
পাকিস্তানের প্যাঁচানো রাজনৈতিক কাহিনি তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ‘নো সারপ্রাইজ’ শিরোনামে দেশটির বহুল প্রচারিত পত্রিকা ‘ডনের’ এডিটরিয়ালের প্রথম বাক্যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক বাস্তবতার একটি বয়ান পাওয়া যাচ্ছে।
কারাদ-প্রাপ্ত ইমরান খান যদিও তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার সময় তিনি যেসব উপহার পেয়েছিলেন, সেগুলো বিক্রি করে পাওয়া অর্থ সম্পর্কে ঘোষণা না দেওয়ার কারণে ইসলামাবাদের একটি আদালত এই রায় দিয়েছে। তাকে অতিসত্বর গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোরও আদেশ দেওয়া হয়। আদালত ইমরান খানকে এক লাখ রুপি বা প্রায় ৪৫১ ডলার জরিমানারও আদেশ দিয়েছে।
রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে ইমরান খানের আইনজীবী ইনতাযার হুসেইন জানিয়েছেন, এ রায়ের কিছু পরই ইমরান খানকে লাহোরের জামান পার্ক এলাকার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পাঞ্জাব পুলিশ। ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ এক টুইট বার্তায় জানায়, তাকে কোট লাখপাত কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ ঘটনায় ডন পত্রিকার এডিটরিয়ালে ভাষ্যটি জেনে নেওয়া যাক :
“সেই একঘেয়ে ক্লান্তিকর আর প্রেডিকটেবল গল্প। দুর্নীতির দায়ে দোষী প্রমাণিত হয়েছেন পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান। পাকিস্তানের জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য তিনি এখন আর কোয়ালিফায়েড নন। তাকে তিন বছরের জেল আর ১ লাখ রুপি জরিমানাও করা হয়েছে।
ইমরান খানের প্রকৃত অপরাধের সঙ্গে এই সাজার খুব বেশি সম্পর্ক নেই, তেমন কোনো নৈতিক গুরুত্বও নেই। কারণ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি, নওয়াজ শরিফ, বেনজির ভুট্টো, জুলফিকার আলি ভুট্টো এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, সবাইকেই একই রকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। তবে এদের কারও বিরুদ্ধেই অভিযোগ শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি।
বিশেষভাবে, অভিযোগটা এতই ঠুনকো আর শাস্তি এতটাই কঠোর যে, এর সঙ্গে তুলনা খুঁজতে খুব বেশি অতীত ঘাঁটতে হয় না। নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক স্বপ্ন যখন ভেঙে গেল সামান্য ‘একটা না গ্রহণ করা টাকার জন্য’Ñ তখনো এমনটাই ঘটেছিল। আর খানের রাজনীতিক ক্যারিয়ারের ওপর এই আঘাত এলো প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একটা অঘোষিত উপহার গ্রহণের জন্য। উভয় মামলাতেই, শাস্তির কঠোরতা কৃত ‘অপরাধ’-এর সঙ্গে যুক্ত করা যায় না।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ইসিপির সম্পদ বিবরণী দেওয়ার নিয়ম মানতে না পেরে বড় ভুল করেছেন ইমরান খান। তবে তোশাখানার মাসিক প্রতিবেদন দেখলেই বোঝা যাবে, যারা সরকারি পদে থেকে উপহার গ্রহণ করেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই একই অভিযোগ আনা যাবে।
এই প্রেক্ষাপটে, ইমরান খানকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া আদালতের পক্ষ থেকে একটু বাড়াবাড়িই বটে। আর পর্যবেক্ষকরা উদ্বেগ জানানো সত্ত্বেও, যে প্রক্রিয়ায় বিচার হলো, যেমন তাড়াহুড়ো করে রায় ঘোষণা হলো সেটাও সমস্যাজনক। অবশ্যই ইমরান খান আপিল করার অধিকার রাখেন এবং হয়তো তখন সাজা কমিয়েও দেওয়া হবে, কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
যেখানে গর্হিত বহু অপরাধেরই সাজা হয় না, সেখানে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়মিত এভাবে হয়রানি কেন করা হচ্ছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। এটা সেই দেশ যেখানে এ বছরই সংবিধান সংশোধন করে একটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার নিয়মটা বাতিল করা হয়েছে। এই প্রহসনের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরও কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি।
নওয়াজ শরিফ বা বেনজির ভুট্টো যেমন হননি, এইসব টেকনিক্যাল নকআউটে ইমরান খানও পাকিস্তানের জন্য অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবেন না। রাজনীতিবিদদের ভাগ্য নির্ভর করে তাদের নিজ নিজ আসনে। এই সহজ সম্পর্ক কোনো বাহ্যিক হস্তক্ষেপেই পাল্টাবে না। আগেও অন্তত দুবার এরকম পরীক্ষা করা হয়েছে, এবং সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে। রাষ্ট্র তবুও বারবার একই ভুল করে যাচ্ছে, যা শুধু দুর্বল সমাজ কাঠামোকে আরও দুর্বল করছে।’’
ইমরান খান ২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর চার বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় ছিলেন। পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর গত বছর একটি সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হন। সত্তর বছর বয়স্ক ইমরান খানের বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ে বিচারক হুমায়ুন দিলাওয়ার বলেন, তার অসততা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে।
অন্যদিকে ইমরান খানের আইনজীবী ব্যারিস্টার গোহর খান বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচারকে খুন করা হয়েছে, এবং তাদের যথাযথভাবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।
ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুত হওয়া, তার বিরুদ্ধে মামলা এবং এই গ্রেপ্তারের ঘটনা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে অদ্ভুতভাবে তুলনীয় হতে পারে। অদ্ভুত এ কারণে যে, বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দল উভয়ের সঙ্গেই পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হওয়া ঘটনাগুলোর মিল রয়েছে। প্রথমে ধরা যাক বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গ।
ইমরান খানের গ্রেপ্তার হওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিষয়টিকে পাকিস্তানের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। পাকিস্তানি গণমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, দেশটির কাছে ই-মেইলে বিষয়টি নিয়ে অবস্থান জানতে চাওয়া হলে এমনই মন্তব্য করে বাইডেন প্রশাসন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, পাকিস্তানকে গণতান্ত্রিক নীতি ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানাই আমরা। বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেমনটা হয়। এর আগে ইমরান খান একাধিকবার অভিযোগ করেছেন যে, তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে মার্কিন প্রশাসনের হাত রয়েছে। তবে এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিদেশি পরাশক্তিগুলোর পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থান নজিরবিহীনভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভুলে গেলে চলবে না গত মে মাসে যুক্তরাজ্য সফরের সময় বিবিসিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তিনি অবশ্য র্যাবের ওপর স্যাংশন আরোপের ঘটনায় এই মন্তব্য করেছিলেন। তারপর বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণা পরিস্থিতিতে আরও জটিল করে তুলেছে।
দ্বিতীয়ত, বিরোধীদের দমনে মামলার প্রসঙ্গ। পাকিস্তানের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ইমরান খানকে তোশাখানা মামলায় গ্রেপ্তার করা ছাড়াও দেশটিতে পিটিআই ও অন্য দলের রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে ইমরানের অনুপস্থিতিতে পিটিআইয়ের নেতৃত্ব কে দেবেন তা নিয়ে। একদিকে মামলা অন্যদিকে নেতৃত্বের প্রশ্ন। এ বিষয়টিও বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রয়েছে বলে অনেকের মনে হতে পারে।
দেশ রূপান্তরে রবিবার ‘মাঠের রাজনীতি আদালতে’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির কথাই ধরা যাক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এখন যে রাজনীতি চলছে তা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সরকার টিকে আছে বলে অভিযোগ করছে। অন্যদিকে সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ বলছে, অতীতে বিএনপি বিচার বিভাগকে দলীয় আঙিনা বানিয়েছিল।’
রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতির সঙ্গে মামলা, আদালত, শুনানি, জামিন, সাজার মতো অবধারিত বিষয় সমানতালে চলতে থাকে। দেশে সামরিক শাসন থেকে শুরু করে গত তিন দশকের বেশি সময়ের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার রাজনীতিতেও এ প্রবণতা দৃশ্যমান ছিল।
কাজেই অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানের প্রবণতা বহাল তবিয়তেই রয়ে গিয়েছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্টি দেশটিতে এমন হওয়ার কথা ছিল না। একদিকে বিদেশি হস্তক্ষেপ অন্যদিকে আইনের অপব্যবহারÑ যার কোনোটিই রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানকে বড় করে না।
দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশের রাজনীতিতে নীতি-নৈতিকতাবোধ কমে গেছে। আইনের শাসনেরও অভাব রয়েছে। এই আইনের শাসনের সঙ্গে আদালত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন জড়িত। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে যারাই ক্ষমতায় যায়, তারাই এগুলোর অপব্যবহার করে। যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণের কাহিনিরই যেন পুনরাবৃত্তি হয়ে আসছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একদিকে আদালতমুখিতা আরও বাড়বে, অন্যদিকে বিদেশি শক্তিগুলোর নিজেদের হিসাব মতো অবস্থান আরও বেশি করে জানান দেবে। এই পুরো পরিস্থিতির জন্য দায়ী দেশের রাজনীতিবিদরা, এটি তাদেরই ব্যর্থতা। নিজের দেশের শাসনব্যবস্থা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও যদি বিদেশিদের ডেকে আনতে হয়, নালিশ জানাতে হয়, সমাধান বাতলে দিতে হয়; তাহলে উন্নয়ন আর জিডিপির গল্পটা যে শুভঙ্করের ফাঁকি। অন্যদিকে, আইন-আদালতকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করা হলে আইনের শাসন যে আস্থা হারিয়ে ফেলে তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজনৈতিক বিষয়ে আদালতকে জড়িয়ে বিতর্কিত করার খেসারত সবাইকেই দিতে হয়। এ পরিস্থিতির অবসান হওয়া উচিত।
সবশেষে ইমরান খান ইস্যুতে ডনের এডিটরিয়ালের সূত্র ধরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলতে চাইÑ যে তরুণ এখনো গাইছে ‘আমার অবাক হওয়া বাকি/ করে জীবন আমায় অবাক’Ñ সেই তরুণই কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির খেলায় আর অবাক হন না।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
১৮৫৭-র সিপাহী বিদ্রোহের ভেতরে ঐক্যবদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার যে সারবস্তু ছিল ব্রিটিশ শাসকদের জন্য সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল ভয়ের আসল কারণ। ১৯৪২ সালে কংগ্রেস যখন ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ডাক দেয়, তখন মনে হয়েছিল নতুন ও আরও বড় মাপের একটি ১৮৫৭ বোধকরি আসন্ন। সুভাষ বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ তখন পূর্ব সীমান্তে উপস্থিত; এই বাহিনীও ১৮৫৭’র আদর্শেই দীক্ষিত ছিল, ছিল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এবং অসাম্প্রদায়িক। বিয়াল্লিশের পরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন আরও প্রবল হয়েছে; এবং ১৯৪৬-৪৭-এ তা দুর্দমনীয় আকার ধারণ করেছে। এই সময়ে নৌবাহিনীতে বিদ্রোহ, বিমান বাহিনীতে অস্থিরতা, সেনাবাহিনীতে আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতি সহমর্মিতা এসব দেখে ব্রিটিশ শাসকদের পক্ষে বুঝতে কোনো অসুবিধা হয়নি যে ভারতকে আর ধরে রাখা যাবে না, তাই নিজেদের হাতে-গড়া মধ্যবিত্তের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে, ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে তারা প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে প্রস্থান করেছে।
বিদেশি শাসক চলে গেছে, কিন্তু ১৮৫৭-তে মুক্তির যে স্বপ্ন জেগে উঠেছিল তা এখনো বাস্তবরূপ নিতে পারেনি। ভারতবর্ষ সেদিনও বহুজাতির দেশ ছিল, কিন্তু বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ তখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়িয়েছিল। সেদিন সাম্রাজ্যবাদীরা বিতাড়িত হলে সাম্প্রদায়িকতার ব্যাধিটা দেখা দিত না, জাতি সমস্যার মীমাংসা হতো, এবং খুব বড় যে-সমস্যাটা শ্রেণি সমস্যা, তার নিরসনের পথেও এগুনো যেত।
কিন্তু ১৮৫৭’র শিক্ষাটা আছে। সেটা কম ব্যাপার নয়। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইটা এখনো চলছে। ১৮৫৭ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, এই লড়াইয়ে আপসের কোনো স্থান নেই। বলছে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ঐক্য চাই, কেবল যে দেশের ভেতরে তা নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও। বিশ্বজুড়ে মানুষ ওই সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে, আমাদেরও সেখানে থাকতে হবে। মূল দ্বন্দ্বটা জনগণের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের, সেটা আমাদের দেশে যেমন সত্য, সত্য তেমনি বিশ্বব্যাপী।
ইংরেজ এসে এদেশের পুরনো সমাজব্যবস্থাকে ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়ে গেছে; সেখানে নতুন যে সমাজের প্রতিষ্ঠা ঘটেছে সেটা সরাসরি শোষণমূলক, তার চরিত্রটা পুঁজিবাদী, সেখানে ধনী কেবলি ধনী হবে, এবং দরিদ্র ক্রমাগত দরিদ্র হতে থাকবে। ইংরেজের প্রস্থান ঘটেছে, কিন্তু সমাজ বদলায়নি; রাষ্ট্র সমাজকে পাহারা দিয়েছে। তারপর আমরা দ্বিতীয়বার স্বাধীন হলাম, রাষ্ট্র আকারে বদলালো, কিন্তু ভেতরের স্বভাব-চরিত্রে বদলালো না, এবং সমাজ সেই আগের মতোই রয়ে গেল। ১৮৫৭-তে মুক্তির যে-স্বপ্নটা জেগে উঠেছিল সেটা হলো নিপীড়নমূলক সমাজকে বদলে সেখানে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার। গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা, এবং তার প্রাথমিক চাহিদা হচ্ছে অধিকার ও সুযোগের সাম্য। ১৮৫৭ ওই স্বপ্নের কথাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পাছে আমরা ভুলে যাই। ১৮৫৭ বলে, আন্দোলন ছাড়া মুক্তি নেই; এবং আন্দোলনকে কেবল স্বতঃস্ফূর্ত হলেই চলবে না, হতে হবে সুগঠিত, সুসংহত এবং যোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত।
২
কথা ছিল দিনবদলের, সেটা ঘটছে কি? না, ঘটছে না। এমনকি আওয়াজটা পর্যন্ত ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। তা লোকে কি সত্যি সত্যি আশা করেছিল যে দিনবদল ঘটবে? না, করেনি। অতীতের অভিজ্ঞতা তাদের আশাবাদী হতে শিক্ষা দেয়নি। তবে একেবারেই কাছে ছিল চারদলীয় জোটের যে দুঃশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গি তৎপরতায় মদদদান ও চোরাচালানি তৎপরতা ইত্যাদি কর্মব্যস্ততায় মানুষ এতটাই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল যে অন্তত ওই জোটের খপ্পরে আরও পাঁচ বছরের জন্য পড়তে হবে না এটা ভেবেই দলে দলে গিয়ে হাজির হয়েছিল ভোটকেন্দ্রে। এখন যতই সময় যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে যে দিনবদল ঘটবে না। যে হাওয়া ইতিমধ্যেই বইতে শুরু করেছে তা নরম নয়, গরম বটে, আরও যদি গরম হয় তাহলে মানুষ গভীর হতাশা ও ক্ষোভের ভেতর নিপতিত হবে, এমনটাই আশঙ্কা।
লোকে গণতন্ত্র চায় এবং স্বৈরাচার পছন্দ করে নাÑ তা সেই স্বৈরাচার সামরিক, তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নির্বাচিত যে ধরনেরই হোক না কেন। মহাজোট দেশে যথার্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিল। গণতন্ত্র জিনিসটা আসলে কী তা বোঝা মুশকিল, এবং সাধারণভাবে এটা বলা অসংগত নয় যে, গণতন্ত্র কী নয় তা বলা যতটা সহজ গণতন্ত্র কী তা বলা ততটা সহজ নয়। তার একটা কারণ গণতন্ত্রের ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে, আমরা শাসিত হয়েছি নানাবিধ স্বৈরাচারের দ্বারা, যা কখনো এসেছে প্রকাশ্যে অন্য সময়ে ছদ্মবেশে। তাছাড়া ওটাও সত্য যে, আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকব্যবস্থায় যথার্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তবে গণতন্ত্র বলতে কী বোঝায় না তা আমরা বিলক্ষণ জানি। সেটাও জেনেছি অভিজ্ঞতা থেকেই। যেমন আমরা জানি গণতন্ত্র মানে সংখ্যাগরিষ্ঠের একচ্ছত্র আধিপত্য নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার দম্ভে ও দাপটে জনগণের দুর্দশা যে কোন স্তরে গিয়ে পৌঁছতে পারে সে ব্যাপারে ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। মহাজোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিরঙ্কুশ, সেই বলে বলীয়ান হয়ে তারা আগের শাসকদের মতোই আচরণ করে চলেছে। এজন্য যে জনগণের ক্ষতি হবে তা নয়, যারা এখন দেশ শাসন করছেন তাদের জন্যও যে ব্যাপারটা বিপজ্জনক হবে তাতে সন্দেহ নেই।
গণতন্ত্রের জন্য একটি অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে স্থানীয় শাসন। স্থানীয় শাসনের অর্থ হলো ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। তার এই বিকেন্দ্রীকরণের মূল কথাটা হলো তৃণমূলে স্থানীয় মানুষেরাই নিজেদের দেখভাল করবেন, কর্তৃত্ব থাকবে তাদের হাতেই; কেন্দ্রীয় শাসন অবশ্য থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে, তবে সে শাসনের পরিধি যতটা খাটো হবে সমাজের ততটাই উপকার ঘটবে। স্থানীয়ভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠবে, স্থানীয় লোকেরা যতটা সম্ভব নিজেদের দায়িত্ব নিজেরাই নেবেন। কিন্তু শাসনক্ষমতার এই বিকেন্দ্রীকরণে এ পর্যন্ত কোনো সরকারই উৎসাহ দেখায়নি। অথচ আমাদের সংবিধানের ৪৯, ৫৯ ও ৬০ ধারায় পরিষ্কারভাবে বলা আছে যে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি কর্মচারীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অধীনেই থাকবে। বলা আছে, স্থানীয় শাসন স্থানীয় মানুষদের স্বার্থের তদারকি করবে; আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বও হবে তাদেরই। স্থানীয় সরকার কর আরোপ করা এবং নিজস্ব তহবিল রক্ষণাবেক্ষণের অধিকারও পাবে।
সংবিধানের অনেক কিছুই কাটাছেঁড়া করা হয়েছে, তবে স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত বিধানগুলো কিন্তু এখনো অক্ষতই রয়ে গেছে। তদুপরি বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতেই স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করেছিল। তাই আশা করা গিয়েছিল যে দিন বদলের হাওয়া ওইখান থেকেই বইতে শুরু করবে। চেয়ারম্যান উপ-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন; নতুন বিধি তৈরি করে স্থানীয় সরকারকে সুযোগ দেওয়া হবে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার। কিন্তু জাতীয় পরিষদে আইন পাস করে উপজেলায় সংসদ সদস্যদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সংসদ সদস্যরা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন, তাদের পাশ কাটিয়ে উপজেলা পরিষদ সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে না। এই ঘটনা কেবল যে অপ্রত্যাশিত তা নয়, অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জকও বটে। এমনিতেই রাজধানী অতিকায় হয়ে উঠেছে, গ্রামে কর্মের সংস্থান নেই, সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক; গ্রাম শুকিয়ে যাচ্ছে, পানির অভাবে তো বটেই, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের অভাবেও।
এই ঘটনা তাৎপর্যহীন নয় যে, জাতীয় সংসদের যে সদস্যরা এমন কোনো ইস্যু নেই যা নিয়ে বিভক্ত হন না, অথচ স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা হরণের বিষয়ে তাদের ভেতর কোনো অনৈক্য দেখা দেয়নি, তারা সমস্বরে সাড়া দিয়েছেন। এতে অবশ্য বিস্ময়ের কোনো ব্যাপার নেই। সংসদ সদস্যরা বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানি, নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ব্যাপারে যেমন একমত, উপজেলার ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তেমনি। তারা নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে চান, জনগণের ক্ষমতা কমিয়ে। আমরা মনে করি যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে এভাবে পর্যুদস্ত করা কোনো শুভ লক্ষণ নয়; এবং দাবি করি যে আইন সংশোধন করে ক্ষমতা উপজেলা পরিষদের হাতে অর্পণ করা হোক। সেটা না করলে দিনবদল তো হবেই না, বরঞ্চ উল্টোটাই ঘটবে।
সমাজে ভালো দৃষ্টান্তের বড়ই অভাব। সে দৃষ্টান্ত সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না, পাওয়া যাচ্ছে না শাসক শ্রেণির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছাত্রসংগঠনের কাছ থেকেও। দিনবদলের দায়িত্ব তাই তাদেরই নিতে হবে যারা দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক। মুশকিল হলো তারা সংগঠিত নন। জাতীয় নির্বাচনে দাঁড়ালে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়াটা অবধারিত। এতে বোঝা যায় যে তাদের পথটা টাকা খরচ করে এবং মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার নয়, তাদের পথটা হলো আন্দোলন।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মাত্র কয়েকদিনের হালকা ও ভারী বৃষ্টি। কৃষক ভাইয়েরা চাষযোগ্য ফসল বুননে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। বর্ষার বৃষ্টির জন্য কৃষকের অনেক চাহিদা ছিল। অন্যদিকে সারাদেশের মানুষ গরমে কাহিল হয়ে পড়ছিল। কৃষিজমি প্রখর রোধে চৌচির হয়ে যায়। কৃষকের কপালে বৃষ্টির পানির জন্য ভাঁজ পড়ছিল। এমন সময় গত কয়েকদিন থেকে বৃষ্টির দেখা মিলল। আকাশ থেকে বৃষ্টি নামল। জমির জন্য বৃষ্টির পানির দরকার। ফসল রোপণের জন্য বৃষ্টি দরকার। উৎপাদনের জন্য পানির প্রয়োজন। কৃষকের মুখে হাসি দেখছি। গাঁ-গ্রামের হাজার হাজার একর জমিতে এখন বর্ষাকালীন ফসলের জন্য পানির সন্ধান পেয়েছে। কৃষক এখন লাঙ্গল আর গরু নিয়ে বিলে জমি তৈরিতে ব্যস্ত। গ্রামে বৃষ্টির পানি জমি চুষে নিলেও শহরে তার ব্যতিক্রম অবস্থা। মাত্র কয়েকদিনের বৃষ্টির পানিতে চট্টগ্রাম শহরের অলিগলিতে পানি থইথই করছে। চট্টগ্রাম শহর এলাকার মার্কেট, বাজার, পানিতে ভাসছে। চকবাজার, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, খাজা রোড, জিইসি, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় বৃষ্টির পানিতে জনভোগান্তি চরম পর্যায়ে। রিয়াজউদ্দীন বাজারের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানির নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় লাখ লাখ টাকার মাল নষ্ট হয়েছে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি দোকানে পানি ঢুকে পড়েছে। নিত্যপণ্যের অনেক কাঁচামাল পানির কারণে নষ্ট হয়েছে। হাঁটু পানি এখন চট্টগ্রাম শহরের অলিগলিতে। স্কুল-কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে। চট্টগ্রামের মেয়রের বাসার গলি, বহদ্দারহাট ডুবে গেছে।
নগরীর যেসব ড্রেন, নালা, খাল রয়েছে তার সবই অপরিষ্কার। শহর এলাকার ৪১টি ওয়ার্ডের যত নালা-ড্রেন আছে সবই অপরিষ্কার। ময়লার সব উচ্ছিষ্ট নালায় জমাট বেঁধে স্তূপ হয়ে আছে। ২নং গেট থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত দুই পাড়ে যে ড্রেন আছে তা ময়লার স্তূপে ভরপুর। চকবাজার, কাপাসগোলা, কাঁচাবাজার, চট্টগ্রাম কলেজ এলাকা, সিরাজউদ্দৌলা রোড সংলগ্ন ড্রেনগুলোরও একই অবস্থা। ময়লার জমাটবাঁধা স্তূপ পানি নিষ্কাশন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, অলঙ্কার মোড়, এ কে খান মোড়, বড়পুলের পশ্চিম দিকের হালিশহর রোডসংলগ্ন ড্রেনসহ চট্টগ্রামের কোনো নালাই বর্ষার আগে পরিষ্কার করা হয়নি। পুরো সিটি এলাকার নালা-ড্রেন, ছোট খাল ময়লার পাহাড়ে পরিণত। প্রশ্ন হলো, তাহলে এই নালা, ড্রেন পরিষ্কার রেখে পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব কার? নিশ্চয় সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলের। তারা তো জানে বর্ষার সময়ে বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি হলে নগরীতে যে পরিমাণ পানি জমে তার নিষ্কাশন তো দরকার। সেই পানি কীভাবে নদী-সাগরে পৌঁছাবে, সেই পথ তো পরিষ্কার রাখতে হবে।
বর্ষার আগেই সব খাল, নালা, ড্রেন পরিষ্কার করার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। শহরের পানি যথানিয়মে খাল-বিল-নদী পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য সিটি করপোরেশনকে সময়মতো কাজ করতে হবে। আমার বিশ্বাস, সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ঠিকমতো এসব কাজ করছে না। ৩ মাস আগে আমি নিজে বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের পশ্চিম পাশের দুদিকের বড় নালার ময়লার স্তূপ এবং স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীদের নালা দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অবৈধ কর্মকা- নিয়ে পত্রিকায় লিখেছিলাম। লেখাটি সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গোচরেও আনা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই এলাকার সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।
নগরীর জলাবদ্ধতার কারণ, তার প্রতিকার ও সমাধান নিয়ে বহু প্রতিবেদন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। অথচ তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। ফলে নগরবাসীও জলাবদ্ধতার প্রতিকার পায় না। শহরের নালার ওপর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দৃশ্য তো জনপ্রতিনিধিরা সর্বদা দেখছেন। সেই এলাকার রাস্তা দিয়ে মেয়রসহ কর্মকর্তারা চলাচল করেন। স্থানীয় কাউন্সিলর চোখ দিয়ে দেখেন। দিনের পর দিন নালার ওপর দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছে কেউ। এতে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অস্থায়ী এসব দোকান টিকে থাকে কী করে? এসব থেকে চাঁদা নেয় কারা? সারা শহরে এসব অবৈধ দোকান থেকে কোটি কোটি টাকার চাঁদায় ভাগ বসায় কারা? নগরীর দোকন মার্কেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে সিটি করপোরেশনের ট্যাক্সের টাকা যায় কোথায়? সিটি করপোরেশনের কাজ কী। শুধু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, বিজ্ঞাপন আর মাইকিং করে জনগণকে আহ্বান করেই তাদের দায়িত্ব শেষ? বাস্তবে সিটি করপোরেশন নগরীর জলাবদ্ধতা, ডেঙ্গু প্রতিরোধ, মশার উপদ্রব, নগরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে উদাসীন। কাজের চেয়ে কথা বেশি। যা বলে তা করে না। জনগণ আঙুল দিয়ে করপোরেশনকে দেখিয়ে দিলেও তা করার জন্য এগিয়ে আসে না।
বছর বছর এই জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম নগরীর ৮০ লাখ মানুষের শহরটি কীভাবে তার ঐতিহ্য ধরে রাখবে। এখানে শত শত বিল্ডিং, বাসা, বহুতল ভবন, বাণিজ্যিক মার্কেট প্রতিদিন গড়ে উঠছে। এসব বাসা, বিল্ডিং প্রতিষ্ঠানের ময়লা, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা কী? নির্মাণ নীতিমালা মেনে এসব তৈরি কিনা তার তদারকি কী আছে? সঠিক নিয়ম মেনে এসব হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তারা এগুলো যথাযথ তদারকি করে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।
নালার ওপর দোকান মার্কেট, পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করার অবসান দরকার। বিল্ডিং মার্কেট তৈরি করার সময় যথাযথভাবে নালার জন্য জায়গা রাখতে হবে। ময়লার জন্য নির্দিষ্ট স্থান তৈরি করে নিজ নিজ বাসাবাড়ির ময়লা রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সব দিক বিবেচনা করে বিল্ডিং মার্কেট তৈরির অনুমোদন দেওয়া উচিত। এসব বিষয়ে কঠোরভাবে তদারকির অভাব ও উদাসীনতায় আজকে চট্টগ্রাম শহর অপরিষ্কার, জলাবদ্ধতার নগরীতে পরিণত হচ্ছে। পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সঠিকভাবে আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকেই অপরাধ করে পার হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পানি নিষ্কাশন, নালার ওপর গড়ে ওঠা দোকানপাট উচ্ছেদ করতে হবে। বিল্ডিং মার্কেটের পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রেখে বিল্ডিং তৈরি করতে হবে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রাণ। সারা দুনিয়ার নানা পেশার মানুষ চট্টগ্রামে ব্যবসার জন্য আসছে। চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দেখতে যায় পৃথিবীর মানুষ। জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগ জোগানদাতা চট্টগ্রামকে সব সময় গোছানো, পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব রাখতে হবে। খাল-বিল, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বতঘেরা এ চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অহঙ্কার ও পর্যটন এলাকা।
লেখক : সংগঠক ও লেখক
দেশে এমন কোনো পেশা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যেখানে ছড়াছড়ি নেই ভুয়াগোষ্ঠীর। বিশেষ করে, যে সমস্ত পেশায় সার্টিফিকেটের বিষয় থাকে এবং সমাজে যার চাহিদা বেশি দেখা যায়, সেই সমস্ত পেশায় ভুয়াদের দলবদ্ধ আগ্রাসন প্রবল। এখন আবার পশু চিকিৎসা নিয়েও শুরু হয়েছে! ভুয়া ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ বা সেনাবাহিনী পরিচয় দিয়ে প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে হাঁটা বেশ কঠিন। এই ভুয়াচক্রের সদস্য প্রায়ই গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। কিন্তু তারপর?
কী ধরনের শাস্তি হয়, তাদের বিরুদ্ধে? জানা যায় না। এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যাতে কোনো পেশার ভুয়া পরিচয় নিয়ে কেউ সগর্বে ঘুরতে ভয় পাবে! যে কারণে পশু ডাক্তার না হয়েও, তাদের পরিচয়েই একটি চক্র গড়ে উঠেছে দেশে। তারা যুব উন্নয়ন থেকে পশুপালন কোর্স সম্পন্ন করেন, স্বল্প সময়ে। এরপর নিজেকে পরিচয় দেন, ‘পশুর ডাক্তার’ হিসেবে!
দুটো বিষয় একবারেই আলাদা, একটি ভেটেরিনারি আরেকটি অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি। সেখানে পশুপালন ও পশুচিকিৎসক এই দুই পরিচয়েই ভুয়া দল শুধু পশুপালনের স্বল্পকালীন ট্রেনিং নিয়ে সগর্বে বলেন- আমি একজন ‘পশু ডাক্তার’! এইরকম ভুয়ারা মিলে দেশব্যাপী গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেট। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তির উদাহরণ নেই। কঠোর কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই আজ তারা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সর্বত্র। এ বিষয়ে রবিবার দেশ রূপান্তরে ‘ভুয়া পশুচিকিৎসক সিন্ডিকেট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলাা হচ্ছে পাবনায় ভুয়া পশুচিকিৎসকদের প্রতারণায় সর্বস্ব হারাচ্ছেন প্রান্তিক গো-খামারিরা। কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই পশুপালনের জন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েই লিখছেন ব্যবস্থাপত্র, পুশ করছেন অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশনও।
সম্প্রতি পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত এক খামারি মামলা করলে প্রতারণার এ চিত্র উঠে আসে। এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশের প্রমাণও মিলেছে। স্থানীয়রা জানান, গো-খামার অধ্যুষিত চাটমোহরে প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের পর দিন প্রকাশ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছে ভেটেরিনারি ওষুধ ব্যবসায়ীদের একাধিক সিন্ডিকেট। ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের দাপটে মুখ খোলার সাহস নেই খামারিদের। এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আল মামুন হোসেন মন্ডল বলেন, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের স্বল্পতায় যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই চিকিৎসা দেন, এটি গুরুতর অপরাধ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই যে ‘ব্যবস্থা নেওয়া হবে’, এমন গা-ছাড়া গতানুগতিক কথাই তাদের স্পর্ধার কারণ। সিন্ডিকেট চক্র জানে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে! তারা এও জানে, এইসব কথাবার্তা বলতে হয়। না হলে কি হতে পারে? লোকলজ্জা বলেও তো একটা কথা আছে! কিন্তু তারপর অদৃশ্য কারসাজিতে সবকিছু ম্যানেজ হয়ে যায়। যে কারণে ভুয়াচক্র কোনোভাবেই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে না। যথাযথ আইনের প্রয়োগ না হওয়াতেই, এই দুষ্টচক্রকে সম্ভব হচ্ছে না বিনাশ করা।
সেই যে প্রচলিত প্রবাদ ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা?’ চারদিকে যখন ‘ভুয়াতন্ত্রের’ বিস্তার এবং প্রভাব, তখন একমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষেই সম্ভব তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। কোনো খামারি বা একজন কৃষকের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। চাষের একমাত্র সহায়-সম্বল যখন গবাদি পশু, তখন এইসব ভুয়া পশুচিকিৎসকদের ফাঁদে পড়ে ভুল চিকিৎসায় সেই পশুর মৃত্যুতে নিঃস্ব হচ্ছেন খামারি বা কৃষক। সেখান থেকে পরিত্রাণের পথ কে সন্ধান করবে?
অন্তত দেশের ডেইরি শিল্প-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো এইসব প্রতারক পশুচিকিৎসকের হাত থেকে রক্ষা করা একান্ত জরুরি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। ভুয়া পশুচিকিৎসক সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে যা করা দরকার, তাই করা হবেÑ এমনই প্রত্যাশা। আমরা শুধু প্রত্যাশা করেই যাই, কর্তৃপক্ষ হয়তো কোনো উদ্যোগ না নিয়ে তারাও প্রত্যাশা (!) করেই যান- যে কারণে কোনো সিন্ডিকেটেরই পতন হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের শুধু উত্থানই হয়!
কবি সুফি মোতাহার হোসেনের জন্ম ফরিদপুরে ১১ সেপ্টেম্বর ১৯০৭ সালে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ হাশেম। ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে তিনি এন্ট্রান্স, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে এফএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে প্রথম বিভাগে বিএ পাস করেন। ফরিদপুর জজকোর্টে তার কর্মজীবন শুরু হয়। বছর দুয়েক পরে তিনি নিউরেস্থিনিয়া, ডিসপেপশিয়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগ ক্রমেই মস্তিষ্কে আঘাত করায় তার সারা দেহ অবসন্ন হয়ে পড়ে। সুস্থ হওয়ার পর শুরু করেন শিক্ষকতার জীবন। মাদারীপুর ও ভাঙ্গা পাইলট হাইস্কুল, ময়েজউদ্দীন হাই মাদ্রাসা ও পটুয়াখালী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঈশান ইনস্টিটিউশনে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় ও যোগাযোগ সূত্রে সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ হন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত বাংলা কাব্যপরিচয় পাঠ্যপুস্তকে তার ‘দিগন্ত’ নামক সনেট স্থান পায়। ১৯৬৫ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ সনেট সংকলন প্রকাশিত হয়। পরে সনেট সঞ্চয়ন, সনেটমালা ইত্যাদি নামে তার আরও দুটি সনেটগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। প্রেম, প্রকৃতি ও মানবতা তার সনেটের মূল প্রতিপাদ্য। ১৯৬৫ সালে তিনি আদমজী পুরস্কার, ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার এবং ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ৭ আগস্ট ঢাকায় তার মৃত্যু হয়।
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।