সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

লেভারকুসেনের আধিপত্য, তবে শিরোপা ফিরছে কি বায়ার্নের ঘরে!

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৫ পিএম

বুন্দেসলিগার শীর্ষ লড়াইয়ে শনিবার রাতে মাঠে নেমেছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বায়ার লেভারকুসেন ও বায়ার্ন মিউনিখ। শিরোপার স্বপ্ন জিইয়ে রাখার লড়াইয়ে পুরো ম্যাচ জুড়েই আধিপত্য ছিল লেভারকুজেনের। একের পর এক আক্রমণে বায়ার্নকে চেপে ধরেছিল জাবি আলোনসোর দল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পেল না। ০-০ ড্রয়ে শেষ হয় ম্যাচ, আর তাতেই শীর্ষে থাকা বায়ার্নের সঙ্গে লেভারকুজেনের পয়েন্ট ব্যবধান ৮-এই রয়ে গেল। 

এই ড্রয়ের পর আলোনসো বলেন, ‘আমরা প্রায় নিখুঁত খেলেছি।’ সত্যিই, বায়ার্নকে এভাবে বিধ্বস্ত হতে খুব কমই দেখা যায়। পুরো ম্যাচে তারা একটি শটও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি, যা ইতিহাসে প্রথমবার ঘটল। অন্যদিকে, লেভারকুসেন একাধিকবার গোলের খুব কাছে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। প্রথমার্ধে জেরেমি ফ্রিমপং ও নাথান টেলা দুইবার ক্রসবারে মেরেছেন, টেলা দ্বিতীয়ার্ধেও আরও সুযোগ নষ্ট করেছেন। ম্যাচের শেষ দিকে সেরা সুযোগটি পেয়েছিলেন ফ্লোরিয়ান ভির্টজ, কিন্তু তিনিও অবিশ্বাস্যভাবে পোস্টের বাইরে মেরে বসেন।

বায়ার্নের তারকা থমাস মুলার স্বীকার করেছেন, লেভারকুসেনকে আটকানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করছিল দল। এক বছরের ব্যবধানে লেভারকুজেনের মাঠে এসে পুরোপুরি রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলেছে বায়ার্ন, যা তাদের জন্য খুবই অস্বাভাবিক। ‘আমরা নিজেদের ডি-বক্স রক্ষা করার অনুশীলন করেছিলাম,’ ম্যাচ শেষে জানান ম্যানুয়েল নয়্যার। 

গত মৌসুমে যেখানে বায়ার্ন লিগে ৪৫ গোল হজম করেছিল, সেখানে ভিনসেন্ট কোম্পানির অধীনে এবারের দল মাত্র ১৯ গোল খেয়েছে, যা পুরো লিগের সেরা রক্ষণ। দাইওত উপামেকানো ও কিম মিন-জায়ে দুর্দান্ত জুটি গড়ে তুলেছেন। 

আলোনসো নিজেও স্বীকার করেছেন, ‘শুধু এই ম্যাচের জন্য নয়, আমরা আগে কিছু বাজে ড্র (কিয়েল, বোখুম, ব্রেমেনের বিপক্ষে) করেছিলাম, যার ফলে আজ এই অবস্থায় আছি।’ তবে লেভারকুজেনের খেলোয়াড়রা এখনো শিরোপার আশা ছাড়ছেন না। ‘এখনও ১২টি ম্যাচ বাকি, সময় আছে,’ বলেন নাথান টেলা। 

বায়ার্ন যে লেভারকুজেনের তারকা ফ্লোরিয়ান ভির্টজকে পেতে চায়, তা গোপন কিছু নয়। উলি হোয়েনেস ও ক্রিস্টোফ ফ্রয়ান্ড সহ বায়ার্ন কর্তারা প্রকাশ্যেই তার প্রশংসা করে যাচ্ছেন। তবে বায়ার্নের সাম্প্রতিক ব্যয়বহুল চুক্তিগুলো (আলফোনসো ডেভিস, যামাল মুসিয়ালা, জশুয়া কিমিখ, নয়্যার) তাদের জন্য ভির্টজকে কেনা কঠিন করে তুলছে। 

এই ম্যাচে ভির্টজ তার প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন, মাঝমাঠে বায়ার্নকে নাস্তানাবুদ করেছেন, এমনকি প্রায় মাঝমাঠ থেকে নয়্যারকে চিপ দিয়ে পরাস্ত করার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সহজ একটি সুযোগ নষ্ট করে হতাশ হয়েছেন, যেমনটি গত সপ্তাহেও উলফসবুর্গের বিপক্ষে হয়েছিল। 

অন্যদিকে, বুন্দেসলিগার আরেক বড় দল বরুসিয়া ডর্টমুন্ড এখন শীর্ষ লড়াই থেকে বহু দূরে। শনিবার তারা বোকুমের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরে গেছে, যা তাদের হতাশাজনক মৌসুমের নতুন এক নিম্নগামী ধাপ। দলের ভেতরে অস্থিরতা বাড়ছে, খেলোয়াড়রা দর্শকদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন।

বোকুমের এই জয় তাদের রেলিগেশন জোন থেকে বেরিয়ে আসার আশা জাগিয়েছে। এছাড়া, হাইডেনহাইম নিজেদের মাঠে মাইনজের বিপক্ষে হেরে যাওয়ায় তারা এখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। 

উলফসবুর্গ এই সপ্তাহের সবচেয়ে নাটকীয় জয় পেয়েছে। কোনোরকম শট ছাড়াই ৭৭ মিনিট পর্যন্ত খেলার পরও তারা স্টুটগার্টের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয় পেয়েছে, যা স্টুটগার্টের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ওঠার আশায় বড় ধাক্কা দিয়েছে। 

শিরোপার লড়াই এখনো শেষ হয়নি, কিন্তু লেভারকুসেন জানে যে বায়ার্নের শীর্ষস্থানে থাকা মানে তাদের প্রতিপক্ষদের চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে থাকা। শনিবারের পারফরম্যান্সে তারা আধিপত্য দেখালেও, গোল না পাওয়ায় তা কাজে লাগাতে পারেনি। এই মৌসুমের লড়াইয়ে লেভারকুসেনকে হয়তো এই সুযোগ হাতছাড়া করার আক্ষেপই করতে হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত