
এই গ্রহে নদীই সর্বব্যাপী ক্ষত নিয়ে গড়িয়ে চলা এক জীবন্ত প্রাণসত্তা। বেঁচে থাকার জন্য কোনো জীবিত প্রাণের শরীরের সব অংশের সুস্থতাই জরুরি। অস্থি-মজ্জা-হাড়-মাংস কিংবা শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। কিন্তু আমরা চারধারে কী দেখি। এই নদীর হাত নেই, তো ওই নদীর চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। কোনো নদীর কলিজা পিষে দেওয়া হয়েছে, কোনো নদীর শরীর থেকে ধড় আলাদা করা হয়েছে। খুব কম নদীকেই আমরা মাথায় চুলের ডগা থেকে পায়ের নখ অবধি আপাদমস্তক সুস্থ খুঁজে পাব। নদীর জন্য সবচেয়ে কঠিন হলো উজান থেকে ভাটিতে গড়িয়ে চলার পথের ‘অতিসাধারণ নিরাপত্তা’। এটি কুসুম কুসুম ফুলের বিছানা বা মসৃণ মাটি কিংবা উত্তল পাথরের চাঁই নয়। কিংবা নদীর গড়িয়ে চলা পথের মামুলি নিরাপত্তার জন্য সমরাস্ত্র কারখানা বা জলপাই বাহিনীরও কোনো প্রয়োজন নেই। এর জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বা জাতিসংঘের কোনো বৈঠকেরও দরকার নেই। কেবল নদীর উজান থেকে ভাটিতে গড়িয়ে চলার পথকে বাধা না দিলেই হলো। কিন্তু এখানেই যত বগলবাজি, বাণিজ্য কিংবা বাহাদুরি। যে যেভাবে পারছে এক একটা নদীতে উজান থেকে ভাটিতে সর্বত্র কুপিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে প্রতিদিন খুন-ধর্ষণ করে চলেছে। বিশেষ করে উজানে ও উৎসমুখে নদীগুলো জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, বৃহৎ অবকাঠামো কিংবা বৃহৎ বাঁধের কাছে বন্দি। উন্নয়নের এই কারাগার থেকে খুব কম জলধারাই মুক্তি পেয়ে ভাটিতে গড়ায়। অধিকাংশের নিয়তি হয় পায়ে ডান্ডাবেড়ি আর শেকল নিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে গড়িয়ে চলা। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপদে আছে আমাদের আন্তঃসীমান্ত অভিন্ন নদীগুলো। সবগুলোর উজানেই ভারতীয় অংশে তৈরি হয়েছে নানা স্থাপনা ও প্রকল্প। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের এক অনন্য নদী ধলাই। এ নদীর উজানে ত্রিপুরা রাজ্যে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কারণে নদীটি প্রতিদিন পরিচয় ও অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে। চলতি আলাপখানি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের কাছে ধলাই নদীর সুরক্ষা ও ন্যায়বিচারের দাবি জানায়।
আন্তঃসীমান্ত নদীর উজানে বৃহৎ বাঁধ প্রকল্পের বিরুদ্ধে ভাটির বাংলাদেশ মূলত প্রথম প্রতিবাদী হয় ফারাক্কার বিরুদ্ধে। গঙ্গা ও পদ্মার অভিন্ন প্রবহমানতার দাবিতে। পরবর্তী সময় তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে দুদেশের রাজনৈতিক দরবার নানাভাবে উচ্চকিত হয়েছে। বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদীপ্রণালির উজানেও বৃহৎ বাঁধ প্রকল্প। মেঘনা-সুরমা-কুশিয়ারার উজানে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়েও নাগরিক প্রতিক্রিয়া সরব হয়েছিল। কিংবা ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীনের পরিকল্পিত বৃহৎ প্রকল্প নিয়ে কিছু আলাপ জারি আছে। কিন্তু এর বাইরে দেশের অপরাপর আন্তঃসীমান্ত নদীর উজানে কী ঘটছে তা আমাদের জানা-বোঝা ও আলাপচারিতা কিংবা নাগরিক প্রতিক্রিয়ার বাইরেই থাকছে।
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘মন্তডু-লেসকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের’ প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. মুকুল সাংমা (সূত্র : শিলং টাইমস-০১/৩/১২ এবং হিল পোস্ট-২৯/২/১২)। মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি জেলা জৈন্তিয়ার জোয়াই শহর থেকে ৪০ কমি দূরে লেসকার ১০০ মিটার ভাটিতে মন্তডু, লামু ও উমসরিয়াং নদীর ত্রিমুখী সঙ্গমে পেডেকাংসাপ গ্রামের কাছে শুরু হয় প্রকল্পটি। এই নদীর ভাটিতে বাংলাদেশের সিলেটের সারী নদী। সারী নদীর উজানে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রাতারগুল জলাবনের বাস্তুতন্ত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে উজান থেকে ভাটিতে নেমে আসা স্রোত ও প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সংবেদনশীল এ জলাবনের প্রাণ-প্রকৃতির বিকাশে সংকট তৈরি হয়েছে। উত্তর-পূর্ব পানি-প্রতিবেশ অঞ্চলের এক গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত নদী সারী। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সারী-গোয়াইন নদীকে ২৮৪নং আইডি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। লালাখাল চা বাগানের কাছে ভারতের লোভাছড়ি নদী হতে এই সারী-গোয়াইন নদীর উৎপত্তি। সিলেটের জৈন্তাপুরের কাছে প্রবেশ করে সারী নদী গোয়াইনঘাট এলাকায় গোয়াইন নাম ধারণ করে পরবর্তী সময় সিলেটের বাদামঘাট এলাকায় চেঙ্গের খাল (সিঙ্গের খাল) নাম নিয়ে সুরমা নদীতে মিলেছে।
‘মন্তডু-লেসকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প’ উদ্বোধন হতে না হতেই ১৯.৯.২০১২ মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড়ের উমইয়্যু নদীতে উদ্বোধন করা হয় ‘মাওফু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প’ (সূত্র : মেঘালয় টাইমস ১৭.৯.২০১২)। উমইয়্যু নদীতে বাঁধ দিয়ে ওই বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের সিলেটের ধলা নদীর প্রতিবেশীয় বৈশিষ্ট্য সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে। উত্তর-পূর্ব পানি-প্রতিবেশ অঞ্চলে অবস্থিত সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত নদী ধলার আইডি নম্বর-১৪৫। মেঘালয় পাহাড়ের উমইয়্যু পাহাড়ি নদীই হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জের ধলা নদীর জলধারার মূল উৎস।
২০০৭ থেকেই বিষাক্ত হয়ে ওঠে লুকা হ্রদ। কারণ খুঁজে দেখা গেল স্টার সিমেন্ট আর টপ সিমেন্ট কারখানার দূষণে নীলচে হয়ে যাচ্ছে এই অভিন্ন নদী। কেবল সিমেন্ট কারখানা নয়, মেঘালয় পাহাড়ে অপরিকল্পিত চুনাপাথর ও কয়লা খননের দূষণেও বিপন্ন হয়ে উঠছে অভিন্ন নদীগুলো। এমনকি সংবেদনশীল এই অঞ্চলে অভিন্ন জলধারার ওপর একের পর এক তৈরি হচ্ছে বৃহৎ বাঁধ। দেখা গেছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ে বাণিজ্যিক খনন, বাঁধ এবং বৃহৎ প্রকল্পের কারণে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলো দূষিত হচ্ছে এবং এখানকার প্রাণ-প্রকৃতি নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ছে। এই প্রবল উন্নয়ন বাহাদুরির কারণে এখানকার আন্তঃসীমান্ত নদী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে লোচ মাছ।
উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধলাই জেলার চুলুবাড়ির হঠাৎবাজার থেকে মানিকবন্দর হয়ে এড়ারপার বাজার পর্যন্ত সড়কপথ উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। সড়কপথের কারণে এড়ারপারে ধলাই নদীতে গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। নদীতে বাঁধ দিয়ে এই সেতু তৈরির ফলে ধলাই নদীর ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে প্রবাহ কমে গেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ধলাই নদীর ওপর এড়ারপার লোহার সেতুটি ভেঙে যায়। এ কারণে ধলাই নদীর ওপর এখন গার্ডার সেতু নির্মিত হচ্ছে। সেতু নির্মাণের কারণে সেতুর পিলারের ভিত ঢালাই করার জন্য নদী প্রবাহে বাঁধ দেওয়ায় ভাটিতে এর প্রবাহ আটকে গেছে। ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ৬৬.৭৭ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে কমলগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নের মোকাবিল দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে ধলাই নদী। পরবর্তী সময় ধলাই নদী মৌলভীবাজারে মনু নদীতে মিশেছে। ধলাইকে এক সময় ‘কমলগঞ্জের দুঃখ’ বলা হতো। ২০২০ সালে ৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ধলাই নদীর ২২টি স্থান চিহ্নিত করে নদীর চর খনন শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (সূত্র : ডেইলি অবজারভার, ২৮.৪.২৩)। কিন্তু এই খননকে অপরিকল্পিত খনন হিসেবে আখ্যা দিয়ে নদীপাড়ের মানুষেরা জানান, নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে বর্ষাকালে পানি উপচে আবারও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে। এখন পরিস্থিতি বিপজ্জনক। ধলাই নদীর উজানে ত্রিপুরাতে সেতু ও সড়কপথ নির্মাণ প্রকল্পের কারণে ভাটিতে ধলাইয়ের প্রবাহ শীর্ণ ও ক্ষীণকায় হচ্ছে প্রতিদিন। প্রবাহিত এ জলধারার সঙ্গে মণিপুরী জীবন-সংস্কৃতির বহুমুখী সম্পর্ক আছে। উজান কিংবা ভাটিতে ধলাইয়ের প্রবাহ রুদ্ধ হলে মণিপুরী জীবনের বহুমাত্রিক বিন্যাসে বিরূপ ছন্দপতন ঘটবে।
অথচ অভিন্ন পানিপ্রবাহের ন্যায্যতা ও সুরক্ষা প্রশ্নে আমরা রাষ্ট্রীয়, দ্বি-রাষ্ট্রিক ও বৈশ্বিকভাবে বহু অঙ্গীকার করেছি। আন্তর্জাতিক জলপ্রবাহের ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার এবং জলপ্রবাহের ওপর এমন কোনো কিছু তৈরি না করা, যাতে অন্য রাষ্ট্রের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে, এমন বিষয়গুলো ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘ কনভেনশনের ৫, ৭ এবং ১২নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘ কনভেনশনের ১২নং ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কোনো জলপ্রবাহের ওপর কোনো প্রকল্প বা পরিকল্পনা গ্রহণের আগে এর ফলে সম্ভাব্য ক্ষতির শিকার রাষ্ট্রকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন দলিল ও কারিগরি তথ্য সেই রাষ্ট্রকে প্রদান করতে হবে, যাতে প্রকল্পকারী রাষ্ট্র এবং সম্ভাব্য ক্ষতির শিকার রাষ্ট্র উভয়েই পরিকল্পিত উদ্যোগের সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয়।’ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদে (সিবিডি ১৯৯২) বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই স্বাক্ষর করেছে। সিবিডির ১৪নং অনুচ্ছেদের ‘ঘ’ ধারায় স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে, ‘চুক্তিবদ্ধ পক্ষ রাষ্ট্রের আওতাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় সৃষ্ট কোনো কারণে যদি অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রাণবৈচিত্র্যে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে তবে সম্ভাব্য ক্ষতির শিকার সেই রাষ্ট্রকে তা অবহিত করতে হবে এবং ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
আমরা আশা করব, ধলাই নদীর অভিন্ন পানিপ্রবাহ সুরক্ষিত থাকবে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন ধলাই নদীর অভিন্ন মুক্ত প্রবাহের বহমানতা নিশ্চিত করবে। উজানে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ভাটিতে ধলাই নদীর জীবন প্রশ্নহীনভাবে বিপন্ন হতে থাকলে এর ক্ষরণ ও দাগ কেবল ধলাই অববাহিকা নয়, সমগ্র বাস্তুতন্ত্র ও জীবনকেই বিমর্ষ করে তুলবে।
লেখক : লেখক ও গবেষক
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অনেক আগেই বিশ্বের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের ধামাধরা মননে-মস্তিষ্কে যার প্রতিফলন ঘটেনি অনেক দিন পর্যন্ত। তবে এই যুদ্ধের বেশ আগেই পরিবর্তিত বিশ্ব-প্রেক্ষাপটটি দৃশ্যমান হয়েছে অনেকের কাছে যারা দিনদুনিয়ার হালনাগাদ খবর রাখেন অথবা রাখতে বাধ্য হন তাদের কাছে।
প্রথাগত প্রগতিশীল বা বামপন্থি বাতাস ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় দোল খাচ্ছে না। কমিউনিস্টদেরও আর সাচ্চা কমিউনিস্ট বলা সম্ভব হচ্ছে না তাদের অ-কমিউনিস্ট, অ-মার্কসবাদী ক্ষেত্রবিশেষে হাস্যকর এবং গোঁড়া তথা মৌলবাদী বিশ্ববীক্ষার কারণে। হঠাৎ মনে হতে থাকল এবং সঙ্গত কারণেই যে, প্রগতিশীলরা, বামপন্থিরা, মার্কসবাদীরা অগ্রসরতার, প্রতিশীলতার তাবৎ ব্যাকরণ ভুলে গিয়ে সুকুমার রায়ের হাঁসজারুতে পরিণত হয়েছে।
এক সময় যাদের কল্যাণ অর্থনীতির প্রবর্তক-প্রচারক ভাবা হতো (এ কথা অনেক আগে কার্ল মার্কসও ভেবেছিলেন; মার্কসবাদের তিনটি উৎসের একটি ইংল্যান্ডের অর্থনীতির বিংশ শতকীয় ভার্সন ইংল্যান্ড তথা ব্রিটিশ অর্থনীতির কল্যাণ-দর্শন), যাদের গণতন্ত্রের সহি খিদমতগার ভাবা হতো তাদের বাহ্য রূপ ইরাক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে কী করে যে এত বদলে গেল (সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের ভূমিকা স্মর্তব্য) তা ভাবা যায় না। গণতন্ত্র তথা ডেমোক্র্যাসির আরেক সোল এজেন্ট আমেরিকার চেহারাও উইপনস অব মাস ডেস্ট্রাকশনের বুলি আওড়াতে আওড়াতে কী করে যে ডেমনিক ফেস (দানবীয় চেহারা) হয়ে উঠল ভেবে কুল পাওয়া যায় না। দুনিয়ার প্রচল রাজনীতির চেহারাও তখন বদলে গেল। সে কথা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অনেক আগের কথা।
তুরস্কে এরদোয়ানের উত্থান এবং হালের তুর্কি রাজনীতিকে তথাকথিত উদার প্রগতিশীল বামপন্থি রাজনীতির ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে এবং মার্কিন রাজনীতির আল কায়দা, দায়েশ, তাকফিরি, আল নুসরা, ফাতাহ আল শাম, ফ্রি সিরিয়ান আর্মি, আইএস বা আইএসআইএস এবং তার পূর্ববর্তী রূপ আইএসআইএল (ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড লেবান্ত) তথা আইসিল তোষণের এবং পরিপোষণের দেউলিয়া ডেমোক্র্যাটিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বুঝে নেওয়া বা বুঝে নিতে পারা দরকার। আল কায়দা বা আইএসআইএস বা আল নুসরা বা ফাতাহ আল শামের সঙ্গে হালের তুরস্কের এরদোয়ান-গুলেনের গভীর সুসম্পর্ক ছিল; এরদোয়ানের এখনো আছে। অটোমান সাম্রাজ্যের গর্ব পুনরুদ্ধারেরও একটা সম্পর্ক আছে এসবের সঙ্গে।
তথাকথিত উদার, ধর্মনিরপেক্ষ এবং প্রগতিশীল (বিশেষ করে ইউরোপে এবং মার্কিন মুল্লুকে) রাজনীতির চেহারায় এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে, তুরস্কের মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার আবহে এরদোয়ান হেরে যাবেন। ইউরোপে জাতীয়তাবাদীরা এবং আপাত ধর্মের হুক্কাবরদাররা জিতে যাচ্ছে বা ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জে ফেলছে, যেমন ফ্রান্সে মারিঁ ল পেন, জার্মানিতে এএফডি, আর ইতালিতে সরাসরি তারা ক্ষমতায় গেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে তথাকথিত লেফটদের, অ্যান্টিফা (অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট) মুভমেন্টের ভাত উঠে গেছে বলা যায়। রিপাবলিকান আর ডেমোক্র্যাটদের পার্থক্য ঘুচে গেছে, মুছে না গেলেও।
নিওকনরা রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট দুই শিবিরেই আছে। নিওকন মানে নিওকনজারভেটিভ মতান্ধ এক যুদ্ধবাজ গোষ্ঠীর নাম। কার্যত অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের আমলে ফিরে গেছে আমেরিকা, যখন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ছিল রক্ষণশীল এবং প্রতিক্রিয়াশীল আর রিপাবলিকান পার্টি ছিল উদার এবং প্রগতিশীল। আমেরিকা পাল্টে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক চেহারার বদল ঘটেছে ’৭৩ সালে নিওলিবারেল আর্থিক নীতির আমদানির পর। এর জেরে ইউরোপও পাল্টে গেছে। বদলে যাওয়া বিশ্বে এরদোয়ানের সমস্যা তাহলে কোথায়?
এরদোয়ানের বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে কোনো সমস্যা নেই। নেই বলেই ৫২ দশমিক ১৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি দ্বিতীয় দফায় জিতে গেছেন। ৫০.০১ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় তিনি প্রথম দফায় বিজয়ী ঘোষিত হতে পারেননি। দ্বিতীয় দফায় সেই শর্তটি পূরণ করলেন।
এবার রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হলেন। এর আগে তিনি ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট হন। পরিবর্তমান বিশে^র প্রথম তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলা চলে তাকে। আর আমাদের অর্থাৎ দাস্য মনোবৃত্তির লোকেদের মননে এরদোয়ান একজন হাঁসজারু প্রেসিডেন্ট তিনি ন্যাটোতেও আছেন, আবার ন্যাটোর ঘোর প্রতিপক্ষ রাশিয়ার অর্থাৎ পুতিনের সঙ্গেও আছেন। তিনি বেহেস্তেও আছেন, আবার দোজখেও আছেন। তিনি গণতন্ত্রে আছেন, তিনি অটোমান সাম্রাজ্য তথা উসমানীয় খেলাফতেও আছেন। প্রকারান্তরে আইএস নামের দায়েশ খেলাফত তথা আল নুসরা-ফাতাহ আল শামের সঙ্গেও আছেন। সত্যি কথা বলতে, তিনি পরাধুনিক বা উত্তরাধুনিক জমানার ম্যাজিক রিয়েল প্রেসিডেন্ট। অশ্বে পাড়া ডিম্ব।
পার্লামেন্টে এরদোয়ানের একে পার্টির জোট পিপলস অ্যালায়েন্স সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে প্রথম দফা নির্বাচনেই। পার্লামেন্ট এরদোয়ানের হাতেই থাকছে। এরদোয়ানের বিরোধী জোটের প্রচারণার মূল বিষয় ছিল রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার। তারা প্রেসিডেনশিয়াল ব্যবস্থা বদলে পার্লামেন্টকে আরও শক্তিশালী করতে চেয়েছিল। এই ইস্যুতেই তারা জোটবদ্ধ হয়েছিল। তবে পরিবর্তনের জন্য তাদের পার্লামেন্টে যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার ছিল তা হয়নি। কেমাল কিলিচদারুগলু বা তার দল বা জোট সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরতে দরকারি সংস্কার আনতে পারবেন না। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তার অনেক উদ্যোগে পার্লামেন্টের সমর্থন মিলবে না।
এক দশক আগেও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে এরদোয়ান সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের টানাপড়েন ছিল। গত চার-পাঁচ বছরে প্রতিরক্ষা খাতে বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্ক অনেক ভালো হয়েছে। তুরস্ক থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চার নম্বরে রয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্কও অনেক এগিয়েছে। সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক যোগাযোগ এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। এরদোয়ান সরকার রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিসি) গাম্বিয়ার অভিযোগে তুরস্কের প্রকাশ্য সমর্থন আছে। যখন বাংলাদেশের বড় প্রতিবেশী দেশগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে এত সরব ছিল না তখন তুরস্ক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
তুরস্কের নির্বাচন নিয়ে বাইরের আগ্রহ সব সময় থাকে। এবার বিশেষ আগ্রহের বড় কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ন্যাটোর অংশ হয়েও বিভিন্ন ইস্যুতে স্বতন্ত্র অবস্থানে ছিল এবং রয়েছে দেশটি। তুরস্কের যুদ্ধাস্ত্র, ড্রোন ইউক্রেনে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার ন্যাটো জোটের রাশিয়ামুখী সম্প্রসারণে আপত্তি জানিয়েছিল তুরস্ক। এ নিয়ে পশ্চিমারা হতাশ এবং নাখোশ। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে খাদ্যশস্য রপ্তানি বিষয়ক সমঝোতা তৈরির ক্ষেত্রে দেশটি বড় ভূমিকা রেখেছে।
‘কিংমেকার’ সিনান ওগান দ্বিতীয় দফা ভোটে এরদোয়ানকে সমর্থন দিয়েছিলেন। অর্থাৎ এরদোয়ানের ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় সিনান ওগানের একটা নিয়ামক ভূমিকা আছে। তিনি সমর্থন দেওয়ার সময় কিছু শর্ত দিয়েছিলেন। যেমন তুরস্কে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এবং সিরিয়ার শরণার্থীদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে ধর্মনিরপেক্ষ নীতিগুলো নিশ্চিত করতে হবে, এ কথাও তিনি বলেছিলেন। তুর্কি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের আদর্শ অনুসরণের শর্ত দেন তিনি। সিনান ওগান এরদোগানের মতোই ডানপন্থি রাজনীতিতে বিশ্বাসী লোক। এরদোয়ান ও তার সমর্থকদের মধ্যে অনেক ইস্যুতে মিল রয়েছে।
এরদোয়ান যখন তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন তখন তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের ১০০ বছর পূর্ণ হবে। নির্বাচনের ফল ঘোষিত হয়েছে যদিও এখনো চার লাখ ভোট গোনা বাকি। অবশ্য তাতে নির্বাচনের সার্বিক ফলে কোনো প্রভাব পড়বে না। নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা ১ জুন চূড়ান্ত ফল দাপ্তরিকভাবে ঘোষণা করার। এরদোয়ানের বয়স এখন ৬৯ বছর। তিনি তিনবার জিতলেন। তার আগে প্রথম তিনজন প্রেসিডেন্ট মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক চারবার, মোস্তফা ইসমেত ইনোনো চারবার এবং মাহমুদ সেলাদিন ‘সেলাল’ বায়ার তিনবার জয়ী হয়েছিলেন। এরদোয়ানের বাবা-মা জর্জিয়া থেকে তুরস্কে অভিবাসন করেছিলেন। সেই সূত্রের কথা যদিও এখন তিনি স্বীকার করেন না। ২০১৬ সালের সামরিক অভ্যুত্থান প্রয়াস তিনি রাশিয়ার ইন্টেলিজেন্স সহায়তায় বানচাল করেছিলেন। জড়িত সন্দেহে তিনি ১৩ হাজার সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিকে আটক করেছিলেন। সামরিক বাহিনীর ওপরও নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেন। তখন মাত্র আলেপ্পো-যুদ্ধ (সিরিয়া) শেষ হয়েছে। অভ্যুত্থানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক জেনারেল এবং মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (ন্যাটো জোটের সমর্থনে) জড়িত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে তখনই। সিরিয়ায় রাশিয়ার একটি এস-২৪ বিমান মার্কিন-ন্যাটো উস্কানিতে ভূপাতিত করার দায়ে রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছিল। অভ্যুত্থান-সূত্রে তার উন্নতি হয়, তারপর রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনে তুরস্ক। তারপরও টানাপোড়েন ছিল রাশিয়ার সঙ্গে। তবে ইন্টেলিজেন্স সহায়তার জন্য পুতিনের প্রতি এক ধরনের কৃতজ্ঞতা বোধ রয়েছে এরদোয়ানের।
এবার বিজয়ী হয়ে এরদোয়ান বলেছেন, তিনি পুতিনের ইচ্ছা পূরণ করবেন। তার আকাক্সক্ষা অনুযায়ী তুরস্কের থ্রেসে গ্যাস হাব তৈরি করবেন। সেখান থেকে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে সরবরাহ করা হবে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে (নর্ড স্ট্রিম ১ ও ২) ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এটা করলে তুরস্ক হবে ইউরোপের গ্যাসকেন্দ্র। তাতে অবশ্য রাশিয়ার সহায়তা থাকবে।
গ্যাস-হাবের উদ্যোগ বন্ধ করার জন্য ন্যাটোর গোপন সহায়তায় কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার গোয়েন্দা জাহাজে হামলা চালানো হয়েছিল। খাদ্য রপ্তানির রুট ব্যবহার করে ইউক্রেন এ কাজটি করেছিল, অবশ্য তাতে সফল হয়নি তারা। গ্যাস হাব স্থাপনের কথা বললেও রাশিয়া-তুরস্ক সম্পর্ক এখনো মসৃণ নয়। এরদোয়ানে রাশিয়ার সন্দেহ পুরোপুরি নিরসিত হয়নি। স্মরণ করা যেতে পারে, তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার ১২টি যুদ্ধ হয়েছে। প্রত্যেকবারই রাশিয়া বিজয়ী। পরিবর্তমান বিশে^ পরিবর্তিত এরদোয়ানের ভূরাজনৈতিক খেলা দেখার আগ্রহ আছে সবার মধ্যেই। তুরস্ক আরও বেশি ন্যাটোলগ্ন হবে, নাকি রাশিয়া-চীনের সঙ্গে মিলে ইউরেশীয় তুর্কি-মঙ্গল হবে! কী খেল দেখাবেন পরাধুনিক-উত্তরাধুনিক ম্যাজিক রিয়েল প্রেসিডেন্ট!
লেখক : সাংবাদিক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার গাছ কাটা হবে। কোনো একটি ভবন নির্মাণের জন্য যে জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে সেখানে অনেকগুলো গাছ আছে। ওই জায়গাটা বলতে গেলে জঙ্গল। জঙ্গল সাফ করে ভবন নির্মাণ যেন একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। খোদ ঢাকা শহরেই কয়েকদিন আগে দেখলাম সড়ক বিভাজকের বড় বড় গাছ কেটে ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। পত্রিকার খবরে পড়লাম, আরও গাছ কাটার প্রকল্প হাতে রয়েছে সিটি করপোরেশনের।
গাছ কাটার খবর শুনলেই মনে হয় একটি সমাজব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত করা হচ্ছে। সাধারণভাবে আমরা জানি, গাছকে কেন্দ্র করে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী বসবাস করে থাকে। তবে বিজ্ঞান বলছে, গাছেদের নিজেদেরও সমাজ আছে। শুনতে কিছুটা অদ্ভুত লাগলেও, গাছের যে মন আছে তা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসছে।
গাছের এই সমাজব্যবস্থা নিয়ে বহুল পঠিত একটি বই আছে একজন জার্মান বনবিদ ও লেখকের। তার নাম পিটার ওয়েলবেন। তার বিখ্যাত বইটির নাম ‘দ্য হিডেন লাইফ অব ট্রিস’। এ বইয়ে পিটার ওয়েলেবেন দেখিয়েছেন গাছেদেরও সমাজ আছে। মানুষ যেমন একসঙ্গে অনেকজন বসবাস করে আর এর ফলে সমাজ গড়ে ওঠে, গাছেদেরও তেমনি সমাজ আছে। একসঙ্গে অনেক গাছ মিলে জঙ্গল হয়। এক মানুষ যেমন অরেক মানুষের প্রয়োজনে এগিয়ে আসে, গাছেরাও তেমনি একে অপরের অভাব মেটায়। গাছেদের ভেতর একজন ‘মা’ থাকে, যে তার ‘সন্তানদের’ প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।
মানুষের সমাজে যেমন একজন বয়স্ক ব্যক্তি থাকে, যাকে সাধারণ অর্থে ‘মুরব্বি’ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এই মুরব্বি হন বয়স্ক, অনেক অভিজ্ঞতা থাকে তার। গাছেদের জঙ্গলেও তেমনি কিছু গাছ থাকে ঝাঁকড়া, যাদের অনেক বয়স; তারা নিজেদের পাতাসহ শরীরে জলীয়বাষ্প সঞ্চয় করে রাখে। যা অনাবৃষ্টির সময় অপরাপর গাছেরা ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া গাছ মানে তাকে কেন্দ্র করে অপরাপর প্রাণীরা বসবাস করে, অক্সিজেন ও খাদ্য সংগ্রহ করে। সবমিলিয়ে গাছেরা মিলে একটা প্রাকৃতিক সমাজ তৈরি হয়।
ইউনিভার্সিটি অব কলম্বিয়ার অধ্যাপক ও গবেষক সুজানে সিমারড এক গবেষণায় দেখেছেন, গাছেদের মধ্যে শেকড়ের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। কোনো গাছের কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘাটতি হলে অপর গাছ শেকড়ের মাধ্যমে তা সরবরাহ করে থাকে। শেকড়ে শেকড়ে গাছেদের এই যোগাযোগের সময় এক ধরনের শব্দ হয়, যা শুনতে অনেকটা ‘কররর...’ এ রকম।
চলতি বছরের মার্চের শেষে ‘নেচার’ পত্রিকায় একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, আঘাত পেলে গাছ কান্না করে। কোনো কোনো প্রাণী গাছেদের সেই কান্না শুনতেও পায়। শ্রবণসীমার বাইরে থাকায় মানুষ তা শুনতে পায় না। তবে কিছু কিছু প্রাণীর কানে ঠিকই পৌঁছায় সেই কান্না। আর কান্নার শব্দ অনেকটা আঙুলের মটকা ফোটানোর মতো বা কম্পিউটারের কিবোর্ডে টাইপ করার মতো শোনায়।
পিটার ওয়েলবেন তার বইয়ে কিছু ঘটনা উল্লেখ করেছেন। যেমন, উনিশশ সত্তর আশির দিকে বিজ্ঞানীরা দেখলেন যে, আফ্রিকান সাভানায় জিরাফগুলোর প্রিয় খাবার হলো কাঁটাওয়ালা গাছ। যাকে আমাদের দেশে বলে বাবলা গাছ। একবার আফ্রিকার সেই গাছগুলো তাদের পাতায় বিষাক্ত পদার্থ ছড়াতে শুরু করে। এর ফলে জিরাফগুলো আর বাবলা পাতা খেতে পারল না। তারা আশপাশের একশো গজ দূরের গাছে চলে গেল। যে কাঁটাওয়ালা গাছ প্রথম জিরাফদের বাধা দিল সে তার আশপাশের গাছেও বার্তা পাঠাল। যার ফলে অন্য গাছগুলো সংকেত পেল যে তাদের কেউ খেতে আসছে। তারাও তখন পাতায় সেই কষ ছড়াতে লাগল।
অন্য গবেষণায়ও দেখা গেছে, কোনো পোকা যখন গাছের পাতা খায়। তখন ওই গাছ এক ধরনের কষ তৈরি করে পাতায়। ফলে পোকা সম্পূর্ণ পাতা সবসময় খেতে পারে না। গবেষকরা বলছেন, কোনো পোকা যখন পাতা খেতে শুরু করে, তখন গাছের সেটা পছন্দ হয় না। তাদের অনুভূতি এর বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে। তারা তেমনই একটা বিষাক্ত রস ছড়াতে শুরু করে। এখানে যেটা লক্ষ করার বিষয় সেটা হলো, আমরা মানুষরা যত দ্রুত মশা কামড়ালে বা কোনো অস্বস্তি শরীরে তৈরি হলে সাড়া দিতে পারি, গাছের ক্ষেত্রে সেটা হয় না। গাছ খুব ধীরে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। পাতায় পোকার কামড়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তার ঘণ্টার মতো সময় লেগে যায়। শেকড় যদি আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন গাছ পাতার মাধ্যমে এক ধরনের গন্ধ ছড়ায় বলেও বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন।
গাছের প্রাণ থাকার মতো, মন থাকার বিষয়টিও যার গবেষণার মাধ্যমে প্রথম নজরে আসে তিনি জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনি লজ্জাবতী গাছ নিয়ে গবেষণা করেন এবং বিশাল এক বইও লেখেন। তার মাধ্যমে গাছেদের যে অনুভূতিপ্রবণতা তা বিজ্ঞানী মহলকে সচেতন করে তোলে।
মন বলতে কোনো আলাদ অঙ্গের অস্তিত্ব মানব বা অন্যান্য প্রাণীর শরীরে উপস্থিত থাকে না। বিজ্ঞানে মন বলতে সামগ্রিক স্নায়বিক ক্রিয়াকে বুঝায়। মানুষ বা প্রাণীর যেমন স্নায়ুতন্ত্র আছে, গাছের অবশ্য তা নেই। না থাকলেও গাছ যে অনুভূতি প্রকাশ করে তা বুঝার অনেক উপায় আছে। তাই রক্ত ঝরে না বলে যখন-তখন গাছ কেটে ফেলা খুবই প্রকৃতিবিরোধী এবং অমানবিক একটা কাজ।
অনেকে গাছের অর্থনৈতিক বা বাস্তুসংস্থানগত গুরুত্বের কথা বলেন। সেগুলো ঠিকই আছে। কিন্তু গাছেরও যে মন আছে, এ বিষয়টা আরও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এর মাধ্যমে গাছ কাটাসহ তাদের প্রতি যে অপরাপর অন্যায় করা হয়, তার জন্য মানবিক অনুভূতিকে আরও জাগ্রত করার ক্ষেত্র তৈরি হবে। একটি গাছ কাটা হচ্ছে মানে, সে কাঁদছে; এই তথ্য বৈজ্ঞানিকভাবেই এখন প্রমাণিত বিষয়। কোনো গাছ কাটা পড়লে অপরাপর গাছেদেরও সমস্যা তৈরি হবে। প্রয়োজনীয় সাহায্য, বংশবিস্তার রোধ হয়ে যাবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
প্রতিদিন বেড়ে চলেছে বাজারদর। টালমাটাল নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের বাজার। পুঁজিবাজারও এর বাইরে নয়। সবকিছুতে ব্যয় বাড়লেও সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া মানুষ দেখছে সবকিছুই দিন দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। দেখা গেছে, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে কারসাজির মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করে মুনাফার সুযোগ নিয়ে থাকে। পুঁজিবাজার ও পণ্যবাজার উভয় ক্ষেত্রেই একই চিত্র।
মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরে ‘ভোগ্যপণ্যে ভোজবাজি’ শিরোনামে ও ‘দাম বাড়ে সিন্ডিকেটে কমে চাপে’ উপশিরোনামে প্রকাশিত কোলাজ প্রতিবেদনটিতে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে। প্রতিবেদনটির বিভিন্ন উপশিরোনাম দেখলেই পরিস্থিতি টের পাওয়া যাবে। যেমন ‘কিন্তু ফেরে না আগের দামে’; ‘এক মাসেই দ্বিগুণ পেঁয়াজের দাম’; ‘করপোরেটের দখলে ব্রয়লার’; ‘ডিমের দামে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে কোম্পানি’; ‘সিন্ডিকেটই ঠিক করে তেলের দাম’ এবং ‘চিনির নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে’। প্রতিটি উপশিরোনামের বক্তব্যই বিভিন্ন সময়ে পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদন হয়ে উঠতে দেখেছি আমরা। যা বলে দেয় যে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা দেখাতে পারেনি।
শেয়ারের কৃত্রিম সংকট ও গুজব ছড়িয়ে কারসাজির মাধ্যমে যেভাবে দাম বাড়ানো হয়, একইভাবে ভোগ্যপণ্য কিংবা নিত্যপণ্যের দামও অস্বাভাবিক হারে বাড়াতে দেখা যায়। পুঁজিবাজারের মতো এখানেও রয়েছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট, যারা সরবরাহজনিত কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে অস্বাভাবিক মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। পুঁজিবাজার ও পণ্যবাজারে কারসাজির একই হাতিয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে শেয়ারবাজারে কারসাজির তদন্ত এবং কখনো কখনো দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা শোনা গেলেও নিত্যপণ্যের মূল্য কারসাজির হোতারা অধরাই থাকেন। ধারণা করা যায়, ভোগ্যপণ্য কিংবা নিত্যপণ্যের কারসাজিকারকরা পুঁজিবাজারের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালী। এ কারণে এদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থাও নিতে দেখা যায় না সরকারকে। আমদানি করা হয় না, এমন নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে। পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় গত এক যুগে বাংলাদেশের ভোক্তামূল্য সূচক (সিপিআই ইনডেক্স) দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে বর্তমানে ১১১ দশমিক ৪৫ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে।
বিশ^বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হলে তা দেশের বাজারে প্রভাব পড়বে এটি সাধারণ বিষয়। তবে পরে বিশ^বাজারে দাম কমলে সে অনুযায়ী আর দাম সমন্বয় করা হয় না। এছাড়া, ভোক্তাকে ন্যায্যমূল্য পেতে হলে বিক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা প্রয়োজন, তা নেই। গুটি কয়েকজনের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় বাজারব্যবস্থা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। এর জন্য টিসিবির মতো নানান পদক্ষেপ নিতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তবে তা জনসংখ্যার হিসাবে পর্যাপ্ত নয়। সরকার চাইলে নিজেরাই গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি করে বিক্রি করতে পারে। এতে রাষ্ট্র লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের জনগণও স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য পাবেন।
যে কারণেই হোক, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বেপরোয়া। তাই আজ পেঁয়াজ, কাল লবণ, পরশু চাল, পরদিন অন্য কোনো পণ্য নিয়ে তারা বাজারে পাগলা ঘোড়ায় বাজি ধরছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে সরকারের নীরব থাকার উপায় নেই। অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। শুধু হুঁশিয়ারি যথেষ্ট নয়। দু-একটি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থাতেই অসাধুদের টনক নড়তে পারে।
গত বছর এ বিষয়ক এক রিট শুনানিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছে, ‘‘আইন থাকলেও প্রয়োগ না থাকায় নিত্যপণ্যের বাজার ‘জোটবদ্ধ ব্যক্তি-গোষ্ঠীর’ নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।” বাজার নিয়ন্ত্রণে ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন দৃশ্যমান নয়। একদিকে, সরকার খাদ্যপণ্যের বাজারদর ঠিক করে দিচ্ছে। অন্যদিকে, একটি মহল জোটবদ্ধ হয়ে সেসব পণ্য মজুদ করে সুযোগ মতো দাম বাড়িয়ে তা বাজারে ছাড়ছে। এটা ভাবা দরকার যে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো থেকে শুরু করে সরকারের সাম্প্রতিক কোনো সিদ্ধান্তই সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিচ্ছে না। সাধারণ মানুষের সুরক্ষার প্রশ্নে সরকারকে অবশ্যই বাজার নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে।
১৮১৯ সালের ৩১ মে জন্মগ্রহণ করেন মার্কিন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক ওয়াল্ট হুইটম্যান। মানবতাবাদী হিসেবে প্রসিদ্ধ হুইটম্যান মুক্তছন্দের জনক হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। তার রচনা সেই সময় যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে তার কাব্য সংকলন ‘লিভস অব গ্রাস’-এর বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ ওঠে। কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা, সরকারি করণিকবৃত্তি ও আমেরিকান গৃহযুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও কাজ করেন। লেখালেখির শুরুতে তিনি ‘ফ্রাংকলিন ইভান্স’ (১৮৪২) নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন। ‘লিভস অব গ্রাস’ ১৮৫৫ সালে প্রকাশিত হলেও তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাব্যটিকে পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের পাঠযোগ্য এক আমেরিকান মহাকাব্য রচনার। হুইটম্যান ছিলেন রাজনীতিসচেতন লেখক। তিনি সাধারণভাবে দাসপ্রথা বিস্তারের বিরোধিতা করেন। তার কবিতায় জাতিগোষ্ঠীগুলোর সমতাবাদী সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়। একসময় তিনি দাসপ্রথা বিলোপের ডাক দিয়েছিলেন; যদিও পরে দাসত্ববিলোপবাদী আন্দোলনকে তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর মনে করতে শুরু করেন। জীবনের শেষ পর্বে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি নিউ জার্সির ক্যামডেনে চলে যান। সেখানেই ৭২ বছর বয়সে ১৮৯২ সালের ২৬ মার্চ তার জীবনাবসান ঘটে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক-সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজেটস্বল্পতার যুক্তিতে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষকদল পাঠাতে পারবে না বলেছে। এখন পর্যন্ত আবেদনকারী ২১০টি দেশি সংস্থা বা সংগঠনের মধ্যে ৬৬টিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে তাদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছে ইসি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন যাতে না ওঠে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। এ লক্ষ্যে সব চেষ্টাই নির্বাচন কমিশন করবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে, সেটি বোঝাতে হলে আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা পৌঁছাতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এ বার্তা পৌঁছানোর কাজটি করেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। ইইউ বলে দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন-পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, তার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষণে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রতিনিধিদল আসবে। ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও তাদের সহায়তাকারীরা ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা নিয়ে টুইটবার্তা এবং বিভিন্ন বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এ বার্তাই দিচ্ছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যবেক্ষক না পাঠালেও আরও অনেক দেশ আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে (আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) আমন্ত্রণ জানিয়ে অক্টোবরে চিঠি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। আমরা চাই দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বেশি সংখ্যায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক। আমরা আশা করি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সংস্থা।
পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে।’
আপনারা তো ভোটের জন্য শতভাগ প্রস্তুত কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনমুখী কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। এতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশন সেটা হতে দিতে পারে না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমেরিকা আসবে না বলেনি। আসলে আমরা খুশি হব। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন, সেসব থাকলে যে কেউ আসতে পারে।’
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে দলীয়করণ হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতেও তা হয়নি। আগামীতে হবে বিশ্বাস করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তথ্য-উপাত্ত নিয়েই তা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। নেতিবাচক মনোভাবই তাদের সিদ্ধান্তে প্রকাশ পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসেনি। ফলে সেটি আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ওই দুটি নির্বাচন সব মহলেই প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সরকার বা ইসি যে কথা বলছে, তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নীতির বদল হবে বলে মনে হয় না। আস্থা তৈরি করতে হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সূত্রগুলো বলছে, তারা নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ইইউকে ছোট পরিসরে হলেও পর্যবেক্ষক পাঠাতে ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এমন প্রতিশ্রুতি সিইসি দিচ্ছেন। সরকারও একই কথা বলছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে আস্থার একটা সংকট তৈরি হয়েছে। তা কাটানোর জন্যই ইসি নানা পরিসরে কাজ করছে।
সূত্রমতে, ইইউর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকদের সন্তেুাষজনক তথ্য তৈরির কাজ করছে ইসি সচিবালয়। মার্কিন দলের মনোতুষ্টির বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে কমিশনের। নির্বাচনী তফসিল থেকে নির্বাচনী ফল ঘোষণা পর্যন্ত সব কর্মকা-, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির সুবিধা হলো তারা নির্বাচনী কাজে জড়িতদের জবাবদিহির মুখোমুখি করে। পর্যবেক্ষকদের কোনো আইনি শক্তি নেই। তবে তারা নৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে প্রার্থীদের সমর্থকদের আচরণও প্রভাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ভোটারদের ওপর, তারা আস্থা পান।’
তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না। আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সব দলের অংশ নেওয়ার বার্তা নেই। সব দলই নিজ অবস্থানে অনড়। এ কারণেই বিদেশিরা আগ্রহ প্রকাশ করছে না।’
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, সার্কভুক্ত দেশ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এমন সংস্থা, মানবাধিকার গোষ্ঠী, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। ২০১৮ সালে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দিতে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। প্রথমবার দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের মধ্য থেকেই বেশি আবেদন এসেছে বলে জানা গেছে।
গত ১৮ জানুয়ারি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য প্রথমবারের মতো আবেদন আহ্বান করেছিল নির্বাচন কমিশন। ২১১টি সংস্থা আবেদন করেছিল। গত ৮ আগস্ট প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ৬৮টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। আপত্তি ওঠায় দুটি সংস্থাকে বাদ দিয়ে শেষপর্যন্ত ৬৬টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় কমিশন। এসব সংস্থার ৪২টিই ছিল নতুন। এর আগে তারা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করেনি; সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা অর্ধেকের মতো কমে যাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের জন্য ফের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এর সময় শেষ হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের মতোই বাছাই শেষে দাবি-আপত্তি আহ্বান করা হবে। তারপর চূড়ান্ত হবে কোন কোন সংস্থা নিবন্ধন পাচ্ছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে।’
২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের পাঁচ বছরের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সংশোধিত নীতিমালা : আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৬ সেপ্টেম্বর ইসি এই নীতিমালা জারি করেছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি নাগরিক বা সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের সুশাসন, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে।
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জামায়াতে ইসলামকে ইসলামের দুশমন মন্তব্য করে বলেন, ‘যারা একাত্তরে মানুষ হত্যা করেছে, তারা মুসলমান হতে পারে না। তাদের জামাকাপড়ে মুসলমান ভাব থাকলেও অন্তরে নেই। খুনিরা মুসলমান হতে পারে না- কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম- যা মানবতার কথা বলে।’
এ সময় সারা দেশে মডেল মসজিদ নির্মাণসহ ইসলেমের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরেন শাজাহান খান।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আশেকানে গাউছিয়া রহমানিয়া মইনীয়া সহিদীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া’।
সংগঠনের প্রধান পৃষ্টপোষক শাহসূফি মাওলানা শাহজাদা সৈয়দ সহিদউদ্দিন আহমেদ আল-হাসানী ওয়াল-হোসাইনি মাইজভাণ্ডারী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সা. সৃষ্টি না হলে পৃথিবী সৃষ্টি হতো না। সেই দয়াল নবীর মত ও পথকে অনুসরন করতে হবে। সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে, জীবন চালাতে হবে। এ ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের ভিন্ন কোনো সুযোগ নেই।
আলোচনা সভা সেমিনারের পর দুপুর সোয়া ১২টায় ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুশ (র্যালি) বের হয়। গুলিস্তান জিরোপয়েন্ট থেকে পল্টন মোড় হয়ে র্যালিটি আবার জিরো পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
পরে আখেরি মোনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করেন সৈয়দ সহিদউদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইলেকশন মনিটরিং কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবেদ আলীসহ হাক্ক্বানি ওলামায়ে ক্বেরামগণ। এ সময় ভক্ত ও আশেকানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।