বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপের পরামর্শ

গুতেরেসের ঢাকা ত্যাগ

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩৭ এএম

চার দিনের সফর শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল রবিবার সকালে ঢাকা ছেড়েছেন। ঢাকা ছাড়ার আগে গুতেরেস প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফোনে বিদায়ী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

এর আগে গত শনিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবর্তন এবং তাদের অধিকার সম্পূর্ণরূপে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপে বসা জরুরি হয়ে পড়েছে।

গুতেরেস আরও বলেন, মিয়ানমারে লড়াই বন্ধ করা ও সেখানে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের সব প্রতিবেশী দেশের চাপ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোকে একত্রিত করে একটি সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে। এর প্রথম ধাপ হবে সহিংসতা বন্ধ করা এবং একই সঙ্গে এমন কার্যকর ব্যবস্থা গঠন করা, যা মিয়ানমারে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাধানের পথ সুগম করবে, যা স্বাভাবিকভাবেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনকে সহজ করবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, একই সঙ্গে আমাদের মিয়ানমারের ভেতরে মানবিক সহায়তা জোরদার করতে হবে, যাতে প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। তিনি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের জন্য একটি মানবিক সহায়তা চ্যানেল তৈরির সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন। বলেন, ‘কিন্তু এটি স্পষ্টতই এমন একটি বিষয়, যা অনুমোদন ও সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল।’

গতকাল ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে জাতিসংঘ মহাসচিবকে বিদায় জানান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সংকটবিষয়ক উচ্চপ্রতিনিধি খলিলুর রহমান।

চার দিনের সরকারি সফরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা আসেন গুতেরেস। তিনি গত শুক্রবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করেন। পরদিন শনিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন। দুপুরে ঐকমত্য কমিশন এবং পরে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আসেন যৌথ সংবাদ সম্মেলনে। এরপর ইফতার ও নৈশভোজে অংশ নিয়ে ঢাকার কর্মসূচি শেষ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

গুতেরেসের সফরে যা যা ঘটল

প্রথম দিন : বৃহস্পতিবার বিকেলে শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জাতিসংঘ মহাসচিবকে স্বাগত জানান। এ দিন তিনি বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন।

দ্বিতীয় দিন : সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন আন্তোনিও গুতেরেস। এরপর জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যান। সেখানে তিনি রোহিঙ্গাদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেন এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সংকট সমাধানের পথ খোঁজার আশ্বাস দেন। এ সফরের অংশ হিসেবে জাতিসংঘ মহাসচিব এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

তৃতীয় দিন : শনিবার গুতেরেস ঢাকায় জাতিসংঘ কান্ট্রি টিমের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং গুলশানে নবনির্মিত ইউএন হাউজ উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং তরুণ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন, যেখানে তিনি মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং টেকসই উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বিএনপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে গোলটেবিল আলোচনায়ও অংশগ্রহণ করেন।

চতুর্থ দিন : রবিবার সফরের শেষ দিনে বিদায়ের আগে তিনি বাংলাদেশের আতিথেয়তায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর আশ্বাস দেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সফরের সময় গুতেরেস সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা সংকট ও টেকসই উন্নয়নবিষয়ক আলোচনা গুরুত্ব পায়। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করেন তিনি। এ সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার বাস্তব চিত্র প্রত্যক্ষ করা, মানবাধিকার পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বৈঠক করা।

এ সফরের মাধ্যমে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে মানবাধিকার ও রোহিঙ্গা সংকটের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান এবং সরকারকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত