ইউপি নির্বাচন: চট্টগ্রামের সাতকানিয়া
‘এমপিকে ১৫ লাখ টাকার চেক দিয়েও’ মনোনয়নবঞ্চিত যুবলীগ নেতা
চট্টগ্রাম ব্যুরো | ৮ জানুয়ারি, ২০২২ ১৭:৩৫
চট্টগ্রামের এক আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্যের (এমপি) বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষেদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিতে ১৫ লাখ টাকার চেক নেয়ার অভিযোগ করেছেন মনোনয়ন বঞ্চিত এক যুবলীগ নেতা।
চট্টগ্রাম–৮ আসনের এমপি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে এই অভিয়োগটি করেছেন দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সহ–আইনবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। অভিযোগকারী যুবলীগ নেতা চট্টগ্রাম জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলিও।
ফেইসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে এমপির বিরুদ্ধে চেক নেয়ার অভিযোগ করলেও পরে পোস্টটি সরিয়ে নেন মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। তবে, ওই পোস্টের স্ক্রিণশটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে শনিবারও আলোচনা চলতে দেখা গিয়েছে। দেশ রূপান্তরের কাছেও যুবলীগ নেতার ফেইসবুকে দেয়া ওই পোস্টের স্ক্রিণশট রয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগ নেতা কামাল উদ্দিন ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিতে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও এমপি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ওই চেক গ্রহণের অভিযোগ করেন। ফেইসবুকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে, বিভিন্নজনের শেয়ার থেকে বিষয়টি আমাদেরও নজরে আসে। তবে, শুক্রবার যুবলীগ নেতা কামাল উদ্দিনের ফেইসবুক আইডিতে ওই পোস্টটি আর পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে তিনি পোস্টটি হাইড, ডিলিট বা কাস্টোমাইজ অপশন থেকে অনলি মি করে রাখতে পারেন।
কামাল উদ্দিনের ফেইসবুক আইডিতে ওই পোস্টটি আর পাওয়া না গেলেও শনিবারও বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা দেখতে পাওয়া যায়। তবে, এ ব্যাপারে জানতে কামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
দেশ রূপান্তরের হাতে আসা স্ক্রিণশট থেকে জানা যায়, কামাল উদ্দিন দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সোনাকানিয়াসহ সাতকানিয়ার ১৬টি ইউপিতে নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এম হোসেন কবির এমপির নামে ১৫ লাখ টাকার চেক নেন বলে উল্লেখ করেন কামাল উদ্দিন। গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হলে দেখা যায়, সেখানে কামাল উদ্দিনকে দলীয় প্রার্থী করা হয়নি।
ফেইসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে কামাল উদ্দিন ১৫ লাখ টাকার একটি চেকের ছবিও যুক্ত করে দেন। ছবিতে দেখা যায়, চেকটি সোনালী ব্যাংক কোর্ট হিল শাখার। তাতে পে টু- এর স্থানে লেখা মোসলেম উদ্দিন আহমেদ। নিচের অংশে কামাল উদ্দিনের সই রয়েছে। তবে চেকে কোনো তারিখ ছিল না।
স্ট্যাটাসে কামাল উদ্দিন একপর্যায়ে লেখেন, ‘আমি আমার চেক ও টাকা ফেরত চাই। অন্যথায় বিষয়টি নিয়ে আমি তৃণমূলের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হব এবং ফৌজদারি মামলা করতে বাধ্য হব।’
এদিকে কামাল উদ্দিন ফেইসবুকে এই স্ট্যাটাস দেওয়ার পর চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আলোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় এমপি মোসলেম উদ্দিন আহমেদের পক্ষে বৃহস্পতিবার রাতেই সাতকানিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোহরাব হোসেন চৌধুরী এই জিডি করেন।
জিডিতে ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেওয়া মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাতে বলা হয়, এমপি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এম হোসেন কবিরের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির যে স্ট্যাটাস ফেইসবুকে দেওয়া হয়েছে, তা মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মানহানিকর।
সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কুমার দে জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’
এ ব্যাপারে এমপি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটা ডাহা মিথ্যা, বানোয়াট। তার বিরুদ্ধে আইসিটি মামলা হবে। তিনি এটা প্রতারণা করছেন আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এম হোসেন কবিরও এ ঘটনায় কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘থানায় আমার নির্দেশে সোহরাব হোসেন জিডি করেছেন। আমি রবিবার একটি মানহানির মামলা করব। কামালের সঙ্গে আমার পাঁচ বছর ধরে যোগাযোগ নেই। আমার ও মোছলেম উদ্দিন আহমেদের নামে এটা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ।’
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
চট্টগ্রাম ব্যুরো | ৮ জানুয়ারি, ২০২২ ১৭:৩৫
চট্টগ্রামের এক আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্যের (এমপি) বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষেদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিতে ১৫ লাখ টাকার চেক নেয়ার অভিযোগ করেছেন মনোনয়ন বঞ্চিত এক যুবলীগ নেতা।
চট্টগ্রাম–৮ আসনের এমপি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে এই অভিয়োগটি করেছেন দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সহ–আইনবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। অভিযোগকারী যুবলীগ নেতা চট্টগ্রাম জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলিও।
ফেইসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে এমপির বিরুদ্ধে চেক নেয়ার অভিযোগ করলেও পরে পোস্টটি সরিয়ে নেন মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। তবে, ওই পোস্টের স্ক্রিণশটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে শনিবারও আলোচনা চলতে দেখা গিয়েছে। দেশ রূপান্তরের কাছেও যুবলীগ নেতার ফেইসবুকে দেয়া ওই পোস্টের স্ক্রিণশট রয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগ নেতা কামাল উদ্দিন ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিতে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও এমপি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ওই চেক গ্রহণের অভিযোগ করেন। ফেইসবুকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে, বিভিন্নজনের শেয়ার থেকে বিষয়টি আমাদেরও নজরে আসে। তবে, শুক্রবার যুবলীগ নেতা কামাল উদ্দিনের ফেইসবুক আইডিতে ওই পোস্টটি আর পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে তিনি পোস্টটি হাইড, ডিলিট বা কাস্টোমাইজ অপশন থেকে অনলি মি করে রাখতে পারেন।
কামাল উদ্দিনের ফেইসবুক আইডিতে ওই পোস্টটি আর পাওয়া না গেলেও শনিবারও বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা দেখতে পাওয়া যায়। তবে, এ ব্যাপারে জানতে কামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
দেশ রূপান্তরের হাতে আসা স্ক্রিণশট থেকে জানা যায়, কামাল উদ্দিন দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সোনাকানিয়াসহ সাতকানিয়ার ১৬টি ইউপিতে নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এম হোসেন কবির এমপির নামে ১৫ লাখ টাকার চেক নেন বলে উল্লেখ করেন কামাল উদ্দিন। গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হলে দেখা যায়, সেখানে কামাল উদ্দিনকে দলীয় প্রার্থী করা হয়নি।
ফেইসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে কামাল উদ্দিন ১৫ লাখ টাকার একটি চেকের ছবিও যুক্ত করে দেন। ছবিতে দেখা যায়, চেকটি সোনালী ব্যাংক কোর্ট হিল শাখার। তাতে পে টু- এর স্থানে লেখা মোসলেম উদ্দিন আহমেদ। নিচের অংশে কামাল উদ্দিনের সই রয়েছে। তবে চেকে কোনো তারিখ ছিল না।
স্ট্যাটাসে কামাল উদ্দিন একপর্যায়ে লেখেন, ‘আমি আমার চেক ও টাকা ফেরত চাই। অন্যথায় বিষয়টি নিয়ে আমি তৃণমূলের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হব এবং ফৌজদারি মামলা করতে বাধ্য হব।’
এদিকে কামাল উদ্দিন ফেইসবুকে এই স্ট্যাটাস দেওয়ার পর চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আলোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় এমপি মোসলেম উদ্দিন আহমেদের পক্ষে বৃহস্পতিবার রাতেই সাতকানিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোহরাব হোসেন চৌধুরী এই জিডি করেন।
জিডিতে ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেওয়া মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাতে বলা হয়, এমপি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এম হোসেন কবিরের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির যে স্ট্যাটাস ফেইসবুকে দেওয়া হয়েছে, তা মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মানহানিকর।
সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কুমার দে জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’
এ ব্যাপারে এমপি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটা ডাহা মিথ্যা, বানোয়াট। তার বিরুদ্ধে আইসিটি মামলা হবে। তিনি এটা প্রতারণা করছেন আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এম হোসেন কবিরও এ ঘটনায় কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘থানায় আমার নির্দেশে সোহরাব হোসেন জিডি করেছেন। আমি রবিবার একটি মানহানির মামলা করব। কামালের সঙ্গে আমার পাঁচ বছর ধরে যোগাযোগ নেই। আমার ও মোছলেম উদ্দিন আহমেদের নামে এটা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ।’