রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

কেরানীগঞ্জে বন্ধ টিসিবির পণ্য বিক্রি

‘এই সরকারের আমলেও গরিবের মাল লয়া টানাটানি, আমরা যাব কই’

আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪১ পিএম

‘আমি অসহায় বিধবা নারী, টিসিবির পণ্য কমদামে কিনা খাই। গতকাল এখানে টিসিবির মাল নিতে আইসিলাম শুনলাম নেতারা ঝামেলা করসে, দেয় নাই। আজকেও নিতে আইসা নিতে পারলাম না নেতাদের কারণে। এই সরকার নাকি আমগো সরকার। এই সরকারের আমলেও গরিবের মাল লয়া নেতারা টানাটানি করে। আমরা যাব কই।’

এভাবেই অভিযোগ করছিলেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের পারগেন্ডারিয়া এলাকায় টিসিবির পণ্য কিনতে এসে ফিরে যাওয়া সালমা নামে এক নারী।

জানা গেছে, ঢাকার কেরানীগঞ্জে আনিস নামে এক বিএনপি নেতার বাধায় বন্ধ হয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য টিসিবির পণ্য বিক্রি সেবা। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার শুভাঢ্যা ইউনিয়নের পারগেন্ডারিয়া এলাকায়।

টিসিবির পণ্য নিতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেরানীগঞ্জের শুভাড্যা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আনিস ও তার অনুসারীরা টিসিবির পণ্য নিজেরা বিক্রির জন্য শনিবার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের নারী প্রতিনিধি রোকেয়া মাহমুদ কবিতাকে চাপ প্রয়োগ করেন। কবিতা এতে রাজি না হওয়ায় তাকে আওয়ামী লীগের দোসর বলে হুমকি-ধামকি দেন। রবিবারও একই কাজ করেন আনিস ও তার অনুসারীরা। এতে টিসিবির ডিলার বাধ্য হয়ে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ রাখেন।

কাবুল নামে অপর একজন বলেন, রোজায় জিনিসপত্রের দাম বেশি থাকে, টিসিবির পণ্যই আমাদের মতো গরিবের ভরসা। এই নেতারা গরিবের টিসিবির পণ্যতেও নজর দেয়। এরাই অশান্তির কারণ। এরা শুধু নিজেদের পেটের কথা ভাবে, আমাদের মতো অসহায়দের কথা ভাবে না।

টিসিবির পণ্যের ডিলার চন্দ্রপুরী স্টোরের পরিচালক সালাউদ্দিন মিয়া জানান, শনিবার আমরা এখানে পণ্য বিক্রি করতে আসলে স্থানীয় বিএনপির কিছু নেতাকর্মী আমাদের বাধা দেয় । সে সময় দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের প্রতিনিধি রোকেয়া ম্যাডাম প্রতিবাদ করলে তাকে বিএনপি নেতারা অপমান-অপদস্ত করে। পরিস্থিতি বেগতিক হলে আমরা রোকেয়া ম্যাডামকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করে অন্যত্র নিয়ে যাই। বিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা বলেছে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আজকেও বিএনপি নেতা আনিস তার লোকজন নিয়ে টিসিবি পণ্য বিক্রিতে বাধা দেয়। এ কারণে আমরা বাধ্য হয়ে বিক্রি বন্ধ রেখেছি।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রাশেদ খান বলেন, ‘টিসিবির অধীনে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য শুভাঢ্যা পারগেন্ডারিয়া এলাকায় দুজন ডিলারের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চলছিল। প্রতিজনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ কেজি চাল, ২ কেজি তেল ও ২ কেজি চিনি।

গত শনিবার ডিলার পণ্য বিক্রি করার সময় একটি দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাকে পণ্য বিক্রিতে বাধা দেন। এ সময় সেখানে দায়িত্বে থাকা আমাদের কার্যালয়ের কার্যসহকারী রোকেয়া মাহমুদ প্রতিবাদ জানালে তারা তাকে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দেখান। একপর্যায়ে তাকে আওয়ামী লীগের দোসর বলে আখ্যা দেন। আজ রবিবার আবারও ডিলাররা পণ্য বিক্রি শুরু করলে ওই বিএনপি নেতা হট্টগোল শুরু করেন। এর ফলে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ আছে।

কার্যসহকারী রোকেয়া মাহমুদ কবিতা বলেন, ‘গতকাল বিএনপির পরিচয়ে কিছু লোক ঝামেলা করে। আজ দুপুর ১২টা থেকে আমি উপস্থিত হয়ে কার্যক্রম শুরু করি এবং সুষ্ঠুভাবেই বিতরণ হচ্ছিলো। দুপুর ১টার পর একদল লোক এসে আমাকে চাপ প্রয়োগ করে। তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর-দালালসহ বিভিন্ন খারাপ কথা বলে। আমি সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাই। স্যার আমাকে সেখান থেকে চলে আসতে বললে— চলে আসি এবং ডিলার পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেয়।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আনিসকে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ বিএনপির সভাপতি নিপুন রায় চৌধুরী বলেন, নির্ধারিত ডিলার ব্যাতিত অন্য কারো পন্য বিক্রি করার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমি খোজ খবর নিয়ে দেখবো।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত