ইসরায়েলি ট্যাংক গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকছে এমন খবরের জেরে প্রায় সাড়ে চার লাখ ফিলিস্তিনি গত এক সপ্তাহে রাফাহ ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ক্রমাগত ক্লান্তি, ক্ষুধা আর আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে বাস্তুচ্যুত এসব ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা শহরের পূর্বাঞ্চলে ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে অভিযান’ অব্যাহত রেখেছে, যেখানে দশ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলের অভিযানের কারণে আরও এক লাখের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের সৈন্যরা আবারো জেইতুন ও জাবালিয়াতে ফিরেছে, যেখানে দেশটির সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী হামাস পুনরায় সংগঠিত হয়েছে। পাঁচ মাস আগেই ইসরায়েল সেখানের হামাসের স্থানীয় ব্যাটালিয়নকে ধ্বংস করে দেয়ার দাবি করেছিলো।
সামরিক বাহিনী তাদের অভিযানের আগে বেসামরিক নাগরিকদের পূর্ব রাফাহ ও জাবালিয়া খালি করতে বলেছে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় গাজার ২৩ লাখ মানুষের এক চতুর্থাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার সকালে ইউএনআরডব্লিওএ রাফাহ শহরের খালি রাস্তাঘাটের কিছু ছবি পোস্ট করেছে, যেগুলো ছয়ই মে ইসরায়েলের অভিযানের আগে তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ভর্তি ছিলো। সংস্থাটি বলছে, পরিবারগুলো নিরাপত্তার খোঁজে পালিয়েছে। কোন জায়গাই আর নিরাপদ নয়। দ্রুত যুদ্ধবিরতিই একমাত্র আশা।
রাফাহ শহরে থাকা ইউএনআরডব্লিওএ মুখপাত্র লুইস ওয়াটারিজ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, এখনো যেসব পরিবার শহরে আছে তারা ‘যত দ্রুত সম্ভব পশ্চিম দিকে সরে যাচ্ছে’ এবং ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের দিকে সমুদ্র সৈকতে তাঁবু গাড়ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে কয়েকজন ফিলিস্তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো রাফাহর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আবাসিক এলাকার ভেতরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং মিশরের সাথে রাফাহ ক্রসিংয়ের কাছে প্রধান উত্তর দক্ষিণ সড়ক অতিক্রম করেছে। মঙ্গলবার ওই ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বুধবার সকালে ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো সালাহ আল-দিন সড়কের পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে। রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ থাকায় খাবার, পানি ও অন্য দরকারি জিনিসের তীব্র সংকটে ভুগছেন সেখানকার মানুষেরা।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স আইডিএফ বলেছে “সেনারা রাফাহ ক্রসিংয়ের গাজার সাইডে সন্ত্রাসীদের কিছু সেল ধ্বংস করে দিয়েছে এবং বেশ কিছু সন্ত্রাসীকে নিশ্চিহ্ন করেছে ও রাফাহর পূর্বাঞ্চলে অস্ত্রশস্ত্র খুঁজে পেয়েছে”।
তবে রাফাহতে অভিযানের বিপক্ষে পশ্চিমা দেশগুলো। জাতিসংঘ ও পশ্চিমা শক্তিগুলো সতর্ক করে বলেছে একটি সর্বাত্মক অভিযান বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক হতাহত এবং একটি মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা