
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে সংকট চলছেই। কারণ হিসেবে নানা কথা বলা হলেও, ডলারের সঙ্গে টাকার মানের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। একবছরে টাকার দাম ডলারের তুলনায় কমেছে ২৫ টাকারও বেশি। এর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। ডলারকে মান মুদ্রা হিসেবে বিবেচনা করলে আমদানি ব্যয় বাড়ছে। আগে এক ডলারের পণ্য আমদানি করতে ৮৫ টাকা দিতে হতো। এখন দিতে হয় ১০৮ টাকা। রিজার্ভ কেন কমে, টাকার মান কেন কমে, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মুদ্রা বিনিময় কীভাবে করা হবে সে সব বিষয় নিয়েও আলোচনা করছেন সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য টাকা বনাম রুপিতে হবে। এর ফল কী বর্তাবে দেশের অর্থনীতিতে?
নিয়ম অনুযায়ী, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের আমানত হিসেবে নেওয়া মোট অর্থের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে (বাংলাদেশ ব্যাংক) জমা রাখতে হয়। এই অর্থ তারা ঋণ বা অন্য কোনো কাজে খরচ করতে পারে না। আর রপ্তানি, রেমিট্যান্স, ঋণ বা অন্যান্য উৎস থেকে আসা বৈদেশিক মুদ্রা থেকে আমদানি, ঋণ ও সুদ পরিশোধ, বিদেশে শিক্ষা ইত্যাদি নানা খাতে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রা বাদ দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চিত থাকে তা হলো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
এই রিজার্ভ রাখতে হয় কেন? কারণ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে লেনদেন করতে হলে, বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষত গ্রহণযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা দরকার হয়। আমদানি ব্যয় মেটানো, বৈদেশিক ঋণের সুদ প্রদান ইত্যাদিতে এই মুদ্রা ব্যবহৃত হয়। ফলে জোগান না থাকলে একটা দেশ সংকটে পড়ে যায়। আর ভালো পরিমাণে থাকলে, দেশ স্বস্তিতে থাকে। এই ভালো পরিমাণ অর্থ হলো, কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার। বাংলাদেশে গড়ে মাসিক আমদানি ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো। তাই ২৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে রিজার্ভ নেমে যাওয়া, সংকট বলে বিবেচিত হয়। বৈদেশিক মুদ্রার যথেষ্ট সঞ্চয় যদি থাকে, তখন বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার সময় কম চিন্তা করতে হয়। আমদানির মূল্য পরিশোধ করার জন্য যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় থাকলে, আমদানি নিয়েও চিন্তা করতে হয় না। বাংলাদেশে যেহেতু রপ্তানির তুলনায় আমদানি অনেক বেশি ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেশি থাকা দরকার।
বাংলাদেশ বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে ডলারের মাধ্যমে। আর রপ্তানি যা করে, তার মূল্যও বুঝে নেয় ডলারের মাধ্যমে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীতে যত লেনদেন হয় তার ৮০ ভাগেরও বেশি হয় ডলারের মাধ্যমে। ফলে বলা যায়, বিশ্ব বাণিজ্য অনেকটাই নির্ভরশীল ডলারের ওপর।
দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন উঠছে, এর কি কোনো বিকল্প নেই? বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও কম নয়। ফলে ডলারের বিপরীতে, ইউরো বা চীনের মুদ্রা ইউয়ান কিংবা রাশিয়ার মুদ্রা রুবল কি বিকল্প হতে পারবে? ইউক্রেন যুদ্ধের পর এই প্রচেষ্টা আরও জোরেশোরে শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য এবং বাণিজ্য বহির্ভূত লেনদেন হয় ভারতের সঙ্গে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মার্কিন ডলারের দর ব্যাপক ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েছে। বাড়তি দামেও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ডলারের ওপর চাপ কমাতে, সরাসরি টাকা ও রুপির মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অবশ্য নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনের এই উদ্যোগ এক দশক আগেই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা ঝুঁকি বিবেচনায় এর বাস্তবায়ন ঘটেনি। বর্তমানে ভারতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ এবং প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে।
আবার বাংলাদেশি নাগরিকরা ভারতে চিকিৎসা, পর্যটন ও কেনাকাটা বাবদ প্রচুর ব্যয় করেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট আমদানির ১৪ শতাংশ হয় ভারত থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ ভারত থেকে পণ্য আমদানি করেছে এক হাজার ৬১৯ কোটি ডলারের। ঘাটতির পরিমাণ এক হাজার ৪১৯ কোটি ডলার। টাকা-রুপিতে লেনদেন হলে সমস্যার কি সমাধান হবে না জটিলতা আরও বাড়বে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বিপুল এবং বাংলাদেশের হাতে যেহেতু যথেষ্ট পরিমাণ রুপি নেই, এ কারণে দুই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রুপিতে বাণিজ্যিক লেনদেন করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ ২০০ কোটি ডলারের যে রপ্তানি আয় বাংলাদেশ করছে, সে পরিমাণ বাণিজ্য ভারতীয় মুদ্রার মাধ্যমে করা যেতে পারে। এর বেশি পণ্য রুপিতে কেনা যাবে না, কারণ রপ্তানি ছাড়া বাংলাদেশ রুপি পাবে কোথা থেকে? তাহলে বাংলাদেশকে আমদানি মূল্যের বাকি অংশ অর্থাৎ ১৪শ কোটি ডলারের আমদানি ব্যয় আগের মতোই মার্কিন ডলারে পরিশোধ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, রুপিতে লেনদেন কোনো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরিতে সাহায্য করবে না, যতক্ষণ না সংস্থাটি তার এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) বাস্কেটে এ মুদ্রা অন্তর্ভুক্ত করে। এসডিআর বাস্কেটে অন্তর্ভুক্তির অর্থ হলো, মুদ্রাটি একটি আন্তর্জাতিক রূপান্তরযোগ্য মুদ্রা হিসেবে গণ্য হবে। এই বিষয়টা মনে রাখতে হবে, ভারতীয় রুপি আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাস্কেটে নেই। চীনের ইউয়ান আছে। এখানে ইউয়ানেও এলসি খোলা যায়। কিন্তু তারপরও সাড়া কম। ফলে ভারতীয় মুদ্রার বাণিজ্য ততটা সহজ হবে কি? যেমন, ভারতে যে পোশাক রপ্তানি করে সে কাঁচামাল আমদানি করে অন্য দেশ থেকে ডলারে। সেই দেশ তো রুপি নেবে না। কারণ রুপিতে নিলে তাকে তো আবার কাঁচামাল আমদানি করতে রুপিকে আবার ডলারে পরিবর্তন করতে হবে। আর তা করতে হলে তার ক্ষতি হবে। শুধু ভারতের সঙ্গে যার আমদানি ও রপ্তানি দুটি ব্যবসা আছে যে রুপিতে করতে পারবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা দুই বিলিয়ন ডলার হতে পারে। আবার আমরা যা আমদানি করি, তার বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশি টাকা নেবে না। কারণ আমরা ডেফিসিট কান্ট্রি। ডেফিসিট কান্ট্রির মুদ্রা টাকা দিয়ে ভারত কী করবে? এতে শক্তিশালী দেশ হিসেবে ভারতের লাভ হবে। তার রুপির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। ভারতকে আর ডলারে পেমেন্ট করতে হবে না। এর ফলে রুপির বাজারও সৃষ্টি হতে পারে। যদিও রুপি আমাদের টাকার মতোই এখনো একটি দুর্বল মুদ্রা। কাজেই একটা ঝুঁকিও থাকবে। ধরা যাক! আমরা রপ্তানি করে রুপি আনলাম। ডলারের সঙ্গে যদি রুপির দামের অবমূল্যায়ন হয় তাহলে বাংলাদেশের ক্ষতি। ডলারে বাণিজ্য হলে সেই ঝুঁকি কম। তাই অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি থাকায় রুপিতে লেনদেনে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া গত বছর তাদের রপ্তানিকারকদের বাংলাদেশের সঙ্গে ডলার এবং অন্যান্য প্রধান মুদ্রায় লেনদেন এড়িয়ে যেতে বলেছিল। বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে যাওয়া রোধ করতে এ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভেবেছে তারা। এদিকে ডলার সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে দেশে টাকা-রুপি ভিত্তিক ডেবিট কার্ড চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে কার্ডের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা টাকা দিয়ে যেমন দেশের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন, তেমনি একই কার্ড দিয়ে ভারতে রুপিতেও কেনাকাটা করতে পারবেন। এই কার্ডের মাধ্যমে ডাবল কারেন্সি এক্সচেঞ্জের প্রয়োজনীয়তা মিটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার ফলে টাকাকে ডলারে এবং এরপর ডলারকে রুপিতে রূপান্তর করতে যে এক্সপেন্ডিচার লস হয়, তা সাশ্রয় হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, যেসব বাংলাদেশি পর্যটক ঘন ঘন ভারতে ভ্রমণে যান তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী হবে। একটা তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, ২০১৯ সালে ২৫ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে গিয়েছিলেন। তাদের ভ্রমণের প্রধান গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, অবসর কাটানো, ঘুরে বেড়ানো ও চিকিৎসা। ফলে যদি রুপি-টাকায় লেনদেন একবার শুরু হয় তাহলে এটি শুধুমাত্র স্থানীয় পণ্যের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং বিভিন্ন সেবামূলক বাণিজ্য যেমন ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়বে, যা বাংলাদেশকে ঝুঁকিতে ফেলবে।
ডলার বা অন্য কোনো হার্ড কারেন্সিকে এড়িয়ে দুটি দেশ যখন নিজেদের মধ্যে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য চালায়, সেটিকে আর্থিক পরিভাষায় ‘কারেন্সি সোয়াপ অ্যারেঞ্জমেন্ট’ বলা হয়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ধরনের ‘রুপি সোয়াপ’ প্রস্তাবনা প্রশ্নে দুটি জটিলতা দেখা দেবে । প্রথমত, ডলার ব্যবসার হোতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়কে কীভাবে দেখবে? দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতির রুপি জোগাড় করবে কীভাবে এবং কোথা থেকে? কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজার এমন যে সেখান থেকে বাংলাদেশ যা আমদানি করে, তার ১৮ থেকে ২০ গুণ বেশি রপ্তানি করে। আয় করা ডলার পুরোটাই তো বাজারে খরচ হয়ে যায় না। আনুমানিক ৭০০ মিলিয়ন ডলারের আমদানির বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে বছরভেদে ১৪ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বাংলাদেশের।
অন্যদিকে, ভারতের ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানির হিসাবটা যুক্তরাষ্ট্রের পুরো উল্টো। বাংলাদেশ ভারতের বাজারে যা রপ্তানি করে, তার পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ডলার আয়ের উৎস হলেও ভারতের বাজার আমাদের ডলার খরচের জায়গা। তাহলে বাণিজ্যবৈষম্যের অন্তত ছয় বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে রুপির উৎস কী হবে?
আমদানি-রপ্তানির ঘাটতি পূরণে প্রবাসী আয় একটা বড় ভূমিকা পালন করে। তাহলে বাংলাদেশ কি প্রবাসী আয় থেকে অর্জিত ডলারকে রুপিতে পরিবর্তন করে তারপর রুপিতে আমদানি করবে? যে ডলার সংরক্ষণের জন্যই ‘মুদ্রা বিনিময়ের’ প্রস্তাব, সেই রিজার্ভ মুদ্রা খরচ হয়ে গেলে আমাদের কী লাভ হবে? আবার বাণিজ্যে ভারত খুব রক্ষণশীল। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি পণ্যে আমদানি নিষেধাজ্ঞা আছে ভারতের। শতভাগ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা না দিলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে না এবং রুপিও আয় হবে না। ভারত পাট, পাটজাত পণ্য, বাংলাদেশে তৈরি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ও মাছ ধরার জালের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের কিছু খাতে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রুপি সোয়াপ চাইলে ভারতকে পণ্যভিত্তিক যাবতীয় প্রত্যক্ষ বাণিজ্য বাধা, পরোক্ষ বাণিজ্য বাধা এবং বাংলাদেশি পণ্যে যাবতীয় অ্যান্টি-ডাম্পিং নিষেধাজ্ঞা সরাতে হবে। ভারত কি তা করবে? ডলারের সংকট মেটাতে যা করা দরকার, সেটা না করে রুপিতে বাণিজ্য করতে গেলে সমস্যা কমবে না বাড়বে? নতুন সংকটের জালে কি বাংলাদেশ আবার জড়িয়ে পড়বে? নাকি সেই কথাটাই সতর্ক বাণীর মতো মনে রাখতে হবে কুইনাইন জ্বর সারাবে বটে তবে কুইনাইন সারাবে কে?
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
চলনবিল জনপদের মানুষের মুখে মুখে কত যে উপকথা ছড়িয়ে আছে, তার হিসাব করা দুরূহ। উত্তর জনপদের ঐতিহ্যবাহী চলনবিল হতে পারে, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুরে অসংখ্য গ্রন্থপ্রণেতা মরহুম অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদের হাতে গড়া ‘চলনবিল জাদুঘর’ এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান। জাদুঘরে আছে সুলতান নাসির উদ্দিনের নিজ হাতে লেখা কুরআন শরিফ। গাছের ছালে বাংলায় লেখা প্রাচীন পুঁথিসহ অসংখ্য সামগ্রী। প্রায় ৩৫০ বছর আগে সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া এলাকায় ইসলাম প্রচার করতে আসা ঘাসী-ই-দেওয়ানের তিশিখালীর মাজার। প্রতি শুক্রবার হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে। এখানে আনোয়ারা উপন্যাসের লেখক নজিবর রহমানের মাজার। রায় বাহাদুরের বাড়ির ধ্বংসস্তূপ। দেশের বৃহত্তম গোবিন্দ মন্দির, কপিলেশ্বর মন্দির, বারুহাসের ইমামবাড়ি, শীতলাইয়ের জমিদারবাড়ি। হা-িয়ালের জগন্নাথ মন্দির। রায়গঞ্জের জয়সাগর মৎস্য খামার। চাটমোহরের হরিপুরের লেখক প্রমথ চৌধুরী ও বড়াইগ্রামের জোয়াড়ীতে লেখক প্রমথনাথ বিশীর বাড়িসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান বুকে ধারণ করে আছে চলনবিল।
চলনবিলের জনপদে অসংখ্য প্রাচীন মসজিদ, মন্দির, মাজার, জলা রয়েছে। সেগুলো ঘিরে রয়েছে নানা ইতিকথা, বিশ্বাস। বিলপাড়ের তারাশ উপজেলার নবগ্রামে নওগাঁ শাহি মসজিদ (মামার মসজিদ) ও ভাগ্নের মসজিদ নামে দুটি মসজিদ রয়েছে। মামার মসজিদটির পাশেই হজরত শাহ শরিফ জিন্দানির (রহ.) মাজার অবস্থিত। অনেকেই বলেন, মসজিদটি তিনিই নির্মাণ করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে, তিনি বাঘের পিঠে সওয়ার হয়ে বাগদাদ থেকে এ দেশে ষোড়শ খ্রিস্টাব্দে এসেছিলেন ইসলাম প্রচারের জন্য। রাজা ভানসিংহের সময় তার আগমন হয় বলে জানা যায়। রাজা ভানসিংহের পারিষদবর্গ ও তার ঠাকুরেরা দলে দলে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ায় তিনি তার খিড়কি পুকুরে ডুবে প্রাণ বিসর্জন দেন বলে কথিত আছে। এখনো ভানসিংহের খিড়কি পুকুর রয়েছে। মামার মসজিদের পাশে ভাগ্নের মসজিদ নিয়ে নানা উপকথা শোনা যায়। কোনো এক ভাগ্নে মামার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এক রাতে নাকি মসজিদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাতের মধ্যে ছাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি, তাই সেটি ছাদবিহীন অবস্থায় ছিল। কেউ বলে, সেই ভাগ্নে ওই রাতেই মারা যাওয়ায় মসজিদটির নির্মাণ অসম্পূর্ণ থাকে।
বিলপাড়ের চাটমোহরের হা-িয়ালে শেঠের বাঙ্গালা ও শেঠের কুঠি মীরজাফরের সহচর জগৎশেঠের বিশ্রামাগার ছিল বলে লোকে এগুলোকে আজও ঘৃণার চোখে দেখে। হা-িয়ালে রয়েছে বুড়াপীরের দরগা। শোনা যায়, ১২৯২ বাংলা সনে গঙ্গাধর সরকার নামক একজন সরকারি সার্ভেয়ার বুড়াপীরের নিষ্কণ্টক জমি বাজেয়াপ্ত করতে চাওয়ায় তার রক্তবমি শুরু হয়। শেষে বুড়াপীরের দরগায় গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে আরোগ্য লাভ করেন। চাটমোহরের সমাজ গ্রামের সমাজ মসজিদ নির্মাণ নিয়ে কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। শেরশাহর ছেলে সলিম মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে শোনা যায়। সলিমের জন্মের আগেই তার মাকে শেরশাহ ভুল বুঝে দিল্লি চলে যান। পরে পুত্র সলিমকে স্বীকৃতি দেন এবং তাকে বাংলার সুবাদার নিযুক্ত করেন। লোকজন আজও বিশ্বাস করেন, হজরত আশরাফ জিন্দানি (রহ.)-এর দোয়ায় শেরশাহের ভুল ভাঙে। বিলপাড়ের সিরাজগঞ্জ জেলার নিমগাছিতে ফকির দলের আস্তানা ছিল। শোনা যায়, বিদ্রোহী ফকির দল মুক্তাগাছার মহারাজার পূর্বপুরুষ চন্দ্রশেখর আচার্যকে ময়মনসিংহ থেকে বন্দি করে নিমগাছিতে আটক রেখেছিল। নিমগাছির হাটখোলার পশ্চিমে ভোলা দেওয়ান নামে এক কামেলের মাজার রয়েছে। মাজারের পাশে একটি মসজিদ আছে। মাজারের ওপরে একটি বটগাছে সারা বছর মৌচাক থাকত বলে হিন্দুরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে মাজারে তেল-সিঁদুর দিত।
চলনবিলের কোহিত ডাকাতের কথা মানুষ এখনো বলে। কার সাধ্যি কোহিতকে আটকে রাখে। একবার নাকি পুলিশ ধরেছিল তাকে। দড়ি দিয়ে নয়, ডা-াবেড়ি দিয়ে বেঁধেছিল কোহিতকে। নৌকায় করে নেওয়ার সময় কোহিত শুধু একটি ডুব দিতে চেয়েছিল। ডুব দেওয়ার পর সে অদৃশ্য হয়ে যায়। পুলিশের হাতে পড়ে থাকল শুধু শেকল আর ডা-া। বেহুলা-লখিন্দরের উপকথা শুনে কে না মোহিত হয়। লখিন্দরের বাবা চাঁদ সওদাগর মনসা দেবীকে মানত না, তাই নিয়ে কত কা-। সেই চাঁদ সওদাগরের সময় চাঁদের বাজার লাগত চলনবিল পাড়ে। আজকের বস্তুল হাইস্কুলের ঠিক পাশের ভিটায়। বিনসাড়া গ্রামে রয়েছে বেহুলা-লখিন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর পাশেই আছে বেহুলার কুয়া (কূপ)। বেহুলা চাঁদের বাজারে যে নৌপথ দিয়ে যাতায়াত করত সেটি বেহুলার খাঁড়ি নামে পরিচিত। বেহুলার খাঁড়ি নামক এই জোলা এখনো রয়েছে। খাঁড়ির পাশে নৌকাসদৃশ ঢিবি রয়েছে। গ্রামের লোক এখনো বিশ্বাস করে, ঢিবির নিচে বেহুলার নৌকা রয়েছে।
নিমগাছি হাটের পশ্চিমে জয়সাগর নামে এক বিশাল দিঘি রয়েছে। এই দিঘি নিয়ে নানা উপকথা প্রচলিত। রাজা অচ্যুত সেন এক যুদ্ধে জয়লাভ করে বিজয়ের স্মৃতিস্বরূপ নাকি জয়সাগর খনন করেছিলেন। দিঘি ১২ বছর ধরে খনন করা পরও নাকি এ দিঘিতে পানি ওঠেনি। এক রাতে রাজাকে এক সাধু স্বপ্নে দেখান, তার ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার পর বাসর রাতে সে দিঘিতে নেমে একমুঠো মাটি তুললে পানি উঠবে। রাজার ছেলে তা করায় দিঘি পানিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু রাজকুমারের সলিল সমাধি ঘটে। এরপর রাজবধূও সেখানে প্রাণ বিসর্জন দেন। এই রাজবধূ নাকি অভিশাপ দিয়ে যান কেউ এর পানি ছুঁবে না। লোকে ভয়ে এর পানি ব্যবহার না করায় জঙ্গলে ভরে যায় দিঘি। দিঘির মাঝে বেলগাছ জন্মে। সেই বেলও ভয়ে কেউ ছুঁতো না। এখন অবশ্য দিঘিটি পরিষ্কার করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। চলনবিলপাড়ের নাটমন্দির, তারাশ কপিলেশ্বর মন্দির, মামা-ভাগ্নের মসজিদ, আনুখাঁর দিঘি, পাগলাপীর, বারুহাসের বাঙ্গালা, তিসিখালীর ঘাসি দেওয়ানের মাজার, চৌগ্রামের বুড়াপীরের মাজার, চাপিলার মসজিদ, পলশুরা পাটপাড়া মসজিদ, গুরুদাসপুর এলাকার নীলকুঠি নিয়ে কত উপকথা ছড়িয়ে আছে তার হিসাব করা দুরূহ। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিকল্পিত উদ্যোগে দেশের বৃহত্তম এক বিরল জলসম্পদ চলনবিল হয়ে উঠতে পারে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
তখন বয়স ছিল ৩১ বছর। এত অল্প বয়সে ‘ভীমরুল’ ছদ্মনামে দৈনিক ইত্তেফাকে কলাম লিখে প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার লেখনী শক্তিতে পাকিস্তানি সামরিক স্বৈরাচার আইয়ুব খানের ভিত নড়ে ওঠে। কিন্তু ২০ মে, ১৯৬৫ সালে ৩২ বছর বয়সে কায়রোতে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। অতীতের সঙ্গে অধুনার সংযোগ ঘটানোর উদ্দেশ্যে ছাপা হচ্ছে ভীমরুলের সেই উপসম্পাদকীয়
কয়েকদিন পূর্বে দক্ষিণ ভিয়েতনামের এক তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলাইয়া হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরা তরুণের প্রাণ গ্রহণ করিয়াই তৃপ্ত হইতে পারে নাই; ঘটনাটিকে লোমহর্ষক করিয়া তোলারও আয়োজন করা হইয়াছিল। তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যেই ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলাইয়া দেওয়া হয়। এমনকি ঘটনাটি যাহাতে দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় যথেষ্ট ফলাওভাবে প্রচারিত হইতে পারে তদুদ্দেশ্যে সাংবাদিকদেরও তলব করা হইয়াছিল। ঘটনাস্থলে বেশ কিছু সংখ্যক দেশী-বিদেশী সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। তরুণ মুক্তিযোদ্ধা হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে আরোহণ করেন। গলায় মৃত্যুর দড়ি নামিয়া আসিবার পরও শেষবারের মত তিনি চীৎকার করিয়া উঠিয়াছিলেন : ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক।’ বৈদেশিক সামরিক সহায়তা ও দেশীয় স্বৈরাচারের কোপে দক্ষিণ ভিয়েতনামে প্রতাহ নরমেধ যজ্ঞ চলিতেছে। সেই হত্যালীলার রাজ্যে একটি মৃত্যুকে হয়ত আলাদা করিয়া কোন গুরুত্ব দেওয়া চলে না। তথাপি মৃত্যুটি যেভাবে ঘটে এবং মৃত্যুর মুখে দাঁড়াইয়াও তরুণের কণ্ঠে যে-বাণী ধ্বনিত হইয়া ওঠে, উহা স্বাধীনতাকামী সকল মানুষের প্রাণ স্পর্শ করিয়াছিল। বিদেশী সংবাদপত্র, বিশেষতঃ মার্কিন পত্র-পত্রিকায় আমরা সেই প্রাণস্পর্শী ঘটনার বিশদ বিবরণ পাঠ করিয়াছি এবং ছবি দেখিয়াছি।
আরো একটি ছবি আমরা দেখিতে পারিতাম। কিন্তু বোধ করি, স্বদেশের ঘটনা বলিয়াই ছবিটি আমাদের দেখা হইল না। মৃত্যু নয় এ ঘটনা- অঙ্গহানির। গত ১লা নবেম্বরে রাওয়ালপি-িতে বিরোধীদলীয় জনৈক প্রার্থী কর্তৃক আয়োজিত এক মিছিলে বাজি পোড়াইবার সময় রফিক নামক জনৈক তরুণ কর্মীর হাত মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ হয় এবং হাতটি ভাঙ্গিয়া যায়। উক্ত দুর্ঘটনার পর রফিককে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে লইয়া যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরেই তাহার জ্ঞান ফিরিয়া আসে। তাহার হাতটি কাটিয়া ফেলিতে হয়। কিন্তু জ্ঞান ফিরিয়া আসিবার সঙ্গে সঙ্গেই সে ‘মাদারে মিল্লাত জিন্দাবাদ’ উচ্চারণ করিতে থাকে। রফিকের ছবি আমরা দেখিতে পাই নাই; কারণ, সংবাদপত্রে তাহার কোন ছবি ছাপা হয় নাই। কিন্তু তবু রফিকের মানস-মূর্তি এদেশের সংগ্রামী জনতার, গণতন্ত্রকামী জনসাধারণের হৃদয়ে হৃদয়ে অঙ্কিত হইয়া গিয়াছে। অক্লেশে একটি অঙ্গ বিসর্জন দিয়া রফিক ইহাই প্রমাণ করিয়াছে যে, গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবিক প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে হাসিমুখে আত্মদানের মত মানুষের অভাব এদেশেও নাই। দক্ষিণ ভিয়েতনামের তরুণ মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি আর রাওয়ালপিন্ডির তরুণ রাজনৈতিক কর্মীর অঙ্গহানি এই দুই ঘটনার মধ্যে কোন সাদৃশ্য নাই। বাহ্যতঃ ঘটনা দুইটি এক প্রকৃতিরও নয়। তথাপি একেবারেই কোন সাদৃশ্য নাই কি?
বহু নির্যাতনের মূল্যে এবং ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করিয়াছিলাম। আশা ছিল, কষ্টার্জিত স্বাধীনতা প্রত্যেকের জীবনের দ্বারে নূতন সম্ভাবনার ডালি বহন করিয়া আনিবে। দুইশত বৎসরের পরাধীনতার গ্লানি, অত্যাচার-অনাচার ও দুঃখ-দৈন্যের অভিশাপ চিরদিনের মত অতীতের বিষয়বস্তুতে পরিণত হইবে, ইহাই ছিল প্রত্যাশা। আশা ছিল, আকাশের রঙ পাল্টাইবে, বাতাসের গন্ধ বদলাইবে, প্রাণ ভরিয়া আমরা মুক্তির শ্বাস গ্রহণ করিতে পারিব। কিন্তু জনসাধারণের জীবনে সেই বহু কাক্সিক্ষত মুক্তি আসে নাই। বরং উত্তর-স্বাধীনতায় জীবনকে অধিকতর পংকে নিমজ্জিত হইতেই দেখা গেল। ইহার কারণ এই যে, গণতান্ত্রিক আদর্শকে সম্মুখে রাখিয়া পাকিস্তান অর্জিত হইলেও এবং পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রীর আদর্শরূপে গৃহীত হইলেও উহা কোন দিন নিরংকুশ হইতে পারে নাই। প্রকাশ্য মঞ্চে রাজনৈতিক নেতৃবর্গকে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা গেলেও পর্দার অন্তরালবর্তীরা গোড়া হইতেই কারসাজিতে লিপ্ত হইয়াছিলেন। সেই কারসাজির উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করা। কারণ, তাঁহারা উহা সম্যক বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে, গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করিতে না পারিলে তাঁহাদের লোভ-লালসা ও ব্যক্তিগত উচ্চাকাক্সক্ষার চরিতার্থতা কোন দিনই সম্ভব নয়। রাজনৈতিক
নেতৃবর্গ সকলেই ফেরেশতা ছিলেন, ইহা বক্তব্য নয়; বক্তব্য এই যে, নেপথ্যচারীদের কারসাজির দরুন দেশের রাজনীতিতে যে বিষাক্ত চক্র সৃষ্টি হইয়াছিল, তাহাতে জনগণের পরম আস্থাভাজন রাষ্ট্রনৈতিক নেতারাও কার্যতঃ অসহায় হইয়া পড়িয়াছিলেন। পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনার অপ্রত্যাশিত বিলম্ব এবং মন্ত্রিসভার উত্থান-পতনের ব্যাপারে উহাই ছিল মূলগত হেতু। অবশেষে শাসনতন্ত্র রচিত হওয়ার পর দেশের রাজনীতি গণতন্ত্রের পথে উত্তীর্ণ হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা দেখা দিলে সেই নেপথ্যচারীদের মাথায় বজ্রপাত হয়। তারপরের অধ্যায় সকলের সুবিদিত।
এই অধ্যায়ে আমরা বাঁচিয়াছি সন্দেহ নাই; তবে মানুষের মত বাঁচিতে পারি নাই। সামরিক শাসনের পৌনে চার বৎসর যাবৎ দেশে কোন শাসনতন্ত্র ছিল না, কোন রাজনৈতিক দল ছিল না, ‘রাজনীতি’ শব্দটির উচ্চারণ পর্যন্ত অপরাধের শামিল ছিল। সেই পৌনে চার বৎসরে জনসাধারণের মৌলিক অধিকার, নাগরিক অধিকার, ব্যক্তি-স্বাধীনতা ইত্যাদি কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। সংবাদপত্রের জীবন জনসাধারণের জীবনের সহিত গ্রথিত; অতএব মানুষের যে অধিকার ছিল না, সে-অধিকার সংবাদপত্রেরও ছিল না। সেই পৌনে চার বৎসর যাবৎ আমরা মানুষের আকারে ছিলাম নিতান্তই অ-মানুষ। অতঃপর একটি শাসনতন্ত্র জারি হইয়াছে। কিন্তু এই শাসনতন্ত্র জনমতের প্রেক্ষিতে রচিত হয় নাই, রচিত হইয়াছে ব্যক্তি-বিশেষের খেয়াল-খুশী অনুযায়ী। স্বভাবতঃই জনসাধারণের অধিকার ও আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন নাই; আছে এক ব্যক্তির শাসনকে চিরস্থায়ী করার বন্দোবস্ত। অন্য কথায়, সামরিক শাসনের আমলে যে অবস্থায় আমরা বসবাস করিতেছিলাম, উহারই চুনকাম করা এক পরি-বর্ধনের মধ্যে আজো আমাদের বসবাস করিতে হইতেছে।
এই পরিস্থিতিতেই দেশে আজ ইলেকটোরেল কলেজের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইতেছে। এই ইলেকশন গ্রাম্য-পঞ্চায়েত ব্যবস্থা অথবা পঞ্চাশ বৎসর পূর্বের ইউনিয়ন বোর্ডের নির্বাচন পদ্ধতিরই শামিল। এই ব্যবস্থায় জনমতের যথার্থ প্রতিফলনের সুযোগ একান্ত সীমাবদ্ধ, তবু জনসাধারণ এই আজব ব্যবস্থার নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করিয়াছে গণতান্ত্রিক জীবনের পুনরুদ্ধারের সংকল্প লইয়া। নির্বাচন অবাধ হইবে বলিয়া কর্তৃপক্ষ মেলাই প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির কপালে কী ঘটিতেছে, জনসাধারণ নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়াই তাহা অনুধাবন করিতে পারিতেছেন। শুধু জেল-জুলুমই নয়, সরকারী প্রশাসনযন্ত্র এবং সরকারী কর্মচারিগণকেও ক্ষমতাসীন দল নিজেদের নির্বাচনী তৎপরতায় যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করিতেছেন। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও যখন তাঁহারা দেখিতে পাইতেছেন যে, তাঁহাদের পায়ের তলা হইতে মাটি সরিয়া যাইতেছে তখন তাঁহারা প্রকাশ্য জবরদস্তির আশ্রয় গ্রহণ করিতেও কুণ্ঠাবোধ করিতেছেন না। সেই জবরদস্তির প্রতিক্রিয়ায় এ পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানে এক ডজন লোকের প্রাণহানি ঘটিয়াছে। ইহারা কোন দলীয়, তাহা স্পষ্টভাবে জানা না গেলেও ইহারা যে উগ্রতার শিকার, তাহাতে সন্দেহ নাই। আর কনভেনশন দলের ‘ন্যাশন্যাল গার্ডের’ কা--কারখানার যে-সব কাহিনী ও চিত্র সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইতেছে তাহা যে-কোন পাঠককে হিটলারের ‘ব্রাউন সার্টদের’ কথাই স্মরণ করাইয়া দিবে।
আজ আমাদের দেশে যে সংগ্রাম চলিতেছে তাহা অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম। কিন্তু যে পরিস্থিতিতে এই সংগ্রাম অনুষ্ঠিত হইতেছে তাহা এই নিয়মতান্ত্রিকতাকেও আলাদা গুরুত্বে ম-িত করিয়া তুলিয়াছে। কেননা, এই নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রামকে উহার স্বধর্মচ্যুত করিয়া দেশে হানাহানি ঘটাইবার কারসাজিই ক্রমাগত স্পষ্ট হইয়া উঠিতেছে। কিন্তু কারসাজিকারীদের এই অপচেষ্টাও ব্যর্থ হইতে বাধ্য কেননা, জনসাধারণ জানে, একতাই শক্তি এবং সেই শক্তিতে তাঁহারা আজ শক্তিমান। কাজেই তাহাদের পক্ষে উত্তেজিত হওয়ার কোনো দরকার নাই। তাহারা জানে, ‘মাংস গন্ধে মুগ্ধ’ ‘শ্মশানের প্রান্তচরদের’ ‘বীভৎস চীৎকার’ অচিরেই শেষ হইবে। তাহারা জানে, ‘মানুষ-জন্তুর হুংকার’ আজ দিকে দিকে যতই বাজুক, ‘মধ্য-অঙ্কে’ এই ‘দুষ্ট স্বপনের’ অবসান ঘটিবে। তাই রফিকের হস্ত বিসর্জন আজ অকারণ নয়। ত্যাগের মহিমাতেই এই সংগ্রাম মহীয়ান হইয়া উঠিবে।
লেখক: আহমেদুর রহমান
দৈনিক ইত্তেফাক, ৬ নভেম্বর ১৯৬৪
১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন সংস্কৃত-পণ্ডিত, লেখক, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তার জন্ম ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে। তার বাবার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচ বছর বয়সে গ্রামের পাঠশালায় তার পড়ালেখা শুরু হয় এবং ১৮২৯ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন প্রতিভাবান এবং ১৮৩৯ সালের মধ্যেই বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। পরে তিনি দুই বছর ওই কলেজে ব্যাকরণ, সাহিত্য, ইংরেজিসহ নানা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। প্রতি বছরই তিনি বৃত্তি, গ্রন্থ ও আর্থিক পুরস্কার পান। ১৮৪১ সালে সংস্কৃত কলেজ ত্যাগ করার অল্প পরেই তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা ভাষার প্রধান পণ্ডিতের পদ লাভ করেন। ১৮৪৬ সালে সংস্কৃত কলেজে সহকারী সেক্রেটারির দায়িত্ব পেলেও কয়েক দিন পরেই কাজে ইস্তফা দিয়ে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হেড রাইটার ও কোষাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৮৫০ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। তিনি কলেজে সব শ্রেণির হিন্দুদের জন্য কলেজের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। ইংরেজি ভাষা শেখাকে তিনি বাধ্যতামূলক করেন এবং বাংলা শিক্ষার ওপরও জোর দেন। অনেকে তার সমালোচনা করলেও শিক্ষা পরিষদ তার কাজের প্রশংসা করে এবং পুরস্কারস্বরূপ তার বেতন বৃদ্ধি করে। ১৮৫৫ সালে তাকে অধ্যক্ষ পদে বহাল রেখেই সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বিভিন্ন জেলায় ২০টি বিদ্যালয় ও ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি বিধবাবিবাহ চালু করা, বহু বিবাহ ও বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করা এবং স্ত্রী-শিক্ষা বিস্তারের জন্য আন্দোলন করেন। সাহিত্যচর্চা ও সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে তার অবদান অপরিসীম। তার উদ্যোগেই সরকারের কাছে ২৮ বার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫৫ হাজার মানুষের স্বাক্ষরের জোরে বিধবাবিবাহ চালু হয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাকে ‘করুণাসাগর’ উপাধি দেন।
আমাদের দেশে জন্ম নিবন্ধনে আগ্রহ কম। কিন্তু মৃত্যু নিবন্ধনে আগ্রহ বেশি। তবে সরকারিভাবে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে প্রচারণা থাকলেও, মৃত্যু নিবন্ধন উৎসাহিত করতে জোরালো কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। কিন্তু মৃত্যু নিবন্ধন জরুরি হয়ে পড়ে তখন, যখন মৃত ব্যক্তির অর্থ-সম্পদ ভাগাভাগির প্রশ্ন আসে। আবার মৃত ব্যক্তি চাকরিজীবী বা অবসরপ্রাপ্ত হলে তার পেনশন ও অন্য সুবিধাদি দাবি করতে হলেও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। দেশের জনসংখ্যার প্রকৃত চিত্র পেতে হলেও দরকার মৃত্যু নিবন্ধনের। জনসংখ্যা পরিবর্তনের গতি-প্রকৃতি এবং শতাংশ বিচারেও এই নিবন্ধন দরকার। অন্যদিকে, জন্ম নিবন্ধনও জরুরি। পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে এটা জরুরি। এ ছাড়া ছেলে-মেয়েদের স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছেও এটা জমা দিতে হয়। স্কুলপড়ুয়া কোনো ছেলে বা মেয়ের জন্ম নিবন্ধন করতে গেলে, প্রয়োজন সেই ছাত্রের বাবা-মায়ের নিবন্ধন নম্বর। এর মানে হচ্ছে, একজন ছাত্র-ছাত্রীর বিপরীতে নিবন্ধন প্রয়োজন তিন জনের। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমে এখনো নির্ভুল তথ্য সরবরাহ করতে পারছে না সরকার। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের বার্ষিক পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে এ ব্যর্থতার কথা স্বীকার করা হয়েছিল গত বছর। কিন্তু বর্তমানে তথ্য সরবরাহ নির্ভুল হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে জানা নেই।
জনগণকে এরকম ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিবন্ধন বন্ধ রেখেছে। দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে জানা যাচ্ছে, কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে নাগরিকদের সেবা দিতে প্রত্যেক সংস্থার জনবল, কাগজ, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট এবং অফিস অবকাঠামোসহ বড় অঙ্কের খরচ হয়। এত দিন ওই খরচের একাংশ জন্ম নিবন্ধন ফি থেকে আসত ডিএসসিসির। হঠাৎ সরকার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ফি কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনে গ্রহণ করায় সে আয়ের সুযোগ বন্ধ হয়েছে। এ বিষয়টি মানতে নারাজ ডিএসসিসি
কর্র্তৃপক্ষ। এজন্য সংস্থার পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি লিখেছে। এটা নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ডিএসসিসির মধ্যে আলোচনা চলছে। বিষয়টির সুরাহা হওয়ার আগে ডিএসসিসি জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখবে।
আবার স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী জানাচ্ছেন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ফি অনলাইনে সরকারি কোষাগারে জমা হবে। এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। সবাইকে মেনে চলতে হবে। ডিএসসিসির এমন সিদ্ধান্ত না মানার কোনো যৌক্তিকতা নেই। একই কথা বলছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের আরেকজন কর্মকর্তা। তিনি জানাচ্ছেন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ফি সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে অনলাইনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এটা সব সংস্থা মেনে নিয়েছে। ডিএসসিসির এসব কারণে সেবা বন্ধ রাখার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
তাহলে এই জটিলতার সমাধান কোথায়? যতদিন এই অবস্থা চলবে, ততদিন কি ডিএসসিসির নাগরিকদের সব কাজ বন্ধ রাখতে হবে! তাহলে ঐ সিটি করপোরেশনের মধ্যে যেসব নাগরিক রয়েছেন, তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান কে করবে? কোন কর্তৃপক্ষ! এক্ষেত্রে নাগরিকদের প্রতি মূল দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। পাশাপাশি তাদের বক্তব্যও যৌক্তিক।
সত্যি যে- সেবার খরচ ডিএসসিসি বহন করবে আর আয় যাবে সরকারের কোষাগারে? এই পদ্ধতি থাকলে ডিএসসিসিকে আগের মতো ধারদেনা করেই চলতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে ঋণগ্রস্ত ও দুর্বল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে সংস্থাটি। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে। এই বিরোধ পদ্ধতিগত না ব্যক্তিগত তা বলা কঠিন।
নিবন্ধন সমস্যার সমাধান করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। স্থানীয় জনগণ স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্তৃপক্ষকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেননি। সেক্ষেত্রে দায়টা সিটি করপোরেশনের কাঁধেই চাপে। এভাবে গোঁ ধরে থাকলে সমস্যার সমাধান হবে না। দুই পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। একটা সমাধানে আসতে হবে। স্থানীয় নাগরিকদের ভোগান্তি থেকে রেহাই দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ডিএসসিসিতে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন পূর্ণোদ্যমে শুরু হবে এটাই প্রত্যাশা।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
আল নাসরে প্রথম মৌসুমটা ভালো না কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আছেন দারুণ ছন্দে। নিজে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন।
শুক্রবারও সৌদি প্রো লিগে আল তা’য়ির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আল নাসর। এ ম্যাচেও রোনালদো গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। তবে তাঁকে নিয়ে বেশি আলোচনা তালিসকার গোলটিতে অসাধারণ এক অ্যাসিস্টের জন্য। অ্যাসিস্টটিতে যে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো।
তা’য়ির মাঠে আল নাসর গতকাল শুরুটা করেছে দারুণ। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক দলের রক্ষণ করে দিয়েছে এলোমেলো। ম্যাচের শুরুর দিকেই রোনালদোর দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন তা’য়ির গোলকিপার। এ ছাড়া রোনালদোও খুব কাছ থেকে পাওয়া একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে ৩২ মিনিটে এগিয়ে যায় আল নাসর। গোলটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যান্ডারসন তালিসকা। গোলটিতে রোনালদো অ্যাসিস্ট করেছেন অসাধারণ এক বাই-সাইকেল কিকে। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা রোনালদোর পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
খেলার স্রোতের বিপরীতে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে তা’য়ি। কিন্তু সমতা বেশিক্ষণ থাকেনি। ৩ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে আল নাসরের জয়সূচক গোলটি করেছেন রোনালদো। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা ৭ ম্যাচে তার ১০ নম্বর গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬ গোল।
এই জয়ের পর ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে আল নাসর। আল ফেইহার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা আল ইত্তিহাদ সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আল তা’য়ি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।