শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

'রিশাদের দুই ছক্কাই গড়ে দিয়েছে ব্যবধান'

আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৫১ এএম

অস্ট্রেলিয়ার বিগব্যাশ লিগে সুযোগ পেয়েছিলেন রিশাদ হোসেন, অনাপত্তি পত্রও পেয়েছিলেন হোবার্ট হারিকেনস দলের হয়ে খেলার। যে দলটাই পরবর্তীকালে জিতেছে বিগব্যাশ লিগের শিরোপা। তাদের হয়ে খেলার সুযোগটা রিশাদের মেলেনি কারণ তাকে ছাড়েনি বিপিএলের দল ফরচুন বরিশাল। সেই বরিশালের হয়েই ফাইনালে রিশাদের দুটো ছক্কাই গড়ে দিয়েছে হারজিতের ব্যবধান। চিটাগং কিংসকে ৩ উইকেটে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিপিএলের শিরোপা জিতেছে ফরচুন বরিশাল, অধিনায়ক তামিম ইকবালের চোখে এ জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রিশাদের দুই ছক্কার।

ট্রফি সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলনে তামিম বলেছেন, ‘অনেকের ব্যাপারে অনেক কিছু বলতে পারি, তবে রিশাদের ওই দুটি ছয় আসলে গেমচেঞ্জার।’ তামিম নিজেও ফিরিয়ে এনেছিলেন নিজের ক্যারিয়ারের শুরুর সেই ঝলক। বিশেষ করে শরিফুল ইসলামের একই ওভারে পরপর তিনটি চারে খুঁজে পাওয়া গেছে ২০০৭ থেকে ২০১২-এর সেই তামিমকে। ১৯৫ রান তাড়া করতে এমন একটা কিছুই করতে হতো অধিনায়ককে, ‘আমি যে ধরনের খেলোয়াড়, আমি যখন কুইক স্টার্ট পাই তখন রিদমটা কখনো ব্রেক করতে চাই না। আমি ওকে (অন্যপ্রান্তে তাওহীদ হৃদয়) এটাই বলছিলাম যে, ব্যাটে-বলে না হলে সিঙ্গেল নিয়ে আমাকে স্ট্রাইক দাও; আমি দেখব। এ কারণেই ইনিংসটা সম্ভব হয়েছে। প্রথম ওভারে ওদের বোলার বিনুরা ফার্নান্দো আসর জুড়েই প্রথম দুই ওভারে ১০-১২ রানের বেশি মনে হয় না দিয়েছে। আজকে প্রথম ওভারেই যখন তিনটি চার হয়ে যায় তখন মনে হচ্ছিল আমি সুন্দরভাবেই ব্যাটে বল লাগাতে পারছি।’

তামিম আরও জানান, মাহমুদউল্লাহ আর মোহাম্মদ নবি খুব দ্রæত আউট হয়ে গেলে খানিকটা চাপেই পড়ে গিয়েছিলেন ডাগআউটে, ‘মাহমুদউল্লাহ আর নবি যখন আউট হয়ে যায় তখন একটু ভয় পেয়েছিলাম। এক ওভারে ৮ রান, স্ট্রাইকে রিশাদ, এরপর আছে শুধু দুই বোলার। এরপর কাকে পাঠাব বুঝতে পারছিলাম না, ওরাই বলাবলি করছিল ভাই ওরে পাঠান ওরে পাঠান। আমার মনে হয় রিশাদের প্রথম ছক্কাটাই খেলা বদলে দিয়েছে। কারণ শেষ ওভারে যদি ১৫ রান লাগত তাহলে চাপটা অনেক বেশি থাকত। আর লাস্ট ওভারের প্রথম বলে ছক্কা, ওটাও ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে দিয়েছে। এটাই আমাদের অন্যতম একটা বড় কারণ। রিশাদকে আমাদের দলের সঙ্গে রাখা কারণ ওর বোলিংটা খুবই ভালো তবে একই সঙ্গে ওর ব্যাটিংটাও আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

তামিমের শহর চট্টগ্রাম। সেই শহরের ফ্র্যাঞ্চাইজিকে হারিয়েই হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। অবচেতন মনে এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ কাজ করে কি না, এমন প্রশ্নে তামিমের উত্তর, ‘চিটাগং নেয় না তো আমাকে, আমি কী করব বলেন! তবে আমি বলব ওরা যেভাবে খেলেছে বিশেষ করে এই দলটা, কেউ বিশ্বাস করেনি যে এই দলটা এতদূর আসবে, ফাইনালে উঠবে। আমিও মনে করিনি। তবে ওদের যে সামর্থ্য, সেই তুলনায় তারা অনেক বেশি অর্জন করেছে। ফাইনালে খেলাটা তাদের কাছে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। আমার মনে হয় তাদের খুবই গর্ব করা উচিত তাদের অর্জন নিয়ে। ফাইনালে যে কেউই জিতে যেতে পারত, তবে গোটা আসর জুড়ে যেভাবে ওরা খেলেছে, তাদের ম্যানেজমেন্ট তাদের খেলোয়াড়দের অনেক কৃতিত্ব পাওনা।’

বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে তিন বছরের জন্য স্বত্ব দিয়েছিল বিসিবি। এবারের আসরের সমাপ্তির মাধ্যমে সেই তিন বছরের চক্রেরও হয়েছে অবসান। আগামীতে ফরচুন বরিশাল দল কী করবে, তা নিয়ে তামিমের ভাবনা জানতে চাইলে উত্তর এলো, ‘আমার কাছে মনে হয় এই যে এত কষ্ট করে একটা ফ্যানবেজ তৈরি করেছি আমরা, এ জিনিসটাই কিন্তু প্রথম বিপিএল থেকে সবাই চাইছে যে, একটা ফ্র্যাঞ্চাইজির একটা ফ্যানবেজ তৈরি হোক। এখন যদি আইপিএলের উদাহরণ দিই, নিয়মটা কিন্তু কখনো বদলায় না। মূল খেলোয়াড়রা কিন্তু একই থাকে। ঠিক আছে তিন বছরের চক্র শেষ হয়ে গেছে, সামনে হয়তো পাঁচ বছরের চক্র আসবে, তবে এই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মূল ক্রিকেটারদের ধরে রাখার সুযোগ অবশ্যই দেওয়া উচিত। না হলে এতদিন ধরে যে পুরো জিনিসটা গড়ে তুলেছেন, সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। পাঁচজন, ছয়জন অন্তত চারজন খেলোয়াড়ও যদি ধরে রাখার সুযোগ দেয়, তাহলে ফ্র্যাঞ্চাইজির ফ্যানবেজটা আরও বড় হবে। আমি আশা করব যখনই নিয়মকানুনগুলো করবেন পরের বছরের জন্য, তখন এসব যেন মাথায় থাকে। সমস্যা যেটা হয়, দলের মালিক বদল হয়ে যায়। তবে এটাতেও দলটা তো একই থাকছে। মালিক বদলালেও খেলোয়াড় রিটেইন করার সুযোগটা থাকা উচিত, কেউ যদি মনে করে করবে না, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যপার।’

মাঠে সম্মাননাও পেয়েছেন তামিম, তার বর্ণিল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানার সিদ্ধান্ত জানানোর পর বিসিবি সম্মাননা জানিয়েছে তাকে। এ নিয়ে বিসিবির ওপরমহলকে জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা। সেই সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক এবং সতীর্থদেরও। কারণ, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই যে সফল হলো বরিশাল।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত