব নবী-রাসুলদের ওপর। আর সম্পদ ব্যয় করবে তারই মহব্বতে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য। আর যারা নামাজ আদায় করে, জাকাত প্রদান করে, যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণকারী, তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী, তারাই হলো পরহেজগার।’ (সুরা বাকারা ১৭৭)

অন্য কোনো নিয়তে জনসেবা নয়, বরং ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে করা চাই। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি যেমন শরিয়তে ফরজ, জনসেবাও ফরজ। এ ফরজ আদায়ের নিয়তে জনসেবা করতে হবে। যার সম্পদ আছে, সে সম্পদ দিয়ে মানুষের সেবা করবে। যার বুদ্ধি আছে, সে বুদ্ধি দিয়ে মানুষের সেবা করবে। যার শক্তি আছে, সে শক্তি দিয়ে মানুষের সেবা করবে। যার যতটুকু সাধ্য আছে, সেভাবে সে মানুষের সেবা করবে। মানবপ্রেম ও জনসেবার বিষয়টি খাটো করে দেখার উপায় নেই, বরং এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ইসলামে মানবপ্রেমকে ইমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ সে অন্য মুসলমানের জন্য তা ভালো না বাসবে, যা নিজের জন্য ভালোবাসে।’ (সহিহ বুখারি)

এ বর্ণনা দ্বারা বোঝা গেল, নিজের জন্য আমরা যা ভালোবাসি, অপর মুসলমান ভাইয়ের জন্যও তা ভালোবাসতে হবে। নিজের জন্য যেমন চাই, অপরের জন্য যদি সেটা না চাই, তাহলে আমাদের ইমান পূর্ণাঙ্গ হবে না। আর মানবপ্রেম জান্নাতি হওয়ার লক্ষণ। জান্নাতিদের আলোচনায় আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে। তারা বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের আহার দান করি এবং তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’ (সুরা দাহর ৮-৯)

মানুষ কামনা করে, তার নিজের উন্নতি হোক, তার ধন-সম্পদ হোক, তার সুখ-শান্তি হোক, তার ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হোক, তার ছেলেমেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে হোক। প্রত্যেকে চায়, আমি যেন ভালো চাকরি পাই, আমি যেন ভালো পদ-পদবি পাই, আমি যেন ইজ্জত-সম্মান পাই ইত্যাদি। আমরা প্রত্যেকে নিজের জন্য এগুলো ভালোবাসি। অতএব অন্যের জন্যও এগুলো ভালোবাসতে হবে। আমি নিজের জন্য বিপদাপদ চাই না। তাই অন্যের জন্যও বিপদাপদ চাইতে পারব না। নিজের জন্য নিরাপত্তা চাই। তাই অন্যের জন্যও নিরাপত্তা চাইতে হবে। আমার মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য যেমন চেষ্টা করি, অন্যের জন্যও তেমন চেষ্টা করতে হবে। আমার কামনা হলো, অনাহারে যেন না থাকি। অতএব অন্যের জন্যও তা চাইতে হবে। এক কথায়, সবাইকে নিজের মতো করে দেখতে হবে। সবার জন্য নিজের মতো করে চাইতে হবে। সবাইকে নিজের মতো করে ভাবতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা অনেক বড় ব্যাপার। এমনকি এটাকে ইসলামের অঙ্গ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এমন না হতে পারলে আমরা মুমিন নই। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দয়াময় আল্লাহ দয়ালুদের দয়া করেন। তোমরা জমিনবাসীদের ওপর দয়া করো, তাহলে মহান আল্লাহ তোমাদের ওপর দয়া করবেন।’ (জামে তিরমিজি)

মানবপ্রেম ও জনসেবা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অনেক ফজিলতের কাজ। জনসেবার একটি ফজিলত হলো, এর দ্বারা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ শুধু তার আমল দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসনাদে আহমদ) নেক আমলের পাশাপাশি আল্লাহর রহমত থাকলেই মুক্তি পাওয়া যাবে। আল্লাহর রহমত লাভের সবচেয়ে সহজ পথ হলো, তার সৃষ্টির প্রতি সহযোগিতা ও উপকারের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয়, যে মানুষের বেশি উপকার করে। তার কাছে সবচেয়ে প্রিয় নেক আমল হলো, কোনো মুসলমানের হৃদয়ে আনন্দ দেওয়া, তার দুঃখ-কষ্ট দূর করা, তার ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া এবং তার ক্ষুধা দূর করা।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ) জনসেবার উপকার সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানবকল্যাণমুখী কাজ বিপদাপদ ও অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে। গোপন দান আল্লাহর ক্রোধ নির্বাপিত করে। রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় আয়ু বৃদ্ধি পায়।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ)

মানুষের সেবা করা, মানবপ্রেম এমন এক আমল, যা দ্বারা আল্লাহর প্রিয় হওয়া যায়। কেননা সব সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। সুতরাং সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক প্রিয়, যে আল্লাহর পরিবারের প্রতি অনুগ্রহ করে। যারা সৃষ্টিকে ভালোবাসে, সৃষ্টির সেবা করে, তারাই আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা। আর যারা আল্লাহর প্রিয়পাত্র, তাদের নাজাত পেতে কোনো বেগ পেতে হবে না। যখন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি ইবাদতের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিয়ে পার হওয়া কঠিন হবে, তখন বিভিন্ন আমল নাজাতের অসিলা হবে। এর মধ্যে সৃষ্টির সেবাও এক বিশেষ আমল, যা দ্বারা আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া যায়।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত