সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ রমজানের

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৫, ০৬:১০ এএম

লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন রমজান আলী। তার শরীর থেকে কয়েকটি গুলি বের করা হলেও এখনো ফুসফুসে রয়ে গেছে একটি গুলি। বর্তমানে ফুসফুসে গুলি নিয়ে জীবন কাটছে রমজানের। টাকার অভাবে পাচ্ছেন না সুচিকিৎসা।

আহত রমজানের স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার দক্ষিণ বাঞ্ছানগর এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী। বর্তমানে তার বয়স ৪৮ বছর। ২০ বছর ধরে শহরের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন তিনি। সংসারে রয়েছে মা-বাবা, স্ত্রী, দুই সন্তানসহ ছয় সদস্য। প্রতিদিন কাজ করে আয় করতেন ৫০০-৬০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। গত জুলাই-আগস্ট মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে লক্ষ্মীপুরেও তা দাবালন আকারে ছড়িয়ে পড়ে। গত ৪ আগস্ট সকালবেলা প্রতিদিনের মতো কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বের হন রমজান। লক্ষ্মীপুর শহরে প্রতিদিন মিছিল বের করত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা শহরের ঝুমুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। আর আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরে উত্তর তেমুহনী এলাকা থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাল্টা মিছিল বের করে। এ সময় আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে গুলি করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করা হয় একাধিকবার। এর কিছুক্ষণ পর তমিজ মার্কেট তিতাখাঁ মসজিদ এলাকায় জেলা যুবলীগ নেতা একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু ও তার বাহিনীর গুলিতে আহত হন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ সময় রাস্তা থেকে আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গিয়ে রমজান আলী নিজেই গুলিবিদ্ধ হন। দীর্ঘ আড়াই মাস ঢাকায় চিকিৎসা নেওয়ার পর শরীর থেকে দুটি গুলি বের করা সম্ভব হয়েছে। তবে ফুসফুসের একটি গুলি বের করা সম্ভব হয়নি।

বর্তমানে স্বাভাবিক চেলাফেরা ও কাজকর্ম করতে পারছেন না রমজান আলী। এতে করে সংসারে নেমে আসছে চরম অভাব-অনটন। আর টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন তিনি।

রমজান আলী বলেন, এখন আর কেউ খবর নেয় না। অর্থের অভাবে চিকিৎসা চলছে না। বর্তমানে পরিবার ও নিজের চিকিৎসা নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি।

রমজান আলীর বাবা সিরাজ মিয়া বলেন, ‘রমজান আমার ছোট ছেলে। সেই আমাকে দেখভাল করত। এখন গুলি খেয়ে অসুস্থ। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। তাই এ ব্যাপারে সরকার ও বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি।’ 

৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘রমজান আলী দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকের কাজ করছিলেন। ৭ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন রমজান। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’

জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আহতদের দেশে ও বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি আহত শিক্ষার্থী ও শহীদ পরিবারের পাশে রয়েছে প্রশাসন। জড়িতরা শাস্তির আওতায় আসবেই।’   

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত