মানবদেহে জ্বর যেমন কোনো স্পেসিফিক রোগ নয়, ঠিক তেমনি রক্তশূন্যতাও স্পেসিফিক কোনো রোগ নয়। অ্যানিমিয়া (অহবসরধ) বা রক্তশূন্যতা হওয়ার জন্য অন্য কোনো রোগ দায়ী থাকে। রক্তশূন্যতা মানে কিন্তু রক্ত কমে যাওয়া নয়। বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী রক্তের লোহিত কণিকায় উপস্থিত হিমোগ্লোবিন প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে কমে যাওয়ার অবস্থাকে রক্তশূন্যতা বা অ্যানেমিয়া বলে।
কারণ রক্তের লোহিত কণিকার উৎপাদনজনিত সমস্যার কারণে। রক্তের লোহিত কণিকা দ্রুত ভেঙে যাওয়ার কারণে। রক্তক্ষরণজনিত কারণে। এ ছাড়াও আরও কিছু কারণেও এর ঝুঁকি বাড়তে পারে খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণ লৌহের জোগান না পেলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ
রক্তশূন্যতা প্রকট হলে অবসাদ, দুর্বলতা, ক্লান্তি, বুক ধড়ফড় করা, স্বল্প পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট, মাথা ঝিমঝিম করা, চোখে ঝাপসা লাগা, মাথাব্যথা করা, হাতেপায়ে ঝিনঝিন করা, অবশ ভাব হওয়া, হাত-পা, সমস্ত শরীর ফ্যাকাসে হয়ে আসা, অস্বাভাবিক খাদ্যের প্রতি আসক্তি জমায়, মুখের কোনায় ঘা বা প্রদাহ, খাদ্য গিলতে অসুবিধা, নখের ভঙ্গুরতা ও চামচের মতো আকৃতির নখ হয়ে যাওয়া।
চিকিৎসা
রক্তের সিবিসি (ঈইঈ) পরীক্ষা করলেই রক্তশূন্যতা ধরা পড়ে। রক্তের সিবিসি পরীক্ষা করে রক্তে লোহিত কণিকা ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দেখা হয়। আয়রনের মাত্রা দেখার জন্য সেরাম আয়রন ও সেরাম ফেরিটিন পরীক্ষা করা হয়।
কি কারণে রক্তশূন্যতা হয় তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। অপুষ্টিজনিত কারণে হলে আয়রন সাপ্লিমেন্ট হিসেবে দেওয়াটাই মূল চিকিৎসা। সঙ্গে আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের পরামর্শ দেওয়া হয়। কচু শাক, ডাঁটা শাক, পালং শাক, শিম ও শিমের বিচি, কাঁচা কলা, সামুদ্রিক মাছ, কলিজা, গিলা, গরু-খাসির মাংসে প্রচুর আয়রন থাকে। আয়রন সাপ্লিমেন্ট দুই ভাবে দেওয়া হয়Ñ মুখে খাবার জন্য ট্যাবলেট আকারে এবং শিরায় ইনজেকশন হিসেবে। কোন উপায়ে রোগী এটা নেবেন তা রোগীর অবস্থা বুঝে চিকিৎসক পরামর্শ দেবেন। পেপটিক আলসার, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, পাইলস থাকলে তার চিকিৎসা করতে হয়।
প্রতিরোধে করণীয়
প্রাথমিক অবস্থায় লৌহসমৃদ্ধ খাদ্য যেমনÑ কচু, ধনেপাতা, আটা, কালোজাম, চিঁড়া, শালগম, কলিজা, চিংড়ি, ডাঁটা শাক, আমচুর, পাকা তেঁতুল, ফুলকপি, শুঁটকি মাছ এবং পালং শাক ইত্যাদি খেতে হবে। সঙ্গে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ টক জাতীয় ফল খেতে হবে। ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার রক্তে আয়রন শোষণে সাহায্য করে। কিছু ওষুধ এবং খাবার যেমনÑ দুগ্ধজাতীয় খাবার, অ্যান্টাসিড, চা ও কফি ইত্যাদি মানুষের পাকস্থলীতে অন্য খাবার থেকে আয়রন শোষণের মাত্রা কমিয়ে দেয়। সুতরাং আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের আগে ও পরে এসব ওষুধ অথবা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
ডা. আমিনা আফরোজ অনু
এমবিবিএস (ডিইউ), (ডিএমইউ)
ডেল্টা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
লেকচারার, ট্রমা আইএমটি অ্যান্ড ম্যাটস্