শীতের মৌসুম শুরু হয়েছে। বাজারে শাক-সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহও আছে। তবে বাজার তদারকিতে দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটরা। সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শঙ্কার জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি, ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি নাগালের বাইরে গিয়ে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত নভেম্বর মাসের ভোক্তা মূল্য সূচকে (সিপিআই) এসব তথ্য উঠে এসেছে।
মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশের অর্থ হলো ২০২৩ সালের নভেম্বরে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল, ২০২৪ সালের নভেম্বরে তা কিনতে হয়েছে ১১৩ টাকা ৩৮ পয়সায়। একইভাবে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি সংজ্ঞায়িত হবে।
বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের শত প্রচেষ্টা স্বত্বেও নিয়ন্ত্রণের বাইরেই থাকছে। চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ইতোমধ্যে কয়েকবার নীতি সুদহারও বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলায় জেলায় টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না গড় মূল্যস্ফীতি।
সিপিআই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের গড় মূল্যস্ফীতি নভেম্বরে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে, যেটি আগের মাসেও ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে। সদ্য শেষ হওয়া মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশে ঠেকেছে, অক্টোবরেও এটি ছিল ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে। তবে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশে ঠেকেছে। আগের মাস অক্টোবরে এ খাতের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
গ্রাম ও শহর এলাকার বিবেচনায় শহরের তুলনায় গ্রামে গড় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে বলে উঠে এসেছে সিপিআই তথ্যে। তবে অক্টোবরে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি থাকলেও নভেম্বরে এসে এ চিত্র পাল্টে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে।
নভেম্বরে গ্রাম এলাকার গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশে, শহর এলাকায় তা আছে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশে। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে গ্রাম এলাকায় ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশে, যেখানে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে।
এদিকে মূল্যস্ফীতি আগামী জুন মাসের মধ্যে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি পরবর্তী অর্থবছরের মধ্যে তা ৫ শতাংশে নামবে। আমাদের মূল লক্ষ্য ৪-৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। আশা করি তা সম্ভব। গতকাল বুধবার বিআইবিএমে এক সেমিনারে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারলে সুদের হার কমিয়ে আনা হবে জানিয়ে গভর্নর আরও বলেন, বন্যার কারণে বর্তমান বাজারে সবজি ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়তি। এক সময় তা কমে আসবে। মুদ্রাস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারলে আমরা ব্যাংকের সুদ ও নীতি সুদহার কমিয়ে আনব।