মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

আরও ভালো গানের ইচ্ছা ছিল, হয়নি

আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:২৩ এএম

এস ডি রুবেল। সংগীতশিল্পী হিসেবেই তার পরিচিতি সর্বাধিক। তবে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সুরকার হিসেবে কাজ করছেন তিনি। শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেওয়া এই শিল্পী একসময় হয়ে ওঠেন আধুনিক বাংলা গানের পোস্টার বয়। বর্তমানে অভিনয় ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে শুরু করেছেন নতুন অধ্যায়। জনপ্রিয় এই শিল্পী এসেছিলেন দেশ রূপান্তরের শুক্রবারের আড্ডার অতিথি হয়ে। তার সঙ্গে গান-গল্পে মেতে ওঠেন সহকারী সম্পাদক তাপস রায়হান, অনলাইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক ইমরোজ বিন মশিউর, ডিজিটাল টিমের প্রডিউসার লিটু হাসান ও বিনোদন সম্পাদক মাসিদ রণ

এস ডি রুবেল অভিনীত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘বৃদ্ধাশ্রম’ মুক্তি পেয়েছে গত শুক্রবার। এ ছবির মাধ্যমে আবার চিত্রপরিচালক হিসেবেও অভিষেক হয়েছে এই জনপ্রিয় শিল্পীর। স্বাভাবিকভাবেই ছবির প্রচারণায় তিনি ভীষণ ব্যস্ত। তারইমধ্যে দেশ রূপান্তরের আড্ডায় বসার সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু অজস্র ব্যস্ততায় তার পৌঁছতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে যায়। তাই আজকের ফটোশুট করতে হয় রাতের আবহে। এদিন নরম গোলাপি শার্টে এসডি রুবেল বরাবরের মতোই হ্যান্ডসাম। ছবি তোলার পর্ব শেষে দেশ রূপান্তরের স্টুডিওতে তিনি বসেন আড্ডায়। প্রথম প্রশ্নটা আসার আগেই উঠে আসে এই গায়কের ক্যারিয়ারের প্রথম দিনগুলোর কথা। এস ডি রুবেল মানেই যেন ‘অনেক বেদনা ভরা আমার এ জীবন’ গানটি। তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উজ্জ্বল এই গানের গীতিকার (সাংবাদিক তাপস রায়হান) স্বয়ং রয়েছেন আজকের এই আড্ডায়। সুতরাং আড্ডা যে প্রচলিত নিয়মনীতির বালাই মানবে সে আগেই বোঝা হয়ে যায়। এলোমেলো কথোপকথনে উঠে আসে রুবেলের জীবনের নানা অধ্যায়। রুবেল বলতে শুরু করেন, ‘অনেক বেদনা ভরা আমার ক্যারিয়ারের মাইলফলক। সে গানটি প্রণব ঘোষের সুরে, লিখেছিলেন আমার ছোট ভাই তাপস (বয়সে বড় হলেও মজা করেই কথাটি বললেন শিল্পী)। তখন তাপস জনকণ্ঠ পত্রিকায়। সে যে কী দাপট তার! আমাদের অনেক জ¦ালাত। এখনো একই স্বভাব রয়ে গেছে তার। এই যে আমাকে হাজারটা সিডিউল ফেলে তার কথাতে আসতেই হয়েছে (নিজের সম্পর্কে রুবেলের এমন ভাষ্যে হেসে লুটোপুটি খান তাপস রায়হান)!

রুবেলকে থামিয়ে দিয়ে সাংবাদিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ তাপস রায়হানের প্রশ্ন, আপনি সংগীতের মাধ্যমে তারকাখ্যাতি পেয়েছেন। এখন শোবিজের অন্য ধরনের কাজ করছেন। তাহলে কি সংগীত ছেড়ে দিয়েছেন?

এস ডি রুবেল : ‘মিউজিক ইস মাই সোল। ফলে মিউজিক ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখন আমার যা যা অ্যাক্টিভিটিস দেখেন তার সব ওই মিউজিকের জন্যই। সংগীতশিল্পী হিসেবে পপুলার হয়েছি বলেই অন্য কাজগুলো করার সুযোগ পাচ্ছি। প্রথম সিনেমাতেই আমি নায়িকা হিসেবে পেয়েছিলাম বাংলাদেশের সুপারস্টার শাবনূরকে। এখন যে ছবিটি হলে চলছে সেই বৃদ্ধাশ্রমের নায়িকা ববি। এখন চিত্রপরিচালক হিসেবেও কাজ করছি। তাছাড়া আমি যে সিনেমা করছি তার সঙ্গে মিউজিকের কিন্তু অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক বিদ্যমান। উদাহরণ স্বরূপ যদি সত্যজিৎ রায় কিংবা আজকের প্রজন্মের রাজ চক্রবর্তীর নাম বলি, কিংবা আমাদের দেশের অমিতাভ রেজা, গীয়াসউদ্দিন সেলিম প্রত্যেককে নিয়ে যদি আপনি স্ট্যাডি করেন তাহলে দেখবেন তাদের সিনেমায় গান কতটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মনপুরার কথাই বলি, এই ছবির গানই কিন্তু প্রথমে জনপ্রিয় হয়। অতি সম্প্রতি হাওয়া সিনেমার কথাই বলি, নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন একটি গান করলেন তার ছবির জন্য, ‘সাদা সাদা কালা কালা’ নামে। সেই গানটি হিট হওয়ার কারণে ছবিটি দেখার প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বেড়ে গিয়েছিল। এসব নির্মাতার মিউজিক্যাল সেন্স এতটাই প্রখর ছিল যে তারা জানে তার গল্পকে আরও আবেদনময় করার জন্য কোথায় কোন ধরনের গান ব্যবহার করতে হবে। আমি সংগীতশিল্পী হিসেবে আমার ছবিতেও সেই বিষয়গুলোর অ্যাডভানটেজ পাচ্ছি বা ভবিষ্যতে আরও পাব বলে আশা করি। আমার প্রথম সিনেমার একাধিক গান মানুষ খুব পছন্দ করে। নতুন সিনেমা ‘বৃদ্ধাশ্রম’-এর টাইটেল গানটিও দর্শক খুব পছন্দ করেছেন, (আড্ডাবাজদের অনুরোধে শিল্পী তার চমৎকার এই নতুন গানটির প্রথম কয়েক লাইন গেয়ে শোনান)।

এখন যদি কেউ বলে আমি গান থেকে সরে সিনেমা করছি সেটি ভুল কথা। আমি আসলে গানেই আছি। শুধু মাধ্যম বদল হয়েছে। তাছাড়া আমার এসডি রুবেল ফাউন্ডেশন থেকে প্রতি মাসে একাধিক গান প্রকাশ হচ্ছে। এবং এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আর অভিনয় করছি কারণ ছোটবেলায় গ্রুপ থিয়েটার করেছি। তাই অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা বরাবরই ছিল। সবমিলিয়ে এমন কিছু সিনেমা করতে চাই যা জাতীয়ভাবে সমাদৃত হয়।

তাপস রায়হান : সিনেমায় গানের জনপ্রিয়তা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ সে কথা বলছিলেন। আপনার লম্বা সংগীত ক্যারিয়ারেও বেশ কিছু জনপ্রিয় গান আছে। আমরা জানতে পেরেছি আপনিও সেগুলোকে সিনেমায় ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন...

এস ডি রুবেল : আমার প্রথম অ্যালবাম ‘অশ্রু’ বেশ সফল। প্রোডিউসার লস করেনি, এক লাখ টাকা ইনভেস্ট করে সে সময় অ্যালবামটি থেকে তিনি আট দশ লাখ টাকা লাভ করেছিলেন। দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘জীবনের সৈকতে’ করার জন্য সাউন্ডটেক আমাকে হায়ার করল। সেই অ্যালবামটি নীরবে জোয়ার বইয়ে দিয়েছিল। তৃতীয় অ্যালবাম ‘পরিচয় বাঙালি’ সঙ্গীতার ব্যানারে বের হলো। সেটিও খুব ভালো ব্যবসা করে। এরপর যে অ্যালবামটি আসে, সেটির নাম ‘কেউ নেই’। এটি একেবারে সুপারডুপার হিট। এই অ্যালবামেরই গান ‘অনেক বেদনা ভরা আমার এ জীবন’। গানটি সারা দেশের ৬৮ হাজার গ্রামবাংলায় ছড়িয়ে যায়! যাই হোক, আমি চিন্তা করে দেখলাম আধুনিক এই যুগে গানগুলো যদি নতুন আঙ্গিকে না করি তাহলে তা হারিয়ে যাবে। তাই নিজের জনপ্রিয় গানগুলো নিয়ে একটি বৃহৎ পরিকল্পনা সাজিয়েছি। তা হলো, এই গানটিসহ আরও কমপক্ষে ১০টি গান আমার সিনেমায়-নাটকে আবারও ব্যবহার করব।       

ইমরোজ বিন মশিউর : আপনি যখন গানের ক্যারিয়ার শুরু করেন তখনই বলিউডে সঞ্চয়লীলা বানশালীর প্রথম সিনেমা ‘খামোশি : দ্য মিউজিক্যাল’ বের হয়। আপনি একাধারে গান ও চলচ্চিত্রের মানুষ হিসেবে জানতে চাওয়া, আপনার বিখ্যাত গানগুলো দিয়ে এমন একটি মিউজিক্যাল ফিল্ম করার কথা কখনো ভেবেছেন?

এস ডি রুবেল : চিন্তাটা সুন্দর। আমরা মতো যারা এক দেড় হাজার গান করেছেন তাদের জন্য চমৎকার একটি মিউজিক্যাল ফিল্ম করা উচিত। কিন্তু আমরা তো অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ভাগা। মিউজিক্যাল ফিল্ম সেল করার কোনো জায়গা নেই। একটা ছবি তো হলে মুক্তি দেওয়া যায়, এরপর টিভি চ্যানেল, ইউটিউবসহ কয়েক জায়গায় দেওয়া যায়। কিন্তু মিউজিক্যাল ফিল্মের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। এখনো আমাদের বিজ্ঞাপনদাতারা নাটকে ইনভেস্ট করতে খুব আগ্রহী। কিন্তু গানের বেলায় তারা সেটা চায় না। আমরা যে এখন ইউটিউবের জন্য গান তৈরি করছি, সেটি একেবারেই বিনা পারিশ্রমিকেই করছি। এগুলো তো কোনো পেশাদারিত্ব না। 

তাপস রায়হান : অডিওতে তুমুল জনপ্রিয় গানটি চলচ্চিত্রের জন্য রি-অ্যারেঞ্জ করলে কি তা সমান জনপ্রিয় হবে? এ বিষয়ে কি কোনো দ্বিধা কাজ করে?

এস ডি রুবেল : এটা একটা দামি প্রশ্ন। দেখেন, কোনো ক্রিয়েশনেই শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না যে তা দর্শককে আন্দোলিত করবে বা করবে না। তারপরও রিস্ক নিয়েই তো কাজ করতে হয়। 

মাসিদ রণ : এখন আপনার অনেক পরিচয়। কোন পরিচয়টাকে প্রথমে রাখবেন?

এস ডি রুবেল : আসলে আমি কিন্তু কোনো কাজই হুট করে করছি না। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই গান গাওয়ার পাশাপাশি গানের সুর করা, কথা লেখা বা মিউজিক পরিচালনা করার কাজ করছি। তারও আগে থেকে ছাত্রজীবনে থিয়েটারে অভিনয় করেছি। কিন্তু এই কাজগুলো সেভাবে কখনই সামনে আসেনি। তাই এখন সেই কাজগুলো করতে দেখে দর্শক হয়তো ভাবতে পারেন যে আমি হুট করেই এসব কাজ করছি। আর সিনেমা নির্মাণের চর্চার কথা যদি বলেন, তাহলে একটু পুরনো কথাতে আসতেই হয়। গত ২৩ বছর ধরে আমি একটি ছোট বিজ্ঞাপনী সংস্থা চালাই। সেখান থেকে বিজ্ঞাপন বানানো, ডকুমেন্টারি বানানোসহ নানা ধরনের নির্মাণকাজ করি। তারও আগে থেকে দেশের বিখ্যাত নির্মাতা প্রযোজকরা আমার গানের কাজ কীভাবে করেছে সেগুলো চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। ২০০১ সালের দিকে একটি ব্যয়বহুল ক্যামেরা কিনি, একটি এডিটিং হাউজ ছিল।

মাসিদ রণ : অনেক দিন তো অভিনয় থেকে দূরে। এখন নিয়মিত অভিনয় করবেন। নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে?

এস ডি রুবেল : খুবই উপযোগী একটি প্রশ্ন করেছেন। আসলে এই বিষয়টি আমিও উপলব্ধি করেছি। তাই দেশের একজন প্রখ্যাত নাট্যজনের কাছে আমি অভিনয়ের বিষয়টি আরেকটু ঝালিয়ে নিচ্ছি। ব্যক্তিগত কারণে উনার নামটি উল্লেখ করছি না। যাই হোক, আমি এটুকু বলতে পারি আমার পরবর্তী সিনেমায় নতুন এক রুবেলকে দেখবেন দর্শক। সেভাবেই নিজেকে তৈরি করছি। কারণ আমি এখন শুধুমাত্র টাকার জন্য কাজ করতে চাই না। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও নিজের মূল্যবোধের উন্নয়নের জন্য উঠেপড়ে লেগেছি। তাই প্রচুর স্ট্যাডি করছি। ইউটিউব তো এখন বিশে^র সবচেয়ে বড় পাঠশালা। আমাকে আরও অনেক পরিশ্রম করতে হবে।   

মাসিদ রণ : প্রতিটি বিষয়ে সঠিক সময় বলে একটা কথা আছে। আপনি যখন তরুণ, তখন আপনার গানের পাশাপাশি আউটলুক নিয়েও চর্চা ছিল। সেই তো নায়ক হলেন, তবে সঠিক সময়ে কেন হলেন না?

এস ডি রুবেল : সত্যি কথা বলেছেন। সংগীতশিল্পী হিসেবে ১৯৯৭ সালে আমি প্রতিষ্ঠা পাই। আর ১৯৯৯ সালের দিকে তারকালোক পত্রিকার একটি প্রোগ্রামে হোটেল শেরাটনে আমাকে গাইতে দেখে ঢালিউডের প্রখ্যাত চিত্রকার এহতেশাম নিজে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। উনার মতো মানুষকে তো সরাসরি না করা যায় না। পরের দিন উনার বাসা গুলশানে গিয়ে দেখি সেখানে শাবনূরও আছেন। সেদিন উনি আমাকে বললেন, তোমাকে দিয়ে উর্দু ‘চান্দা’ সিনেমার রিমেক বানাতে চাই। সব শুনে আমি অনেক বিনয়ের সঙ্গে বললাম, দেখেন আমি তো আসলে সিনেমা করতে চাই না। আপনার সম্মানে দেখা করতে এসেছি। আমি আসলে সংগীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ক্যারিয়ার একপাশে রেখে নতুন একটি ভূমিকায় দর্শকের সামনে আসতে দ্বিধাগ্রস্ত।

মাসিদ রণ : কেন এমন দ্বিধা ছিল আপনার?

এস ডি রুবেল : কারণ, এমনও হতে পারত যে নায়ক হিসেবে ভালো করতে পারলাম না। আর গায়ক হিসেবে যে জায়গাটি ছিল সেটিও ততদিনে হারিয়ে গেল। তখন আমি গানে নম্বর ওয়ান! কথাটি বাড়িয়ে বলছি না, তখন যারা শ্রোতা তারা জানেন। পত্রিকায় ক্যাসেটের বিজ্ঞাপনে এক নম্বরে আমার ছবিটিই থাকত। এন্ড্রু কিশোর সাহেব তখন তিন চার নম্বরে থাকতেন। এমনকি জেমস, আইয়ুব বাচ্চুর ছবিও আমার পরে থাকত। উনাদের সবাইকে সম্মান দিয়েই বলছি, ক্যাসেটের সেলের জন্যই অডিও কোম্পানিগুলো আমার ছবি সবার আগে দিতেন। এ বিষয়টি নিয়ে একদিন সংগীতার সেলিম খানকে আমি জিজ্ঞেসও করেছিলাম। উনি বলেছিলেন, আপনি আমাদের মেজর জেনারেল! আপনি চললেই তো আমরা চলব। যাই হোক, এরপর সোহানুর রহমান সোহান, মনতাজুর রহমান আকবর, রায়হান মুজিবসহ বেশ কজন জনপ্রিয় নির্মাতাও আমাকে নিয়ে সিনেমা করতে চেয়েছিলেন। আমি রাজি হইনি। ২০০৯ সালে যখন আমার ১২০০’র মতো গান করা হয়ে গেছে তখন আবার সিনেমায় নায়কের প্রস্তাব পাওয়ার পর ভাবলাম এখন তো গায়ক এসডি রুবেলের হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই। বলিউডে কিশোর কুমারও প্রতিষ্ঠিত গায়ক থেকে নায়ক হয়েও সমান সাড়া ফেলেছিলেন। তাই শাবনূরের সঙ্গে ‘এভাবেই ভালোবাসা হয়’ ছবিটি করলাম। ছবিটি সে সময় ভালো ব্যবসাও করে।

মাসিদ রণ : প্রথম ছবিতেই নায়িকা হিসেবে শাবনূরকে পেয়েছিলেন। তার মতো বড় অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করতে কোনো নার্ভাসনেস কাজ করেছিল কি?

এস ডি রুবেল : কিছুটা তো নার্ভাসনেস ছিলই। আমি এখনো মনে করি, যতটা ভালো অভিনয় করা উচিত ছিল আমি ততটা করতে পারিনি ওই ছবিতে। দর্শক হয়তো ভালো বলেছে, কিন্তু আমি নিজে সন্তুষ্ট ছিলাম না। বৃদ্ধশ্রম ছবিতে আরেকটু ভালো করতে চেষ্টা করেছি। আশা করছি আগামী ছবিগুলোতে আরও ভালো হবে। সেজন্যই তো ওই চর্চাগুলো চালিয়ে যাচ্ছি।

তাপস রায়হান : সংগীতে প্রণব ঘোষের মতো মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছেন...

এস ডি রুবেল : আমি আসলে খুব সহজে কারও সান্নিধ্য পাইনি। আমি বিভিন্ন বিখ্যাত লোকের কাছে বারবার গেছি, তাদের খারাপ ব্যবহার সহ্য করেছি। কিন্তু আশা ছাড়িনি, লেগেই ছিলাম। সেজন্যই পরবর্তী সময়ে তাদের সান্নিধ্য পেয়েছি।

ইমরোজ বিন মশিউর : আপনি যখন গান শুরু করেন তখন দেশে অনেক বড় বড় কম্পোজার ছিলেন। তারপরও আপনাকেই কেন সুর করা, কম্পোজ করার মতো কাজগুলো করতে হয়েছিল?

এস ডি রুবেল : আমি আসলে এতদিন পর কারও নাম বলে বিতর্ক তৈরি করতে চাই না। যখন প্রথম অ্যালবাম তৈরি করতে গেলাম, অনেকেই গানের সুর করলেন, কিন্তু একটিও আমার পছন্দ হচ্ছিল না। আমি যেহেতু ক্লাসিক্যাল গান গাইতাম ফলে ওগুলোকে আমার কাছে কবিতা আবৃত্তির মতো মনে হচ্ছিল (মুচকি হেসে)। আমি তপন চৌধুরী আর নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর গান পছন্দ করতাম। তাদের গানে সেমি ক্লাসিক্যাল একটা স্বাদ ছিল। আমিও তেমন কিছু করতে চাইছিলাম। এজন্যই পরে নিজেই সুর করতে নেমে পড়লাম। এভাবে করতে করতে নয়টি গানের সুরই আমি করলাম। কম্পোজারকে শোনানোর পর উনিও পছন্দ করলেন। কিন্তু আমি যেহেতু নতুন শিল্পী, সুরকার হিসেবে তো আমার নাম দেবে না অডিও কোম্পানি। তাদের কথা হলো, শিল্পী যে সুরকারও এটা ভালোভাবে নেবে না শ্রোতারা। তখন মিল্টন খন্দকার ডলি সায়ন্তনীর গান করে খুব হিট। অগত্যা নিজের নামের বদলে মিল্টন খন্দকারের নামের সঙ্গে মিল রেখে মিল্টন চৌধুরী করে প্রকাশ করলাম। পরে অবশ্য আবার যখন নতুন কপি বের হলো অ্যালবামের সেখানে নিজের নামই দিয়েছিলাম।

মাসিদ রণ : সংগীতশিল্পী হওয়ার গল্পটা হয়তো অনেকদিন কোথাও বলেননি। আবার একটু শুনতে চাই...

এস ডি রুবেল : আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা চাঁদপুরে। ছোটবেলা থেকেই গানে হাতেখড়ি। মূলত আমার বড় বোন স্নিগ্ধা গান শিখতেন। উনিই আমার প্রথম গানের শিক্ষক। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় থেকে গুরু ধরে ক্লাসিক্যাল শেখা শুরু। স্বপন সেনগুপ্ত ও শীতল ঘোষালের কাছে শিখেছি। এরপর ঢাকা কলেজে যখন কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হলাম তখন ছায়ানটে নজরুল সংগীত আর শাস্ত্রীয় সংগীত শিখেছি। ওস্তাদ ফুল মহম্মদ, সুমন চৌধুরী, খায়রুল আনাম শাকিল, কল্পনা আনামসহ অনেক শিক্ষকের কাছে শিখেছি ছায়ানটে। আপনারা তো জানেনই, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত মোট ১০টি ঠাটের ওপর নির্ভরশীল। সেই ঠাটগুলো থেকে বিভিন্ন প-িত বিভিন্ন রাগ সৃষ্টি করেছেন। আমার সৌভাগ্য যে উচ্চাঙ্গ সংগীত চর্চা করতে গিয়ে দশটি ঠাটই অল্প অল্প করে শিখেছিলাম। যার কারণে পরে গান গাইতে, সুর করতে কিংবা আবহ সংগীত তৈরি করতে সুবিধা হয়। একটা গল্প শেয়ার করি। আমার ‘বৃদ্ধাশ্রম’ সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছেন কলকাতার বিখ্যাত মিউজিক ডিরেক্টার বুদ্ধদেব গাঙ্গুলী। উনাকেও কিন্তু আমি নানা বিষয়ে মতামত দিয়েছি। একবার তিনি বলেই বসলেন, আপনি কী চেয়েছেন একটু কি-বোর্ডে বাজিয়ে দেখান। এটা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ যে, আমি জেনে কথাটা বলছি নাকি না জেনে! ওই জ্ঞানটুকু আছে বলেই আমি তাকে সেদিন বাজিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম যে আমি জেনেবুঝেই মতামতগুলো দিচ্ছি।  

মাসিদ রণ : শিল্পী হিসেবে নিজেকে কতটা সফল মনে করেন?

এস ডি রুবেল : দুঃখের সঙ্গেই বলতে হয়, আমাদের দেশে পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ শিল্পী খুব কম। একটি গানের মিক্সিং, ব্যালেন্সিং ইজ ভেরি মাচ কমিøকেটেড থিং। ভারতে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার বলে একটা পেশা আছে যার লাখ লাখ টাকা স্যালারি। আমাদের দেশে একজনও পাবেন না। আমরা যেটা সবাই মিলে করছি, সেটা হলো শুনে শুনে, অভিজ্ঞতা থেকে। আমরা মৌলিক কিছু করতে পারছি না, আমরা যেটা করছি তাকে বলা যেতে পারে সাউন্ডের রিপ্রোডিউস করা। যে দু-একজন ফুল প্যাকেজ ছিলেন তারা বেরিয়ে এসেছেন, যেমন আইয়ুব বাচ্চু। এসব নিয়ে আমার অসন্তোষ রয়েছে। 

মাসিদ রণ : ক্যারিয়ারে এমন কোনো আক্ষেপ আছে যা আজও আপনাকে ভাবায়?

এস ডি রুবেল : আরও অনেক ভালো গান করার ইচ্ছা ছিল, করা হয়নি।

মাসিদ রণ : শেষ জীবন নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?

এস ডি রুবেল : সংস্কৃতির উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই।

লিখেছেন : মাসিদ রণ

ছবি : আবুল কালাম আজাদ

লোকেশন : গ্রিন লাউঞ্জ

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত