কুমিল্লার মুরাদনগরে ছয় বছরের এক শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বাবুল মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ গ্রাম্য সালিশে রফাদফা করার অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য মাতব্বররা ভুক্তভোগীর বাড়িতেই বসায় সালিশি বৈঠক। সেখানে অভিযুক্তকে জুতাপেটা এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার ৫ হাজার টাকা ভুক্তভোগীর পরিবারকে জোরপূর্বক হাতে ধরিয়ে দেন মাতব্বররা।
সালিশে ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবারকে জানানো হয়, মাতব্বরদের সিদ্ধান্ত না মেনে থানায় অভিযোগ করলে ছাড়তে হবে বসতভিটা।
ঘটনাটি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা সদর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের। অভিযুক্ত বাবুল মিয়া (৫০) মুরাদনগর উপজেলা সদর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের আবদুল বারেকের ছেলে।
জানা যায়, সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ ৬ জন মাতব্বর অভিযুক্তের কাছ থেকে নেয় ৫ হাজার টাকা। সেই ৫ হাজার টাকা আবার ৬ মাতব্বরের মধ্যে বণ্টনে বাধে আপত্তি। চার মাতব্বর নেন ১ হাজার টাকা করে এবং দুইজনকে দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। ফলে সঠিক বণ্টন না পেয়ে মাতব্বররা এখন একে অপরের বিরুদ্ধে তুলছেন অভিযোগ।
ভুক্তভোগী শিশুটির নানি জানান, ‘আমার স্বামী বেঁচে নেই। আমার মেয়ে তার স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করে। সেই সুবাদে তার ৬ বছরের মেয়ে শিশুটি আমার কাছেই থাকে। গত ৫ জানুয়ারি বাবুল মিয়া আমার নাতনির হাতে ১০ টাকা দিয়ে বলে চলো তোমাকে মজা কিনে দিবো। সে সরল বিশ্বাসে বাবুলের সঙ্গে যায়। বাবুল একপর্যায়ে তাকে একটি ঘরের চিপায় নিয়ে যৌন নির্যাতন করে। তাৎক্ষণিক আমার নাতনি বাড়িতে এসে কান্না করতে করতে ঘটনাটি জানায়। এই ঘটনার পর চার দিন খুব অসুস্থ ছিল সে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি গ্রামের মাতব্বরদের কাছে জানালে তারা আমাকে পরামর্শ দেয় গ্রাম্য সালিশ ডাকার জন্য। আর যদি মাতব্বরদের কথা অমান্য করে থানা পুলিশ করি তাহলে আমার খুব ক্ষতি হতে পারে। এই ভয়ে ঘটনার ১৫ দিন পর আমি গ্রাম্য সালিশ ডাকি। সালিশে মাতব্বররা অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য কোনো সাক্ষী প্রমাণ হাজির হতে দেয়নি। বিচারে রায় দেওয়া হয় অভিযুক্ত বাবুলকে ৬টি জুতার বাড়ি এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা। বর্তমানে আমি শিশু সন্তানটি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি। প্রতিনিয়ত বাবুলের পরিবার থেকে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে যদি মুখ খুলি তাহলে আমাকে গ্রামছাড়া করবে।’
ওই সালিশে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাতব্বর বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহীনকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে কাজ করেছে অভিযুক্ত বাবুল মিয়ার পরিবার। সেই সুবাদে তাকে বাঁচানোর জন্য গ্রাম্য সালিশ ডেকে নামমাত্র জরিমানা করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয়। সালিশের পর আবার অভিযুক্তর কাছ থেকে ইউপি সদস্য শাহীনসহ ৬ মাতব্বরের জন্য নেওয়া হয় ৫ হাজার টাকা। সেই ৫ হাজার টাকা থেকে ইউপি সদস্য শাহিন, জাফর আলীর ছেলে বাবুল, সৈয়দ আলীর ছেলে বাবুল, শাহজালাল নেন ১ হাজার টাকা করে ৪ হাজার টাকা। আর বাকি ১ হাজার টাকা দেওয়া হয় কবির ও সাগরকে। সালিশের পরে ওই নারীকে বলা হয়েছে— যদি থানা পুলিশ করে তাহলে গ্রাম থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এই ঘটনাটির সঠিক তদন্তসাপেক্ষে বিচার হওয়া উচিত।
ইউপি সদস্য শাহিন বলেন, ‘বিচারে আমি উপস্থিত ছিলাম আর বিচারের জুড়ি বোর্ডের রায়ে সম্মতি প্রদান করেছি মাত্র। বিচার পরিচালনা করেছে গ্রামের মুরুব্বিরা। বিচারের রায় অনুযায়ী অভিযুক্ত বাবুল মিয়াকে তার বড় ভাই তাহের মিয়া জুতাপেটা করে এবং জরিমানার ৫ হাজার টাকা শিশুটির নানির হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।’