বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

যা পেয়েছি তাতেই তুষ্ট

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:০৫ এএম

চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ছোটপর্দায় অনেক নাটক নির্মাণ করে পরিচালক হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। তবে এবারই প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘অসম্ভব’ নামের এ সিনেমা মুক্তি পাবে শিগগিরই। এই তারকা এসেছিলেন দেশ রূপান্তরের শুক্রবারের আড্ডার অতিথি হয়ে। তার সঙ্গে আড্ডায় অংশ নেন সহকারী সম্পাদক তাপস রায়হান, জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, ডিজিটাল টিমের প্রডিউসার লিটু হাসান ও বিনোদন সম্পাদক মাসিদ রণ

মাসিদ রণ : লম্বা অভিনয় ক্যারিয়ার। কিন্তু এবারই প্রথম সিনেমা নির্মাণ। সেই অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

অরুণা বিশ্বাস : এবারই প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেও আমি এর আগে বেশকিছু টেলিভিশন নাটক, শর্টফিল্ম, টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছি। সেই কাজগুলো দর্শক পছন্দ করেছেন। তবে আমি অগোছালো, গড়পড়তা কাজ করিনি বলে নিয়মিত পরিচালনা করা হয়নি। কারণ আমি যে পরিবেশে যে মূল্যবোধ নিয়ে বড় হয়েছি তার সঙ্গে ওই সব কাজ যায় না। সব সময় একটু বুঝেশুনে গুছিয়ে কাজ করেছি। তাই সিনেমা নির্মাণ করতে এত দেরি হয়ে গেল। সামনেই ছবি মুক্তি পাবে। আমার প্রথম ছবির নাম ‘অসম্ভব’। ছবিটি করতে গিয়ে পারতপক্ষেই অসম্ভব কষ্ট করেছি। অসম্ভব সৎ থাকার চেষ্টা করেছি।

যাই হোক, অন্য কথায় যাওয়ার আগে দেশ রূপান্তরকে ধন্যবাদ জানাই এমন চমৎকার একটি আয়োজন করার জন্য। বিশেষ করে ভালো লেগেছে যে পত্রিকার অফিসেও এমন সুন্দর একটি স্টুডিও করা হয়েছে। এই যে সময়ের সঙ্গে সুন্দরভাবে চলার চেষ্টা এটাই তো আমাদের শিল্পী, সংস্কৃতিসহ সব অঙ্গনের হওয়া উচিত।

মাসিদ রণ : সিনেমাটি নিয়ে পরে বিস্তারিত আলাপ করব। তার আগে একটু আপনার পরিবারের কাছে যেতে চাই। আপনার বাবা অমলেন্দু বিশ্বাস এ দেশের যাত্রাশিল্পের সম্রাট উপাধি পেয়েছেন। আপনার মা জ্যোৎস্না বিশ্বাসও যাত্রার একনিষ্ঠ সহযাত্রী। আপনার ছোটবেলাটা কেমন ছিল?

অরুণা বিশ্বাস : আমার ছোটবেলা কেটেছে অনেক মানুষের মধ্যে। আপনারা ধারণা করতে পারবেন যে, একটি যাত্রার দলে সে সময় কত মানুষ থাকত। ৭০-৮০ জন শিল্পী-কলাকুশলীর সঙ্গে তাদের পরিবার থাকত। তারা সবাই আমার বাবাকে প্রকৃত অর্থেই রাজার মতো সমীহ করতেন। বাবাকে যতটা না শিল্পী হিসেবে দেখেছি তার চেয়ে বেশি একজন রাজনীতি সচেতন মানুষ হিসেবে দেখেছি। উনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের নেতা ছিলেন, ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সেও ছিলেন। বাবা স্বদেশি আন্দোলনের নেতা মুকুন্দ দাসকে খুব পছন্দ করতেন। সে জন্যই উনি উনার কাজের মধ্যে, যাত্রার মধ্যে দেশপ্রেম, দেশের অধিকারের কথা বলেছেন। আমরা তো সেভাবেই বেড়ে উঠেছি। রাজকীয় একটি আমেজ এবং দেশাত্মবোধ এই নিয়েই আমরা বেড়ে উঠেছি। যার জন্য আমিও আমার মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত হতে পারিনি কখনো। এ জন্য অনেকেই বলে, আমি অনেক পিছিয়ে গেছি, যে অবস্থানে থাকার কথা ছিল সেখানে থাকতে পারিনি। কিন্তু আমি সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামাই না। যা করেছি, যা পেয়েছি তাতেই আমি তুষ্ট। যা হোক, একটা সময় পড়াশোনার সুবাদে চলে যাই ভারতেশ্বরী হোমসে। সেখানেও আমি অনেক গুণী মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি।

সালাহ উদ্দিন শুভ্র : আপনি যাত্রার সমৃদ্ধ অবস্থান দেখে বড় হয়েছেন। আর এখন যে পরিণতি, যাত্রাশিল্প বিলুপ্তির পথে। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

অরুণা বিশ্বাস : বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় যখন আর কাজ করতে পারছিলেন না তখন থেকেই আসলে যাত্রার ভবিষ্যৎ এমন হতে পারে বলে আমরা ইঙ্গিত পেয়ে যাই। এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলা প্রয়োজন। আর কথা বললে রাস্তায় আন্দোলনও শুরু হতে পারে, যা ঠেকানোর ক্ষমতা আমার নেই। তাই সেদিকে না যাওয়াই ভালো। শুধু এটুকু বলি, আমাদের নিজস্ব যা কিছু তা কোনোটাই ধরে রাখতে পারি না। আমাদের মধ্যে প্রচ- রকমের বিদেশপ্রীতি। অমুক দেশের ওইটা ভালো, তমুক দেশের সেইটা ভালো এ নিয়েই আমাদের যত হাহাকার। বিদেশ থেকে একটা ছোট্ট আর্টিস্ট এলেও আমাদের দেশের মানুষজন যেভাবে তৎপর হয়ে ওঠেন, আমাদের নিয়ে সেটি করেন না।

সালাহ উদ্দিন শুভ্র : তার মানে দেশপ্রেমের ঘাটতি আমাদের মধ্যে রয়েছে?

অরুণা বিশ্বাস : হ্যাঁ, সেটি তো বটেই। সেই সঙ্গে আরেকটি বিষয় বলতে হয়। সেটি হলো আমরা কাকে কোন অবস্থায় রাখব সেটি জানি না। একজনের ক্ষমতা আছে, তা ব্যবহার করে অভিনেতা-অভিনেত্রী হয়ে যাচ্ছে। তাহলে তার কাছ থেকে ভালো কিছু কীভাবে আশা করেন? কিন্তু আমার তো রক্তের মধ্যেই এটা আছে। ফলে আমাকে নতুন করে দেশপ্রেম, শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি প্রেম কী সেটি শেখাতে হবে না। এখন শোবিজে প্রায়ই দেখি, সিনিয়রদের প্রতি জুনিয়রদের শ্রদ্ধাবোধ নেই। থাকবে কীভাবে? তাদের বাবা-মায়েরাই তো এগুলো শেখান না। কিন্তু এমন ছিল না। মানুষ পরস্পরকে ভালোবাসত, শ্রদ্ধা করত। আর শিল্পী বললে তো মাথায় করে রাখত।

সালাহ উদ্দিন শুভ্র : আপনার প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীদের আর কী পার্থক্য পান?

অরুণা বিশ্বাস : আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো শিল্পী আছেন, এটা সত্য কথা। কিন্তু তারা প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছেন না। তবে আমাদের চেয়ে এখনকার শিল্পীরা খুবই সচেতন তাদের সম্মানীর ব্যাপারে। এটার প্রয়োজনও আছে। নয়তো মানুষ মনে করবে শিল্পীদের বিনা পারিশ্রমিকেই পাওয়া যাবে। আমরা অনেক সময় বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে দিয়েছি। এখনকার প্রজন্ম সেটি করে না। আমরা বোকা ছিলাম, তারা স্মার্ট! কারণ, অনেক সিনিয়র শিল্পীকে দেখবেন জীবনের শেষ দিকে এসে চিকিৎসা খরচ পর্যন্ত বহন করতে পারেন না। অনেকে মনে করেন, উনি এত কাজ করেছেন অথচ এতটুকু সঞ্চয় নেই? কিন্তু এর পেছনের গল্প অনেকেই জানেন না। আমাদের সময় কেউই ঠিকঠাক টাকা পায়নি কাজ করে। কিন্তু প্রযোজকদের দায়িত্ব ছিল পাওনাটা বুঝিয়ে দেওয়া। অর্থের অভাবে ছবিটি হচ্ছে না দেখে আমরা হয়তো পারিশ্রমিক ছাড়াই কাজ করে দিয়েছি। কিন্তু সেই ছবি মুক্তির পর যখন সুপারহিট হয়, তখন কি প্রযোজকের উচিত ছিল না আমাদের পাওনা টাকাটা পরিশোধ করা? কিন্তু তারা সেটি করেননি। এমনকি আমরা শিল্পীরা তো এককালীন কিছু অর্থই পাই। অথচ আমাদের শিল্পকর্ম থেকে আজীবন রয়্যালিটি ভোগ করেন প্রযোজকরা। শিল্পীদের প্রাপ্যটা ঠিকঠাক পেলে তারাই বরং অন্য শিল্পীদের বা রাষ্ট্রকে হেল্প করতে পারতেন।

একে তো শিল্পীরা ঠিকমতো পারিশ্রমিক পেতেন না, তার সঙ্গে প্রায় সব শিল্পীকেই দেখেছি ভয়াবহভাবে পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে। প্রতিটি শিল্পীর ওপর যে কতগুলো মানুষের জীবন নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তা তো আর সাধারণ মানুষের জানার কথাও না। তাই তারা পাশের দেশের শিল্পীদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করেন। সেখানে আমিও কাজ করেছি। দেখেছি কতটা পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করেন তারা। সাধারণ মানুষও শিল্পীদের সেভাবে সম্মান করে। আর পারিশ্রমিক, রয়েলিটি এসব নিয়ে ভাবা তো দূরের কথা, শুটিংয়ে কি পোশাক হবে, কি মেকাপ হবে এসব নিয়েও তাদের ভাবতে হয় না। তারা শুধুই পারফরমেন্স নিয়ে চিন্তা করে। তাদের প্রোডাকশনের বাজেটও অনেক বেশি হয়। এসব কারণেই তাদের কাজও অনেক ভালো হয়। 

তাপস রায়হান : বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে উচ্চারণের অনেক সমস্যা দেখা যায়। এটা কী আপনাদের ব্যর্থতা? নাকি তাদের সমস্যা?

অরুণা বিশ্বাস : উচ্চারণের বিষয়টাও কিন্তু ওই বেড়ে ওঠার সঙ্গেই জড়িত। তা নিয়ে তো আগেই কথা বলেছি। তবে পার্টিকুলার এই বিষয়ে বলতে গেলে তাদের পড়াশোনাকে আনতেই হয়। তারা কোন স্কুলে পড়ছে বা পড়াশোনার চর্চা কতখানি এসব এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। আমি যেমন ভারতেশ্বরী হোমসে পড়েছি, সেখানে নিয়মিত আবৃত্তি, নাচ, গান, বিতর্ক এসব হতো। তখন দেশের সব স্কুলেই হতো। এখন তেমন একটা দেখা যায় না। এ জন্য গোড়াতেই গলদ থেকে যায়। সেদিন শুনলাম, এক শিক্ষককে ছাত্র চড় মেরেছে! এই হলো এখন শিক্ষার অবস্থা। এখন সংবাদ পাঠ যারা করেন তারাও তো অনেক ভুল উচ্চারণ করেন। আর আগে যারা সংবাদ পড়তেন, আমরা তাদের পড়া মনযোগ দিয়ে শুনতাম। শিখতে চেষ্টা করতাম। আমিও যদি এখন জুনিয়রদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে চাই দেখা গেল তারাও একটি বিরূপ সিচুয়েশন ক্রিয়েট করতে পারে। সো আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু টেক এনি রেসপনসিবিলিটি ফর দ্যাট। কারণ আমাদের সিনিয়র যারা তারাও তো দায়িত্ব পালন করেননি ঠিকমতো। এখন আমি একা সেখানে কী করব। ভালো কথা বলতে গেলেও বলবে, ও অরুণা বিশ্বাস! উনি একটু বেশি কথা বলে!

তাপস রায়হান : এই যে নৈতিক স্খলন তৈরি হয়েছে, তাতে ৫০ বছর পর তো সংস্কৃতির অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাবে!

অরুণা বিশ্বাস : ৫০ বছর পরে যাচ্ছেন! এখনই দেখেন না কী অবস্থা? এত বিমুখতা তৈরি হয়েছে আমাদের দর্শকদের মধ্যে সেটি আর বলার নয়। এখন যেন সবাই সব জানে, সব বোঝে, সব বিষয়েই সবার কথা বলতে হয়! আর আমাদের কথা বলতে গেলে, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো পথপ্রদর্শক নেই। যিনি সবটার দেখভাল করবেন, সরকারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় বিষয়ে কথা বলবেন। কিন্তু কেউ সেই দায়িত্বটা পালন করেননি।

লিটু হাসান : হিন্দি সিনেমা আমাদের দেশে প্রদর্শন নিয়ে অনেক মতামত অনেকের। আপনার মতামত কী?

অরুণা বিশ্বাস : আমি একটি উদাহরণ দিয়েই বলি। ধরুন, একটি পরিবারের একটি সন্তান অসুস্থ। তাহলে সেই পরিবার কি তখন বাইরের অতিথি বাসায় স্বাগত জানাবে? সেই সময় তো অসুস্থ বাচ্চাটার চিকিৎসা, টেককেয়ার করাটাই সবচেয়ে জরুরি। তখন অতিথি বাসায় ডেকে আলাদা অ্যাটেমশন দেওয়ার কোনো যুক্তি আমি অন্তত দেখি না। অর্থাৎ আমাদের দেশে হিন্দি সিনেমা আসাটাই আমি ওই অসুস্থ বাচ্চার পরিবারে বাইরের অতিথি আসার মতোই ঝামেলার বিষয় বলে মনে করছি। কারণ আমাদের চলচ্চিত্রের অবস্থা সত্যি এখন নাজুক, তাকে আগে সুস্থ ও সুন্দর হতে হবে। পরে অতিথির কথা ভাবা যাবে। নিজেদের স্বার্থে কিছু কিছু জায়গায় স্বার্থপর হতেই হবে। এসব কথা যাদের ভাবা উচিত তারাই তো ভাবছেন না। ফলে আমি এগুলো নিয়ে কথা বলে বরং তাদের চক্ষুশূল হব।

সালাহ উদ্দিন শুভ্র : আপনার নতুন ছবিটির দিকে আসা যাক। কিছু বলুন ‘অসম্ভব’ নিয়ে...

অরুণা বিশ্বাস : ছবিটির গল্পটা আসলে আমার ছোট ভাই মিঠু বিশ্বাসের। সে একদিন খুব ভোরে আমাকে ফোন করে গল্পটি শেয়ার করে। আমার ভীষণ পছন্দ হয়। সেই থেকেই ছবিটি করার ইচ্ছা। কিন্তু অর্থায়ন নিয়ে ঝামেলায় ছিলাম। অবশেষে সরকারি অনুদান পেয়ে যাই। এর আগেও দু বার আমি সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করলেও পাইনি, এবার পেয়ে বেশ অবাকই হয়েছিলাম। যাই হোক, এরপর কাজ শুরু করি। আমি আর আমার ভাইটা প্রচ- পরিশ্রম করেছি ছবিটি করতে গিয়ে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে যে, আমার পুরো টিম ভীষণ সাপোর্ট করেছে। মানিকগঞ্জে শুটিং করেছিলাম, সেই গ্রামবাসীও খুব সহযোগিতা করেছে। নির্দেশনার পাশাপাশি আমি ছবিটিতে অভিনয়ও করেছি। গুরুত্বপূর্ণ অন্য চরিত্রগুলোয় রয়েছেন আবুল হায়াত, সোহানা সাবা, স্বাগতা, শতাব্দী ওয়াদুদ, শাহেদ শরীফ খান, গাজী আব্দুন নূর প্রমুখ। আমার মা জ্যোৎস্না বিশ্বাস তার নিজের চরিত্রেই স্পেশ্যাল অ্যাপিয়ারেন্স করেছেন।

মাসিদ রণ : বিভিন্ন ইন্টারভিউতে আপনি ক্যারিয়ারের নানা স্ট্রাগলের কথা বলেছেন। আজ কী বলবেন?

অরুণা বিশ্বাস : আমি এক যুগের মতো নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার ক্যারিয়ারে কোনো ফ্লপ ছবি নেই। তারপরও কেন যেন সেভাবে আমাকে নিয়ে তখনকার সাংবাদিকরা লেখেননি। অন্য নায়িকাদের যেভাবে তারা প্রমোশন করতেন আমাকে তারা কখনোই করেননি। অন্য নায়িকাদের নিয়ে যেমন লিখতেন উনি এক নম্বর নায়িকা, উনি দুই নম্বর বা উনি অভিনয় করে ফাটিয়ে দিয়েছেন, এসব আমাকে নিয়ে লেখা হতো না। কেন হয়নি, সেগুলো এখন আর বলতে চাই না। কারণ আমি কারও বদনাম করতে বসিনি। শুধু এই বিষয়টিই নয়, ক্যারিয়ারের প্রথম ছবি ‘চাপা ডাঙ্গার বউ’ সুপারহিট হওয়ার পরও চলচ্চিত্রের মানুষের কাছে শুনেছি আমার নাকি গ্ল্যামার নেই, দেখতে ভালো না। আমাকে নাকি শুধু আর্ট ফিল্মেই মানাবে, বাণিজ্যিক ঘরানার নায়িকার চরিত্র করতে পারব না। এ জন্য আমাকে অনেকেই গ্ল্যামারাস চরিত্রে সুযোগ দিতেন না। কিন্তু প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান অরুণা বিশ্বাসের অন্য একটি দিকও আছে, সেটি আবিষ্কার করেছিলেন। এবং তার হাত ধরেই আমি প্রথম গ্ল্যামারাস রোলে অভিনয় করি। সেখানে নিজেকে প্রমাণ করার পরই আমাকে অন্যরা এ ধরনের চরিত্রে প্রস্তুাব দেওয়া শুরু করেন। একটা সময় ক্যামেরাম্যানরা আমাকে ‘ক্যামেরা কন্যা’ নাম দিয়েছিলেন। ক্যামেরার সামনে এলেই আমার পারসোনা চেঞ্জ হয়ে যায়। অর্থাৎ পরিচালকরা আমাকে কাস্টিং করেছেন তাদের প্রয়োজনেই।   সবচেয়ে বিরক্ত লাগে যখন দেখি অনেকে পুরনো সময়ের কথাগুলো বলতে গেলে মিথ্যা বলে। কিন্তু আমি তো নিজের কথাই নিজে বলছি। এখনো সে সময়ের অনেক নির্মাতা বেঁচে আছেন। তাদের কাছে বিষয়গুলো জানতে চাইলে সত্যতা পাওয়া যাবে।  

মাসিদ রণ : ‘অসম্ভব’-এর প্রেক্ষাপট কী নিয়ে?

অরুণা বিশ্বাস : না না, এটা বলা যাবে না। আমার ছবির গল্প কেউ জানে না, আর শেষটা কী হবে শুরুতে তাও কেউ আন্দাজ করতে পারবে না। আমি এখন পর্যন্ত ছবির গল্প নিয়ে কাউকে কিছু বলিনি। রোজিনা আপা, ফাল্গুনি হামিদসহ সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা ছবিটি দেখার পর আমাকে বলেছেন, সব ছবিতেই তো শেষে কি হবে বোঝা যায়, তোমার ছবিতে শেষটা কী হবে বুঝতে পারিনি আগে থেকে। প্রতিটি দৃশ্যেই এক ধরনের চার্ম রয়েছে। শেষটা না দেখে দর্শক উঠতে পারবে না। এটাই আমার স্বার্থকতা। আহামরি কোনো ছবি না। পৃথিবীর সব গল্পই তো ঘুরেফিরে এক। হয়তো লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড, নয়তো রিভেঞ্জ অথবা রোমান্টিক। আমার ছবিতেও লাভ স্টোরি আছে, চমৎকার কিছু গান রয়েছে শিল্পীদের ভালো অভিনয় আছে, প্রেজেন্টেশনে ভিন্নতা রয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে এটি বাংলাদেশের ছবি, পরিবারের ছবি, পরিবার নিয়ে হলে গিয়ে দেখার মতো ছবি। ছবিটি নিয়ে আমার আত্মবিশ্বাস রয়েছে। আশা করছি দর্শকের ভালো লাগবে।

মাসিদ রণ : এতো বছরের শোবিজ ক্যারিয়ারে এবারই প্রথম প্লেব্যাক করেছেন। সেই গল্পটি শুনতে চাই...

অরুণা বিশ্বাস : আসলে গানটি আমি গাইব, এমন কোনো কথা কিন্তু ছিল না। তবে আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল গাজী ভাইকে দিয়ে আমার ছবিতে গান লেখাব। তো ওনাকে সিচুয়েশন বলার পর প্রথম কয়েকটা লাইন লিখলেন। আমি মজা করে বললাম, ধুর, গাজী ভাই কিচ্ছু পারে না! এর মধ্যেই তিনি লাইনগুলো লিখে ফেললেন। খুব ভালো লাগল। অন্য একজন গায়িকার করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে আমাকে ডামি ভয়েস দিতে বলল সংগীত পরিচালক। পরে বলল, “দিদি, আপনার ভয়েসটাই ঠিক আছে দৃশ্যটির জন্য।” গাজী ভাইও সুরটি শোনার পর বলেছেন, “দেখিস গানটি জনপ্রিয় হবে।” শিগগিরই ছবির ট্রেলার ও গানগুলো একে একে অনলাইনে প্রকাশ করব। আমিও আশা করি, দর্শক গানটি পছন্দ করবেন।

তাপস রায়হান : সিনেমা পরিচালনায় নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছে আছে?

অরুণা বিশ্বাস : প্রথম ছবিটি আগে মুক্তি পাক। তারপর নতুন ছবি ধরব। এরই মধ্যে দুটি ছবি নির্মাণের বিষয়ে কাজ শুরু করেছি।

লিখেছেন : মাসিদ রণ

ছবি : আবুল কালাম আজাদ

লোকেশন : গ্রিন লাউঞ্জ

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত