
মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের (এমপিএল) প্রধান স্থাপনা থেকে তেল চুরির ঘটনায় তিন কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, একটি প্রতিষ্ঠানের ডিলারশিপ বাতিল ও অন্য একটির ডিলারশিপ স্থগিতের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। সুপারিশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন নির্দেশ দিলেও মেঘনা পেট্রোলিয়াম তা করছে না। এতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে প্রতিষ্ঠানের সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।
অভিযোগ রয়েছে, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং সিবিএর কয়েকজন নেতা জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। তাদের চাপের কারণেই বিপিসির নির্দেশনা বাস্তবায়নে এমন গড়িমসি হচ্ছে।
‘তেল চুরির দুর্ভেদ্য চক্র’ শিরোনামে গত ৪ এপ্রিল দেশ রূপান্তর পত্রিকার প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সংবাদটির বিষয়ে বিপিসিকে চিঠি দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ২৩ মে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিপিসি। কমিটি অভিযোগের বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে গত ১৯ জুন বিপিসির চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়ে গত ১৩ আগস্ট মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেন বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বণ্টন ও বিপণন) মো. আবুল কালাম আজাদ। চিঠিতে সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিপিসিকে জানাতে বলা হয়। এ ছাড়া কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, অভিযুক্ত কর্মচারীদের অবিলম্বে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলা করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
যাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে তারা হলেন মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কর্মচারী (জিই-১) জয়নাল আবেদিন, নিরাপত্তা প্রহরী মো. আলমগীর হোসেন ও মিটার অপারেটর-১ মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন। এর মধ্যে জয়নালকে স্থায়ী বহিষ্কার, আলমগীরের এক বছরের ও আলতাফের দুই বছরের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট (বেতন বৃদ্ধি) স্থায়ীভাবে বাতিল।
এ ছাড়া মেঘনার ডিলার চট্টগ্রামের বাঁশখালীর মেসার্স রউফ অ্যান্ড সন্সের ডিলারশিপ বাতিলেরও সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। পাশাপাশি খাগড়াছড়ির মেসার্স জিলানি এন্টারপ্রাইজের ডিলারশিপ এক বছরের জন্য স্থগিত করা যেতে পারে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
বিপিসি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপই নেয়নি মেঘনা পেট্রোলিয়াম।
এ বিষয়ে জানতে মেঘনা পেট্রেলিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালেহ ইকবালকে একাধিবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
পরে প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) মো. টিপু সুলতানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অফিশিয়াল অ্যাকশনে যাচ্ছি। কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী বিভাগীয় মামলাসহ যা যা করার তা-ই আমরা করব। এ জন্য কিছুটা সময় লাগবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা এখনো চাকরিতে বহাল আছে। দুই-এক দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়ে ওই দিন থেকেই বরখাস্ত করা হবে। কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দিতে না পারলে তদন্ত হবে। ধাপে ধাপে এগুলো না করলে আমরা আইনগত জটিলতায় পড়ব।’
একবার তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং বিপিসি শাস্তির নির্দেশ দিয়েছে। তারপরও আবার কেন তদন্ত করবেন? জবাবে টিপু সুলতান বলেন, ‘এটা তো বিপিসি তদন্ত করেছে। এখন আইন অুনযায়ী আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত হবে।’
বিপিসি তো সুপারিশ বাস্তবায়নের চিঠি দিয়েছে। আপনাদের তদন্তে দোষী প্রমাণিত না হলে কি কোনো ব্যবস্থা নেবেন না? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। বিপিসি যেটা তদন্ত করেছে, সেটা নিশ্চয় অস্বীকার করা যায় না। দেখা যাক কী হয়।’
মিটার অপারেটর-১ মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন দাবি করেন, তেল চুরির সঙ্গে তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। সিবিএর কিছু নেতার চক্রান্তের শিকার তিনি।
তেল চুরির এ ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করার সময় দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদক মেঘনা পেট্রেলিয়ামের প্রধান স্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবুল মেরাজের সঙ্গে কথা বলেন। তখন তিনি দাবি করেছিলেন, তেল চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
আর সিবিএ সেক্রেটারি হামিদুর রহমান জানিয়েছিলেন, প্রতিটি তেলবাহী গাড়িতে কয়েকটা ধাপে চেকিংয়ের পর তা গেট দিয়ে বের করা হয়। ফলে তেল চুরির কোনো সুযোগ নেই। এর পরও মাঝেমধ্যে যারা করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো’ নব্বইয়ের দশকে অঞ্জন দত্তের এ গানে চাকরি পেতে কাঠখড় পোড়ানোর বিষয়টি উঠে এসেছে। দশকের পর দশক পার হয়ে গেলেও এ গানের উপযোগিতা শেষ হয়নি। বরং বহুগুণে বেড়েছে।
বর্তমানে প্রায় সব সরকারি চাকরি হয় টাকার বিনিময়ে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সামান্য অংশ বাদ দিলে টাকা ছাড়া চাকরি জোটে না। দপ্তরি বা অফিস সহায়ক পদে চাকরি পেতেও লাগে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। কর্মকর্তা পর্যায়ের চাকরির দর ওঠে ২২ বা ২৫ লাখে। সরকার বছরে গড়ে ৫০ হাজার চাকরি দিতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলেন, কোন চাকরিতে কত টাকা ঘুষ লাগে তা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। সব চাকরিতে ঘুষ লাগছে বিষয়টি এমনও নয়। তবে ঘুষের যে ব্যাপকতা তাতে ধরেই নেওয়া যায় পিএসসির বাইরের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ চাকরিতেই ঘুষ লাগে।
স্থান-কাল ভেদে ঘুষের রেট ভিন্ন ভিন্ন হয়। জেলা পর্যায়ে অফিস সহায়কের চাকরি পেতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। কিন্তু সচিবালয়ের ভেতর কোনো মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়কের চাকরির জন্য ২০ লাখ টাকাও দিতে হয়। পুলিশ, ট্যাক্স, কাস্টমসÑ এসব সেক্টরের চাকরির ঘুষের রেটের কোনো সীমা থাকে না। এসব বিষয় উল্লেখ করে একজন বিশ্লেষক জানান, ধরে নেওয়া হয় সরকারি চাকরি পেতে গড়ে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। ৫০ হাজার চাকরির মধ্যে পিএসসির আনুমানিক ২ হাজার বাদ দিলে থাকে ৪৮ হাজার। এর ৭৫ শতাংশ চাকরির সংখ্যা হচ্ছে ৩৬ হাজার। প্রতিটি চাকরির জন্য গড়ে ১৫ লাখ টাকা হারে ঘুষ দিতে হলে ৩৬ হাজার চাকরির জন্য ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয়।
ছা-পোষা সংসার থেকে চাকরির ঘুষের টাকা জোগান দেওয়া আকাশ-কুসুম চিন্তার মতো। কোনোরকমে লেখাপড়া টেনে নিতে পারলেও চাকরির টাকার জোগান দিতে পারে না নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবার। ফলে যাদের টাকা আছে তারাই চাকরি পাচ্ছে। আর যাদের টাকা নেই, সেসব পরিবারের সন্তানরা চাকরির বাজারে অচ্ছুতই থেকে যাচ্ছে। এতে তেলে মাথায় তেল দেওয়া হচ্ছে, সমাজে নতুন করে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে স্কুলের দপ্তরি পদে নিয়োগে ঘুষের দর উঠেছে ৭ লাখ টাকা। উপজেলার মহেন্দ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বগুড়ার শিবগঞ্জে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ১৪ লাখ টকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর তা নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার ঘটনা ঘটেছে। আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে সব সময়ের অস্থায়ী পদের জন্যও ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়।
আপাতভাবে ওপরের প্রতিটি ঘটনাই আলাদা। কিন্তু এসব ঘটনার অন্তমিল রয়েছে। নিচের দিকের পদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টা কিছুটা প্রকাশ্যে এলেও মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন একটু ওপরের দিকের পদ বা কর্মকর্তা পর্যায়ের চাকরি প্রার্থীরা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বছরে গড়ে ৫০ হাজার শূন্যপদ পূরণ করতে পারে সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি চাকরি হয়েছে ৫১ হাজার ৯০৯ জনের। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ হাজার ৫৫৩, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ৮৮৭ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪০ হাজার ২৫৮ জনের চাকরি হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তদবির ছাড়া বা ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়া আর আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়া সমান কথা।’
গত ফেব্রুয়ারি মাসে নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার প্রতিবাদে খাদ্য অধিদপ্তরের সামনে সমাবেশ করেছিলেন ভুক্তভোগীরা। সেই সমাবেশে তারা প্রকাশ্যে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী উৎকোচ দিতে পারলে সংশ্লিষ্ট পদের যোগ্যতা না থাকলেও চাকরি পেতে অসুবিধা হয় না। উৎকোচের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা এবং নকল হোক আর আসল হোক, একটা সার্টিফিকেট থাকলেই হলো। সব নিয়োগেই ঘুষ লেনদেন এখন ওপেন সিক্রেট। স্থানীয় পর্যায়ে সংসদ সদস্যের (এমপি) নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের ‘হিস্যা’ হাতিয়ে নেওয়ার পরই নিয়োগপত্র নিশ্চিত করা হয়। কোথাও নিয়োগবাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি করে নেন এমপি ও সরকারি কর্মকর্তারা। নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা আদায় ও বণ্টনে দলীয় লোকজন বা এমপি ভাগ না পেলেই বাধছে ঝামেলা। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ তুলে বন্ধ করা হয় নিয়োগ প্রক্রিয়া। বিধি অনুযায়ী আবেদন-নিবেদন, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা, যাচাই-বাছাই ও মেধাকে কোনো পাত্তা দেওয়া হয় না। কে আগে টাকা পরিশোধ করেছে তার ভিত্তিতেই তৈরি হয় ‘মেরিট লিস্ট’।
ভূমি মন্ত্রণালয়ে কম্পিউটার অপারেটর কাম অফিস সহকারী পদে চাকরির জন্য প্রতিবেশী এক ব্যক্তিকে ১৩ লাখ ঘুষ দিয়েছেন রংপুর শহরের দখিগঞ্জ এলাকার সোহাগ মিয়া। টাকা নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে নিয়োগপত্র ও যোগদানপত্র দেওয়া হয় তাকে। পরে ঢাকায় একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেখে সোহাগকে বলা হয় চাকরিতে যোগদান হয়েছে। এখানে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে পদায়ন হবে। প্রশিক্ষণ চলাকালে তাকে বেতন হিসেবে দুই মাসে ২২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। সঙ্গে বেতন, বিল, ভ্রমণভাতাসহ সরকারি দপ্তরের বেশ কিছু ফরমও দেওয়া হয় তাকে। পরে পদায়ন পেতে দেরি হওয়ায় খোঁজ নিয়ে সোহাগ জানতে পারেন সব ছিল সাজানো।
সোহাগ মিয়ার ঘটনাসহ আরও একাধিক কাহিনি জানার পর গত ২০ আগস্ট প্রতারক চক্রের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে সাবধান করে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় ভূমি মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত একটি প্রকল্পে নিয়োগ হচ্ছে মর্মে একটি ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এতে বিভিন্ন প্রতারক চক্র ভূমি মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাভুক্ত দপ্তর, সংস্থা ও প্রকল্পে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে এর আগেও ভূমি মন্ত্রণালয় অনেকবার সতর্ক করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এরপরও প্রতারক চক্র থামে না। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও একটা দায়িত্ব আছে। আমরা কোনো কিছু বাছবিচার না করে টাকা দিয়ে দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত দপ্তর বা সংস্থায় সব ধরনের নিয়োগ বিধিবিধান অনুসরণ করে স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়। দুর্নীতির মাধ্যমে বা অর্থের বিনিময়ে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত দপ্তর, সংস্থা থেকে কোনো পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি খ্যাতনামা দৈনিক পত্রিকায় এবং মন্ত্রণালয়ের ও দপ্তর সংস্থাগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইটে যথানিয়মে প্রকাশ করা হয়। এরপরও যদি কেউ প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে, তাহলে ভূমি মন্ত্রণালয় কী করতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয়ের এ বিজ্ঞপ্তিতে চাকরি প্রার্থীরা যে কত অসহায় তা ফুটে উঠেছে। পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেলে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়, তা সহজেই অনুমেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘চাকরির পদ্ধতি আরও সহজ করা উচিত। এজন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনকেও দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।’ এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক এ অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে পাবলিক সার্ভিস কমিশনেরও সংস্কার দরকার। এ সাংবিধানিক সংস্থাটি যতটা কর্তৃত্ব চর্চা করা দরকার তা করছে না।’
দুদিনের সফরে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কোনো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটাই প্রথম সফর। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমাদের চাপ এবং অবরোধ নিয়ে এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী রাশিয়াকে নিয়ে দেশগুলো দ্বিধাবিভক্ত। মার্কিন অবরোধ থাকায় অর্থ পরিশোধে বেকায়দায় রাশিয়ার সঙ্গে আর্থিক সুবিধা পাওয়া দেশগুলো। এই তালিকায় আছে বাংলাদেশও। দুদেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে। তারা বলছে, এই সফর থেকে দুদেশের সম্পর্ক আরও নতুন মাত্রা যোগ করবে।
জানা গেছে, এই সফরে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনার বড় বিষয় থাকবে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো। আর রুশ এজেন্ডা হবে তাদের জাহাজের ওপর থেকে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আজ দুপুরের পর ল্যাভরভ জাকার্তা থেকে ঢাকায় আসবেন। সন্ধ্যায় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এর পরদিন শুক্রবার সকালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর বিকেলে তিনি জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন।
আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেবেন ল্যাভরভ।
ল্যাভেরভের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনার বিষয়গুলো কী হবে এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বর্তমান বিশ্ব যে কঠিন পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করছে, বিশেষ করে ইউক্রেন সমস্যার পর থেকে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, আমরা খাদ্য, জ্বালানি, সার নিরাপত্তা, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশের যেসব সমস্যা হচ্ছে সেগুলো তুলে ধরব। কারণ এগুলোর জন্য আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আমরা এর শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইব। আমরা রাশিয়াকে অনুরোধ করব যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য। আমাদের যে সমস্যা সেগুলো আমরা তুলে ধরব। ল্যাভরভের সফর নিয়ে গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ঢাকা রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরবে।
জানা গেছে, দুদেশের এই সফরে বেশ কিছু আর্থিক ও ভূরাজনৈতিক প্রবণতা প্রতিফলিত হতে পারে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানি জ্বালানি রোসাটম রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। আশা করা যাচ্ছে ল্যাভরভের সফরের পর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ হয়তো শিগগির সম্পন্ন হবে। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে নির্মাণস্থলে রি-অ্যাক্টর ভেসেল স্থাপনের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজের উদ্বোধন করেছিলেন শেখ হাসিনা এবং রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ।
রোসাটমের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলারের চুক্তিটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম চুক্তি। এর প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থায়নই করছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কারণে রাশিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়ায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
ঢাকা সফরকালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে উভয় পক্ষই তৃতীয় মুদ্রায় কিস্তি পরিশোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে পারে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক অংশীদার দেশের জন্যই রাশিয়াকে মার্কিন ডলারে লেনদেন অর্থ প্রদান কঠিন হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মস্কোর বেশ কিছু অর্থ চীনা মুদ্রা ইউয়ানে পরিশোধ করা হয়েছে, যেভাবে করছে ভারতীয় তেল কোম্পানিগুলো।
একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে সাক্ষরতা বৃদ্ধির হার। গত পাঁচ বছরে দেশে সাক্ষরতার হার বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ এ অবস্থায় সরকার আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সাক্ষরতার হার শতভাগ উন্নীতের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে সাক্ষরতার হার শতভাগ উন্নীতে আরও ২৬ বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘোষণা ছিল ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। এরপর প্রায় ১৫ বছর পার করলেও সে প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। সরকারি হিসেবে, বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে বেসরকারি হিসেবে, তা আরও কম। এ অবস্থায় কাল শুক্রবার সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের দেশেও নানা আয়োজনে পালিত হতে যাচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২৩’। ইউনেস্কো এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘পরিবর্তনশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সাক্ষরতার প্রসার’।
জানা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে হবে। কিন্তু যে গতিতে সাক্ষরতা কার্যক্রম চলছে তাতে এ সময়ের মধ্যে প্রকৃত অর্থেই দেশ নিরক্ষরমুক্ত করা সম্ভব নয়। এমনকি সাক্ষরতার হার বাড়াতে কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেই। শুধু দিবস এলেই সাক্ষরতার বিষয়টি মনে করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০২০ সালে ছিল ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২১ সালেও সাক্ষরতার হার একই বলে জানানো হয়েছে। আর সর্বশেষ ২০২২ সালে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাক্ষরতার হার বাড়ানোর মূল দায়িত্ব উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর। কিন্তু তাদের একমাত্র প্রকল্প ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা)’-এর মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা শেষ করে দেওয়া হয় এ বছরের জুনে। ফলে কোনো ধরনের কাজকর্ম ছাড়াই দিন পার করছে তারা।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের একমাত্র প্রকল্প নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই গত জুনে শেষ হয়ে গেছে। এখন বলতে গেলে, আমাদের হাতে তেমন কোনো কাজ নেই। বিভিন্ন জেলা কর্মকর্তার পদও শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। বিভিন্ন পর্যায়ে কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহায়ক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলেও তা স্থগিত রয়েছে। সাক্ষরতার হার বাড়াতে ব্যুরো থেকে একাধিক প্রকল্প প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো আপডেট নেই।’
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) সাব-কম্পোনেন্ট ২.৫-এর আওতায় ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের বিদ্যালয়বহির্ভূত ১০ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পিইডিপি-৩ থেকে আসা এক লাখ বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। অবশিষ্ট ৯ লাখের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় আট লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। ২৫ হাজার ৭১২টি শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে পাঠদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সারা বছর সাক্ষরতা বাড়াতে তেমন কোনো কাজ না হলেও দিবসটি এলেও অনেকটা উঠেপড়ে লাগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বছরও সাক্ষরতা দিবসে আলোচনা অনুষ্ঠান, ক্রোড়পত্র প্রকাশ, সংবাদ সম্মেলন, পোস্টার প্রকাশ ইত্যাদির আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে কাল শুক্রবার সকাল ১০টায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়ে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
সাক্ষরতার হার ও সংজ্ঞা নির্ধারণ নিয়েও বিভেদ রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংজ্ঞানুযায়ী, সাক্ষরতা হচ্ছে পড়া, অনুধাবন করা, মৌখিকভাবে এবং লেখার বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করা, যোগাযোগ স্থাপন করা এবং গণনা করার দক্ষতা। অর্থাৎ সাক্ষরতা বলতে লিখতে, পড়তে, গণনা করতে ও যোগাযোগ স্থাপন করার সক্ষমতাকে বোঝানো হয়। সাক্ষরতাসম্পন্ন একজন ব্যক্তি বাংলাদেশের পঞ্চম শ্রেণি পাস করা শিক্ষার্থীর সমমানের হতে হবে বলে মানদন্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার গণনায় যে জরিপ করা হয় তা হচ্ছে ‘সেলফ রিপোর্টেড’। সেখানে বিবিএসের মাঠকর্মীরা জানতে চান, আপনি লিখতে পারেন কি না? সে বলল পারি। হয়তো সে সাক্ষর করতেও জানে। তাতেই তাকে সাক্ষর হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু যদি বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো ‘টেস্টেড লিটারেসি’ জরিপ করা হতো, তাহলে হয়তো প্রকৃত তথ্য পাওয়া যেত। এতে দেশে সাক্ষরতার হার আরও কম হতো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
আশিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে গতকাল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ঢাকা ও জাকার্তা জ¦ালানি, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এর আগে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া জ্বালানি ও স্বাস্থ্য খাতে তিনটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে, এতে দুদেশের কল্যাণে কাজ করতে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’ খবর বাসসের
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) এবং ১৮তম ‘ইস্ট এশিয়া সামিটে’ অংশ নিতে ইন্দোনেশিয়া সফরে রয়েছেন। জাকার্তা কনভেনশন সেন্টারে (জেসিসি) এ সম্মেলন হচ্ছে।
মোমেন বলেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে আমন্ত্রণ জানানো ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে চমৎকার আতিথেয়তার জন্য ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পিত ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ ধারণা, যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রশংসা অর্জন করেছে, তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
এ সময় তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থসামাজিক খাতে ব্যাপক উন্নয়নের কথাও উল্লেখ করেন।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ, সিরামিক ও তৈরি পোশাক (আরএমজি) পণ্য আমদানি করতে পারে।
রাষ্ট্রপতি এক দশক ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের ধারাবাহিকতার কারণে ইন্দোনেশিয়ার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান।
রাষ্ট্রপতির উদ্ধৃতি দিয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘দুদেশের চিকিৎসকদের সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি পারস্পরিক সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড), ৩৯টি হাই-টেক পার্ক ও অন্যান্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। তিনি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া যদি আগ্রহী হয়, তবে বাংলাদেশ খুশি হয়ে তাদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থান নির্ধারণ করবে।’
সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি উৎপাদন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হতে চাই। এই দশকের শেষ নাগাদ একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের লক্ষ্য।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বিনিয়োগের সুযোগ পেতে দুদেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতার ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ইন্দোনেশিয়ার সরকার ও জনগণের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা কামনা করে বলেন, ‘বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছিল।’
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, আসিয়ান সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আসিয়ান চেয়ার ও আসিয়ান সেক্টোরাল ডায়ালগ পার্টনারের সদস্যপদ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট অন্যদের কাছ থেকে আরও সহযোগিতা কামনা করেন।
সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দলের নেতাদের একাধিক ‘বিন্যাস’ করেছে বিএনপি। প্রথম সারির নেতারা জেলে গেলে দ্বিতীয় সারির নেতারা, দ্বিতীয় সারির নেতারা জেলে গেলে তৃতীয় সারির নেতারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন; অর্থাৎ ‘ধাপ-আন্দোলন’ কৌশল করেছে বিএনপি। সরকারের নির্দেশে পুরনো মামলায় নেতাদের বিরুদ্ধে যেভাবে রায় দেওয়া শুরু হয়েছে এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির হাইকমান্ড এমন নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা দেশ রূপান্তরকে এ কথা জানিয়েছেন। তারা বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় এবং ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে মামলা দিয়েছে, সেই মামলায় তাদের সাজা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কীভাবে এসব মামলা মোকাবিলা করা হবে এবং জ্যেষ্ঠ নেতারা জেলে গেলে কারা চলমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন তা ঠিক করা হয়েছে। মামলাগুলো যেহেতু রাজনৈতিক, তাই রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা হবে। দলের আইনজীবীরাও আদালতে আইনিভাবে লড়বেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গত ১৪ বছরে যেসব মামলা হয়েছে, সেই সবের বিচারে গতি হঠাৎ বেড়ে গেছে। মোট মামলা ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৩৪টি এবং আসামি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ৪৯২ জন। গত এক মাসে মামলা হয়েছে ৩৩১টি, আসামি করা হয়েছে ৪ হাজার জনকে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা ৯৩টি ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে মামলা ৪৫১টি। তার বিরুদ্ধেই সর্বোচ্চসংখ্যক মামলা। এর মধ্যে শতাধিক মামলা পুরনো, যা নতুন করে সচল করা হয়েছে।
তারা বলেন, ‘মামলার কারণে নেতাকর্মীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসের প্রথমার্ধ তারা কাটান পুরান ঢাকার আদালতপাড়ায়। জামিন নেওয়ার পরও তাদের মুক্তি মিলছে না। তাদের পারিবারিক জীবন তছনছ। নিজ বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না।’
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে দেশে প্রধান বিচারপতি নিরাপদ নন, সে দেশে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা তা বুঝতে হবে। আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো গায়েবি। আদালত নিরপেক্ষ থাকলে মামলাগুলো খারিজ হয়ে যাওয়ার কথা। এসব মামলার বেশিরভাগেরই বাদী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এর বাইরে যাদের বাদী করা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগ গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, তারা কিছু জানেন না। এসব মামলা যে মিথ্যা তা বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো রাজনৈতিক। তাই রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা হবে। পাশাপাশি লড়বেন আমাদের আইনজীবীরা। মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে আদালতচত্বর নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে পরিণত হয়।’
বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ওয়ান-ইলেভেনে দায়ের করা মামলার কারণে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। টুকুর পরিবর্তে তার স্ত্রী রুমানা মাহমুদ সিরাজগঞ্জ-২ আসনে, সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ কক্সবাজার-১ আসন থেকে নির্বাচন করেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আমানউল্লাহ আমানের ছেলে ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমানকে ঢাকা-২ আসনে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। সাবেক কমিশনার ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কাইয়ুমের আসন ঢাকা-১১ (বাড্ডা)-তে গত সংসদ নির্বাচনে তার স্ত্রী শামীম আরা বেগম নির্বাচন করেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিচার বিভাগ সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এটা দেশে-বিদেশে ওপেন সিক্রেট। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য যে ভিসানীতি দিয়েছে, তাতে বিচারকদের বিষয়টি রয়েছে। এটা দেশের জন্য লজ্জাজনক। আশা করি, বিচারকরা বিষয়টি মাথায় রাখবেন। তারা ভিসানীতির আওতায় পড়ুক আমরা চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আদালতকে ব্যবহার করে পুরনো মামলায় দ্রুত সাজা দিয়ে সরকারপতনের এক দফার আন্দোলন দমাতে চায় সরকার। যেহেতু মামলাগুলো রাজনৈতিক, তাই রাজনৈতিকভাবেই রাজপথে মোকাবিলা করা হবে। দলের আইনজীবীরাও আদালতে নেতাকর্মীদের পক্ষে লড়বেন। আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নেতৃত্বের বিন্যাস করা আছে। আন্দোলন কিছুতেই বন্ধ হবে না।’
জানা গেছে, গত ১৪ বছরে সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের নানাভাবে নির্যাতন করেছে। এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই। ফলে নেতাকর্মীদের ভয়ডর কেটে গেছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে এক ব্যক্তির ইচ্ছায় আদালতের কার্যক্রম চলে। বিধিবদ্ধ আইনি প্রক্রিয়ায় কোনো কাজ হয় না। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পরও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্নাকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে মুক্তির নির্দেশনা না পেলে মুন্নাকে না ছাড়ার যে ঘোষণা জেল কর্তৃপক্ষ দিয়েছে, তা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বাংলাদেশের আদালত সারা বিশে^ “আজব আদালত” খ্যাতি পেয়েছে। দেশের আদালত আরেকটি “আয়না ঘরে” পরিণত হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানে চারশর বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন। ৮ ডিসেম্বর রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে সাদাপোশাকের পুলিশ তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্টু রোডের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। ৯ ডিসেম্বর তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হয়। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়। মির্জা ফখরুল গ্রেপ্তার হওয়ায় ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার গোলাপবাগে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
গত মাসে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস। আগে থেকেই সেখানে ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা চিকিৎসার্থে দেশের বাইরে থাকায় প্রধান অতিথি হিসেবে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও গয়েশ^র চন্দ্র রায়। গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুপস্থিতিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলেরই অন্য স্থায়ী কমিটির সদস্য।
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।