মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

হাসিনা-ইমরানসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা

আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৬:৪৯ এএম

রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হত্যা-নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেয়। মামলার ৯ আসামির মধ্যে চারজন বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তাদের আগামী ১২ মে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা ছাড়া আরও যে চারজনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে তারা হলেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। বিভিন্ন মামলায় কারাগারে থাকা অন্য আসামিরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি এ কেএম শহিদুল হক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ও পুলিশের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলাম। গতকাল প্রসিকিউশনপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হোসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ প্রমুখ।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনের অভিযোগে শেখ হাসিনা, তার সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হয়। সেখানে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আলাদা তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর প্রথমবার তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর শেখ হাসিনার শাসনামলে গুমের অভিযোগের মামলায় গত ৬ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। গতকাল তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ আসল।

 ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে সমাবেশ ডাকে হেফাজতে ইসলাম। যা ঘিরে বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেই রাতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে মতিঝিল থেকে হেফাজতের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। এ অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে হত্যার অভিযোগ তোলে হেফাজতে ইসলাম। গত বছরের ২৬ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৯ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হেফাজতে ইসলামের পক্ষে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করা হয়। এতে শেখ হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সেনা প্রধান (তখন বিজিবির মহাপরিচালক) আজিজ আহমেদ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (তখন ডিএমপি কমিশনার) বেনজির আহমেদ, র‌্যাবের তখনকার মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান, পুলিশের তখনকার মহাপরিদর্শক হাছান মাহমুদ খন্দকারকে অভিযুক্ত করা হয়।

শাপলা চত্বরের ঘটনার বিষয়ে গতকাল চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তখনকার প্রাইম মিনিস্টার (শেখ হাসিনা) এটা (ঘটনার বিষয়ে) জানতেন এবং জানার পরেও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন। তার নির্দেশ এবং পরিকল্পনায় এটা হয়েছিল। তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, আইজিপি এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা পরিকল্পনা করে এটা করেছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাজার হাজার সদস্য (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) অংশ নিয়েছে এটা সঠিক। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আমাদের লাগবে কমান্ড স্ট্রাকচার (নেতৃত্ব কাঠামো)। কারা নির্দেশ দিয়েছিল, কারা বাস্তবায়ন করেছিল, কারা ফিল্ডে থেকে কমান্ড করে এই কার্যটা করেছিল, এই জন্য আমরা টপ কমান্ডারদের বিচারের মুখোমুখি করতে চাই। যেজন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে এবং আদালত পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছে।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত