
পশ্চিম মিয়ানমারের ‘এনগা ইয়েন্ট চেঞ্জ’ গ্রামের বাসিন্দা আমি। সেখানে একটি সুখী, শান্তিময় শৈশব ছিল। বাবার ছিল সমৃদ্ধ দোকান। আম, নারকেল ও কলা গাছে ঘেরা একটি প্রশস্ত আঙিনার বাড়িতে থাকতাম আমরা। আমি, বাবা-মা এবং ছয়জন ছোট ছোট ভাইবোন। আমার শৈশবে কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেখিনি। মুসলিম হলেও প্রতিবেশী রাখাইনদের সঙ্গে বড় কোনো সমস্যা ছিল না। পাশের রাখাইন গ্রামে অনেক বন্ধু ছিল। গ্রামের মাঠে আমাদের দেখা হতো। আমরা ‘চিনলোন’ খেলতাম। অনেক মজা করতাম। আশা ও আনন্দে ভরা সুন্দর জীবন আজ কেবল অস্তপারের স্মৃতি। ছয় বছর ধরে সীমান্তের ওপারের বাংলাদেশের কক্সবাজার নামক একটি শরণার্থী শিবিরে বাস করছি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির বোধহয় এটাই। লক্ষাধিক মানুষ গাদাগাদি করে বাঁশ ও তেরপলি নির্মিত ক্ষুদ্র আশ্রয়ে মাথা গুঁজে আছে। প্রতিটি মুহূর্ত যেন সংগ্রামের। পর্যাপ্ত খাবার বা বিশুদ্ধ পানি তেমন থাকে না। প্রায়ই আগুন লাগছে, খুন হচ্ছে।
কীভাবে এখানে এসে পৌঁছলাম?
এর পেছনে দায়ী ফেসবুক এবং প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। তারা পরিস্থিতি উস্কে দিয়েছে, ফলে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আমাদের ওপর হামলে পড়েছে। তার পেজগুলো রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে সহায়তা করেছে। ফেসবুকের অ্যালগরিদম ভুল তথ্য প্রচার করেছে, যা একসময় বাস্তব সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। যদিও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ও রাখাইনদের উত্তেজনার ইতিহাস আজকের নয়। কিন্তু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ‘স্মার্টফোন ও ফেসবুক’ আমাদের জীবনে প্রবেশ না করা পর্যন্ত এবং রাজনীতিবিদ ও ধর্মান্ধরা ঘৃণাত্মক বক্তব্য না ছড়ানো পর্যন্ত দুই জাতির মধ্যে নিত্যনৈমিত্তিক শত্রুতা অন্তত ছিল না।
ফেসবুক যে ঘৃণার হাতিয়ার হতে পারে, ২০১২ সালে প্রথম বুঝেছি। আমার বয়স তখন এগারো। একদল রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে বৌদ্ধধর্মী এক মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ ওঠে। সেই জঘন্য অপরাধের সুরাহা তখন হয়নি। কোনো প্রমাণও ছিল না। তবু সমগ্র সম্প্রদায়ের ওপর দোষ চাপানো হয়। বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য ফেসবুক পোস্ট হতে থাকে। রাখাইন প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব শীতল হতে শুরু করে।
২০১৬ সাল নাগাদ ফেসবুকে রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব বাড়তে থাকে। ফলে তা নিপীড়নকে উৎসাহিত করে এবং বৈধতা দেয়। বিষয়টি আমার পরিবারে সরাসরি প্রভাব ফেলে। বাবা এবং কয়েকজন সচ্ছল রোহিঙ্গা থানায় হামলা করেছেন বলে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়ে। বড়সড় জরিমানার মুখে পড়েন তারা। জরিমানা না দেওয়ায় চাচা আবু সুফিয়ান ও তার ছেলে বুশাকে গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে কারাগারে পাঠানো হয়। ততদিনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ও ধর্মবিদ্বেষী পোস্ট ফেসবুকে অহরহ চলছে। ‘দেশ বাঁচাতে এবং অবৈধ বাঙালিদের তাড়াতে সমবেত হওয়ার আহ্বান’ জানানো পোস্টগুলো আমি নিজে দেখেছি। রাখাইন বন্ধুদের সঙ্গে ‘চিনলোন’ খেলার দিন শেষ হয়ে গেল। এমন প্রতিটি পোস্টে আমি রিপোর্ট করেছি, কিন্তু ফেসবুক কিছুই করেনি। উল্টা দাবি করেছে যে, উদ্দেশ্যমূলক এসব ঘৃণ্য পোস্ট এবং বার্তাগুলো নাকি ‘(ফেসবুকের) কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন করে না।’
এরপরই শুরু হয় হত্যাকাণ্ড। হামলা শুরু হয়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সকালের দিকে। তখন বয়স আমার মাত্র ১৫। ভালো ছাত্র ছিলাম। আইনজীবী হওয়ার আশা। এসএসসি পরীক্ষার পড়ার চাপ ছিল, তাই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছি। হঠাৎ শুনি গুলির শব্দ। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। ঘরেই থাকলাম। আওয়াজ চলল প্রায় ৩ ঘণ্টা। ততক্ষণে মিলিটারি চলে এসেছে। বাইরে বের হয়ে দেখি, বাজারের দোকান মালিক মোহাম্মদ শামীমের লাশ পড়ে আছে রাস্তায়। অভিযানের সময় নিরাপত্তা বাহিনী গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরক রেখে দেয়। বিপদ সম্পর্কে আমরা সচেতন ছিলাম না। হোসেন আহমেদ নামে গ্রামের একজন বোমায় পা দেয় এবং চোখের সামনেই বিকট বিস্ফোরণে সে মারা যায়। ভয়ে অনেকে জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি পরিবার পরদিনই বাংলাদেশে যাত্রা করে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়িতেই থাকব।
সামরিক বাহিনী গ্রামের অবশিষ্ট সকলকে রেড ক্রিসেন্ট অফিসের কাছে একটি মাঠে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দেয়। আমরা যাইনি। নিশ্চিত ছিলাম, গেলে তারা আমাদের মেরে ফেলবে। শুনেছি, অন্য গ্রামে তারা রোহিঙ্গাদের জবাই করছে। গ্রাম ছেড়ে তাই অন্য গ্রামে পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে কয়েক রাত থাকি। এক ফাঁকে বাড়ি ফিরে দেখি, কোথাও কেউ নেই। সর্বত্র সহিংসতার লক্ষণ ছড়ানো। অনেককে হত্যা করা হয়েছে।
মিয়ানমারে আর নিরাপত্তা নেই বুঝে পায়ে হেঁটে বাংলাদেশের পথ ধরি। চলতে চলতে দেখি অগণিত মৃতদেহ পড়ে আছে পরিত্যক্ত গ্রামে, রাস্তায়, ধানক্ষেতে। বেশির ভাগ বাড়িঘর পুড়ে গেছে। ঠাণ্ডা ও বৃষ্টি মাথায় জঙ্গল-পাহাড় পেরিয়ে দিনভর হাঁটতে থাকি আমরা। কয়েকদিন খাইনি। ১৫ দিন পরে বাংলাদেশে পৌঁছি। ফেসবুকই আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। শুধু আমরা রোহিঙ্গারা নয়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পর্যন্ত বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও বিভ্রান্ত ও ঘৃণাত্মক কন্টেন্ট রোধ করতে তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এই দায় কি তাদের নিতে হবে না? স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে আমাদের সহায়তা করা কি তাদের দায়িত্ব নয়? জাকারবার্গসহ যারা ফেসবুক পরিচালনা করেন, আমাদের দেখতে কি তারা কক্সবাজারে একবার আসবেন? এটা কি অপরিহার্য নয়? শরণার্থী শিবিরে কয়েক রাত কাটিয়ে তারা দেখুক, আমরা কেমন আছি, কী নিদারুণ অবস্থায় আছি। তখন বুঝবেন, আমার এবং আমার লোকদের সঙ্গে কী করেছে তারা। হতে পারে, তখন তারা আমাদের সহযোগিতার জন্য কিছু করবেন। গণহত্যায় প্রাণ হারিয়েছেন যারা ফেসবুক তো তাদের ফিরিয়ে দিতে পারবে না। মিয়ানমারে খুইয়ে আসা আমাদের জীবন ও সম্পদও তারা উদ্ধার করতে পারবেন না। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তাদের কিছুই করার নেই। জাকারবার্গ কি কক্সবাজারে আমার মতো তরুণদের শিক্ষায় অর্থায়ন করার সামর্থ্য রাখেন না? নিশ্চয়ই রাখেন। আমাদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে তিনি এগিয়ে আসতে পারেন। তার কোম্পানি আমার যে ক্ষতি করেছে, অন্তত এইটুকু করলে খানিকটা হয়তো লাঘব হবে।
লেখক : বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী
আলজাজিরা থেকে ভাষান্তর : মনযূরুল হক
বিদেশ থেকে মূল্যবান জিনিস যা আসে, তার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দুটি বিষয়। একটি ডলার, অন্যটি সোনা। দুটোই দেশের রিজার্ভ হিসেবে বিবেচিত। ডলার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে প্রথমত, প্রবাসী শ্রমিকদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা, যা ডলার হিসেবে ব্যাংকে জমা হয়। আর টাকা হিসেবে স্বজনদের হাতে যায়। দ্বিতীয়ত, রপ্তানি, বিশেষত গার্মেন্টস দ্রব্য রপ্তানি। যদিও গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে ডলারের প্রয়োজন হয়। আর অন্য যে মূল্যবান দ্রব্য সোনা, তার খনি বাংলাদেশে নেই, কিন্তু প্রতিনিয়ত বিমানবন্দরে যে পরিমাণ সোনা আটক হয় এবং বাংলাদেশ যে পরিমাণ সোনা পেয়ে থাকে তাতে বিমানবন্দরকে সোনার খনি বলে মনে হতেও পারে। এখানে যে সোনা পাওয়া যায়, তা খনি থেকে উত্তোলন করতে হয় না। পরিশ্রম করে সংগ্রহ করতে হয় না। বরং সতর্ক থাকলেই সংগ্রহ করা যায়। ডলার এবং সোনা এই দুই সম্পদ নিয়েই চলছে তুলকালাম কাণ্ড। কারণ রপ্তানির মাধ্যমে যে ডলার আসার কথা তার খানিকটা যাচ্ছে পাচার হয়ে আর বিমানবন্দরে ধরা পড়া সোনা লকার থেকে হচ্ছে চুরি।
সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক বিভাগের গুদামে থাকা একটি লকার থেকে ৫৫ কেজির বেশি সোনা চুরি হয়ে গেছে। ব্যাপারটা যতটা আতঙ্কের তার চেয়েও বেশি সন্দেহের। টার্মিনাল ভবনের ভেতরে সুরক্ষিত স্থান থেকে কীভাবে এমন চুরির ঘটনা ঘটল? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে খুঁজতে হবে অনেক কিছু আর খুলতে হবে অনেক জট। জানা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দরের ভেতরে শুল্ক বিভাগে দুটি গুদাম বা লকার আছে। একটি লকার আছে নিচতলায়। শুল্ক বিভাগের স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের বের হওয়ার পথে তল্লাশি টেবিলের পাশে। এটি ছোট, এখানে মূলত তল্লাশির সময় তাৎক্ষণিকভাবে জব্দ করা পণ্য রাখা হয়। তবে সোনা বা বেশি মূল্যবান সামগ্রী হলে, সেসব নিয়ে রাখা হয় নিচতলায় ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শাখার পাশেই শুল্ক হাউজের গুদামে। এই গুদামের ভেতর আলাদা লকার রয়েছে। এখানে অনেক লকার থাকলেও, সোনা চুরি হয়েছে একটি লকার থেকে। সেই লকার থেকে ৫৫ কেজি সোনা গায়েব হয়ে গেছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদগুলো থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা থেকে বিষয়টাকে সহজ বা হালকা মনে করার কোনো কারণ নেই।
প্রাথমিকভাবে শুল্ক বিভাগের ভাষ্য অনুযায়ী, চুরি হওয়া এসব সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা হয়েছিল। এখানেই বড় প্রশ্ন, এত দিন ধরে এই পরিমাণ সোনা বিমানবন্দরের গুদামে রাখা হয়েছিল কেন?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা এক দিনে নয়, বিভিন্ন সময়ে লকার থেকে সোনা সরানো হয়েছে। আর সাধারণ মানুষের ধারণা, ভেতরের লোকজন জড়িত না থাকলে এ রকম ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়।
শুল্ক বিভাগ সূত্র থেকে জানা যায়, বিমানবন্দরের ওই গুদাম পাহারায় ২৪ ঘণ্টায় চারটি পালায় (শিফট) তাদের কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন। শনিবার সকালে গুদামের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন কর্মী, গুদামে ঢুকে চিৎকার শুরু করেন। তার চিৎকারে এসে দেখা যায়, লকার ভেঙে সোনা চুরি হয়েছে।
একজন কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, কয়েকদিন আগে গুদামটিতে অটোমেশনের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজের অংশ হিসেবে গুদামে থাকা সোনা গণনা করা হচ্ছে। তার ধারণা, সোনা চুরির ঘটনা আগেই ঘটেছে। গুদামের অটোমেশনের কাজ শুরু হওয়ায় সেটা ধরা পড়বে; তাই লকার ভাঙার ‘নাটক’ তৈরি করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন শুল্ক বিভাগে যারা কাজ করেছেন, এনবিআরের কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা হলো, বিমানবন্দর থেকে চোরাচালানের সোনা উদ্ধার হলে সেটার একটা জব্দ তালিকা করা হয়। তারপর যত দ্রুত সম্ভব সেই সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে পাঠানো হয়। তার আগে আরও কিছু দাপ্তরিক কাজ আছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিতে হয়। ব্যাংকের পক্ষ থেকে যেদিন সময় ধার্য করা হয়, সেদিন কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকে পৌঁছানো হয়। এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাধারণত এক-দুই দিন লাগে। এর বাইরে যাত্রীদের আনা (ব্যাগেজ রুলের আওতায়) সোনা যদি তারা ঠিকভাবে শুল্ক পরিশোধ করতে না পারেন বা নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি সোনা আনেন, তাহলে তা বিমানবন্দর থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার আগ পর্যন্ত ওই গুদামে রাখা হয়। এসব ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকতা এবং আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে, সোনা ছাড়িয়ে নিতে কখনো কারও কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে। সাত-আট মাস বা এক বছরও লেগেছে, এমন উদাহরণও আছে। কিন্তু চুরি হওয়া ৫৫ কেজি সোনার মধ্যে দু-তিন বছর আগের সোনাও নাকি ছিল। এত দিন লকারে সোনা রাখাটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়।
বিমানবন্দর হলো কোনো দেশের সুরক্ষিত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিমানবন্দরের ভেতরের সব জায়গা সিসি ক্যামেরায় নজরদারিসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার মধ্যে থাকে। শাহজালাল বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থা সম্মিলিতভাবে কাজ করে। এত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আর এত শক্তিশালী নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে গুদাম থেকে সোনা চুরি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে আর কর্তব্য অবহেলার বিষয়টিকে সামনে এনেছে।
বিমানবন্দরে সোনা চুরির পাশাপাশি আর একটি খবর নিশ্চয়ই কারও চোখ এড়িয়ে যায়নি। খবর বেরিয়েছে, দেশের ১০টি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান পোশাক রপ্তানির আড়ালে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ১১৮ ডলার বা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ঘটনাটি জানিয়েছে, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। অধিদপ্তরের দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এই ১০টি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, ফ্যাশন ট্রেড, এম ডি এস ফ্যাশন, হংকং ফ্যাশন লিমিটেড, থ্রি-স্টার ট্রেডিং, ফরচুন ফ্যাশন, অনুপম ফ্যাশনওয়্যার লিমিটেড, পিক্সি নিটওয়্যারস লিমিটেড, স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড ও ইডেন স্টাইল টেক্স। অভিনব কায়দায় রপ্তানি জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্যের চালান বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, কিন্তু রপ্তানি আয়ের সেই বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবসিত হচ্ছে না, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর তদন্ত করে এই অর্থ পাচারের ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে বলে তারা বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন। এই ১০টি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ২৩৪টি পণ্যচালানে এই জালিয়াতি করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে এ বিষয়ে জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
এই প্রতিষ্ঠানগুলো ১ হাজার ২৩৪টি চালানে ৯ হাজার ১২১ মেট্রিক টন রপ্তানি করেছে, যার মূল্য ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ১১৮ মার্কিন ডলার (৩০০ কোটি টাকা), কিন্তু এই টাকা দেশে আসেনি। শুল্ক গোয়েন্দারা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট দলিল পর্যালোচনা করে দেখেছেন, এসব প্রতিষ্ঠান টি-শার্ট, টপস, নারীদের পোশাক, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি দেখিয়েছে। পণ্য পাঠিয়েছে কিন্তু টাকা আসেনি অর্থাৎ অর্থ পাচার হয়েছে।
আমদানি রপ্তানির ঘাটতি মেটানো, বিদেশি ঋণের সুদ আর আসল শোধ করার জন্য দরকার বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার। এর অন্যতম জোগানদাতা আমাদের দেশের প্রবাসী শ্রমিক। এই আয় কমে গেলে দুশ্চিন্তা আর বাড়লে স্বস্তি। কিন্তু আগস্টে দেশে আসা প্রবাসী আয় বেশ বড় পরিমাণে কমেছে। এ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার, গত বছরের একই মাসে যার পরিমাণ ছিল ২০৪ কোটি ডলার। গত বছরের আগস্ট মাসের তুলনায় এ বছর ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ আয় কম এসেছে। কোনো একক মাসে আয় এত কমে যাওয়ার ঘটনা সম্প্রতি ঘটেনি। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় না আসা। সরকারিভাবে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু খোলাবাজারে নগদ ডলারের দাম ক্রমাগত বাড়ছে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১৭-১১৮ টাকায়। খোলাবাজার ও সরকার কর্র্তৃক নির্ধারণ করা দামের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি। এর সুযোগ নিচ্ছে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। এত পার্থক্য থাকলে আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয় বাড়বে না। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি ও ব্যয়ের বোঝা, বিদেশে গিয়ে স্বল্প মজুরিতে কষ্টকর কাজ করে প্রবাসী শ্রমিকরা। ফলে কোথাও দুটো টাকা বেশি পেলে তারা সেদিকে ঝুঁকবেই। তাই বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় আনতে হলে হুন্ডি বন্ধ করতে হবে সরকারকেই।
প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় অর্থনীতিতে সংকট বাড়ার আশঙ্কা আছে। এমনিতেই ডলার সংকট নিয়ে চাপে আছে বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রতিনিয়ত কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যে পরিমাণ রিজার্ভ রাখার শর্ত দিয়েছিল বর্তমানে তার চেয়ে কম রিজার্ভ রয়েছে। ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি ঋণপত্র খোলা বেড়েছে, ফলে আমদানি দায় মেটাতে ভবিষ্যতে আরও বেশি ডলারের প্রয়োজন হবে। আবার সরকারি-বেসরকারি ঋণ পরিশোধ করার জন্যও ডলারের প্রয়োজন বাড়বে। একদিকে দেশের প্রয়োজন বাড়ছে, অন্যদিকে প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে, অর্থনীতির জন্য ব্যাপারটা উদ্বেগজনক। দেশের অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে, মাথা পিছু আয় বাড়ছে এসব সূচক অর্থনীতির জন্য ভালো। কিন্তু যদি জনগণের জীবনে তার ইতিবাচক প্রভাব না পড়ে, তাহলে অসন্তোষ তীব্র হয়ে ওঠে। যখন বৈষম্য, বেকারত্ব এবং মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে তখন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড আর প্রবৃদ্ধির কাগুজে হিসাব তার কাছে হয়ে পড়ে মূল্যহীন। এর সঙ্গে যদি চুরি, দুর্নীতি আর পাচারের ঘটনা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে তখন এই প্রশ্ন ওঠা তো স্বাভাবিক, এই চুরি দুর্নীতির বোঝা জনগণ আর কতদিন বহন করবে?
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
তখন বয়স ছিল ৩১ বছর। এত অল্প বয়সে ‘ভীমরুল’ ছদ্মনামে দৈনিক ইত্তেফাকে কলাম লিখে প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার লেখনী শক্তিতে পাকিস্তানি সামরিক স্বৈরাচার আইয়ুব খানের ভিত নড়ে ওঠে। কিন্তু ২০ মে, ১৯৬৫ সালে ৩২ বছর বয়সে কায়রোতে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। অতীতের সঙ্গে অধুনার সংযোগ ঘটানোর উদ্দেশ্যে ছাপা হচ্ছে ভীমরুলের সেই উপসম্পাদকীয়
জনাব জেড, এ, সুলেরী একজন কৃতবিদ্য ব্যক্তি। কর্তার ইচ্ছার কীর্তন গাহিবার আর্টে তিনি বহু পূর্বেই সিদ্ধি লাভ করিয়াছেন। সত্য-বাস্তব-ন্যায়বিচার, এমনকি সম্ভবত: নিজের বিবেকের বালাইও তিনি অনেক আগেই ঘুচাইয়া ফেলিয়াছেন। প্রাপ্তিযোগই এখন তাহার পরমারাধ্য এবং এই পরমারাধ্য বিষয়টির যোগাযোগ ঘটিলে হেন কথা নাই, যাহা তিনি বলিতে বা লিখিতে পারেন না। এদেশের সংবাদপত্র পাঠক এই প্রতিথযশা মোসাহেবের কীর্তিকলাপ সম্পর্কে সম্যকভাবেই অবহিত। সুতরাং, অধিক ভূমিকা ছাড়াই সুলেরী সাহেবের সর্বাধুনিক কীর্তি সম্পর্কে আলোচনার অবতারণা করা যায়।
জনাব সুলেরী গত ১২ই নভেম্বরে পশ্চিম পাকিস্তানের একটি ইংরেজী দৈনিকে এক দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখিয়াছেন। তাহার প্রবন্ধের দৃশ্যতঃ দুইটি প্রতিপাদ্যের একটি হইতেছে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব ও সম্মিলিত বিরোধী দলের মনোনীত প্রার্থী মিস ফাতেমা জিন্নাহর বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং অন্যটি হইতেছে বিগত ছয় বৎসরের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ও জনাব আইয়ুব খানের প্রশংসা কীর্তন। এই দুই প্রতিপাদ্যের পটভূমিতে প্রচ্ছন্নভাবে আরো একটি প্রতিপাদ্য ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা। সত্য-মিথ্যার জগাখিচুড়ি পাকাইয়া এবং ঐতিহাসিক তথ্যের বিকৃতি ঘটাইয়া তিনি বেশ দক্ষতার সহিতই তাঁহার দায়িত্ব সম্পাদন করিয়াছেন। জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্বহীনতার হেতু বর্ণনা করিয়া এবং ১৯৪৭ সালে ‘বাউন্ডারী ফোর্সে’ নিযুক্ত থাকাকালে জনাব আইয়ুবের আচরণ সম্পর্কে মিস জিন্নাহ সম্প্রতি যে বিবৃতি প্রদান করেন, তার বিরুদ্ধে এবং জনাব আাইয়ুবের পক্ষে সাফাই গাহিবার পবিত্র দায়িত্ব পালনের ব্রত লইয়াই তিনি কলম ধারণ করেন। প্রথমেই তিনি অভিযোগ করেন যে, মিস জিন্নাহ উপরোক্ত বিবৃতি প্রদান করিয়া একটি অত্যন্ত অন্যায় কাজ করিয়াছেন। কারণ, তাঁহার এই বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তানের ‘চরমপন্থী’, ‘কম্যুনিষ্ট’ ও ‘ভারতীয় এজেন্টরা’ উৎসাহিত হইয়া নূতন উদ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচারে লিপ্ত হইবে। জনাব সুলেরী সেখানেই ক্ষান্ত হন নাই। মিস জিন্নাহর উদ্দেশ্যের প্রতি কটাক্ষ করিয়া তিনি আরো অভিযোগ করিয়াছেন যে, পূর্ব পাকিস্তানীদের প্রাদেশিকতাপূর্ণ মনোভাবকে উস্কাইয়া দিয়া একটা অনর্থ ঘটাইবার মতলবেই মিস জিন্নাহ উপরোক্ত বিবৃতি প্রচার করিয়াছেন। এ প্রসঙ্গে মিস জিন্নাহর সহিত সুলেরী সাহেবের এক ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের কথাও উল্লেখ করা হয়। জনাব সুলেরী জানান যে, সম্মিলিত বিরোধী দল কর্তৃক মিস জিন্নাহকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দানের কিছুদিন পূর্বে তাঁহার সহিত তিনি সাক্ষাৎ করেন। সেই সাক্ষাৎকারে অনেক কথাবার্তার পর নাকি এক সময়ে মিস জিন্নাহ বলিয়া বসেন যে, দেশে যদি ‘রক্তপাত হয় ত হোক’ (‘লেট দ্যায়ার বি ব্লাডশেড’)। মিস জিন্নাহর সাম্প্রতিক বিবৃতির পর নাকি সেই উক্তির কথা সুলেরী সাহেবের নতুনভাবে মনে পড়িয়াছে। এবং ফলে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন যে, দেশকে রক্তগঙ্গায় ডুবাইয়া দিতেও তাহার আপত্তি নাই।
জনাব সুলেরীর মস্তিষ্কের উর্বরতা সম্পর্কে কোনদিন কাহারো মনে কোন সংশয় ছিল না। এই প্রবন্ধ লিখিয়া তিনি সে বিষয়ে সকলকে আরো সুনিশ্চিত করিয়াছেন। মিস জিন্নাহ দেশে রক্তস্রোত বহাইতে চান অর্থাৎ অন্য কথায় দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়া যাইতে চান, এই তত্ত্ব আবিষ্কারের জন্য মস্তিষ্কের উর্বরতা দরকার। সেই উর্বরতা একমাত্র সুলেরী সাহেবদের নিকট ছাড়া অন্য কাহারো নিকট হইতে আশা করা যায় না। ক্ষমতাসীন কনভেনশন লীগের ছোট-বড় সকল মুখে এ যাবৎ কম অপপ্রচার চালানো হয় নাই। ধর্মের দোহাই, বয়সের দোহাই, রাজনীতিতে অনভিজ্ঞতার দোহাই, মেজাজের দোহাই ইত্যাদি কোন কিছুই বাদ রাখা হয় নাই। মিস জিন্নাহ সত্তর বৎসরের বৃদ্ধা, রাজনীতিক্ষেত্রে তার কোন অভিজ্ঞতা নাই, তাহার মেজাজ খারাপ, কায়েদে আজম সময়ে সময়ে তাহাকে ঘরে তালাবদ্ধ করিয়া রাখিতেন, তিনি ‘বিকৃত রাজনীতিক’দের দ্বারা পরিবৃত ইত্যাদি অকল্পনীয় কুৎসা তাঁহার বিরুদ্ধে রটনা করা হইয়াছে। আর এক শ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ীর ক্রমাগত ফতোয়া ত আছেই। রাষ্ট্রপ্রধানের পদে কোন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে পারেন না বলিয়া এমনকি আল- আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের নামেও এক অসত্য ফতোয়া জারি করা হইয়াছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের বল্গাহীন অপপ্রচার ও যাবতীয় কলাকৌশল একেবারেই ব্যর্থ হইয়াছে। পরিশেষে কনভেনশনপন্থীদের ভাড়াটিয়া প্রচারকরা মিস জিন্নাহর বিবৃতির বিকৃতি ও কদর্থ সাধনে লিপ্ত হইয়াছেন।
মিস জিন্নাহর যে বিবৃতি সম্পর্কে বিভ্রান্তির ধূম্রজাল সৃষ্টি করা জনাব সুলেরীর প্রবন্ধ ফাঁদার উদ্দেশ্য, সেই বিবৃতির বক্তব্য পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনসাধারণের নিকটই নয়, পশ্চিম পাকিস্তানের সচেতন মানুষের নিকটও বিপুলভাবে আদৃত হইয়াছে। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা এবং অন্যান্য সকল পর্যায়ে যে অবিচার করা হইয়াছে, তাহা দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার। গত ছয় বৎসর যাবৎ যাঁহারা ক্ষমতাসীন আছেন, তাঁহারাও এই বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করিতে পারেন নাই। উপরন্তু, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের অভাব-অভিযোগের প্রতিকারকল্পে এ-যাবৎ যতসব লম্বা-চওড়া প্রতিশ্রুতিই দিয়া থাকুন না কেন, কার্যক্ষেত্রে তার কোনটাই ফলপ্রসূ হয় নাই। উন্নয়নের নামে গত কয়েক বৎসরে বিপুল অর্থ ব্যয়িত হইলেও এবং ১৯৫৮ সালের পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় তৎপরবর্তী ছয় বৎসরে তেত্রিশগুণ অধিক বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করা হইলেও জনসাধারণের কিছু মাত্র ভাগ্যোন্নতি ঘটে নাই; পোয়াবারো ঘটিয়াছে এক শ্রেণীর ধনিক-বণিক ও কায়েমী স্বার্থবাদীদেরই। ঘটনাক্রমে উহাদের অধিকাংশই পশ্চিম পাকিস্তানের অধিবাসী। পূর্ব পাকিস্তানবাসীগণ তাহাদের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ করিতে গিয়া বরাবর সেই কায়েমী স্বার্থবাদীগোষ্ঠী ও উহার পৃষ্ঠপোষকদের প্রতিই অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়াছে। পশ্চিম পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে পূর্ব-পাকিস্তানীদের কোন অভিযোগ আগেও যেমন ছিল না, আজো তেমনি নাই। কারণ, তাহারা ইহা ভালোভাবেই জানে যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের মতই পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণও নিপীড়িত এবং বঞ্চিত। সুতরাং, পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণের বিরুদ্ধে কোন প্রকার অভিযোগ উত্থাপনের প্রশ্নই কখনো উঠে নাই। বস্তুতঃ মিস জিন্নাহ এই বিষয়টির প্রতি সম্পূর্ণ সচেতন থাকিয়াই প্রকৃতপক্ষে কাহারা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অন্যায় করিয়াছে, তাহা নির্দেশ করিবার প্রয়াস পান। অথচ, জনাব সুলেরী উহাকেই বিকৃত করিয়া দেখাইতে চাহিয়াছেন যে, মিস জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তানীদের প্রাদেশিকতাপূর্ণ মনোভাবকে উস্কাইয়া দেশের সংহতি বিপন্ন করিবার চেষ্টা করিয়াছেন। আর সেই বিকৃতি সাধনের উদ্দেশ্যে তিনি তাঁহার সহিত মিস জিন্নাহর ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ হাজির করিতেও দ্বিধাবোধ করেন নাই।
অসততা কোন্ পর্যায়ে পৌঁছালে এরূপ কাজ করা যায়, তাহা সত্যি ভাবিবার বিষয়। সুলেরী সাহেবের সহিত আলোচনা প্রসংগে মিস জিন্নাহ দেশে রক্তপাত ঘটাইবার কথা বলিয়াছিলেন ইহা অবিশ্বাস্য। কিন্তু, তর্কের খাতিরে যদি ধরিয়াও লওয়া যায় যে, সেই ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে ঐরকম কথা উচ্চারিত হইয়াছিল, তাহা হইলেও উহাকে প্রবন্ধের বিষয়বস্তুতে পরিণত করার মত অন্যায় কাজ আর কিছুই হইতে পারে না। ব্যক্তিগত আলোচনায় অনেক সময় অনেক কথাই হয় কথার পিঠেই কথা আসে। সুতরাং, মিস জিন্নাহর উক্তি বলিয়া সুলেরী সাহেব যে কথাটা চালাইতে চাহিতেছেন, সে কথা আদৌ বলা হইয়া থাকিলে সুলেরী সাহেবের কোন্ কথার পিঠে বলা হইয়াছিল, তাহাও প্রকাশ করা তাঁহার উচিত ছিল। কিন্তু সুলেরী সাহেবদের মত ব্যক্তিদের নিকট হইতে কোন উচিত কাজ আশা করা বাতুলতা মাত্র। কাজেই জনাব সুলেরীর মত একটি চেনামুখের অপপ্রচারে দেশের একটি প্রাণীও বিভ্রান্ত হইবে না এ বিষয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নাই।
কনভেনশন দলীয় মনোনীত প্রার্থী জনাব আইয়ুব খানের প্রশংসা কীর্তন করিতে গিয়া জনাব সুলেরী বহু অবান্তর কথাই বলিয়াছেন। তন্মধ্যে একটি কথা ভারী মজাদার। নির্বাচনী প্রচারে অবতীর্ণ হইয়া জনাব আইয়ুব প্রায় সমস্ত বিরোধী দলকেই দেশানুগত্যহীন প্রতিষ্ঠানরূপে চিত্রিত করিতেছেন এবং প্রায় সকল রাজনৈতিক নেতাকেই ইঁদুর-বিড়াল ইত্যাদি নামে গালাগালি করিতেছেন। এমনকি একজন প্রবীণ নেতার দাড়ি কামাইয়া ফেলিবার মত অচিন্তিতপূর্ব অশোভন উক্তিও তাঁহার মুখ হইতে নির্গত হইয়াছে। এমতাবস্থায় স্বভাবতই জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে আইয়ুব সাহেবের অবদানের প্রশ্ন উঠিয়াছে। আইয়ুব সাহেব এবং তাঁহার পোষ্যরা যদিও এই বেকায়দা প্রশ্নে নিতান্তই নাচার, তবু সে সম্পর্কে এক সাফাই গাহিয়াছেন সুলেরী সাহেব। তিনি বলিয়াছেন, ‘জনাব আইয়ুব তখন সশস্ত্র বাহিনীতে নিযুক্ত।’ এই পর্যন্ত বলিয়াই তিনি থামিয়া গিয়াছেন; বাকী অংশটা তিনি পূরণ করিতে চাহিয়াছেন কিছু না বলিয়া। অর্থাৎ আইয়ুব সাহেব তখন সশস্ত্র বাহিনীতে নিযুক্ত ছিলেন বলিয়াই স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করিতে পারে নাই; নিযুক্ত না থাকিলে তিনি নিশ্চয়ই স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করিতেন! কিন্তু প্রশ্ন হইতেছে, বৃটিশের বেতনভুক তদানীন্তন সশস্ত্র বাহিনী হইতে পদত্যাগ করিতে তাঁহাকে কে বারণ করিয়াছিল? দেশে তখন কোটি কোটি মানুষ বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-লিপ্ত; হাজার হাজার মানুষ বিদেশি শাসকদের হাতে নির্যাতিত; দেশের এক প্রান্ত হইতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের তরঙ্গ। ইচ্ছা করিলেই জনাব আইয়ুব বিদেশিদের বেতনভুক সশস্ত্র বাহিনী হইতে পদত্যাগ করিয়া সেই জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করিতে পারিতেন। এরূপ দৃষ্টান্ত সেকালে হাজারে হাজারেই দেখা গিয়াছে। আইয়ুব সাহেবই বা কেন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারিলেন না? পক্ষান্তরে, বিদেশি শাসকদের বেতনভুক সশস্ত্র বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত থাকিয়া তিনি কি স্বাধীনতা সংগ্রামের দমনকার্যেই সহায়ক হন নাই? অথচ, আজ তিনি এবং তাঁহার চাটুকারবৃন্দই দেশপ্রেমের মনোপলি দাবী করিতেছেন; আর যাঁহারা ত্যাগ, তিতিক্ষা ও নির্যাতনের বিনিময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামকে সফল করিয়া তুলিয়াছিলেন, তাঁহাদেরই দেশপ্রেমের প্রতি করা হইতেছে কটাক্ষ। এমনকি দেশ-ধ্বংসের অপবাদ মাদারে মিল্লাতের বিরুদ্ধে উত্থাপন করিতেও ইহাদের রসনা অবশ এবং কলম অচল হইতেছে না। প্রকৃতির রাজ্যে ইহারা কি ক্ষমা পাইতে পারেন?
লেখক: আহমেদুর রহমান
দৈনিক ইত্তেফাক, ১৫ নভেম্বর ১৯৬৪
‘কিন্ডারগার্টেন’ শব্দটি জার্মান। যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে শিশুদের বাগান। জার্মান শিশু-শিক্ষানুরাগী ফ্রেডরিখ ফ্রোয়েবল ১৮৩৭ সালে ব্যাড ব্ল্যাংকেনবার্গে শিশুদের বাড়ি থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত গমন এবং খেলা ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণের ধারণাকে কেন্দ্র করে এ শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল, শিশুরা উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে প্রতিপালিত হবে এবং ‘শিশুদের বাগান’ হিসেবে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে বাগানে রোপণকৃত চারাগাছের মতো পরিচর্যা পাবে। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা কি তাই বলে?
সরকারিভাবে নিবন্ধনের আইন হওয়ার এক যুগ পরও অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয় অনিবন্ধিত রয়ে গেছে। সারা দেশে এসব স্কুলের সঠিক সংখ্যা নিয়ে যেমন অস্পষ্টতা রয়েছে, একইভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যবস্থার তেমন কোনো তদারকি নেই। জীবনের শুরুতেই যখন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উন্নাসিকতায় হোঁচট খায় কোমলমতি শিশু তখন বিষয়টি পরিষ্কার আন্দাজ করা যায়।
কর্তৃপক্ষ বলছে, নিবন্ধন ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ের কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় চালানো যাবে না। কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি স্কুল এমনকি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, সবারই নিবন্ধন নিতে হবে। তাহলে এত বছর, অনিবন্ধিতভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে চলেছে? এর মানে কী, সরকারের কাছে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি স্কুল ও বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংক্রান্ত কোনো প্রকৃত তথ্য নেই! দেশে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার ৫০০। আবার কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদ বলছে, এমন স্কুল আছে প্রায় ৬৪ হাজার! ১৯৬২ সালের রেজিস্ট্রেশন অব প্রাইভেট স্কুল অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ২০১১ সালে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা প্রণীত হয়। কিন্তু এরপর পার হয়েছে এক যুগ। তবুও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হয়নি। কেন হয়নি, তার উত্তর কে দেবে? দেশ রূপান্তরে শুক্রবার ‘নিবন্ধন ছাড়া চলবে না কিন্ডারগার্টেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে জানা যাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বলছেন, এ ব্যাপারে আমরা তিন-চার মাস ধরে কাজ করেছি। আইন মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত ভেটিং শেষ হয়েছে। এখন এসআরও নম্বরের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এটি পেলে হয়তো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই গেজেট জারি হয়ে যাবে। এতে আমাদের প্রাথমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একটা নির্দিষ্ট নিয়মনীতির আওতায় আসবে। এর মানে হচ্ছে এতদিন দেশের এ ধরনের লাখ লাখ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো সরকারি নিয়মনীতির বাইরেই চলেছে, কিমাশ্চর্য! দেশের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে এ ধরনের হেঁয়ালিপূর্ণ আচরণই প্রমাণ করে, এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটুকু আন্তরিক?
এ কথা সবাই জানেন যে, দেশের প্রতিটি জেলায় অলিগলিতে গজিয়ে উঠেছে কিন্ডারগার্টেন। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠান পাড়া-মহল্লায় চটকদার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের আকৃষ্ট করছে। অভিভাবকরাও তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তুলে দিচ্ছেন, সেই কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষের হাতে। আবার অনেকেই বলেন কিন্ডারগার্টেন চালাতে আবার সরকারি অনুমতি কীসের? সবাই করছে, আমিও করছি। এভাবেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে কিন্ডারগার্টেনের নামে ইচ্ছাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারের কোনো বিধিনিষেধ না থাকায়, এখন কিন্ডারগার্টেন যেন পরিণত হয়েছে এলাকার কোনো ক্লাবে! তাও আবার একটা নয়, একই এলাকায় অনেকগুলো।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব জানাচ্ছেন, বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। এর ৯০ শতাংশই চলছে নিবন্ধন ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া। তবে আমাদের ২০১১ সালের যে বিধিমালা ছিল, তাতে নিবন্ধনের জন্য সচিব পর্যন্ত ফাইল আসতে হতো। এখন এটাকে আমরা সহজ করে দিচ্ছি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত করে রিপোর্ট দেবেন এবং এর ভিত্তিতে বিভাগীয় উপপরিচালক নিবন্ধন দেবেন। এখন পর্যন্ত দেশে যত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে, তাদের বিষয়ে যেন কঠোর নিয়মনীতি অনুসরণ করেই নিবন্ধন দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কোনো ধরনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বা জোরজবরদস্তির ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে।
২০১৪ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন নজরুল সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগম। তার জন্ম ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই তৎকালীন ফরিদপুর জেলায়। তার বাবার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল এবং মা বেগম কওকাবুন্নেসা। শৈশবেই তার সংগীতের প্রতি অনুরাগ জন্মে। চল্লিশের দশকে তিনি সংগীত ভুবনে পদার্পণ করেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৪২ সালে গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে তার প্রথম রেকর্ড বের হয়। কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ড হয়। ১০ বছর বয়সে তিনি কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্যে আসেন এবং তার কাছ থেকে তালিম গ্রহণ করেন। নজরুলের গান নিয়ে প্রকাশিত তার প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি ৩৮০টির বেশি একক সংগীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। নজরুলগীতি ছাড়া তিনি আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ, নাতসহ বিভিন্ন ধরনের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে সুরকার, গায়ক ও গীতিকার কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। জীবদ্দশায় তার ১২টি এলপি, চারটি ইপি, ছয়টি সিডি ও ২০টিরও বেশি অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে। শিল্পচর্চায় অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি একুশে পদক, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার, নজরুল আকাদেমি পদক, চুরুলিয়া স্বর্ণপদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।