অনেক সময় মানুষ চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। হতাশা থেকে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম নামাজ। নামাজের সেজদায় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। দীর্ঘ সেজদায় আল্লাহর কাছে মানসিক প্রশান্তির জন্য দোয়া করলে আল্লাহ অবশ্যই প্রশান্তি দান করবেন।
জীবন আল্লাহর দান। তিনিই একদিন জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। নিজে নিজে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটানো বা আত্মহত্যা মানে নিজেকে নিজে খুন করা। এই অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। আমাদের একমাত্র নিয়ন্ত্রক আল্লাহ। তিনি আত্মহত্যাকে হারাম করেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা ২৯) তাই আত্মহত্যা অত্যন্ত গুরুতর পাপ।
রাসুল (সা.) বলেছেন, যারা আত্মহত্যা করবে এবং যে অস্ত্র বা যন্ত্র দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে পরকালেও তারা সেই অস্ত্র বা যন্ত্র দিয়ে নিজেদের বারবার খুন করতে থাকবে। এটাই হবে তাদের শাস্তি। যেমন কেউ বিষ পান করে নিজেকে হত্যা করল কিংবা ছুরির আঘাতে নিজেকে হত্যা করল, সে পরকালেও এই অস্ত্র বা যন্ত্র দিয়ে নিজেকে বারবার শাস্তি দিতে থাকবে।
ইসলামে সেজদা হলো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল যেখানে একজন মুসলিম মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে পারে, তওবা করতে পারে। সেজদা আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলে। সেজদাতে আমরা নিজেদের সমস্যাগুলো আল্লাহর কাছে তুলে ধরতে পারি। প্রতিদিন যেসব কষ্ট আমাদের মনে পীড়া দেয় সেসব কষ্ট তুলে ধরার এবং সমাধানের একমাত্র জায়গা সেজদা। সেজদাতে আল্লাহর কাছে অতীতের গুনাহ মাফ চাওয়া যায়, ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হওয়ার জন্য দোয়া করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, অনুতপ্ত হয়ে মন খুলে ইচ্ছামতো কান্না করা যায়। দীর্ঘ সেজদা করার মাধ্যমে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস এবং আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের বিষয়টি অনুভূত হয়, যা হতাশা দূর করতে সাহায্য করে। সেজদা আল্লাহর সঙ্গে ব্যক্তিগত সংযোগ স্থাপনের একটি অন্যতম উপায়। সেজদা মানুষের মানসিক প্রশান্তির বিশেষ পথ।
ধরুন, আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইনাল পরীক্ষা। আপনি খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়ে গেলেন। পরীক্ষাও ভালো হলো। কিন্তু ফলাফল আশানুরূপ হলো না। পাড়া প্রতিবেশী, মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন আপনার পেছনে উঠে পড়ে লাগল। এমতাবস্থায় আপনার কী করতে ইচ্ছা করবে? নিশ্চয় ইচ্ছা করবে বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে। কোথাও একা থাকতে। তখন মনে হতে পারে, মরে যেতে পারলেই বুঝি বাঁচি। নিজেকে শেষ করা একমাত্র সমাধান ভাবলেন। আসলে কি তাতেই সমাধান? আত্মহত্যার মধ্যেই কি এই হতাশার সমাধান নিহিত? অবশ্যই না। আবার ধরুন, আপনার খুব কাছের কারও থেকে প্রতারিত হয়েছেন। খুব ভেঙে পড়েছেন, আপনার কিছুই ভালো লাগছে না। তাহলে কি আপনি আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেবেন? না, আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। ঠিক যে মুহূর্তে আপনার মন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, আপনি সেই মুহূর্তে অজু করে আসুন। নামাজে দাঁড়ান। দীর্ঘ সেজদা দিন। সেজদায় আপনার পালনকর্তার সঙ্গে কথা বলুন, যিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিপতি, সব বিচারকের বিচারক। দেখবেন, মুহূর্তের মধ্যে আপনার কষ্ট শিথিল হয়ে গেছে। আপনি স্বস্তি পাচ্ছেন। তাই আত্মহত্যা নয়, দীর্ঘ সেজদায় হোক হতাশার সমাধান। জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোতে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।