রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

কেন আনসার?

আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৩৭ পিএম

অপরাধীকে আটক করার ক্ষমতা পাচ্ছেন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা। এ বিধান রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল, ২০২৩’ জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে। চলতি সংসদেই বিলটি পাস হতে পারে। এতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের সময় আনসার সদস্যরা তাদের নতুন ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। বিলটি নিয়ে বিরোধী দলসহ পুলিশও আপত্তির কথা জানিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে পুলিশ, র‌্যাবের মতো বাহিনী থাকার পরও একটি সহযোগী সংস্থাকে ফৌজদারি বিষয়ক ক্ষমতা দেওয়ার কী প্রয়োজন পড়ল?

মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরে ‘ক্ষুব্ধ পুলিশের আপত্তি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০১৭ সাল থেকে একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা হয়েছিল। হঠাৎ আনসারের প্রস্তাবের ফাইলটি সচল করা হয়। আইনটি কার্যকর করা হলে আনসার সদস্যরা গ্রেপ্তার, মালামাল জব্দ ও মামলার তদন্ত করতে পারবে। কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানায় মামলা করতে পারবে। প্রশ্ন হচ্ছে থানায় করা আনসারের মামলার তদন্ত কে করবে? পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা রবি ও সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরে বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গেও বিশেষ বৈঠক করেছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। গ্রেপ্তার করা, মালামাল জব্দ ও মামলার তদন্তের বিষয়টি পুলিশের এখতিয়ারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে আইনটির প্রত্যাহার চেয়েছে অ্যাসোসিয়েশন। বিষয়টির সুরাহা করা হবে বলে পুলিশ কর্তাদের আশ্বস্ত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সোমবার সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিলটি উত্থাপনের অনুমতি চাইলে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম আপত্তি জানান। বিলটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘পুলিশের কাজটা যদি বিভক্ত এবং সমান্তরাল করা হয়, তাহলে কাজটা করা যাবে না। দেশে সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর আলাদা আলাদা কাজ আছে। এলিট বাহিনীও করা হয়েছে।’ তবে তার আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। অন্যদিকে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল’ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অভিযোগ করেছে, সরকার আনসার ও গ্রাম পুলিশ বা ভিডিপি দিয়ে ‘নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ’ করার কৌশল নিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে হয়রানি করার। এমতাবস্থায় আনসার সদস্যরা ব্যবহৃত হতে পারেন বলে আশঙ্কা থেকেই যায়।

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী যেমন একদিনে তৈরি হয়নি, তেমনি র‌্যাবের মতো এলিট ফোর্সের সদস্যরাও বিভিন্ন বাহিনী থেকে নানা রকম ট্রেনিং, স্কুলিং, মোটিভেশনের মাধ্যমে আসেন। তারপরও গ্রেপ্তার, তল্লাশির মতো অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে। বর্তমানে আনসার বাহিনীর সদস্যরা পুলিশের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। এর জন্য তাদের অর্থ দেওয়া হয়। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী আটক, তল্লাশি ও জব্দ তালিকা করতে পারেন সাব-ইন্সপেক্টরের নিচের কোনো পুলিশ কর্মকর্তা। তল্লাশি ও আলামত জব্দ করা তদন্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুলিশ কর্মকর্তারা এসব কাজের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী আনসার ব্যাটালিয়ন জব্দ তালিকা প্রস্তুত, তল্লাশি ও গৃহে প্রবেশের এখতিয়ার পেলে আইনি জটিলতা তৈরি হবে এবং তদন্তসহ বিচারকাজ ব্যাহত হবে।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ‘ব্যাটালিয়ন আনসারের ম্যান্ডেট হচ্ছে তারা একটি সহায়ক বাহিনী। সহাধিকারক্ষেত্রে আটক, তল্লাশি, জব্দ ও জব্দ তালিকা প্রস্তুত অপরাধ দমন ও উদঘাটনের ধারাবাহিক কার্যক্রম বা ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অবশ্যই পুলিশ ক্ষমতাপ্রাপ্ত। একই ক্ষেত্রে আনসার ব্যাটালিয়নকে কর্র্তৃত্ব দেওয়া হলে আইনি জটিলতা তৈরি হবে।’ একাধিক বাহিনীকে সহাধিকারক্ষেত্র দেওয়া হলে আইন প্রয়োগকালে ভুল বোঝাবুঝি ও মতভেদসহ নানা সমস্যা তৈরি হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য আনসার বিল নিয়ে পুলিশের আপত্তিসমূহের সুরাহা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আমরাও আশা করি বিষয়টির সুরাহা হোক, কারণ পুলিশের আপত্তি অমূলক নয়।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত