সময়ের স্রোতে ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসির বর্তমান ঠিকানা ইন্টার মায়ামি। যে ক্লাবটি এই জাদুকরের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো খেলছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। গতকাল আটত্রিশে পা দেওয়ার ঠিক ৩ ঘণ্টা আগে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ব্রাজিলীয় ক্লাব পালমেইরাসের বিপক্ষে মাঠে নামেন। জন্মদিনের গণ্ডি ছোঁয়ার আগেই ঠিক আগেই প্রায় জিততে জিততে ড্র করে ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় ওঠেন তিনি ও তার দল ইন্টার মায়ামি।
মায়ামির ঘর ফ্লোরিডার হার্ড রক স্টেডিয়ামে ৬০ হাজার ৯১৪ দর্শকের সামনে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। প্রথমার্ধে তাদের আলেন্দে এবং দ্বিতীয়ার্ধে লুইস সুয়ারেজের গোলে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় মায়ামি। তবে ম্যাচের শেষ ১০ মিনিটে পালমেইরাসের পলিনহো ও মাওরিসিও দুটি গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামি ২-২ গোলে ড্র করে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব পালমেইরাসের বিপক্ষে। এ দুটো দলই নাম লেখায় নকআউট পর্বে। তবে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে গ্রুপ ‘এ’র দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠেছে মায়ামি। মায়ামির দুই গোলেই অবদান রাখেন ৩৮ বছর বয়সী সুয়ারেজ। প্রথমে বুক দিয়ে বল জোগান দেন আলেন্দের গোলে এবং পরে বাঁ পায়ের দুর্দান্ত হাফ-ভলিতে গোল করেন নিজে। ম্যাচে এই নৈপুণ্যেই ম্যাচসেরা হন তিনি। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন লিওনেল মেসি। এভাবে ফাউল করা তার স্বভাব বিরুদ্ধ হলেও জয়ের খোঁজে আগ্রাসী মেজাজটা আটকে রাখতে পারেননি এদিন।
অনেকেই মনে করেছিলেন আয়োজক দেশ হিসেবে ইন্টার মায়ামিকে জায়গা দেওয়া হয়েছিল ক্লাব বিশ্বকাপে শুধুই মেসির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে। তবে মেসির দল সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নকআউট পর্বে পৌঁছে দিয়েছে ফিরতি বার্তা। বিজ্ঞাপনী প্রচার কিংবা জনপ্রিয়তার কারণে নয়, মাঠের খেলার যোগ্যতায় এ বৈশ্বিক আসরে খেলছে তারা। ম্যাচশেষে মায়ামি কোচ হাভিয়ের মাশচেরানো বলেন, ‘আসর শুরুর আগে শেষ ষোলোয় ওঠার যে লক্ষ্য আমরা নিজেদের জন্য ঠিক করেছিলাম তা অর্জন করেছি।’ তবে শেষ ষোলোয় মায়ামিকে দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা। কারণ তাদের প্রতিপক্ষ চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী ফরাসি ক্লাব পিএসজি। এখান থেকেই মায়ামিতে নাম লিখিয়েছিলেন মেসি। মাশচেরানো বলেন, ‘যদিও আমরা ইউরোপ সেরা, চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী দলের মুখোমুখি হব; তবুও একই গুরুত্ব দিয়েই খেলব। এই খেলাটি আমাদের একটা জিনিসই শিখিয়েছে যে একটি ম্যাচে যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে।’ ২৯ জুন আটলান্টায় রাত ১০টায় মাঠে গড়াবে এই ম্যাচটি। জন্মদিনের দিন শেষ ষোলো নিশ্চিতের আনন্দের পাশাপাশি এই ধাক্কাও সইতে হয়েছে মেসিকে। মেসির ক্যারিয়ারে তার দল কখনোই কোনো টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েনি। এ পর্যন্ত খেলা ৩৩টি প্রতিযোগিতার গ্রুপ পর্বের সবগুলোতেই তার দল নাম লিখিয়েছে পরের রাউন্ডে। শেষ ষোলোয় সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে মুখোমুখি হতে হচ্ছে মেসিকে। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচটি আলাদা আবেগের। তবে মেসি এই ম্যাচটি জিততে মরিয়া বলেই জানালেন তার সতীর্থ জর্দি আলবা। তার মতে এই ম্যাচে জয়ের জন্য একদম মরিয়া হয়ে আছেন মেসি, ‘শেষ পর্যন্ত লিওর লক্ষ্য একটাই ম্যাচ জেতা, যেমনটা সবসময় থাকে। আমি জানি বার্সার প্রতি তার ভালোবাসা, যেখান থেকে আমাদের বন্ধুত্ব। কিন্তু পিএসজির প্রতি সে এমন কোনো অনুভূতি পোষণ করে না।’
পিএসজির হাসি, আতলেতিকোর কান্না : সিয়াটল সাউন্ডার্সকে ২-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ ‘বি’র শীর্ষে থেকে নকআউট পর্বে জায়গা করে নিয়েছে পিএসজি। পিএসজির প্রথম গোলটি আসে কিছুটা ভাগ্যের সহায়তায়। ভিতিনহার নেওয়া ২০ গজ দূরের শটটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু বলটি খিচা কাভারাস্কেইয়ার পিঠে লেগে দিক পরিবর্তন করে জালে জড়ায়। দ্বিতীয় গোলটি আসে দ্রুত প্রতি আক্রমণে, ব্র্যাডলি বারকোলার পাস থেকে দুর্দান্তভাবে বল জালে পাঠান আশরাফ হাকিমি। এছাড়াও পুরো ম্যাচেই আধিপত্য দেখায় পিএসজি। ডিজায়ার দুওয়ে তিনবার চাপে ফেলেন সাউন্ডার্স গোলরক্ষক স্টেফান ফ্রেইকে। সাউন্ডার্সের একমাত্র ভালো সুযোগ আসে যখন পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা বল ভুল করে জেসুস ফেরেইরার পায়ে দেন। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে সুযোগ হারান তিনি।
বোটাফোগোর বিপক্ষে আগের হারের পর পিএসজি ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা এটাই ছিল বড় প্রশ্ন। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ইন্তার মিলানকে হারিয়ে ছয় ম্যাচের জয়রথ গড়লেও বোটাফোগোর বিপক্ষে হোঁচট খেয়েছিল তারা। তবে এই ম্যাচে সিয়াটেলের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়ে তারা আবারও প্রমাণ করল, এখনো শিরোপার অন্যতম দাবিদার তারা। ওদিকে ৮৭ মিনিটে আন্তোনিও গ্রিজমানের একমাত্র গোলে বোটাফোগোকে হারালেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যেতে হয়েছে আতলেতিকো মাদ্রিদকে। শেষ ষোলোয় ব্রাজিলিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বী পালমেইরাসের মুখোমুখি হতে হবে বোটাফোগোকে।