রাষ্ট্রপতিকে জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক শপথ পাঠ করানোর বৈধতা প্রশ্নে রুল দিয়েছে উচ্চ আদালত। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে এমন বিধান যুক্ত করা কেন ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না এবং এই বিধান স্বেচ্ছাচারী, অসাংবিধানিক এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী হওয়ায় কেন তা বাতিল করা হবে না, রুলে তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
গতকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেয়। মন্ত্রি পরিষদ সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত সোমবার লেখক ও গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জীর পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী ওমর ফারুক। আবেদনের যুক্তিতে তিনি বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে প্রেসিডেন্টকে শপথ পাঠ করান সেই দেশের প্রধান বিচারপতি। কিন্তু আমাদের দেশে এটি ব্যত্যয় দেখা যায়। এটা পৃথিবীব্যাপী সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃত রেওয়াজ।
তিনি বলেন, সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর আগে রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাতেন প্রধান বিচারপতি। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এটির পরিবর্তন হয়ে স্পিকার নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করান। পরে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এই বিধান বাতিল করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে স্পিকার রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাবেন এমন বিধান ফিরিয়ে আনা হয়। আইনজীবী তার যুক্তিতে বলেন, কিছুদিন আগে হাইকোর্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ বাতিল করা হয়েছে, তাই রাষ্ট্রপতিকে শপথ পড়ানোর বিধানটিও বাতিল চান তিনি। এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের এ রুল হলো।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জসীম সরকার। আইনজীবী ওমর ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি দুজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শব্দচয়ন যুক্ত আছে। তারা দুজন দেশের উচ্চতম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্পিকার জাতীয় সংসদের। প্রধান বিচারপতি সংবিধানের অভিভাবক। আর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। সুতরাং দুই প্রধানের শপথ দুই প্রধানই পড়াবেন। এটি সারা বিশ্ব জুড়ে দেখা যায়। শুনানিতে এগুলোই আমাদের যুক্তি ছিল। আদালত রুল দিয়েছে।’