বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা

আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:০১ এএম

যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৯ জুলাই থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। এ শুল্ক এড়াতে শেষ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির চেষ্টায় রয়েছে বাংলাদেশ। তবে এখনো দুপক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য কাটেনি, ফলে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা যায়নি।

এ প্রেক্ষাপটে গত বৃহস্পতিবার (যুক্তরাষ্ট্র সময় বেলা সাড়ে ১১টা, বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টা) ওয়াশিংটনে ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বৈঠকে বসে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। বৈঠকে অংশ নেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ও বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।

বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়নি। বৈঠকটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। তবে আলোচনা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী বৈঠক হবে ৮ জুলাই, যেখানে সশরীরে উপস্থিত থাকবেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। এ লক্ষ্যে তিনি শনিবার (আজ) ঢাকা ত্যাগ করবেন।

সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্র যে চুক্তির খসড়া বাংলাদেশকে দিয়েছে, তাতে বেশ কিছু কঠোর শর্ত রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা বাড়তি শুল্ক আরোপ করে, বাংলাদেশকেও তাতে সমর্থন জানাতে হবে। বাংলাদেশ মনে করে, এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির পরিপন্থী এবং একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত অন্য দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মতো।

আরেকটি বিতর্কিত শর্ত হলো, যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্যে বাংলাদেশকে শুল্ক ছাড় দিতে বলেছে, ওইসব পণ্যে যেন অন্য কোনো দেশকে এ সুবিধা না দেওয়া হয়। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘সর্বাধিক অনুকূল রাষ্ট্রনীতি’র পরিপন্থী, যার ফলে বাংলাদেশ এ শর্ত মেনে নিতে নারাজ।

এমন পরিস্থিতিতে তিন দফা সংশোধিত প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ, যার ওপর ভিত্তি করে ইতিমধ্যে তিনবার বৈঠক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে কঠোরতা থাকায় কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর শর্ত শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশকেও পিছিয়ে দিচ্ছে। প্রাথমিকভাবে রাজি থাকা ইন্দোনেশিয়াও পরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয়। গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, যার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে, কিন্তু ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কোনো শুল্ক বসাবে না।

গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববাজারে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যার আওতায় বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। যদিও পরে ৯ এপ্রিল এ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়, যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৮ জুলাই। পরদিন ৯ জুলাই থেকে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি যৌক্তিক ও সমন্বিত সমঝোতায় আনতে। তবে সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আগামী কয়েকটি দিনই নির্ধারণ করে দেবে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত কতটা বড় ধাক্কা খাবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত