বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

মর্টগেজ জমি বিক্রি করে বাগিয়ে নিলেন ৪৫ কোটি!

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৫, ০২:৩০ এএম

রূপালী ব্যাংকে জমি মর্টগেজ রেখে ঋণ নেওয়া হয় ৫০ কোটি টাকা। সেই জমির একাংশ ভৈরব সেতু নির্মাণে অধিগ্রহণ করেছে খুলনা জেলা প্রশাসন। তবে সেই ঋণের তথ্য গোপন করে অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি এ অর্থ তুলে নিয়েছেন গদিচ্যুত সরকারের আমলে পাট রপ্তানিতে স্বর্ণপদক পাওয়া ঢাকা জুট টেডিং হাউস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিআইপি পদকপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী টিপু সুলতান। সম্প্রতি ঘটনাটি প্রকাশ্যে এলে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ব্যাংক ও জেলা প্রশাসক কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি মামলা করেছেন। কিন্তু প্রভাবশালী ওই ব্যক্তি রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৯ মার্চ রূপালী ব্যাংক দৌলতপুর করপোরেট শাখা থেকে ৫০ কোটি টাকা সিপি হাইপো ঋণ গ্রহণ করেন টিপু সুলতান। এই ঋণের মর্টগেজ (বন্ধক) হিসাবে খুলনার রেলগেটস্থ ঢাকা ট্রেডিং হাউসের ১১ দশমিক ২২ একর জমি ওই ব্যাংকে রাখা হয়। ২০১২ সালে থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কয়েক দফায় ওই ঋণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে নবায়ন করেন টিপু সুলতান। এরপর ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঋণের সুদসহ সকল লেজার স্থিতি ১০ বছরে পরিশোধের ব্লক সুবিধা গ্রহণ ও নবায়ন করেন। এরপর ফের ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ওই ঋণ নবায়ন করেন। সবশেষ ২০২৩ সালের ২২ জুন ঋণের সুদসহ সকল লেজার স্থিতি ১০ বছরে পরিশোধের ব্লক সুবিধা গ্রহণ করেন।

অন্যদিকে খুলনা শহরের সঙ্গে দিঘলিয়া উপজেলার যোগাযোগ সহজ করতে ভৈরব নদীতে সেতু নির্মাণের জন্য ওই জমির একাংশ অধিগ্রহণ করে খুলনা জেলা প্রশাসন। বহুবিধ সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সত্ত্বেও টিপু সুলতান মর্টগেজের হলফনামার তথ্য গোপন করে ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট ১ দশমিক ৭৫ একর জমি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অধিগ্রহণে সহায়তা হিসেবে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৪ কোটি ৯১ লাখ ১৮ হাজার ২৯০ টাকা তুলে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে ব্যাংকের বন্ধক থাকা জমি বিক্রির জন্য লিগ্যাল নোটিস দেন। কিন্তু এতে সাড়া না মেলায় গত ডিসেম্বর মাসে রূপালী ব্যাংক দৌলতপুর করপোরেট শাখার প্রধান উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. ইমন আলী বাদী হয়ে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলি আদালতে একটি মামলা করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও ঋণের বিপরীতে বন্ধকীকৃত সম্পত্তির হলফনামার তথ্য গোপন করে এই টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

মামলাটি আদালত গ্রহণ করে পিবিআই খুলনাকে তদন্তর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে খুলনার পিবিআই পরিদর্শক মো. ইকবাল হোসেন জানান, তিনি মামলাটি তদন্ত করছেন, তবে টিপু সুলতানের সন্ধান এখনো পাননি। তার সন্ধান পেতে সব ঠিকানায় অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

বক্তব্য পেতে টিপু সুলতানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার বাবসাপ্রতিষ্ঠানে গেলেও প্রসঙ্গটি নিয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ার (অধিগ্রহণ শাখা) মো. মোতালেব দেশ রূপান্তরকে জানান, দীর্ঘদিন অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চললেও উভয়পক্ষের কেউ বিষয়টি অবহিত করেনি। ওই জমিতে ব্যাংকের কোনো সাইনবোর্ডও ছিল না। তবে ব্যাংক থেকে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হলে তদন্তপূর্বক জেলা প্রশাসনকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য মো. টিপু সুলতানকে নোটিস দেওয়া হয়। কিন্তু টিপু সুলতান টাকা ফেরত না দেওয়ার তার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তবে এ প্রসঙ্গে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জড়িত না থাকলে এত বড় অনিয়ম করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। ব্যাংক ও জেলা প্রশাসক দপ্তরে কেউ সুবিধা নিয়ে এই সুযোগ করে দিয়েছে। কারণ ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে হলে মূল দলিলের কপি দেখানো ও মালিকানা প্রমাণ করতে হয়। অথচ রূপালী ব্যাংক দৌলতপুর শাখার কাছে টিপু সুলতানের মূল দলিল রয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত