শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

বড় দেশগুলো কী চায়

আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৮ এএম

সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকদের মধ্যে বিরল এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। যার মূল্য আলোচ্য বিষয় ছিল দুই দেশের মধ্যকার তিক্ততা কমিয়ে আনা এবং তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান। যুক্তরাষ্ট্রের সবশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর থেকেই এই যুদ্ধ অবসানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সংঘাত বন্ধে শুরু হওয়া এই শান্তি আলোচনা নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

রিয়াদের এই আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে ইউরোপকে। ফলে ইউরোপের নেতাদের উদ্বেগ, তাদের পাশ কাটিয়ে যুদ্ধের অবসানে দরকষাকষিতে সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া। ইউক্রেন ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির নাটকীয় পরিবর্তনে কীভাবে সাড়া দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার প্যারিসে এ অঞ্চলের নেতাদের অনানুষ্ঠানিক এক শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এলিসি প্রাসাদে হওয়া এই বৈঠকে নানা বিষয়ে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা গেছে। কিন্তু মতপার্থক্য কাটিয়ে ট্রাম্পের এই মেয়াদে নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার ওপর জোর দিয়েছেন ইউরোপের নেতারা। তবে দুটি আলোচনার কোনোটিতেই ইউক্রেন ছিল না।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালায়। বর্তমানে ইউক্রেনের ভূখণ্ডের এক-পঞ্চমাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে মস্কো, প্রধানত দক্ষিণ এবং পূর্বাঞ্চলে। এই যুদ্ধের অবসান ও ভবিষৎ নিয়ে মঙ্গলবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৈঠক করেন। তবে নিজেদের জরুরি সম্মলনে থেকে ইউরোপের নেতারাও নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন।

ফ্রান্স

মিউনিখ সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে তড়িঘড়ি করে ইউরোপের নেতাদের জরুরি বৈঠক ডাকেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দৃঢ় ও নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। ফ্রান্সের শীর্ষ কূটনীতিক জঁ-নোয়েল ব্যারো জানিয়েছেন, ইউরোপে একতা বিরলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ট্রাম্প-পুতিন অক্ষ ইউরোপকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে ফরাসি সামরিক বিশেষজ্ঞ ফ্রাঁসোয়া হেইসবুর্গ মনে করছেন, ইউরোপ এখনো একত্রিত নয়।

যুক্তরাজ্য

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আশা করছেন, তিনি ইউরোপীয় নেতা এবং হোয়াইট হাউজের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করবেন। ইউক্রেনে শান্তি রক্ষার্থে সেনা মোতায়েনের কথাও জানিয়েছেন তিনি। কিয়ার স্টারমার যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ২.৫ শতাংশ ব্যয়ের একটি পথনির্দেশনা নির্ধারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।  তিনি বলেন, ইউরোপকে প্রতিরক্ষা ব্যয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে আরও এগিয়ে আসতে হবে।

জার্মানি

ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জার্মানির নেতারা। দেশটির প্রায় সব মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেন বা ইইউ ছাড়া শান্তি চুক্তির সমালোচনা করেছে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। গত তিন বছরে এই যুদ্ধের প্রভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জার্মানি। তাই পরবর্তী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ন্যাটো ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না জার্মানি।

পোল্যান্ড

রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের শুরু থেকেই সামরিক এবং মানবিক সহায়তা পাঠানোর প্রধান মাধ্যম পোল্যান্ড। এই যুদ্ধে রাশিয়ার জয় হলে তা সমস্ত ইউরোপের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবে বলে সতর্ক করেছে দেশটি। রাশিয়ার কারণে পোল্যান্ড তার নিজস্ব সামরিক বাহিনীর ওপর অনেক খরচ করছে, যা মোট জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ। ইউরোপের অন্য দেশগুলোরও একইভাবে ব্যয় বাড়ানো উচিত বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড তুস্ক।

নর্ডিক এবং বাল্টিক রাষ্ট্র

সোমবারের বৈঠকে একমাত্র নর্ডিক দেশ হিসেবে অংশ নেয় ডেনমার্ক। তবে দেশটি পূর্বে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী তিনটি বাল্টিক দেশ এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়ার স্বার্থও উপস্থাপন করেছে।

সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিলেও ডেনমার্ক তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে ইউরোপের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে দেশটি।

সেনা পাঠানো নিয়ে আপত্তি

গতকাল প্যারিসে অনুষ্ঠিত সংকট সম্মেলনে জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড এবং স্পেন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর ব্যাপারে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, যুদ্ধ এখনো চলছে তাই সেনা পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা অত্যন্ত অনুচিত। একই অবস্থান ব্যক্ত করেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। পোল্যান্ডও ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত