ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপিএল যাত্রা শেষ হলো হতাশায়। টুর্নামেন্টে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি শাকিব খানের মালিকানাধীন দলটি। শনিবার নিজেদের শেষ ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের কাছে ৬ উইকেটের পরাজয় বরণ করে ঢাকা। এর মধ্য দিয়ে মাত্র ৩ জয় ও ৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার ৬ নম্বরে থেকে বিপিএলের ১১তম আসর শেষ করল দলটি।
বিপিএল শুরুর আগে প্লেয়ার ড্রাফটে ঢাকার প্রতিনিধি হিসেবে হাজির হয়েছিলেন বাংলাদেশের সুপারস্টার অভিনেতা শাকিব খান। দল গঠনের সময় তার উপস্থিতি ঢাকা ক্যাপিটালসের প্রতি বাড়তি আগ্রহ তৈরি করেছিল। কিন্তু দল মাঠে নামার পর থেকেই হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। ১২ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৩টিতে জয় পায় ঢাকা, যার ফলে টুর্নামেন্ট শেষ করে ছয় নম্বরে।
শাকিব খান অবশ্য দল গঠনের পর আর মাঠে আসেননি। তার দলও পরপর হারতে হারতে ছিটকে যায় প্লে-অফের দৌড় থেকে।
শেষ ম্যাচেও জয়ের দেখা পায়নি ঢাকা ক্যাপিটালস। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ১২৩ রান তোলে দলটি। তবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে খুলনা টাইগার্স ১৯ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখেই জয় তুলে নেয়। খুলনার অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ দারুণ ব্যাটিং করে ম্যাচসেরা হন।
ঢাকা ক্যাপিটালসের মালিক হিসেবে ম্যাচে উপস্থিত ছিলেন শাকিব খান। যদিও পুরো টুর্নামেন্টে তাকে মাঠে দেখা যায়নি, তবে শেষ ম্যাচে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেখানেই মিরাজের হাতে ম্যাচসেরার পুরস্কার তুলে দেন এই ঢালিউড সুপারস্টার।
ঢাকা ক্যাপিটালসের পারফরম্যান্স হতাশাজনক হলেও এই ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি দিক উঠে আসে—
ব্যাটিং ব্যর্থতা
ঢাকার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল তাদের ব্যাটিং ইউনিট। পুরো টুর্নামেন্টে দলটি ধারাবাহিকভাবে বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে তাদের ব্যাটিং ভেঙে পড়েছে।
টপ অর্ডারের ব্যর্থতা: ওপেনাররা বড় ইনিংস খেলতে পারেননি, ফলে মাঝের ব্যাটারদের চাপ নিতে হয়েছে।
ফিনিশিংয়ের অভাব: লোয়ার অর্ডার ব্যাটাররা দ্রুত উইকেট হারিয়েছেন, ফলে শেষ দিকের ঝড় তুলতে ব্যর্থ হয়েছে দল।
সর্বোচ্চ সংগ্রহ কম: পুরো লিগে ঢাকার সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল গড়পড়তা মানের, যা ম্যাচ জেতার জন্য যথেষ্ট ছিল না।
দুর্বল বিদেশি রিক্রুটমেন্ট
অন্য দলগুলো যখন বিশ্বমানের তারকা বিদেশি খেলোয়াড় দলে নিয়েছে, তখন ঢাকার স্কোয়াডে ছিল বেশ কয়েকজন অনভিজ্ঞ বিদেশি ক্রিকেটার। তাদের বেশিরভাগই পারফরম্যান্সের দিক থেকে প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
অভিজ্ঞ বোলারের অভাব
ঢাকার বোলিং ইউনিটে বড় তারকার অভাব ছিল। বিশেষ করে পাওয়ারপ্লে ও ডেথ ওভারে কার্যকরী বোলার না থাকায় দলটি প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে পারেনি। স্পিনাররা মাঝেমধ্যে ভালো করলেও, তারা নিয়মিত ম্যাচ জেতানোর মতো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। ডেথ ওভারে ভালো ইয়র্কার কিংবা বৈচিত্র্যময় বোলিং করতে সক্ষম কেউ ছিল না, ফলে শেষ দিকে বড় রান হজম করেছে দল।
অধিনায়কত্ব ও দলগত সমন্বয়ের ঘাটতি
ঢাকা ক্যাপিটালসের অধিনায়কত্বেও সমস্যা ছিল বলে অনেকে মনে করছেন। ক্যাপ্টেন হিসেবে মাঠে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা গেছে। সঠিক সময়ে সঠিক কম্বিনেশন গঠন করতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট।
ফ্র্যাঞ্চাইজির অভিজ্ঞতার অভাব
ঢাকা ক্যাপিটালস প্রথমবার বিপিএলে অংশ নিয়েছে। অভিজ্ঞতা না থাকায় দল পরিচালনায় কিছু ত্রুটি দেখা গেছে, যা মাঠের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেছে। অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজির তুলনায় ঢাকার ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু ঘাটতি ছিল। প্লেয়ার ড্রাফট থেকে দল গঠনের সময় সঠিক পরিকল্পনার অভাব ছিল।
ব্যাটিং ব্যর্থতা, মানসম্পন্ন বিদেশি ও অভিজ্ঞ বোলারের অভাব, অধিনায়কত্ব ও ফ্র্যাঞ্চাইজির অভিজ্ঞতা কম থাকায় ঢাকা ক্যাপিটালস বিপিএল ২০২৫-এ ব্যর্থতার স্বাদ পেয়েছে।
বিপিএলের নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে মাঠে নেমে প্রথম আসরেই ব্যর্থ হয়েছে শাকিব খানের দল। এখন প্রশ্ন উঠছে, তিনি ভবিষ্যতে দল নিয়ে কী পরিকল্পনা করছেন?
শাকিব খান কিংবা ঢাকা ক্যাপিটালসের কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি। তবে ভবিষ্যতে যদি দল গঠনে বিনিয়োগ বাড়ায় এবং ভালো পরিকল্পনা নেয়, তাহলে দলটি পরের আসরে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
এবারের আসর ঢাকার জন্য ভুলে যাওয়ার মতো হলেও শাকিব খানের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি কি ভবিষ্যতে শক্তিশালী হয়ে ফিরতে পারবে? সেটাই দেখার বিষয়!