বেসরকারি চাকরিজীবী রবিউল ইসলাম রাফি। বাবা-মা-স্ত্রী, সন্তানসহ পাঁচজনের পরিবার নিয়ে রাজধানীর হাতিরঝিলে থাকেন। ঊর্ধ্বগতির বাজারে প্রতি মাসে যা আয় করতেন তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চালিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু রমজান মাস কেন্দ্র করে বাজারে ভোগ্যপণ্যের দামে যে উত্তাপ ছড়াচ্ছে, এতে রাফির সংসারের ব্যয় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। উপায়ান্তর না দেখে এ বেসরকারি চাকরিজীবী পাত থেকে মাছ-মাংসের পরিমাণ ছেঁটে রোজায় খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। মাছের টুকরো পাতলা হচ্ছে, মাংসের টুকরো ছোট হচ্ছে।
বাজারে সব ধরনের মাংস চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৭৯৫ টাকায়। খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা। অথচ গত বছরের রমজানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছিল ৭০০ থেকে ৭২০ ও খাসি ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায়। ফলে অনেককে মাংসের টুকরো ছোট করে পাতে তুলতে হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার ঘুরে ও বাজারে মাছ কিনতে আসা অন্তত ১০ থেকে ১২ জন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়। এদিন বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছিল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, ইলিশ আকারভেদে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ১১০০, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৬০, কাতল ৩৪০ থেকে ৫৫০, সরপুঁটি ২৫০ থেকে ২৮০, নদীর পোয়া ৩৫০ থেকে ৭০০ ও কৈ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন মাছ বিক্রেতারা।
রাফি ১০ হাজার টাকায় গত বছর পুরো রোজার খরচ চালিয়ে সুন্দরভাবে চলতে পেরেছিলেন। কিন্তু এবারের রমজানে একই পরিমাণের পণ্য কিনতে আরও ৫ হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে। এর জন্য বাধ্য হয়ে রোজার খরচ সামাল দিতে মাছ-মাংসের পরিমাণ কমিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গত বছর রোজায় প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০ টাকার মধ্যে কিনতে পারলেও এবার সেই মাছ কিনতে হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। একই রুই মাছ গত বছর ১০ থেকে ১৪ পিস করলেও এবার সেই মাছের পিস পাতলা করে প্রতি কেজি মাছকে ১৮ থেকে ২০ পিস করে বাসায় ফিরছি।’
রাফি জানান, গত বছর পুরো রোজায় পাঁচজনের পরিবারের জন্য ১০ লিটার দুধ কিনেছেন ৭০ টাকা দরে ৭০০ টাকায়, ২৫ কেজির এক বস্তা চাল কিনেছেন ১৭০০ ও ৪ কেজি ছোলা কিনেছেন ৩২০ টাকায়। এ ছাড়া মাছের পেছনে প্রায় খরচ হয়েছে ৪ হাজার, দেশি ফল কলা, আনারস ও পেঁপের জন্য খরচ করেছেন ৫০০ থেকে ৭০০, মাংসের পেছনে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার এবং চিনি ও অন্য অনুষঙ্গের পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার টাকা।
বাজারে আসা ক্রেতাদের মধ্যে এটি শুধু রাফির একার চিত্র নয়, এমন হাজারো রাফি আয় থেকে ব্যয় বেশি থাকায় বাজারে এসে খরচের চাপ সামাল দিতে মাছের পিস পাতলা করে বাসায় ফিরছেন। তেমনি একজন ওমর হাসান। যাত্রাবাড়ী বাজারে সদাই করতে এসেছিলেন ১ হাজার টাকা নিয়ে। দুই কেজি মাছ ও তা কাটাকাটি করাতেই তার ৬৪০ টাকা শেষ।
তিনি দেশ রূপান্তরকে মাছের ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ‘বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে। শুধু আমাদের দাম বাড়েনি। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। রমজান আসায় ব্যবসায়ীরা যেন পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। তা না হলে কীভাবে দেশের উৎপাদিত মাছের দাম এত বেশি বাড়ে?’