ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরোপয়েন্ট থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এতে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের কয়েক’শ শিক্ষার্থী।
এসময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে- ‘আমার বোনের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, ধর্ষকদের কবর খোঁড়’, ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘ঊই ওয়ান্ট জাস্টিস; ‘তুমি কে, আমি কে, আছিয়া, আছিয়া’, ‘ধর্ষকদের বিরুদ্ধে, লড়াই করো একসাথে’, ‘বিপ্লবীদের বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটা পাহাড় রোড হয়ে শহীদ মিনার পেরিয়ে জুলাই ২৪ উদ্যানের সামনে গেলে এতে যোগ দেয় নারী শিক্ষার্থীরা। মশাল হাতে তারা হল প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়। পরে মিছিলে যোগ দেয় নবাব ফয়েজুন্নেসা হলের ছাত্রীরা। মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা হতাশার মোড় পার হয়ে সাউথ ক্যাস্পাস আবাসিক এলাকা পেরিয়ে পুনরায় জিরো পয়েন্ট মোড়ে অবস্থান নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক অবরোধ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
সসাবেশে চবি শিক্ষার্থী মোসাম্মদ সাজেদা আক্তার বলেন, আমরা ধর্ষকের প্রকাশ্যে ফাঁসি চাই। তাদের হাত থেকে এদেশের মা বোনদের রক্ষা করতে হবে। দেশে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠিন শাস্তি হিসেবে ধর্ষকদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।
এসময় চবি শিক্ষার্থী নুজহাত আক্তার বলেন, আমাদের দেশের ছোট-বড় কোনো মেয়ে বা নারী নিরাপদে নাই। আমরা নারীর অধিকার চাই, নারীর ক্ষমতায়ন চাই। কিন্তু সবার আগে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য দেশের বর্তমান সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রক্টরিয়াল বডিকে আরও বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সমাবেশে ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী নৌশিন তাবাসসুম জুথি বলেন, দেশের ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কঠিন আইন প্রণয়ন করতে হবে। বিদ্যমান ধর্ষণ আইনের সংস্কার করতে হবে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নয় বরং ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে আইন প্রণয়ন করতে হবে।
এসময় চবি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাব্বির হোসেন রিয়াদ বলেন, আমরা চাই দেশের বর্তমান সরকার যেন দ্রুত সময়ে ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করেন। দেশে প্রতিদিন ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এই সরকারকে অবশ্যই সব ধর্ষণের ঘটনার বিচার করতে হবে। পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ক্ষমতা ছাড়লেও তারা দূর দেশ থেকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, বর্তমানে দেশে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলছে। এমনকি ৮ বছরের ছোট শিশু পর্যন্ত ধর্ষণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ধর্ষকদের ফাঁসির শাস্তি চাই। সরকার ধর্ষকদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হলে আমরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে জুলাইয়ের মতো আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।
এদিকে সমাবেশে চবি শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার বক্তব্য দিতে গেলে তাকে উদ্দেশ্য করে ভুয়া ভুয়া বলে দুয়োধ্বনি দিতে শুরু করে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা। এসময় উপস্থিত অনেক নারী শিক্ষার্থীকে সমাবেশ ত্যাগ করে চলে যেতে দেখা যায়। পরে বেশ সমাবেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে সমাধানের চেষ্টা করেন অনেকে। এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
জয়নুল আবেদীন ফাহিম নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেন, ‘সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের পর মিছিলে গেলাম ছোটবোন আছিয়ার ধর্ষণের বিচার চাইতে। আর, সুমাইয়া সিকদার শুনাতে চাইলে চবি প্রক্টরের পদত্যাগ করার ১০১টি কারণ। যদিও উপস্থিত শিক্ষার্থীদের আপত্তির মুখে উদ্দেশ্য সফল হয় নি।
তিনি আরও লিখেন, নিজেদের ব্যানারে সবমিলিয়ে সাড়ে চৌদ্দজন মানুষ হয় না। এতো বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে নিয়ে কারা কী করলো সব কাছ থেকেই দেখলাম। মনে রাখলাম সবকিছুই!