
বঙ্গভূমি এখন বাহাদুরির ও চাটুকারিতার। এখানে হাতি, পাখি, নদী, বন, কোনো কিছুই নিরাপদে নেই, সবচেয়ে কম নিরাপদে আছে মানুষ। বাংলাদেশের বাহাদুরি এখন মানুষকে রক্ষা করাতে নয়, অবমাননা ও হত্যা করাতে। চাটুকারিতা এ দেশে নতুন কোনো ব্যাপার নয়, কিন্তু এখন প্রকাশ্যে, গণমাধ্যমের সাহায্যে, যে ধরনের চাটুকারিতা চলছে তেমনটা আগে কখনো দেখা যায়নি। খ্যাতিবান, বিদ্বান, বুদ্ধিমান লোকেরা এ কাজ করেন লজ্জাবিহীনভাবে। চাটুকারিতা পরিণত হয়েছে বাহাদুরিতে। চাটুকারিতা চলে সরকারের এবং চলে সরকার যে-ব্যবস্থার কারণে টিকে থাকে সেই ব্যবস্থার। মোটরসাইকেল তাকে একটা কিনে দেওয়া হয়েছিল, আরও দামি একটা চাই, না পাওয়াতে কিশোর পুত্রটি তার বাবা ও মায়ের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। দগ্ধ বাবা মারা গেছেন, মা যন্ত্রণায় কাঁদছেন। এ রকম খবর কোনো প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করে বলে মনে হয় না। ধরে নেওয়া হয় এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। কেননা প্রতিনিয়ত এ রকমের ঘটনা ঘটছে, পরেরটির ভয়াবহতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগেরটিকে। বাবা মারছে মাকে, মা মেরে ফেলছে ছেলেকে। সহিংসতা এখন ঘরে ঘরে। প্রতিক্রিয়া জানাবার ফুরসৎ নাই।
কেবল যে হত্যা তা তো নয়, আত্মহত্যার সংখ্যাও বাড়ছে। আত্মহত্যাকারীদের কাপুরুষ বলার রেওয়াজ আছে। তারা পরাজিত, জীবনের ভার বহন করতে অক্ষম, তাই নিজেই নিজেকে হত্যা করছে, এ ব্যাখ্যা মোটেই অযথার্থ নয়। কিন্তু আত্মহত্যা করতে সাহসও লাগে, কাজটা সহজ নয়, এবং মানুষের জীবন দুটি নয়, একটিই। বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা শুরু হয়েছিল, এই তৎপরতার সবচেয়ে বিপজ্জনক দিকটা হলো এই যে, জঙ্গিরা আত্মহত্যায় ভয় পায় না। ওইখানে তারা খুবই সাহসী। আর যে লোক মরতে সাহস করে তাকে বাঁচায় কে, তার হাত থেকে বাঁচেই বা কে?
তবে এটা ঠিক যে, আত্মহত্যার মূল কারণ হলো হতাশা। দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা যে বাড়ছে তার কারণ হতাশা বাড়ছে। হতাশ যারা তারা সবাই আত্মহত্যা করে না, অধিকাংশই জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দুলতে থাকে, ঝিমায়, বোঝা হয়ে পড়ে নিজের কাছে, এবং সংসারের কাছে। দুঃসহ যন্ত্রণায় যারা স্থির থাকতে পারে না তারাই দুঃসাহসী পদক্ষেপটা নিয়ে ফেলে, শেষ করে দেয় নিজেকেই। এ রকম লোকের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। তুলনায় মেয়েরাই ওই পথে বেশি সংখ্যায় যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক যে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছিল এবং চিরকুটে লিখে রেখে গেছিল যে, তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, সে তো অভিযুক্ত করে রেখে গেল তার সব উত্ত্যক্তকারীদের, যাদের মধ্যে অতি আপন বলে যার ওপর সে ভরসা করেছিল সেও আছে। লোকটিকে সে বিয়ে করেছিল ভালোবেসে। মেয়েটি তো আকাশের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল না। আত্মহত্যা করছে এখন বাংলাদেশের কৃষকও। জীবনের বোঝা তাদের অনেকের কাছেই এখন ভয়াবহ এক যন্ত্রণা। পরিসংখ্যান সব খবর সঠিকভাবে দেয় না, তবু যা দিচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে আগে যেখানে বছরে গড়পড়তা দশ হাজার মানুষ নিজের প্রাণ নিজের হাতে শেষ করে দিয়েছে, সেখানে গত বছরে তাদের সংখ্যা ছিল পনেরো হাজার। আগামী বছরে এ সংখ্যা বাড়বে না, এমন মনে করার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই।
মার খাচ্ছে প্রকৃতিও। পৃথিবীজুড়ে পুঁজিবাদী কুঠার প্রকৃতিকে নিত্যদিন রক্তাক্ত করছে। মুনাফার লোভে, মুনাফার খোঁজে। প্রকৃতিরও প্রাণ আছে, সে মরে যেতে প্রস্তুত নয়, ঘা দিলে সেও ফিরতি ঘা দিতে চায়, দিচ্ছেও। ধরণী তপ্ত হয়েছে, সমুদ্রের পানির স্তর ওপরে উঠছে। খরা, প্লাবন, টাইফুন সবই দেখা দিয়েছে মারাত্মক আকারে। বিপন্ন প্রকৃতি সবাইকেই আঘাত করতে চায়, কিন্তু তার সেই আঘাতে গরিব মানুষই মারা পড়ে সবার আগে। মারা পড়ে গরিব দেশও। বাংলাদেশে প্রকৃতি প্রতিশোধ গ্রহণের অভিনব কিছু প্রকাশ দেখা যাচ্ছে। বৃক্ষমানব ও বৃক্ষশিশুর খবর পাওয়া গেছে। বৃক্ষ উৎপাটিত হচ্ছে, উৎপাটিত হয়ে সে বুঝি ঢুকে পড়ছে এমন কি মানুষের দেহের ভেতরও। প্রতিশোধ, নাকি আশ্রয়ানুসন্ধান? ওদিকে জন্মবৃদ্ধ মানুষেরও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সাধারণত অতিদ্রুতই বৃদ্ধ হই, এবং বৃদ্ধ অবস্থায় শিশুর মতো আচরণ করি। এটা ঐতিহাসিক সত্য। কিন্তু শিশু জন্মাচ্ছে বার্ধক্যের লক্ষণ নিয়ে অথবা চার বছর বয়সের শিশু ষাট বছরের বৃদ্ধের অবয়ব পেয়ে যাচ্ছে এটা নতুন ঘটনা। এ কী সমগ্র দেশের ভেতরের ক্লান্তির প্রতীকী প্রকাশ? বাংলাদেশে তারুণ্য ভীষণভাবে বিপদগ্রস্ত এবং বার্ধক্য মানসিকভাবে সন্তুষ্ট থাকছে না, শারীরিক রূপ পরিগ্রহ করছে, জন্মবৃদ্ধের আগমন হয়তো এই বাস্তবতারই প্রতীক। বায়ুদূষণের কারণে এক বছরে মারা গেছে সাঁইত্রিশ হাজার মানুষ। বজ্রপাত আমাদের জন্য নতুন কোনো ঘটনা নয়; বজ্রপাতকে অভিশাপ হিসেবেই দেখা হতো। তোমার মাথায় ঠাটা পড়–ক, এমন কামনা শত্রুর জন্য করাটা নিয়ম ছিল আমাদের সমাজে; এখন প্রকৃতিই ঠাটা ফেলছে, শোধ নিচ্ছে মানুষের ওপর। এই গরিব দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। একদিনেই সাতাশজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল, সেদিন সড়ক দুর্ঘটনাতেও অতজন প্রাণ হারায়নি। মারা গেছে যারা তারা সবাই গরিব মানুষ, আশ্রয়হীন, অথবা বিপজ্জনক স্থানে বসবাসকারী। প্রকৃতি শোধ নিচ্ছে, তবে প্রকৃতিও দেখা যাচ্ছে ধনীদের সমীহ করে, অথবা বাধ্য হয় সমীহ করতে। প্রকৃতিও ধনীদের মতোই, গরিবের ওপরই চোটপাট করে বেশি বেশি করে। গরিব দেশের গরিবদের মারে সে অতিসহজে। গরিবের বিপদ চতুর্দিকে।
উন্নতি তো হচ্ছে। অবশ্যই। কিন্তু সে উন্নতির চরিত্রটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সেটা প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির মতোই, পাবলিকের রেলওয়েকে যে কোণঠাসা করতে ভালোবাসে। এই উন্নতি হাই-রাইজ বিল্ডিংয়ের, চারদিকে যার দুঃসহ ট্র্যাফিক জ্যাম; পথ অবরুদ্ধ, যেমন প্রবেশের তেমনি নির্গমনের। ঢাকার মেয়রদের একজন ঘোষণা দিয়েছিলেন ফুটপাত থেকে হকাররা উঠে না গেলে উন্নয়নের স্বার্থে তাদের ওপর দিয়ে তিনি বুলডোজার চালিয়ে দেবেন। এখানকার সব উন্নতিই ওই বুলডোজার-মার্কা। পুঁজিপাট্টা হারিয়ে সন্ত্রস্ত হকাররা কাঁদতে কাঁদতে উঠে যাবে বুঝলাম, কিন্তু যাবেটা কোথায়? খাবে কী? সে চিন্তা অন্য কারও নয়, হকারদের নিজেদের ছাড়া।
উন্নতির অন্তর্নিহিত দর্শনটা পুঁজিবাদী, এই দর্শনের বাস্তবায়নে যত উন্নতি হবে তত বাড়বে বৈষম্য। হকার উচ্ছেদ হবে, দেখা দেবে শপিংমল, যেখানে গরিব মানুষ কেনাকাটা দূরের কথা, ঢুকতেই সাহস পাবে না। বলা হচ্ছে ভিক্ষুক উচ্ছেদ করা চাই, কিন্তু মানুষ কেন ভিক্ষুক হয় সেটা ভাবা হচ্ছে না। ধনীর উন্নতি যে গরিবের ভিক্ষাবৃত্তির কারণ সেটা তো মিথ্যা নয়। তাহলে? তা ছাড়া আমাদের ধনীরাও তো মনে মনে বড় বড় ভিক্ষুক, তারা বিদেশের মুখাপেক্ষী, ক্ষণে ক্ষণে বিদেশে যায়, পারলে স্থায়ী বসতি গড়ে। রাষ্ট্রের মালিকরা হাত পেতে বসে থাকেন বিদেশি সাহায্যের আশায়। শাসক শ্রেণিকে ভরসা করতে হয় বিদেশিদের সমর্থনের ওপর, বিনিময়ে তারা দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেন প্রতিযোগিতামূলকভাবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নতির দৃশ্যমান ছবি পাওয়া যাবে। শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু গুণ? শিক্ষামন্ত্রী জিপিএ ৫-এর বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবছর সন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন, কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেল তিনিও সংশয়ে পড়েছেন, বলছেন শুধু পরিমাণে কুলাবে না গুণগত মানও বৃদ্ধি করা চাই। মান কিন্তু বাড়েনি, ধারণা করা হয় যে সেটা নিম্নগামী। ধারণা নয়, প্রত্যক্ষ প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। এইচএসসিতে সেরা ফল করেছে যারা তারাই কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার মতো বুকের পাটা রাখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও সামাজিকবিজ্ঞান শাখায় এ বছর ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়েছিল ৩৩ হাজার, পাস করেছে ৩ হাজার, ৩০ হাজারই ফেল। শিক্ষামন্ত্রীর সেটা অজানা থাকার কথা নয়।
না, মানবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। শিক্ষার কেন্দ্রে থাকেন শিক্ষক। উপযুক্ত শিক্ষক যে আমরা পাচ্ছি না সেটা বলাই বাহুল্য। শিক্ষকের নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ ও দলীয় পক্ষপাতিত্বের প্রমাণিত অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগের নতুন এক পদ্ধতি চালু করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। পদ-প্রার্থীদের নাকি লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে ও সংগ্রহ করতে হবে পুলিশের সার্টিফিকেট। যার সরল অর্থ দাঁড়াবে মেধাবীদের শিক্ষক হতে নিরুৎসাহিতকরণ। মেধাবান ও পরীক্ষিতদের জন্য পুনরায় লিখিত পরীক্ষা অমর্যাদার ব্যাপার। আর পুলিশের রিপোর্ট তো ভীষণরকমের বিপজ্জনক। লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা কোনোকালেই ছিল না। গোয়েন্দা রিপোর্ট পাকিস্তান আমলে চালু ছিল, এবং ওই ধরনের কার্যক্রম চালু থাকাটা ছিল অন্যতম কারণ, যে জন্য ওই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমাদের বিক্ষোভ গড়ে উঠেছিল এবং রাষ্ট্রটি ভেঙে আমরা বের হয়ে এসেছি। এখন চেষ্টা চলছে পুরনো ব্যবস্থাকে ফেরত আনার। এই পুলিশি কার্যক্রম দুর্নীতি ও উৎপীড়ন উভয়কেই প্রসারিত করে দেবে। আমরা আশা করব সিদ্ধান্তটি বাতিল করা হবে, কিন্তু ভরসা করি না, কারণ প্রতিবাদকারীদের সংখ্যা ক্রমে কমছে, তদবিপরীতে সংখ্যা বাড়ছে চাটুকারদের।
বিশ্ববিদ্যালয় তো পরে আসবে, শিক্ষার ভিত্তিটাই তো দুর্বল। প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, মাধ্যমিক শিক্ষা অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত। শিক্ষকদের মান এবং ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত উন্নত না হলে শিক্ষার মান বাড়বে এ রকম ভাবার কোনো কারণই নেই। নিয়োগ সুষ্ঠু নয়, নিয়োগের পরে প্রশিক্ষণ নেই। জবাবদিহিতা উঠে গেছে। প্রতিবেদন বলছে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার ভেতর বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে খারাপ। বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দ কোনো মতেই বাড়ানো যাচ্ছে না।
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের উত্তর জনপদের অন্যতম শিল্পনগরী বগুড়া। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরই বগুড়াকে শিল্পের বিকাশে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর যথেষ্ট কারণও আছে। একটি অঞ্চল শিল্পোন্নত হতে হলে যে সুযোগ-সুবিধা আর সম্ভাবনা দরকার তার সবটাই আছে উত্তরের এই প্রবেশদ্বারে। তারপরও কেন জানি রহস্যজনক ভাবে দিনের পর দিন অবহেলিত এই জনপদ। তবে ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক দিয়ে বগুড়ার মানুষকে কিন্তু সৌভাগ্যবানও বলা যেতে পারে। করতোয়া, নাগর, বাঙ্গালী আর যমুনার মতো বড় ৪টি নদী বয়ে গেছে বগুড়ার বুক চিরে। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এরপরও কেন অবহেলিত এই পুন্ড্রনগর?
কারণটা হলো এ অঞ্চলের মানুষ ৪টি নদী পেলেও কোনোটিরই সঠিক ব্যবহার হয়নি। আজকের প্রবন্ধে যমুনা নিয়ে বলতে চাই। ২০২১ সালের ১২ আগস্ট বহু প্রত্যাশিত বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও জামালপুরের মাদারগঞ্জের সঙ্গে যমুনা নদীতে চালু হয় ফেরি সার্ভিস। সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের জামথল ঘাটে প্রধান অতিথি হিসেবে ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তখন যমুনাপাড়ে ঢল নেমেছিল অসংখ্য মানুষের। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন ঠিক কতটা প্রাণের দাবি ছিল যমুনা নদীতে চালু হওয়া ফেরি সার্ভিস।
এই সার্ভিসের ফলে নৌপথ হয়ে ঢাকার সঙ্গে বগুড়ার দূরত্ব কমেছিল ৮০ থেকে ৮৫ কিলোমিটার। উদ্বোধনী বক্তব্যে খালিদ মাহমুদ বলেছিলেন, ‘এটি বাস্তবায়িত হলে যমুনাপাড়ের মানুষের জীবনমান পাল্টে যাবে।’ কিন্তু বাস্তবতা হলো সেটি বাস্তবায়নও হয়নি, যমুনাপাড়ের মানুষের জীবনমানও পাল্টায়নি।
কারণ পুরনো ইঞ্জিনের কারণে ২৩ আগস্ট ফেরিটি প্রথম দফায় বিকল হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড থেকে কারিগরি দল ইঞ্জিন সারানোর পর ৩১ আগস্ট এটি পুনরায় চালু হয়। এক মাস না যেতেই ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রী নিয়ে মাঝনদীতে আবার বিকল হয় সি-ট্রাকটি। পরবর্তী সময়ে এই পথের সি-ট্রাকটি সরিয়ে নেওয়া হয়। এতে প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত টাকা খরচ করে নৌকায় চলাচল করতে গিয়ে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ফেরি চলাচল করলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কার, মাইক্রোবাস, মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন শিল্পজাত পণ্য ও কাঁচামাল আনা-নেওয়ার দূরত্ব, সময় আর অর্থ সবই হ্রাস পেত। ফেরিতে ৪৫ মিনিটে যাত্রীরা নদী পার হতে পারত। বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ আশপাশের জেলার সঙ্গে বগুড়া জেলার যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হতো।
নদীর নাব্য সংকটের কারণে একেবারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সম্ভাবনা জাগানো ফেরিটি। সেই সঙ্গে যেন মুখ থুবড়ে পড়ে উত্তরের লাখ লাখ মানুষের নৌপথে যাতায়াতের স্বপ্ন। তবে এখানেই শেষ নয়। সুযোগ, আর সম্ভাবনা এখনো আছে। নদীর নাব্য সংকট কাটাতে পারলে হয়তো আবারও হাসি ফোটানো সম্ভব যমুনাপাড়ের মানুষদের। আর সেটি সম্ভব হলে এ অঞ্চলের মানুষের উৎপাদিত কৃষিপণ্য, ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রীসহ অন্যান্য পণ্য স্বল্প সময় ও কম খরচে রাজধানীসহ আশপাশের জেলায় নিতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু সেতু পথে যেতে না হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ কমবে।
উত্তরে নদী ঘাট নিয়ে আমাদের রয়েছে সোনালি অতিত। ১৯১২ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে চালু হয়েছিল বাহাদুরাবাদ রেলঘাট। তখন ফেরিতে করে ট্রেন যাতায়াত করত। শুধু দেশে নয়, ইতিহাসের সাক্ষী এই ফেরি ঘাটটির পরিচিতি ছিল বিশ্বজুড়েই। বাহাদুরাবাদের বিশ্বখ্যাতি এনে দিয়েছিল একমাত্র এই ফেরি ঘাটটিই। পরবর্তী সময়ে ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ রেলঘাট পর্যন্ত ফেরি চলাচল শুরু হয়। বাহাদুরাবাদ রেল ফেরিঘাট থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন ও মালবাহী ওয়াগন চলাচল করত রাজধানী ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলে। সে সময় উত্তরাঞ্চলের মানুষের দক্ষিণাঞ্চলের যাতায়াত প্রধান মাধ্যম ছিল ফেরি সার্ভিস।
১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় যমুনা নদীর গতি পরিবর্তন হয়। ফলে নাব্য সংকট দেখা দেয়। নাব্য সংকটে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখ ঘাট থেকে বালাসী ঘাটে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে দিনাজপুর থেকে রংপুর হয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল অব্যাহত ছিল। সান্তাহার, বগুড়া, বোনারপাড়া হয়েও ট্রেনের যাত্রীরা এই ঘাট পারাপার হতেন। এমন ইতিহাসসমৃদ্ধ যমুনা উত্তর জনপদে এখন কেন অবহেলিত?
আসুন যমুনাপাড়ের এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীর গল্প শোনাই। তানভির ইসলাম, বাড়ি সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটফুলবাড়ি এলাকায়। লেখাপড়া করছেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তিনি বলেন, ‘নৌকায় ময়মনসিংহ যেতে ভয় লাগে। একবার গিয়েছিলাম। মাদারগঞ্জ নেমে জামালপুর হয়ে ভার্সিটিতে। তবে খুব ভয় লেগেছিল। তারপর থেকে ভার্সিটি যেতে এখন জেলা শহর বগুড়ার চারমাথা বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহের গাড়িতে যাতায়াত করি। ফেরি চালু হলে সহজে বাড়ি আসা যাবে।’ তানভিরের মতো এ অঞ্চলের আরও অসংখ্য ছেলে-মেয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। তাদের জন্য এই নৌ-বন্দর হতে পারে শুভকর সংবাদ।
উত্তরের এই নৌপথে ফেরি চালুর জন্য ফেরিঘাট নির্মাণ, সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, নাব্য ফেরাতে নদী খননসহ নদী সংস্কার ও উন্নয়নকাজে প্রকল্প গ্রহণের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল ইতিমধ্যে সারিয়াকান্দি ও মাদারগঞ্জ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল ফেরি চালুর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই করছেন।
এতকিছুর পরও ভাগ্য বদলাচ্ছে না উত্তর জনপদের মানুষের। সব জটিলতা কাটিয়ে আবারও নতুন করে চালু হবে যমুনার এই রুটে ফেরি চলাচল। শিল্পজাত পণ্য আর উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত কাঁচামাল দ্রুততম সময়ে নৌপথে ময়মনসিংহ হয়ে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছে যাবে। আর সারিয়াকান্দি হয়ে উঠবে উত্তরের অন্যতম নৌ-বন্দর। এমনটাই প্রত্যাশা করি।
লেখক : কলাম লেখক
শুরুর দিকে ব্রিকস নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। তবে পশ্চিমা উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর বাইরে ব্রিকস বর্তমানে একটি শক্তিশালী জোটে পরিণত হয়েছে। এ জন্য পুরো বিশ্বের নজর জোহানেসবার্গে হওয়া জোটের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলনের দিকে। দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত ৪০টিরও বেশি দেশ এই জোটে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ২২টি দেশ যুক্ত হওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে। বাংলাদেশও এই জোটে যোগ দিতে পারে বলে এর আগে আভাস পাওয়া গেলেও নতুন ছয়টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই।
বিশ্ব পরিস্থিতি বর্তমান সভ্যতায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজনীতির কৌশলও বদলাতে হচ্ছে। ইউক্রেন সংঘাতের পটভূমিতে এবং ব্রিকসের দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের দ্বৈত অবরোধ কৌশলের প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি বড়ই কঠিন। আশ্চর্যজনকভাবে সাম্প্রতিক অতীতে চীন এবং রাশিয়া তাদের বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গিতে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে এবং দৃঢ়ভাবে মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এ দুই বৃহৎ প্রতিবেশীর মধ্যে সীমাহীন বন্ধুত্ব ব্রিকসের অন্য সদস্যদের থেকে তাদের কিছুটা আলাদা করে দিয়েছে। এটি জোটের রসায়নকে প্রভাবিত না করে পারে না। যদিও তাদের বাস্তববাদ এবং বিচক্ষণতার দৌলতে যূথবদ্ধতার চেতনা অব্যাহত রয়েছে। বলে রাখা দরকার, অনেক দেশ ব্রিকসে যোগ দিতে চায় মূলত এ ধারণা থেকে যে, এটি বিশেষত ছোট এবং মাঝারি রাষ্ট্রগুলোর বিষয়ে অনেকটা ন্যায়সংগত এবং কম স্বার্থপর বিশ্ব শাসনকে সমর্থন করে। এটাকে ব্রিকসের এক প্রকার দ্বিতীয় স্তম্ভ বলেও আখ্যায়িত করা যায়। ভুলে যাওয়া উচিত নয়, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ব শাসনের সব অভিজ্ঞতা সাধারণ মূল্যবোধ এবং অংশীদারত্বমূলক স্বার্থের ভিত্তিতে তৈরি পশ্চিমা জোটের দখলে। তবে পরিহাসজনক হলো, এটি তাদের ব্লক মানসিকতায় আটকে দিয়েছে। তবে ব্রিকসের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং বিশ্ব এজেন্ডা সেট করার ক্ষমতার অভাব রয়েছে, যা জি-৭ কয়েক দশক ধরে করে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের নানা উদ্যোগকে ব্রিকস যে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে, তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, কূটনৈতিক দিক থেকে সেই নিষেধাজ্ঞাকে ব্রিকস প্রচ্ছন্নভাবে খাটো করেছে। এদিকে ডলারকে দুর্বল করে দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুদ্রার মর্যাদা থেকে তাকে নামিয়ে আনার চেষ্টাও ব্রিকস দেশগুলো করে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
ব্রিকস-এর নেতারা জোহানেসবার্গে যে দুই দিনের সম্মেলনে করলেন, ওয়াশিংটনের নীতি নির্ধারকরা সন্দেহাতীতভাবে ওই নেতাদের কথা খুব মন দিয়ে শুনেছেন। ব্রিকসের সদস্য হতে আগ্রহী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী ইরান, কিউবা ও ভেনেজুয়েলার মতো দেশও আছে। অর্থাৎ ব্রিকস দিন দিন যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে তাতে সন্দেহ নেই। এই অবস্থায় ওয়াশিংটন কী করবে এবং ব্রিকসের কাজকর্মের প্রতিক্রিয়া জানাবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দল উদীয়মান শক্তিদের জোটগুলো নিয়ে গবেষণা করে আসছে এবং তারা ব্রিকসের বিবর্তন প্রক্রিয়া ও তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে মূল্যায়ন করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, চীনা আধিপত্যের অধীনে থাকা ব্রিকস নামের এই গ্রুপ মার্কিন স্বার্থবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নের নীতি অনুসরণ করে থাকে বলে সাধারণভাবে যা বলা হয়ে থাকে, তা আসলে ঠিক নয়। বরং ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো অভিন্ন উন্নয়ন স্বার্থ ও বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থার অন্বেষণে পরস্পরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে যেখানে কোনো একক শক্তির আধিপত্য নেই। তবে এটি সত্য যে, ব্রিকসে জড়ো হওয়া দেশগুলো একটি শক্তিশালী গ্রুপে পরিণত হয়েছে, যা এখন ওয়াশিংটনের ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ আলজেরিয়া ও মিসরের মতো দেশগুলোও এখন ব্রিকসে যোগ দিতে চাইছে। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্রিকস নীতি তৈরি করা উচিত, যা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করতে পারে। ব্রিকস নীতি নিশ্চিত করতে পারবে যে যুক্তরাষ্ট্র এখন আর কোনো একক দেশের খবরদারির বিশ্বে নয়, বরং একটি বহুমুখী বিশ্বে অবস্থান করছে।
এবার ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কে ভারতের মনোভাব কিছু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ জোট সম্পর্কে ভারতের ধারণার মধ্যে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে। ধারণাটি হলো, ব্রিকস বিশ্বের সংশোধনবাদী কিছু শক্তির একটি জোট, যারা বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থার ধ্বংস চায় না; শুধু চায় এ ব্যবস্থায় তাদেরও স্বার্থ অন্তর্ভুক্ত হোক। তবে সময় থেমে থাকেনি। এরই মধ্যে বিশ্বায়ন মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত যে ব্যবস্থা এর ভিত্তিস্বরূপ কাজ করে, তা আদৌ অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়। একদিকে রাশিয়া ও চীন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে, বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সম্ভবত ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। উভয়ে মিলে প্রায় একটি জোট গঠন করেছে; ওয়াশিংটন যাকে শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারত্ব হিসেবে বর্ণনা করে। শুধু তা-ই নয়, চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এমনকি ভারতের জন্য সুবিধা বয়ে আনছে বললেও ভুল হবে না। চিপ শিল্পকে কেন্দ্র করে দুটি দেশের মধ্যে প্রক্রিয়াধীন ঘনিষ্ঠ বন্ধন এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হতে পারে। বলা যেতে পারে, এর ফলে ভারতের জীবনযাত্রা আরও ভালো হয়ে উঠতে পারে। তাই দেশটির এলিটদের পক্ষে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ধ্বংস দূর স্থান, এর মৌলিক পুনর্গঠনের জন্যও আগ্রহী হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। মূল কথা হলো, ব্রিকসের প্রভাব খাটিয়ে বিশ্বকে আরেকটু ন্যায়সংগত এবং স্থিতিশীল করা গেলে ভারত তাতেই সন্তুষ্ট থাকবে। আর এটি এক অবাস্তব স্বপ্নও নয়। কারণ ব্রিকস ইতিহাসের সঠিক দিকেই রয়েছে। এ জোটের সদস্যদের কারোরই এ দুর্নাম নেই যে, তাদের বিদ্যমান অর্থনৈতিক সুযোগ এবং রাজনৈতিক প্রভাব রক্ত ঝরিয়ে অর্জিত এবং কয়েক শতাব্দী ধরে সঞ্চিত এ সম্পদকে তারা আঞ্চলিক এবং বিশ্বব্যাপী আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে পরিচালিত করেছে। ফলে ভারত তার উদ্দেশ্য পূরণে বেশ সাবলীল বোধ করছে।
কেন জাতীয় বৈশিষ্ট্য, মূল্যবোধ এবং স্বার্থের এত ভিন্নতা সত্ত্বেও ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মিসর ও সৌদি আরবের মতো দেশ জোটটির প্রতি আকর্ষণ বোধ করে? এ দেশগুলো এমনকি এটাও মনে করে যে পাশ্চাত্যের কাছ থেকে বিশ্বশাসনের ব্যানার হস্তগত করার সামর্থ্য এ জোট রাখে। অবশ্য এ ধরনের প্রত্যাশা অযৌক্তিক। কারণ এটা সমগ্র আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার একটি নির্দিষ্ট পূর্বনির্ধারিত দিকমুখী বিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে রচিত, বাস্তবতা যাকে সমর্থন করে না। কাজেই এটা খুবই স্বাভাবিক যে আগামী দিনগুলোতে বিশ্বশাসনে ব্রিকস সত্যিকার অর্থে কতটা নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে, ব্রাজিল বা ভারত তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারে। সত্যি করে বললে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্রিকসের পক্ষে অতীতের সংশোধনবাদী আচরণটুকুও বজায় রাখা সম্ভব কিনা, তা নিয়েই অনিশ্চয়তা রয়েছে। সমস্যাটি ইউক্রেন সংঘাতের ফলাফল সম্পর্কিত নয়। এ যুদ্ধে রাশিয়া হারতে পারে না এবং হারবেও না। তবে এখানে গো-হারা হারলেও রাশিয়ার প্রতিপক্ষ বিশ্ব সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করবে, এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
যদি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্রিকস প্রসারিত হয়, তাহলে জোটের ঐক্য দুর্বল হতে পারে এবং পরিণামে জোটটি ঢিলা ও অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের ক্ষেত্রে এটাই হয়েছিল। এখানে বেশ কিছু কারণ জড়িত এবং বিরোধাত্মক মনে হলেও একটি প্রধান কারণ হলো, ভারতের ব্রিকস অংশীদার চীনের অভূতপূর্ব উত্থান, যা দেশটির অভ্যন্তরে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। নিরাপত্তার সমস্যা সমাধানের জন্য ভারত যে কয়েকটি উপায় কার্যকর মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্ব হলো সেগুলোর একটি। তবে ভারতের ব্রিকস অংশীদাররা জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি চালিয়ে যেতে সক্ষম বলে ভারত বিশ্বাস করতে পারে এবং তাদের তা করা উচিত। সব মিলিয়ে প্রশ্ন হলো- ব্রিকস কি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিকল্প অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক স্তম্ভ হিসেবে আবির্ভূত হবে? অথবা অভ্যন্তরীণ পার্থক্য কি গ্রুপটির সক্ষমতা সীমিত করতে পারে? বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিকস জোটের প্রভাব আরও বাড়তে পারে। তবে এটি নাটকীয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার প্রতিস্থাপন করতে পারবে বলে মনে হয় না। যদিও বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থায় খ- খ- অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বিকল্প তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তা ছাড়া এটি পশ্চিমের সঙ্গে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। যা হোক, এখন শুধুই অপেক্ষার পালা। বিশ্ব কি বিভক্তির দিকে যাচ্ছে, নাকি সমঝোতার মধ্য দিয়ে এগুচ্ছে?
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আব্দুল জব্বার। তার জন্ম ১৯৩৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায়। তিনি ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। গানের প্রতি ঝোঁক ছোটবেলা থেকেই। তিনি সংগীতের তালিম গ্রহণ করেন ওস্তাদ ওসমান গণি ও ওস্তাদ লুৎফুল হকের কাছে। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৬২ সালে তিনি প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে বিটিভির নিয়মিত গায়ক হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৬৮ সালে ‘এতটুকু আশা’ ছবিতে সত্য সাহার সুরে তার গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছো কভু’ গানটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরে ‘সারেং বৌ’ চলচ্চিত্রে ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটি শ্রোতাদের মন জয় করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা জোগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ও ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ অনেক প্রেরণাদায়ী দেশাত্মবোধক গানের গায়ক হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তার গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’সহ মোট তিনটি গান ২০০৬ সালে মার্চ মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নেয়। ২০১৭ সালে তার প্রথম মৌলিক গানের অ্যালবাম ‘কোথায় আমার নীল দরিয়া’ মুক্তি পায়। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে তিনি ভূষিত হন।
শিশুর সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিকাশের অন্যতম অপরিহার্য পূর্বশর্ত হিসেবে ধরা হয় স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন বা মৌলিক স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে। অন্যদিকে করোনা মহামারীর অভিজ্ঞতার আলোকে স্যানিটেশনের গুরুত্বের কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ, ইউনিসেফের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের অর্ধেকের বেশি প্রায় ৫২ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো মৌলিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি। এমনকি সরকার উদ্যোগ নিলেও তা অব্যবস্থাপনা, নির্মাণ ত্রুটি, অনিয়মের কারণে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরে ‘ওয়াশব্লক ফাঁকি যেতে হয় অন্যের বাড়ি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির কথাই ধরা যাক। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে চার শতাধিক স্কুলে স্বাস্থ্যসম্মত ওয়াশব্লক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। প্রকল্প অনুযায়ী, প্রতিটি ওয়াশব্লক ২৬ ফুট দীর্ঘ ও ১৩ ফুট প্রস্থের হওয়ার কথা। আধুনিক ওয়াশব্লকে উন্নতমানের দুটি কমোড, চারটি সাধারণ প্যান, দুটি বেসিন, দুটি প্রস্রাবখানা, দুটি ফুটওয়াশ, সাবমারসিবল পাম্পসহ পানির ট্যাংক, সেপটিক ট্যাংক এবং ভেতরে পুরোটাই উন্নতমানের টাইলসযুক্ত হওয়ার কথা।
ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে ২০১২ সাল থেকে শুরু হয় প্রকল্প। কিছু স্কুলে কাজ শেষে ওয়াশব্লক হস্তান্তর করা হলেও সেগুলো নিয়ে রয়েছে নানান অভিযোগ। কয়েকটিতে নির্মাণকাজ এখনো চলছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠায় কাজ বন্ধ রেখেছেন কয়েকজন ঠিকাদার। অনেক ওয়াশব্লকে একটি বা দুটি ছাদ ঢালাই দিয়েই ঠিকাদার উধাও! স্কুল বন্ধ থাকলে নির্মাণাধীন এসব ওয়াশব্লক মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতিতে এক নারী সহকারী শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি স্কুলে আসি সকাল ৮টার মধ্যে। সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আমাদের স্কুলে থাকতে হয়। স্কুলে ওয়াশরুম থাকতেও আমাদের অন্যের বাড়িতে যেতে হয়। এতে তারা বিরক্ত হয়। এরপরও যেতে হয়।’ এ বাস্তবতায় ছেলে শিক্ষার্থীদের তুলনায় মেয়ে শিক্ষার্থীরা বেশি বিড়ম্বনায় পড়ে। অনেক মেয়ে এজন্য স্কুলে যাওয়াও কমিয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অন্যের বাড়িতে গেলে অনেক সময় তাদের কাছ থেকে নানান কথা শুনতে হয়। অনেক সময় তারা বাথরুম চেপে রাখে, বাসায় গিয়ে সারে।
ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাজের টাকার অঙ্ক থেকে ২ থেকে ৩ শতাংশ দিতে হয়। আবার বিল পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ভিজিটে ও বিভিন্ন দিবসে তদারককারী কর্মকর্তাদের ‘খুশি’ করতে হয়। এসব কারণেই প্রকল্পে অনিয়ম বেশি হয়। এ ক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, জনপ্রতিনিধি কেউই দায় এড়াতে পারেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের ২৩ জুন স্যানিটেশন ব্যবহার উন্নয়নে ১১টি নির্দেশনা জারি করে। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাড়াতে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিকে টয়লেট ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের নির্দেশনাও দেওয়া হয়। অথচ তা মানা হয় না।
শুধু স্কুল-কলেজে নয়, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েও শৌচাগারের অবস্থা বেহাল। শিক্ষার্থীরা যদি দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখে তাহলে তাদের ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে। এ ছাড়া কিডনি, মূত্রথলির পাশাপাশি জরায়ুর ইনফেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পিরিয়ডকালীন সময়ে যদি টয়লেট ব্যবহার না করতে পারে তাহলে মেয়েরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। পয়োনিষ্কাশনের সঙ্গে শিশুর ডায়রিয়া ও খর্বকায়ত্বের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে ইউনিসেফ জানিয়েছে, অনুন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে ডায়রিয়া, অন্ত্রের প্রদাহ ও কৃমির মতো সমস্যা দেখা দেয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় মৌলিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অনুপস্থিতির বড় একটি নিদর্শন হলো মাদারীপুরের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি। এ ব্যাপারে কর্র্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যের বিষয়েও শিক্ষকদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে, পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝেও সচেতনতা তুলে ধরতে হবে। শিক্ষার্থীদের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার বিষয়ে কোনো আপস করা যাবে না। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক শৌচাগার থাকতে হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।