সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ছাড়া পাচ্ছেন লঘু সাজা পাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা

আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০২:০২ এএম

স্বাধীনতা দিবসের আগেই কারাবন্দি মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য ইতিমধ্যেই দেশের ৬৮ কারাগারে থাকা সাজাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হয়েছে। কারা অধিদপ্তর থেকে ওই তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তালিকা যাচাই-বাছাই করে আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে কয়েদিদের সাজা মওকুফ করে এবং হাজতিদের জামিন-প্রক্রিয়া সহজ করে মুক্তি দিতে কাজ শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র, আইন ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কারাবন্দিদের মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা ২৫ মার্চের মধ্যেই তাদেরকে মুক্তি দিতে চাই। তবে ঠিক কতজনকে মুক্তি দেওয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।’

প্রতি বছরই স্বাধীনতা দিবসের আগে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের মধ্যে যাদের সাজার বড় অংশ ভোগ করা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির মওকুফ সাপেক্ষে তাদের মুক্তি দেয় সরকার। এবার কারাবন্দি মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই। তার পরিপ্রেক্ষিতেই জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে কারা অধিদপ্তরের কাছে সারা দেশে কারাবন্দি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কারাবন্দি মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বৈঠক করেছে। সেখানে কারা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে কোন কারাগারে কতজন হাজতি ও কয়েদি মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, তার তালিকা তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে কারা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, দেশের কারাগারগুলোতে প্রায় দেড় হাজার মুক্তিযোদ্ধা বন্দি হিসেবে আছেন। তাদের মধ্যে অনেকের মামলার রায়ে সাজা হয়েছে। অনেকের মামলা চলমান থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে জামিন পাননি। সাজাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে কে কতদিন সাজা ভোগ করেছেন, মামলার ধরন ইত্যাদি বিবেচনা করে তাদের মধ্য থেকে একটি তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি সাজা মাফ করলে তাদের মুক্তি দেওয়া হবে।

তারা বলেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা আসামি রয়েছেন, যারা বিভিন্ন অপরাধের মামলায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন। তারা যাতে জামিনে মুক্তি পেতে পারেন, সেজন্য জামিন-প্রক্রিয়া সহজ করা হবে।

কারাবন্দিদের মুক্তি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে আসার পর বন্দি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন শেষে তা কার্যকর করা হবে। মুক্তির ক্ষেত্রেও কারাগারে দীর্ঘ সাজাভোগের সময় বন্দিদের বয়স, আচার-আচরণ ও অবদানের কথা বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগারে প্রায় দেড় হাজার মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন মামলায় বন্দি হিসেবে আছেন। তাদের অর্ধেকের বেশি হাজতি ও বাকিরা সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের প্রতি সম্মান জানাতে চায় সরকার। ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৪০১-এর ধারা মোতাবেক রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমা ও ক্ষমতায় প্রতি বছর কিছুসংখ্যক কারাবন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়ে থাকে। এবার বন্দি মুক্তির বিষয়ে সাধারণ কয়েদিদের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার সুব্রত কারিমার বালা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে কতজন মুক্তিযোদ্ধা, তারা কোন মামলায় কত দিন থেকে বন্দি হিসেবে আছেন, এসংক্রান্ত তথ্য কারাগার থেকে কারা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা বন্দিদের মুুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বন্দি মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। এটা আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। এ বিষয়ে তারা বলতে পারবে। কারও মুক্তির বিষয়ে নির্দেশনা পেলে আমরা সে মোতাবেক কাজ করব।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত