রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

অভিনেতা হতে এসি মেরামতের কাজ করতেন ইরফান খান

আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৩ পিএম

বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ইরফান খান। বেঁচে থাকলে গত ৭ জানুয়ারি পালন করতেন নিজের ৫৭তম জন্মদিন। এর কয়েকদিন আগেই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট একবিংশ শতাব্দীর সেরা ৬০ জন অভিনেতার তালিকা প্রকাশ করেছে। যে তালিকায় একমাত্র ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন তিনি।

তবে প্রয়াত প্রতিভাবান এ অভিনেতার জীবনের শুরুটা সহজ ছিল না। ১৯৬৭ সালে ভারতের রাজস্থানে এক পশতু ভাষী মুসলিম পরিবারে জন্ম ইরফানের। শৈশব থেকেই ক্রিকেট খেলতে ভালবাসতেন তিনি। জয়পুরের ক্রিকেট দলের হয়ে টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগও পেয়েছিলেন; কিন্তু অর্থাভাবে সেই সুযোগ হারাতে হয়েছিল তাকে।

এক সাক্ষাৎকারে ইরফান খান বলেছিলেন, ‘টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে গেলে ৬০০ রুপি দিতে হত। কিন্তু আমার কাছে তখন যাতায়াতের জন্যও টাকা ছিল না। কার কাছে টাকা চাইব তা-ও বুঝতে পারছিলাম না। অর্থাভাবে আর ক্রিকেট খেলা হল না আমার। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নও অধরা থেকে গেল।’

আর তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ কমে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। মূলত নাট্যাভিনেতা মামাকে দেখেই অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক বাড়ে ইরফানের। নিজের স্বপ্নকে সত্যি করতে কলেজের পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮৪ সালে ভর্তি হন দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায়। তবে সেখানেও বাধার সম্মুখীন হন এ অভিনেতা।

ইরফান জানিয়েছিলেন, ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় ভর্তির জন্য ৩০০ রুপি দেওয়ার মতো সামর্থ্য তার ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত দিদির সহযোগিতায় সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।

ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার পড়াশোনা শেষ করে অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য ইরফান খান চলে যান মুম্বাইয়ে। সেখানে আরও কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে এ অভিনেতাকে। জীবনধারণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না ইরফানের কাছে। ফলে বলিউডে নিজেকে থিতু করার জন্য এসি টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন।

এক সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের কঠিন দিনগুলোর কথা জানাতে গিয়ে এ অভিনেতা বলেছিলেন, ‘আমি একটি প্রযুক্তিগত কোর্সের ট্রেনিং নিচ্ছিলাম জয়পুরে এবং এই এসি প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই মুম্বাই চলে আসি। এরপর বিভিন্ন বাড়িতে এসি মেরামতের কাজ করতাম।’

এতসব কঠিন সময় পাড়ি দিতে হলেও বলিউডে তার অভিষেকটা অনেক সুন্দর ছিল। ১৯৮৮ সালে মীরা নায়ার পরিচালিত ‘সালাম বম্বে’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে তার বলিউড ক্যারিয়ার শুরু হয়, যা পরবর্তীতে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পায়।

‘হাসিল’ সিনেমায় অভিনয় তাকে সেরা খলনায়ক হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এনে দেয়। ‘লাইফ ইন অ্যা মেট্রো’ (২০০৭) সিনেমার জন্য তিনি ফিল্মফেয়ারে সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার পান।

ক্যারিয়ারের ১৮ বছরে গিয়ে ২০০৫ সালে ‘রোগ’ সিনেমায় প্রথম মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন ইরফান। পরবর্তীতে ‘দ্য নেমসেক’, ‘পিকু’র মতো বহু সিনেমাতে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন তিনি। ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’, ‘লাইফ অফ পাই’, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘দ্য দার্জিলিং লিমিটেড’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় তাকে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি এনে দেয়।

তবে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কিংবদন্তি এ অভিনেতা। তার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে বলিউডসহ সিনেমাপ্রেমীরা।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত