শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নতুন সংগঠনের ঘোষণা

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১৩ এএম

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতৃত্বে নতুন ছাত্র সংগঠন আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। তিনি জানান, দলটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাইরে এসে নিজেদের কর্মসূচি অনুযায়ী সংগঠন পরিচালনা করবে। তাছাড়া, দলটি কোনো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি চর্চা করবে না এবং গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে দলটির নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।

গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন ছাত্রসংগঠন গঠনের লক্ষ্যে গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে জনমত জরিপ ও সদস্য সংগ্রহ করা হবে। অনলাইন ও অফলাইনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়, সম্ভাব্য সব কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসায় এই প্রচারণা চালানো হবে।

সংবাদ সম্মেলনে নবগঠিতব্য ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে কারা আসবে এবং কবে নাগাদ সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করবে তা জানানো হয়নি। শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে শিগগিরই ছাত্রসংগঠনটির আত্মপ্রকাশের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান নেতারা। নতুন সংগঠন গঠনের লক্ষ্যে ‘ঝঃঁফবহঃং ভরৎংঃ, ইধহমষধফবংয ভরৎংঃ’ সেøাগানকে সামনে রেখে নতুন ছাত্র সংগঠন গঠনে কিছু মৌলিক প্রস্তাবনা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধীর নেতারা।

প্রস্তাবনাগুলো হলোÑ ‘আদর্শিক বাইনারির কালচারাল দ্বন্দ্বের বাইরে গিয়ে মধ্যমপন্থি ছাত্ররাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করা; জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অন্তর্ভুক্তিমূলক ছাত্ররাজনীতি তৈরি করা, যেখানে পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে অবমূল্যায়ন করা হবে না; আমাদের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ভিত্তি। সবার অংশগ্রহণে গঠিত হতে যাওয়া নতুন রাজনীতিই আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে; মূলধারার রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের যে অনুপস্থিতি রয়েছে সেটিকে অ্যাড্রেস করে নারীর রাজনৈতিক মানদণ্ড বিনির্মাণ করা, রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ তৈরি করা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করে তোলার মাধ্যমে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য সমান সুযোগের সৃষ্টি করা; শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে আপসহীন ছাত্ররাজনীতির প্রতিশ্রুতি; বাংলাদেশের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে স্বীকার করে এবং ৪৭, ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭১, ৯০, ২৪-এর সব গণ আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার সংগ্রামী চেতনাকে ভিত্তি করে ছাত্ররাজনীতি সক্রিয় থাকবে; ফ্যাসিবাদকালীন সব শিক্ষাপরিসরে পরিকল্পিতভাবে যে রাজনৈতিক ডিজএম্পাওয়ারমেন্ট করা হয়েছে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শিক্ষার্থী সংসদ কাঠামোকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। নতুন ছাত্ররাজনীতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী সংসদ কাঠামো পুনর্বহালে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে; ছাত্র-নাগরিক সংহতি রক্ষার মধ্য দিয়ে ছাত্র-নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, সংগঠনটির আত্মপ্রকাশের তারিখ নির্ধারিত হয়নি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের থেকে পরামর্শ গ্রহণ সাপেক্ষে সংগঠনটির সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।

এ সময় সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, আমরা চাইলেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে থেকে সব রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারব না। এমন অনেক কাজ আছে যা বৈষম্যবিরোধী থেকে করা সম্ভব না। তাই, সাধারণ ছাত্রদের দায়বদ্ধতা থেকে এই ছাত্র সংগঠনের সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধীতে ছাত্রদল, শিবির, বাম, ইসলামপন্থি সবাই ছিল। অভ্যুত্থান শেষে সবাই যার যার অবস্থানে ফিরে গেছে। এখন কেউ চব্বিশকে ধারণ করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে তারা চাইলে এই সংগঠনে যোগ দেবে। আমরা শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত