পৌনে ৩০০ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় বেড়ে ৭০০ কোটি টাকা এবং তিন বছরের প্রকল্প নির্মাণকাজ এক যুগ পেরিয়ে গেল। এরপরও গত বছরের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তারপর কেটে গেছে আরও পাঁচ মাস। তবুও ৫০০ শয্যার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবনে ইনডোর স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয়নি আজও।
এতে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যেই মেডিকেলের অস্থায়ী হাসপাতাল ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
প্রতিদিন মেডিকেলের চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় এক হাজার ইনডোর বা ভর্তি এবং প্রায় দুই হাজার আউটডোর বা বহির্বিভাগে আগত রোগীদের কাক্সিক্ষত সেবা ব্যাহত হচ্ছে। অবিলম্বে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গ চালুর দাবি রোগী ও চিকিৎসকদের।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার কলেজশিক্ষক ইসারুল ইসলাম বলেন, ‘কুষ্টিয়াসহ আশপাশের পাঁচ জেলার জনগণের উন্নত চিকিৎসাসেবায় স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। উদ্বোধনের পরও এখানে ইনডোর বা ভর্তি রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা চালু না হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগীরা। তাই সরকারের বিপুল অর্থব্যয়ে বাস্তবায়িত এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিতে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা চালু করে হাসপাতালের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠুক’।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র সদ্যোজাত শিশু ওয়ার্ডের। এই ওয়ার্ডের স্টাফ নার্স মুনিরা খাতুন বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রতিদিন স্বাভাবিক ও সিজারে গড়ে ১০ থেকে ১৫টি শিশু জন্ম নেয়। অথচ প্রায় দশ গুণ বেশি ইনফ্যান্ট শিশুর চাপ সামলাতে হয়। এসব শিশু অধিকাংশই আসে প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে।’
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. রকিউর রহমান জানান, ‘এখানে শিশুদের জন্য ২০টি বেডের বিপরীতে ২৪০ থেকে ২৫০ শিশুর চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসক-নার্স নিজেরাই পর্যুদস্ত। নানা চ্যালেঞ্জের মুখে সাধ্যানুযায়ী সেবা দেওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শিগগিরই যদি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিজস্ব ভবনে ইনডোর চিকিৎসা চালু হয় তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক নাসিমুল বারী বাপ্পী বলেন, ‘শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হলেই তো গুরুত্বপূর্ণ বা জীবনাশঙ্কায় থাকা রোগীর সঠিক ও উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত হয় না। সেজন্য চাই অবকাঠামোগত সুবিধাসহ চিকিৎসা প্রাসঙ্গিক মনোরম পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ওষুধপত্র।’
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, ‘৫০০ শয্যার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অস্থায়ী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালটিকে ১০ বছর ধরে ব্যবহার করতে গিয়ে এখানকার চিকিৎসাসেবার ত্রাহি অবস্থা। প্রতিদিন এখানে প্রায় ৯০০ থেকে ১০০০ ইনডোর এবং প্রায় ২০০০ বহির্বিভাগ সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আনোয়ারুল ইসলাম জানালেন, ‘কিছু টুকিটাকি ফিনিশিং কাজ ছাড়া প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর চিকিৎসাসেবা চালু হতে। প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেই প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক সক্ষমতার মধ্য দিয়ে হাসপাতালে ইনডোর রোগীদের চিকিৎসা সেবা আগামী দু-তিন মাসের মধ্যেই চালু করা সম্ভব।’