উত্তর মেসিডোনিয়ার একটি নাইটক্লাবে অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৫৯ জন নিহত হওয়ার পর এঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিবিসিকে এ কথা জানিয়েছে পুলিশের কর্মকর্তারা।
রবিবার স্থানীয় সময় আড়াইটার দিকে কোচানির পালস ক্লাবে আগুন লাগে, যেখানে দেশের জনপ্রিয় হিপ-হপ জুটি ডিএনকে-র একটি কনসার্টের জন্য প্রায় ৫০০ জন লোক জড়ো হয়েছিল।
পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের একজন মুখপাত্র বিবিসির নিউজ আওয়ারকে জানিয়েছেন, ব্যান্ডের মাত্র একজন সদস্য বেঁচে গেছেন এবং তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কনসার্টে মোট ১৫৫ জন আহত হয়েছেন।
বিলজানা আরসোভস্কা বলেছেন, আগুনের জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে এমন ১০ জন সন্দেহভাজনকে স্বল্পমেয়াদী আটকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে - যার মধ্যে "এই লাইসেন্স প্রদানকারী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও" অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
রবিবার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্যান্স তোস্কোভস্কি বলেন, অনুষ্ঠানস্থলটির পরিচালনার জন্য কোনও আইনি অনুমোদী ছিল না, অন্যদিকে পুলিশ তদন্ত করছে যে আগুন লাগার সাথে ঘুষ এবং দুর্নীতির কোনও যোগসূত্র আছে কিনা।
রাজধানী স্কোপজে থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার (৬০ মাইল) পূর্বে অবস্থিত এই অনুষ্ঠানস্থলটিকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে "ইম্প্রোভাইজড নাইটক্লাব" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা আগে একটি কার্পেটের গুদাম ছিল।
মিসেস আরসোভস্কা বলেন, ভবনটিতে বের হওয়ার জন্য কেবল একটি মাত্র পথ ছিল, কারণ অনুষ্ঠানস্থলের পিছনের দরজাটি তালাবদ্ধ ছিল এবং এটি ব্যবহার করা যাচ্ছিল না।
তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও অনুষ্ঠানস্থলে বেশ কয়েকটি অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং বজ্রপাতের ব্যবস্থায় ত্রুটি রয়েছে।
প্রাথমিক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে, তোস্কোভস্কি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল আতশবাজি যন্ত্রের স্ফুলিঙ্গ থেকে যা ছাদে আঘাত করেছিল, যা অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি।
ঘটনাস্থলের ফুটেজে দেখা গেছে ব্যান্ড দলটি মঞ্চে গান পরিবেশনের সময় স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেই হঠাৎ আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
অপর দিকে বিবিসির হাতে আসা ভিডিও যাচাই করে দেখা গেছে, লোকজন সিলিংয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। এতে দেখা গেছে, আগুন লাগার পরেও ক্লাবটি দর্শকে পরিপূর্ণ ছিল। তাঁরা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করে আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা দেখছিলেন।
কোচানি হাসপাতালের পরিচালক বলেছেন, পরিচয়পত্রের অভাবে আহত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে নিহত ব্যক্তিদের বয়স ১৪ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মারজিয়া তাসেভা (২০) নামের একজন তরুণী বেসরকারি ফাইভ টিভিকে বলেন, আগুনের খবর শুনে লোকজন তাড়াহুড়া করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি মাটিতে পড়ে পদদলিত হন। পরে সেখান থেকে বের হতে সক্ষম হন।
অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে মারজিয়ার ২৫ বছর বয়সী বোন নিখোঁজ। তাঁকে খোঁজাখুজি করেও স্থানীয় কোনো হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানী স্কোপজের কোনো হাসপাতালে পাঠানো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।