দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা’ উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘এটাকে সাধারণভাবে আমরা নির্বাচন বলছি। কিন্তু আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আমি বলি এটি একটি বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা। এর ফলে ইতিহাসের কাছে নাগরিকদের দায় বেড়ে গেল।’ গতকাল শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজি বাংলাদেশ আয়োজিত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক এজেন্ডা শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য এসব কথা বলেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, এটাকে নির্বাচন বলা যাবে না। এটি মূলত একটি বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা। ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি) সালেও এমন নির্বাচন দেখা গেছে। নির্বাচনের ফলাফল টিকিয়ে রাখা কঠিন। প্রথাগত রাজনীতি দুর্বল হলে সামাজিক শক্তির দায় বাড়ে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, যে যতবার নির্বাচন করেছে, তার আয় ততবার বেড়েছে। কিন্তু এভাবে তো আপনি পুরো রাষ্ট্রকে অধিকারহীন করে দিয়ে সংকীর্ণ একটি গোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিকানা করে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘প্রার্থীদের সম্পর্কে আমরা জানতে পারি হলফনামার মাধ্যমে। সেখানে যে সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়েছে এবং যে ট্যাক্সের বিবরণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর কখনো তুলনামূলক বিশ্লেষণ হয়? যদি তাই হয়, তাহলে অনেকেরই দেখেছি আয় ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ল, তাহলে তিনি কি সেই হারে কর দিয়েছেন? আমি মনে করি আগামী দিনে এটা খুঁজে বের করা এনবিআরের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’
দেবপ্রিয় বলেন, ‘আইএমএফ বলছে আমাদের কর জিডিপি বাড়াতে হবে, আমি মনে করি এই হলফনামা আমাদের জন্য বড় একটি সুযোগ। এখন এনবিআর কী করে, সেটাই দেখার বিষয়। তারা কি আগামী দিনে এ বিষয়গুলো নিয়ে বলবেন?’
তরুণ সমাজকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, ‘আমরা যদি নিশ্চুপ থাকি, তাহলে আটলান্টিকের ওপার থেকে কেউ এসে পরিবর্তন করে দিয়ে যাবে না। আমাদের এক-তৃতীয়াংশই তরুণ, তারা যদি ভূমিকা না রাখে, তাহলে কেউ এসে পরিবর্তন করে দিয়ে যাবে না।’
দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে আগামী দিনে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তার কোনো পর্যালোচনাই এবার হলো না। যে কারণে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছেই পৌঁছাল না। এটা গণতন্ত্রের বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হলো। নির্বাচন ঘিরে এই ইশতেহারটা একটা রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্য দিয়ে এসেছে। ফলে সরকার, রাজনীতি ও দেশের মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জবাবদিহি না থাকলে বৈষম্য বাড়ে। নির্বাচন যদি বহু মানুষের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে এর ফলাফলও টিকিয়ে রাখা কঠিন। আগামী দিনে অর্থনীতি যেভাবে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি আগামী দিনে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, এই উৎকণ্ঠা সবার মাঝে।’
অনুষ্ঠানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে অগণতান্ত্রিক শক্তি বিকাশের আশঙ্কা ও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এ সুযোগটি একচ্ছত্র ভুবনের যে এজেন্ডাকারী, তারাই করে দিচ্ছেন। এটা আমাদের সবার জন্য চ্যালেঞ্জ।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বশেষ রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, যেটা রাজনীতি, সেটাই ব্যবসা আর যেটা ব্যবসা, সেটাই রাজনীতি। কাজেই ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতে শুদ্ধাচার না করে আমরা আমাদের পলিসি ব্রিফের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব না।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যমসহ সবার জন্যই এই পলিসি ব্রিফ। ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য প্রতিযোগিতামূলক সমাজকাঠামো তৈরি করার দায়িত্ব সরকারের। জাতিগত ও ধর্মীয় দিক থেকে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী হিসেবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। অধিকারের আন্দোলনকে আমাদের জাতীয় আন্দোলন হিসেবে পরিণত করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এ জন্য আমাদের অধিকতর মূল্য দিতে হবে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ও দুদকের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের যথাযথ ক্ষমতা প্রয়োগের সৎ সাহস থাকলে তারা অনেক ব্যবস্থা নিতে পারত। হলফনামায় তথ্য গোপন করার কারণে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারত। তথ্য যে গোপন হয়েছে, তার দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হয়েছে। যার তথ্য গোপনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তিনিও তা মেনে নিয়েছেন।