কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের আর্থিক চাহিদা মিটলেই মেলে সব ধরণের সনদপত্র। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে জন্ম ও ওয়ারিশান সনদকারীদের হয়রানীসহ অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সচিবের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী। এই সব অভিযোগ উপজেলার শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) ছাত্র-জনতার তোপের মুখে পড়ে অবশেষে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছেন অভিযুক্ত সেই ইউপি সচিব।
জানা যায়, শিবপুর ইউনিয়নের সচিব আতিকুর রহমান গত কয়েক বছর আগে শিবপুরে সচিব হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন, নতুন সনদ তৈরী এবং ওয়ারিশান সনদ নিতে আসা লোকজনদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন।
যারা তাকে তার চাহিদা মতো টাকা দেয় তার জন্ম ও ওয়ারিশান সনদ দ্রুত সময়ের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হলেও, যারা চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হন তাদের কাজ হয় না। দিন যায়,মাস যায়, বছরও যায়, কিন্তু সনদ আর হয় না। সার্ভার সমস্যা, কাজে ব্যস্ততাসহ নানা অজুহাতে তাদের হয়রানি করা হয়। শুধু তাই নয় শিবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা না হয়েও টাকার বিনিময়ে মিলে জন্মসনদ।
শিবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ভুক্তভোগী মানিক মিয়া জানান, গত এক বছর আগে তার বোনের জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে অদ্যাবধি সেটি পাননি। সচিবের অনৈতিক চাহিদা পূরণ না করায় জন্ম নিবন্ধন সনদ পাননি।
অপর এক ভুক্তভোগী শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মন্নান জানান, জন্ম নিবন্ধন সনদ করার জন্য সচিব তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় তার জন্ম সনদ দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে শিবপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান স্বপন মিয়া, ইউপি সদস্য জামাল মিয়া ও আবদুস সালাম জানান, সচিব আতিকুর রহমান জন্মসনদ ও ওয়ারিশান সনদ নিয়ে মানুষকে হয়রানি করে অনৈতিকভাবে অর্থ হাতিয়ে নিত। শুধু তাই নয় তিনি শিবপুর ইউনিয়নের বাহিরে পৌরসভা ও অন্য ইউনিয়নের নাগরিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ৭৫টি জন্মসনদ বানিয়ে দিয়েছে। সে সবের প্রমাণসহ স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে।
এর আগেও তার বিরুদ্ধে জন্ম ও ওয়ারিশান সনদ নিয়ে হয়রানির অভিযোগে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি।
জানতে চাইলে শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী শফিকুল ইসলাম সচিবের জন্ম সনদ নিয়ে হয়রানি ও অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, বুধবার এলাকার বেশ কিছু যুবক পরিষদে এসে সচিবের কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নিয়েছে।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন জানান, সচিবের বিরুদ্ধে কোনো লিখিত অভিযোগ কেউ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।