প্রথমবারের মত বাংলাদেশী ৫ জনের একটি বিশাল দল নিয়ে হিমালয়ের আইল্যান্ড পিক (৬ হাজার ১৬৫ মিটার/ ২০ হাজার ২২৬ ফুট) এর শিখরে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এই কার্যক্রমটি পরিচালনা করেছে Rope4 আউটডোর এডুকেশন।
পর্বতারোহণকে বাংলাদেশে জনপ্রিয় করে তুলতে এবং এদেশের তরুণ প্রজন্মকে পজেটিভ এডভেঞ্চারের সাথে যুক্ত করার লক্ষে রোপফোর কাজ করে যাচ্ছে ২০১৭ সাল থেকে। দেশের মাটিতেই হাতে কলমে শিখিয়ে তরুন প্রজন্মকে তৈরি করছে হিমালয়ের পর্বত অভিযানের জন্য।
এবছর ১৩ অক্টোবর ৫ জনের একটি দল নেপাল হিমালয়ে পর্বত অভিযানের জন্য দেশ ছেড়ে যায়। দলনেতা ছাড়া বাকী ৪ জনের জন্যই হিমালয়ে এটাই প্রথম কোন অভিযান। প্রথম বার অভিযানেই ৬০০০+ মিটারের পর্বত শিখর স্পর্শ করার মত অর্জনের পেছনে ছিল রোপফোরের প্রতিষ্ঠাতা ও পর্বতারোহণ প্রশিক্ষক মহিউদ্দিন মাহি-র গাইডেন্স এবং মেন্টরশিপ। সবাইকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য চার মাসের একটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন মাহি বাংলাদেশে থেকেই।
অতি উচ্চতার সাথে শরীরকে খাপ খাওয়াতে দলটি বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতের বেস ক্যাম্পে অভিযান করে এবং সফল ও সুস্থ ভাবে দলের সবাই এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ৫৩৬৪ মিটার পৌঁছায় ২২ অক্টোবর তারিখে এবং ২৩ অক্টোবর তারিখে দলটি হিমালয়ের আরেকটি পর্বত, কালা পাত্থার (৫৬৩৯ মিটার) এর শিখর স্পর্শ করে।
২৫ অক্টোবর দলটির সবচেয়ে বড় অভিযান শুরু হয় হিমালয়ের চুখুং গ্রাম থেকে। এখন থেকেই দলের ৫ জন তরুণ তরুণী এভারেস্ট রিজিয়নের একটি অন্যতম জনপ্রিয় পর্বত আইল্যান্ড পিক/ইমজাৎসে (৬১৬৫মিটার/২০,২২৬ ফুট) অভিযান শুরু করে।
এই দলের সদস্যরা হচ্ছেন, আবরারুল আমিন অর্ণব, তানজিনা রহমান শান্তা, ডা. উম্মে হুমায়রা কানেতা, ডা. সাইফুল ইসলাম বাবুল এবং রণজিৎ চৌধুরী।
এই অভিযানের বেস ক্যাম্প ম্যানেজার হিসেবে আইল্যান্ড পিক এর বেসক্যাম্পে ছিলেন আহসানুজ্জামান তৌকির যে গত বছর ২০২২ সালে রোপফোর এর মিশন হিমালয়া শীর্ষক বাৎসরিক প্রতিযোগিতার বিজয়ী হিসেবে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প যান এবং আইল্যান্ড পিক সামিট করে।
২৬ অক্টোবর ভোর ১ টার সময় দলটি বেসক্যাম্পে থেকে সামিট পুশ করেন। রওনা হওয়ার সময় টেম্পারেচার ফিল ছিল মাইনাস ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মধ্যেই দলটি সামিট ক্লাইম্ব শুরু করে।
আইল্যান্ড পিক, এর বেসক্যাম্প থেকে শিখর পর্যন্ত একেবারে খাড়া হয়ে উঠে গেছে । তিনটি ধাপে ভাগ করা যায় এই জার্নিটাকে প্রথমে রক ফেস, যেখানে বেশ কয়েকটা স্থানে চার হাত পা ব্যবহার করে ক্লাইম্ব করতে হয়। দ্বিতীয় ফেস হচ্ছে, ক্রম্পন পয়েন্ট থেকে ফিক্সড রোপ পর্যন্ত যাওয়ার পথটুকু। বরফের রাজ্য গ্লেসিয়ার, যেখানে রয়েছে বিশাল বিশাল বরফের ফাটল। শেষ এবং তিন নাম্বার ধাপটি হচ্ছে ফিক্সড রোপ ক্লাইম্বিং। প্রায় ৯০° খাড়া বরফের দেয়াল উঠে গেছে আইল্যান্ড পিক এর শোল্ডার পর্যন্ত। ফিক্সড রোপ জুমার ক্লাইম্ব করতে করতে শোল্ডারে উঠতে হবে এবং শোল্ডার ধরে কিছুটা উপরে উঠলেই আসবে সফলতা।
এই পুরো পথে সকল বাঁধা অতিক্রম করে তরুণ এই দলটির ৫ জনই আইল্যান্ড পিক এর শিখর স্পর্শ করে ২৬ অক্টোবর তারিখের স্থানীয় সময় সকাল ১০:০৫ মিনিটে এবং দলের সকলেই একসাথে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ৫ জনের কোন বাংলাদেশী দলের এটাই প্রথম, একসাথে ৬০০০ মিটারের পর্বত শিখর স্পর্শ করা, যা দেশের পর্বতারোহণের জন্য একটি সম্মান ও রেকর্ড।
একই অভিযানে হয়েছে আরো একটি অনন্য রেকর্ড, বাংলাদেশের প্রথম কোন ডাক্তার দম্পতি, নিজেদের প্রথম হিমালয় অভিযানেই ৬০০০+ মিটার পর্বতের শিখর একসাথে স্পর্শ করেন!