
মুক্তিযুদ্ধের ১৬টি সফল মিশনের বিস্তারিত ধারাবাহিকভাবে লিখছেন সালেক খোকন
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা দুলাল। আব্দুল গফুর সরদার ও আয়েশা গফুরের সপ্তম সন্তান। বাড়ি বরিশালের হিজলার হরিনাথপুরে। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে তার বেড়ে ওঠা কুষ্টিয়া-যশোর অঞ্চলে। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন আলমডাঙ্গা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।
কীভাবে এবং কেন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন? সেই গল্প জানতে চাই আমরা। তিনি বলেন, আমার বড় দুলাভাই চাকরি করতেন খুলনা কোকোনাট প্রসেসিং মিলে। তিনি পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ৩ মার্চ ১৯৭১। খুলনায় একটা মিছিল সার্কিট হাউজের কাছে পৌঁছালে গুলি চালায় পাকিস্তানি সেনারা। শহীদ হন তিনি। এ খবর আমাদের মনে ঝড় তোলে। বোনের মুখটার দিকে তাকাতেই পারি না।
কী করলেন তখন? দুলালের উত্তর ধারণা ছিল কিছু একটা ঘটবে। হান্নান ভাই প্রথম ট্রেনিংয়ের উদ্যোগ নেন। স্কাউট ট্রেনিং ছিল আমার। আনসারদের কাছ থেকে রাইফেল চালানোও শিখে নিয়েছিলাম। স্কুল থেকে চুরি করা এসিড বাল্ব দিয়ে এলজিইডির মাঠে শেখানো হলো ককটেল বানানো। কয়েকদিন পর হাসু আর হান্নান ভাই স্টেশনের জিআরপি পুলিশের কাছ থেকে কয়েকটা রাইফেল কেড়ে আনেন। তা দিয়েই আমরা আলমডাঙ্গায় পাহারা বসাই।’
৩০ মার্চ ১৯৭১। যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসে পাকিস্তানি সেনারা দখলে নেয় কুষ্টিয়া। এপ্রিলের ৭ তারিখে তারা পজিশন নেয় আলমডাঙ্গা থানায়। ওই দিনই আবুল হোসেনসহ ৮-১০ জনকে ওরা ধরে নিয়ে যায় হাটবলিয়া ফেরিঘাটের সামনে। গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়। আলমডাঙ্গায় ওটাই প্রথম গণহত্যা।
এরপরই দুলালরা ট্রেনিংয়ে চলে যান। তাদের ট্রেনিং হয় বিহারের চাকুলিয়ায়। আটাশ দিনের ট্রেনিংয়ে শেখানো হলো থ্রি নট থ্রি রাইফেল, এসএমজি, এসএলআর, গ্রেনেড, মাইন, মর্টার, রকেট লঞ্চার প্রভৃতি চালানো। তার এফএফ (ফ্রিডম ফাইটার) নম্বর ২১২৭। ট্রেনিং শেষে আট নম্বর সেক্টরের আলমডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেন তিনি।
আলমডাঙ্গা অপারেশনের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন অভিযানের আদ্যোপান্ত রোজার মাস তখন। আমরা বৃহত্তর কুষ্টিয়ার আলমডাঙ্গা, মেহেরপুর এলাকায়। আলমডাঙ্গায় ছিল পাকিস্তানি মিলিশিয়া বাহিনী। তারা সবাই পাঞ্জাবি। ছিল কালো ড্রেস পরা রাজাকাররাও। বিহারির সংখ্যাও ছিল অনেক। পাকিস্তানি আর্মি আসত মাঝেমধ্যে। ঈদের দিনে আমরা আলমডাঙ্গা শহর অ্যাটাক করার পরিকল্পনা করি। তখন ঈদগাহে সবাইকে এক জায়গায় পাওয়া যাবে। আমাদের চারটা গ্রুপের সঙ্গে মরফত, কামাল ও আবদার ভাইয়ের দলসহ কয়েকটা গ্রুপ যোগ দেয়।
১১ নভেম্বর ১৯৭১। সন্ধ্যাবেলা। কুমার নদের ওপারে কুঠিবাড়ির কাছে পাওয়ার স্টেশনটি আমরা উড়িয়ে দিই। চুয়াডাঙ্গার দক্ষিণে যেন আর্মি আসতে না পারে সে জন্য সেখানকার রেললাইন ধ্বংস করা হয়। পরিকল্পনা করে কুষ্টিয়া থেকে আলমডাঙ্গাকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। আমরা পজিশনে থাকি আলমডাঙ্গার চারদিকে।
শহরের ভেতরটা রেকি করতে হবে। ১২ নভেম্বর ভোরে চারজনকে নিয়ে নান্নু ভাই শহরে ঢুকলেন। আমরা তার অপেক্ষায় থাকি। সময় সকাল ৯টা। হঠাৎ গুলির শব্দ। ভেতরে কিছু একটা হয়েছে। নান্নু ভাইকে উদ্ধার করতে হবে। আমরা কুমার নদ দিয়ে আলমডাঙ্গা শহরে ঢুকি। চারদিক থেকে অন্যরাও এগোতে থাকে। সোনালী ব্যাংকের পাশ থেকে চাঁদতারার (একটি জায়গার নাম) দিকে ফায়ার করি আমরা। ওখানে রাজাকাররা ছিল। খানিক এগোতেই নান্নু ভাইকে পাওয়া গেল। তার গ্রুপটি আগেই এক রাজাকারকে গুলি করে মেরেছে। চারদিকের আক্রমণে রাজাকার ও মিলিশিয়ারা আশ্রয় নেয় আলমডাঙ্গা থানায়। সেখানকার বাঙ্কারে অবস্থান নিয়ে তারা বার্স্ট ফায়ার চালাতে থাকে।
হান্নান ভাইসহ আমরা তিনজন ছিলাম অ্যাডভান্স পার্টিতে। একটা বাড়িতে পজিশন নিয়ে থানার দিকে ফায়ার করছি। তখন মধ্য দুপুর। নান্নু ভাই গার্লস স্কুলের পাশ দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু একটি গুলি এসে লাগে তার মাথায়। কয়েকটা ঝাঁকি দিয়েই তার শরীরটা নিথর হয়ে যায়। একইভাবে গুলিতে মারা যায় বজলু ডাক্তারও। হাসু ভাই ঢুকছিলেন ডাকবাংলোর পাশ দিয়ে। ওখানে মিলিশিয়ারা মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ ধরে ছিল। মুক্তিযোদ্ধা ভেবে তিনি কাছে যেতেই বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মারে ওরা। আনসার ভাই গুলি খান চাঁদতারার ওখানে। ওটা ছিল একটা আরবান ফাইট।
প্রচ- গোলাগুলি চলছে। আমাদের দৃষ্টি থানার দিকে। ডানে পোস্ট অফিসের কাছে যে একটা বাঙ্কার আছে সেটা বুঝতে পারিনি। ওরা ওঁৎ পেতে ছিল। আমাকে টার্গেট করে ওরা গুলি ছোড়ে। আমিও পাল্টা জবাব দেব। হঠাৎ মনে হলো ধাক্কা খেলাম। হাত থেকে এসএলআরটা পড়ে গেল। গুলি আমার মুখে লাগার কথা। কিন্তু তখন ম্যাগজিনটা কাট করছিলাম। এসএলআরটা মাঝখানে থাকায় গুলিটা প্রথম লাগে এসএলআরের বডিতে। স্পিøন্টার ঢুকে যায় ডানহাতের কবজিতে। ফলে হাড্ডি ভেঙে মাংস বেরিয়ে যায়। চামড়া ঝলসে গিয়ে রগগুলো গাছের শেকড়ের মতো ঝুলতে থাকে। রক্তে ভিজে যায় গোটা হাত।
তখনো জ্ঞান ছিল মুক্তিযোদ্ধা দুলালের। জীবন বাঁচানোর প্রাণান্ত সংগ্রাম তখনো শেষ হয়ে যায়নি। নিজেকে বাঁচানোর সে কাহিনী বড় করুণ, বড় কষ্টের। সে-সময়ই চুয়াডাঙ্গা থেকে পাকিস্তানি আর্মি মুহুর্মুহু গুলি ছুড়তে ছুড়তে আলমডাঙ্গার দিকে আসে। গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত দুলাল আশ্রয় নেন আলমডাঙ্গার এক কবরস্থানে। পাকিস্তানি সেনাদের ভয়ে পুরনো একটি কবরে সারা রাত লুকিয়ে রাখেন নিজেকে। মৃত মানুষই নয়, একাত্তরে জীবিত মানুষেরও ঠাঁই হয়েছিল কবরে!
স্মৃতির সেই কথা বলতে গিয়ে চোখে পানি আসে দুলালের। বলেন, হাতের ব্যথায় আমি গোঙাচ্ছিলাম। নওশের আমাকে কাঁধে তুলে নিয়ে যায় এরশাদপুর গ্রামে। সেখানেও ডাক্তার নেই। আমার হাত গামছা দিয়ে বাঁধা। সহযোদ্ধারা মসজিদের খাটিয়ায় তুলে নেয় আমাকে। সাদা কাপড়ে ঢাকা থাকে খাটিয়াটি। যেন লাশ আমি। বেলগাছির ওহাব মেম্বারের বাড়িতে মেলে গ্রাম্য চিকিৎসা। তাতেও কাজ হয় না। পরে গরুর গাড়িতে করে নেওয়া হয় পাচুরিয়া গ্রামের বিলে। আমার হাত তখন পচতে শুরু করেছে। গন্ধে কেউ কাছে আসে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন লালচান আর শহীদুল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা পালকিতে করে আমাকে বর্ডার পার করেন। চিকিৎসা হয় করিমপুর ফিল্ড হাসপাতালে। আমার হাতে গ্র্যাংগ্রিন হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসা হলেও এখনো ডান হাতের আঙুলগুলো পুরোপুরি সোজা করতে পারি না। তিনটি আঙুল অবশ। চামড়ায় ব্যথা হয় মাঝেমধ্যেই। কষ্ট হয় অনেক। হাতের দিকে চোখ পড়লে এখনো একাত্তর মনে পড়ে যায়।
ওইদিন দুলালরা আলমডাঙ্গা দখলে নিলেও ধরে রাখতে পারেননি। তবে ওই অপারেশন আলমডাঙ্গায় পাকিস্তানিদের শক্ত ভিতকে দুর্বল করে দেয়। মিলিশিয়া ও অনেক রাজাকার মারা যায়। পরে ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা থেকে আলমডাঙ্গার দিকে পাকিস্তানি সেনাবহর অগ্রসর হলে মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসে প্রাণপণ যুদ্ধে লিপ্ত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের মাইন বিস্ফোরণে অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। ৮ ডিসেম্বর সকালে আলমডাঙ্গা পুরোপুরি হানাদারমুক্ত হয়।
আলমডাঙ্গায় রক্তাক্ত হওয়া মুক্তিযোদ্ধা দুলালের কাছে আমাদের শেষ প্রশ্ন ছিল যে দেশের জন্য রক্ত দিলেন সে দেশ কি পেয়েছেন? তিনি বলেন, স্বাধীন ভূখ- পেয়েছি। কিন্তু চেয়েছিলাম একটা সমাজব্যবস্থা, যেখানে শোষিত-শাসক থাকবে না। সবাই মৌলিক অধিকার পাবে। দেশ অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু ধনী-গরিবের বৈষম্যটাও অনেক বেড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ জিজ্ঞেস করেনি, আমার পাশে কে হিন্দু, কে মুসলমান। ধর্মটা এখন ব্যবহৃত হচ্ছে রাজনীতিতেও। স্বাধীন দেশে মানুষ দেখি না ভাই। দেখি কিছু হিন্দু আর মুসলমান। মানুষ কই?
বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগ রাজনীতিতে নতুন আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। এ আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে তাদের পদত্যাগের সরকার কী ধরনের বিপদে পড়বে। সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক ফলাফল কী দাঁড়াবে?
গত শনিবার বিএনপি তাদের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের ঘোষণা দেয়। গতকাল রবিবার তাদের মধ্যে ছয়জন স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাদের পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়েছে। আরেকজনের পদত্যাগপত্র এখনো গ্রহণ করা হয়নি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন করে সরকার চাপে পড়বে। তারা বলেন, পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সরকারকে তারা আবারও বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছেন যে, এ সংসদ অবৈধ ও অকার্যকর।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, গত বৃহস্পতিব ও শুক্রবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক থেকেই দলীয় সংসদ সদস্যদের ফোনে সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলা হয়, শনিবার সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারের পদত্যাগের দাবিসহ ১০ দফা দাবি জানানো হবে। সেখানে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করলে তা স্ববিরোধিতা হয়ে যায়।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিএনপি প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচন দাবি করে। এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে তাদের সংসদ সদস্যরা সংসদে যোগ দেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যোগ না দেওয়ায় তার আসন শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচন করা হয়। শেষ পর্যন্ত সংসদে বিএনপির প্রতিনিধির সংখ্যা দাঁড়ায় সাত। এরপরও বিএনপি বরাবর বলে আসছিল এ সরকার অবৈধ। কিন্তু সংসদে প্রতিনিধি থাকায় এতদিন তাদের এমন দাবি ক্ষমতাসীনরা গ্রাহ্য করেনি।
এখন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগ করায় তাদের সাতটি আসন শূন্য হচ্ছে। গেজেটের পর নির্বাচন কমিশন আসন শূন্য ঘোষণা করে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন দেবে। সংবিধান অনুযায়ী সেটাই এখন করণীয়।
বিভিন্ন মহলে সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগের ফলাফল নিয়ে দুই ধরনের আলোচনা রয়েছে। এক হলো প্রতিনিধিত্ব যতই কম হোক, দলটির সংসদ সদস্যরা সরকারের সমালোচনায় সরব ছিলেন। এটা মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলত। গণমাধ্যমেও তাদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হতো। এখন আর তাদের সে সুযোগ নেই। তবে কেউ কেউ বলছেন, বিএনপির প্রতিনিধিত্ব না থাকায় সংসদ একতরফা হয়ে যাওয়ায় গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপও তৈরি হবে।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংসদে বিএনপির অবস্থান এতই কম যে, ওই অংশের পদত্যাগ বড় কোনো জটিলতা তৈরি করবে না। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, সাংবিধানিক কোনো সংকট বা সংসদে জটিলতা সৃষ্টি করার মতো ঘটনা এটা নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেন, বিএনপি তো সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে। বিদেশিরা তো সংবিধান ও আইনের বাইরে যাওয়ার চাপ দিতে পারে না। সংখ্যায় বেশি হলে বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রশ্নে বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ নানা সংকট তৈরি করত।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ১০ দফার প্রথম দাবি হচ্ছে এই অবৈধ সংসদ বাতিল করতে হবে। এ দাবির প্রথম অ্যাকশন হিসেবে আমাদের সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। তাদের এ পদত্যাগে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবশ্যই প্রতিক্রিয়া হবে। সেটি হবে বলেই তো তারা পদত্যাগ করেছেন। এ প্রতিক্রিয়া শিগগিরই দেশবাসী দেখতে পাবে।’
সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ বলেন, ‘আমরা সাতজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য সংসদে ছিলাম। আমরা স্ববিরোধী অবস্থানে রয়েছি, এমনটা অনেকেই বলতেন। আমাদের সংসদে যাওয়া ছিল দলীয় কৌশলের অংশ। এখন পদত্যাগ করলাম, সেটিও দলের সিদ্ধান্তে।’
বিএনপির পদত্যাগের ফলাফল কী হতে পারে সে বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগে এ সংসদের কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু এ সংসদ তো আগে থেকেই একতরফা ছিল। এখন এ সংসদের গুরুত্বহীনতা আরেকটু বাড়ল।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক ধারায় আগে থেকেই ঘাটতি ছিল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নির্বাচন ও সংসদ প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। ফলে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ আরও প্রকট হয়ে উঠবে।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে এখন পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো তারা নিজের আলোয় সবকিছু দেখতে চায়। ভারত বা অন্য কোনো দেশের দৃষ্টিতে তারা আর বাংলাদেশকে দেখতে চায় না। এ সরকার ভারতের সমর্থন নিয়ে টিকে আছে সেটা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় পরিষ্কার। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নিজেরাই সবকিছু দেখভাল করছে।’
গত বছর ১০ ডিসেম্বরের নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ১০ ডিসেম্বর যখন বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি নিয়ে নানা ঘটনা ঘটল তখন পশ্চিম দেশগুলোর কয়েকটি এমনকি জাতিসংঘও স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিল। এর অর্থ হচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলো এখন বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিএনপির সাত সংসদের পদত্যাগ অবশ্যই বহির্বিশ্বে গুরুত্ব বহন করবে।’
তিনি জানান, বিএনপি ১০ দফার যে দাবি দিয়েছে সেটি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য নয়, বরং বিএনপি আওয়ামী লীগের সমঝোতার একটি মাধ্যম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ প্রস্তাব নিয়ে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে দুই দল আলোচনা করে একটি পন্থা বের করে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে বলেও তিনি মনে করেন।
সংসদ থেকে বিরোধী দলের পদত্যাগের ঘটনা আগেও ঘটেছে। বিএনপির শাসনামলে ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী দলগুলো সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। তবে তাদের পদত্যাগ গ্রহণ করা হয় সাত মাস পর। এর ধারাবাহিকতায় বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনও করে।
এখন একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ তেমন কোনো জটিলতা সৃষ্টি করবে না। সংবিধান ও সংসদ অনুযায়ী যা করার তাই করবেন স্পিকার।’
বিএনপি সংসদে না থাকলে কী হতে পারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পদত্যাগের মধ্য দিয়ে এ মুহূর্তে বিএনপির লাভ-লোকসান কিছু হয়নি। রাজনৈতিক কোনো সুফল পাবে সেটাও মনে হয় না। তবে সংখ্যা কম হলেও সংসদে উপস্থিত থেকে তারা যে বক্তব্য দিতেন সেটা সংসদে লিপিবদ্ধ হতো, দেশ-বিদেশে, গণমাধ্যমে প্রকাশ হতো। জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের এ সুযোগটি তারা হারাবেন।’
তিনি মনে করেন, ‘এ সাতজনের পদত্যাগের মধ্যে দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়নি। কারণ তারা দলের শীর্ষ ১০ বা ২০ জনের কেউ নন। আজকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো নেতারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে আলোড়ন তৈরি হতো।’
আসন শূন্য হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে ক্ষমতা দিয়েছে, কমিশন সেটি করবে।’
নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র বলছে, পদত্যাগের পর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হলো ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো এক বছরেরও কিছু সময় বেশি বাকি রয়েছে। তাই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন হলেই ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে উপনির্বাচন দিতে হবে। তবে বিভিন্ন কারণে আরও সময়ক্ষেপণ করা যায়।
শূন্য আসনে উপনির্বাচন করতেই হবে সেটি আরও পরিষ্কার করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হলে ইসিকে তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচন করতেই হবে। এ নিয়ে সংবিধানে অন্য কোনো রাস্তা নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪২তম স্থানে আছেন। গত বছর তিনি ৪৩তম স্থানে ছিলেন।
ফোর্বসের তালিকায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেনকে বিশে^র সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিনা লাগার্দে এবং তৃতীয় স্থানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
শেখ হাসিনার বিষয়ে ফোর্বস উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয়লাভের পর তিনি চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হন, যা তার টানা তৃতীয় মেয়াদও।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, তিনি খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তার মতো বিষয়গুলোতে আরও ফোকাস করার পরিকল্পনা করেছেন।
গত ৯ ডিসেম্বর যখন তালিকাটি প্রকাশ করা হয়, তখন ফোর্বস জানায়, বাংলাদেশে দৃঢ় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা শেখ হাসিনার একটি চলমান সংগ্রাম।
তালিকার ৩৬তম স্থানে আছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। তিনিসহ ভারতের ৬ জন এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে ইরানের জিনা মাসা আমিনিকে মরণোত্তর প্রভাবশালী তালিকায় ১০০ নম্বরে স্থান দেওয়া হয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছর ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর তালিকা প্রকাশ করে আসছে।
বয়স তার ৩৭। তার চেয়ে অনেক কম বয়সে অনেক তারকা বুটজোড়া তুলে রেখে সাবেক বনে গেছেন। লুকা মদ্রিচ অবশ্য বয়সের কাছে হার মানার পাত্র নন। লাজুক বলে ছোটবেলায় উপেক্ষিত মদ্রিচ এখন ক্রোয়েশিয়ার সর্বকালের সেরাদের একজন। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে দেশকে এনে দিতে হবে অধরা বিশ্বকাপ শিরোপা। চার বছর আগে হয়নি। এবার না হলে মুকুটহীন সম্রাট হয়েই বিশ্বকাপকে বিদায় জানাতে হবে। মদ্রিচের স্বপ্ন বেঁচে গেলে হতাশার সাগরে ভেসে যাবে ফুটবল দুনিয়া। ফাইনালের মঞ্চে যাওয়ার আগে ক্রোয়াটদের হারাতে হবে বিশ্বফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে। মদ্রিচের স্বপ্ন বেঁচে যাওয়া মানেই সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসির শূন্য হাতে প্রস্থান।
এই বুড়ো বয়সেও দিব্যি ১২০ মিনিট একই ছন্দে, একই তালে খেলে যাচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা মদ্রিচ। মেসিরও বয়স ৩৫। তার খেলাতেও নেই বয়সের ছাপ। এই বিশ্বকাপেই দুই অধিনায়ক টেনে নিচ্ছেন দুদলের মহাভার। মেসি গোল করছেন এবং করাচ্ছেনও। আর মদ্রিচ বল জোগান দেওয়ার অন্যতম দায়িত্বটা পালন করছেন সুচারুভাবে।
প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা হলেই মদ্রিচের ভাবনায় চলে আসে ১৬ বছর আগের স্মৃতি। আলবিসেলেস্তাদের বিপক্ষেই আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল মদ্রিচের। সুইজারল্যান্ডে প্রীতিম্যাচে আর্জেন্টাইনদের হারিয়ে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া ৩-২ গোলে। সেই ম্যাচে জয় না পাওয়া আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেছিলেন মেসি। মদ্রিচ আর তার দলের কাছে গত বিশ্বকাপেও বড় হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছিল মেসিদের। ৩-০ গোলের জয়ে মদ্রিচও করেছিলেন এক গোল। সেই হারটা বড় ক্ষতি করে দেয় আলবিসেলেস্তাদের। গ্রুপ রানার্স-আপ হওয়ায় তাদের মুখোমুখি হতে হয় ফ্রান্সের। শেষ পর্যন্ত ফরাসিদের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়।
এবার অবশ্য দুদল মুখোমুখি হচ্ছে আরও বড় মঞ্চে। আর্জেন্টিনার সামনে এক আসর পরে ফাইনালে ওঠার হাতছানি। ক্রোয়েশিয়ার লক্ষ্য টানা দ্বিতীয় ফাইনাল। দুদল যখন মুখোমুখি, তখন তাদের ভাবনায় চলে আসবে দুদলের দুই মহানায়ক মেসি এবং মদ্রিচ। দুজনেরই এটা শেষ বিশ্বকাপ। তাই আগামীকাল বিশ্বকাপের আকাশ থেকে আরেকটি নক্ষত্রের পতন অনিবার্য এবং অবশ্যই শূন্য হাতে। খ্যাতি, প্রতিভা ও প্রাপ্তিতে মেসির ধারেকাছে নেই মদ্রিচ। তবে মদ্রিচ নিজের মতো করেই রিয়াল মাদ্রিদকে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন গেল এক দশক।
দুজনের এবারের লড়াইটা ভিন্ন রকম শেষের বাঁশি বাজিয়ে কাতারে এসেছেন বলেই। দুজনই চান, যে করেই হোক মর্যাদার শিরোপাটা জিততে। তাই লুসাইলে লড়াইটা হবে ভিন্নমাত্রার। ক্রোয়েশিয়া পরপর দুম্যাচে টাইব্রেকারের ভাগ্য নিজেদের করে নিয়ে সেমিফাইনালে এসেছে। জাপানকে দ্বিতীয়পর্বে হারানোর পর তারা পাঁচবারের ব্রাজিলকে কাঁদিয়েছে। গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ দুটি ম্যাচেই অসাধারণ সব সেভে দলকে জিতিয়েছিলেন। ডাচদের টাইব্রেকারে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে সেমিতে এনেছেন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। দুটি সেভ করে তিনি যেমন মেসির শিরোপা স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছেন। ঠিক তেমনই আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আরেকবার জ্বলে উঠে লিভাকোভিচও পারেন তাদের মধ্যমণি মদ্রিচের অধরা স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে।
এমি মার্তিনেজও নিশ্চয় চাইবেন না যার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত, সেই মেসির শূন্য হাতে বিদায়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। গতকাল রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
স্বাভাবিক নিয়মে প্রশাসন ক্যাডারের সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কবির বিন আনোয়ারেরই এ পদে বসার কথা। কিন্তু বরিশালের রাজনৈতিক ঘটনায় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে কবির বিন আনোয়ারের সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষে শক্ত অবস্থানের কারণে তা অনিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তার ওপরই আস্থা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কবির বিন আনোয়ার শিগগিরই অবসরে যাবেন। এর আগেই তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে এ পদেই বহাল রাখা হবে বলে জানা গেছে।
কবির বিন আনোয়ার বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অবসরোত্তর ছুটিতে যাচ্ছেন ১৫ ডিসেম্বর।
২০১৮ সাল থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব সামলানো কবির বিন আনোয়ার দেশের ২৩তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হচ্ছেন।
১৯৮৮ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) যোগ দেন কবির বিন আনোয়ার। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপসচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন কবির বিন আনোয়ার। তার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএ করে পরে এলএলবি ডিগ্রিও নেন। বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সপ্তম ব্যাচের কর্মকর্তা তিনি। বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক ছাড়াও বিভিন্ন পুরস্কারে পেয়েছেন কাজের স্বীকৃতি।
পেশাগত কাজের বাইরে কবির বিন আনোয়ার বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকা-ের সঙ্গেও যুক্ত। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি, সুন্দরবন সংরক্ষণ কমিটি এবং বাংলাদেশ স্কাউটের সঙ্গেও তিনি যুক্ত রয়েছেন।
কবির বিন আনোয়ার লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত। বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-১), বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-২), বিস্মৃত মুসলিম মানস, রূপসী বাংলা (১ম খণ্ড), প্রযুক্তি বদলে দিল যারা, অপরূপ বাংলাদেশ (১ম খন্ড) তার উল্লেখযোগ্য বই।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব পদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন মুখ্য সচিব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। আর সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। মুখ্য সচিব পদে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বিদায়ী মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। আহমদ কায়কাউস বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। পরবর্তী তিন বছরের জন্য তিনি ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য মুখ্য সচিবের পদমর্যাদায় তাকে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আর মাত্র চারটি ম্যাচ, তারপর আবার চার বছরের অপেক্ষা। অনেক জল্পনা-কল্পনার ফানুশ উড়িয়ে, স্বপ্নের রং মেখে যে বিশ্বকাপ গড়িয়েছিল মাঠে; এক মাসের রাত জাগার অবসান ঘটিয়ে আর মাত্র কয়েকদিন পরই তার সমাপ্তি। ৩২ দলের আসরে শিরোপার লড়াইতে টিকে আছে মাত্র ৪ দল, প্রত্যেকের সামনেই দুটো করে ম্যাচ। দুই দল খেলবে ফাইনালে, আর সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া দুই দল খেলবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার, হ্যারি কেইন ফুটবলের দুনিয়ায় বাঘা বাঘা সব নাম। আসর শুরুর আগে তাদের কার হাতে উঠবে শিরোপা, কে পাবেন সোনার জুতো আর কে জিতবেন সোনার বল; এই নিয়ে ভক্তদের তর্ক আর আলোচনা কম হয়নি। কিন্তু কাতার তাদের তিনজনকেই ফেরাল খালি হাতে। রোনালদো আর নেইমার মাঠ ছেড়েছেন কান্নায়, কেইনের চোখে হয়তো পানি দেখা যায়নি, তবে ভেতরে ভেতরে ঠিকই পুড়ছেন অন্তজ্বালার দহনে।
ব্রাজিল, পর্তুগাল আর ইংল্যান্ড; তিন দলই বিদায় নিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। পরপর দুই রাতে তিন দলের তিন সুপারস্টারের বিদায়ে বিশ্বকাপ কিছুটা হলেও রং হারিয়েছে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর এটাই ছিল শেষ বিশ্বকাপ। আসর শুরুর আগে পিয়ার্স মরগ্যানকে এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন রোনালদো, যেখানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ ও মালিকপক্ষকে নিয়ে ছিল অনেক চাঁচাছোলা মন্তব্য। ফলে বিশ্বকাপের মধ্যেই রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ম্যানইউ। পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের সঙ্গেও সম্পর্কটা খারাপ গেছে রোনালদোর। শুরুর একাদশে জায়গা না দেওয়াসহ নানান বিতর্কে পর্তুগাল দলের সঙ্গে রসায়নটা আর ঠিক থাকেনি রোনালদোর। তবুও মরক্কোর সঙ্গে ম্যাচটা শেষে রোনালদো যখন কাঁদতে কাঁদতে টানেল দিয়ে বেরিয়ে যান, সেই দৃশ্যটা দেখে ভক্তরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। নিজের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচে রোনালদো মাঠে নেমেছিলেন ৫১ মিনিটে, রুবেন নেভাসের বদলি হিসেবে। সেটা ছিল রোনালদোর ১৯৬টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ, কুয়েতের বাদের আলমোতাওয়াহ’র সঙ্গে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডটা ছোঁয়ার দিনেই কান্নাভেজা চোখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। কারণ অ্যাটলাসের সিংহদের যে হারানো যায়নি! বিপজ্জনক ক্রসগুলোতে লাফিয়ে মাথা ছোঁয়ানো হয়নি রোনালদোর, তার আগেই যে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল ইয়াসিন বনুর হাত।
ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ার পর মাঠের ভেতর কান্নায় ভেঙে পড়েন নেইমারও। চোট কাটিয়ে ফিরেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে যে গোলটা করেছিলেন সেটা বিশ্বকাপের সেরা গোলের তালিকায় নিঃসন্দেহে থাকবে। তবুও নেইমারকে কান্নাভেজা চোখে বিদায় বলতে হয়েছে বিশ্বকাপকে। অথচ এবারই ছিল সেরা সুযোগ। বয়স ৩০, দলে সতীর্থরা সব রিয়াল মাদ্রিদ নয়তো বার্সেলোনা, ম্যানইউ, টটেনহ্যামের মতো বড় বড় ক্লাবে দারুণ ছন্দে। জমাট রক্ষণ, ধারালো আক্রমণ সবই ছিল ব্রাজিলের। ছিল না ভাগ্য। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩ মিনিটের অসতর্কতা ম্যাচের রং পালটে দিল আর টাইব্রেকারে স্নায়ুর চাপটা নিতেই পারল না সেলেসাওরা। পরের বিশ্বকাপে নেইমারের বয়স হবে ৩৪। যে হারে চোট আঘাতের শিকার হতে হয় নেইমারকে, বছর চারেক পর নিজের সেরা ছন্দে থেকে বিশ্বকাপটা খেলার মতো অবস্থানে আদৌ থাকবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর আপাতত নেই। নিজের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দীর্ঘ একটা পোস্ট দিয়েছেন নেইমার, সেখানে লিখেছেন, ‘আমি মানসিকভাবে একদম বিধ্বস্ত হয়ে গেছি। ১০ মিনিটের মতো সময় ধরে অসাড় হয়ে পড়েছিলাম। এরপর অবিরাম কান্না। এই হারের স্মৃতি আমাদের অনেক দিন তাড়িয়ে বেড়াবে। এই দলটার আরও বেশি সাফল্য প্রাপ্য ছিল।’
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেইনও পুড়ছেন পেনাল্টি মিসের অন্তজ্বালায়। ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরি তার টটেনহ্যাম সতীর্থ এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু। তার বিপক্ষে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে একটা পেনাল্টি মারার চাপ নিয়ে গোল করেছেন। কিন্তু পরের বার যখন ম্যাচের শেষ সময়ে আবার পেনাল্টি পেল ইংল্যান্ড, কেইন সেটা রাগবির কিকের মতো বক্সের অনেক ওপর দিয়ে উড়িয়ে মেরেছেন। কেইন নিজে চাপে থাকলে অন্য কোনো সতীর্থকে শট নিতে পাঠালে হয়তো এমন হয় না। ম্যাচের পর কেইন বললেন, ‘একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থা। আমার জন্য আর দলের জন্য এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। আমরা ভালো খেলেছি, ভালো সুযোগও পেয়েছি কিন্তু ফুটবলে শেষ পর্যন্ত অনেক খুঁটিনাটি ব্যাপারই ব্যবধান গড়ে দেয়। অধিনায়ক হিসেবে এবং পেনাল্টি মিস করা নিয়ে আমি নিজে সম্পূর্ণ দায় নিচ্ছি।’
তাদের মতো বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে ভার্জিল ফন ডাইকেরও। বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার, একমাত্র ডিফেন্ডার হিসেবে উয়েফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয়সহ অনেক অর্জনই আছে নেদারল্যান্ডসের অধিনায়কের। প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেই দলনেতা, সেই গর্ব মুছে গিয়ে ফিরতি পথের সঙ্গী ব্যর্থতা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচে মেসিকে আটকাতে পারেননি, নাহুয়েল মলিনাকে দেওয়া পাসের আগে দৌড়ের শুরুতে ফন ডাইককেই কাটিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। পরে ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ায়, শুরুতেই স্পটকিক নিতে আসেন ফন ডাইক এবং এমিলিয়েনো মার্তিনেজ তার গোলটা বাঁচিয়েই পেয়ে যান আত্মবিশ্বাস। অভিষেক বিশ্বকাপেই ফন ডাইক দেখে ফেলেছেন বিশ্বকাপের নিষ্ঠুর দিকটাও।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।