সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের অবরোধে নগর জুড়ে তীব্র জট

আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৫, ০২:২৪ এএম

জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিলসহ ৬ দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এতে তীব্র যানজটে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সাতরাস্তা মোড়ে অবরোধ করেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।  এতে মগবাজার, মহাখালী, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, শাহবাগ, কারওয়ানবাজারসহ আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি  হয়।

গতকাল বেলা ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন, যা দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলতে থাকে। এ সময় হাতিরঝিল, রামপুরা, মগবাজার, শান্তিনগর, কাকরাইল ও মিন্টু রোডে যানজটের সৃষ্টি হয়। শত শত গাড়ি আটকেপড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

গুলশান ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জানানো হয়, তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তায় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রায় ৩০০-৪০০ শিক্ষার্থী বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন। যার ফলে মহাখালী হয়ে সাতরাস্তার দিকে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হয়।

গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার নিউমার্কেট, মিরপুর রোড, শাহবাগ, কাওরানবাজার, পান্থপথসহ বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দুপুরের পর থেকে থেকে যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।

জানা গেছে, ঈদের কেনাকাটা এবং ফুটপাত থেকে সড়কের মাঝ পর্যন্ত এসব এলাকায় হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও সড়কের অনেকটা অংশজুড়ে গাড়ি পার্ক করে রাখায় সড়ক দিয়ে অন্যান্য গাড়ি চলছে ধীরগতিতে।

সড়কে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ব্যাপক তৎপর দেখা গেছে। কিন্তু একই সময়ে অনেক মানুষ রাস্তায় বের হওয়ায় যানজট সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশ বলছেন, মাহে রমজান উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীতে প্রতি ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত প্রতিটি সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়। লোকজন যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ইফতারের আগে বাসায় ফিরতে পারেন সেভাবে কাজ করতেও বলা হয়েছে। রমজানকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরী এলাকায় সকালের চেয়ে বিকেলে বেশি ট্রাফিক সদস্য রাখার কাজটি করে যাচ্ছে প্রতিটি বিভাগ।

শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তার মধ্যে ২০২১ সালের বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের দ্রুত স্থানান্তর করা ছিল অন্যতম। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ ঘটনায় ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টররা তাদের পক্ষে রায় পেয়েছেন। অন্যদিকে শিক্ষকরা বলছেন, ভুল বার্তায় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছেন। তাই তাদের বুঝিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।

চট্টগ্রামে রেল ও সড়কপথ অবরোধ : চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেট মোড়ে সড়ক ও ষোলশহর রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করে তারা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সড়ক ও রেললাইন ছাড়ে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের ফলে মুরাদপুর-বহদ্দারহাটমুখী সড়ক এবং বহদ্দারহাট-মুরাদপুর থেকে জিইসিমুখী সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মজীবী এবং দূর-দূরান্তের যাত্রীরা। যানজট ছড়িয়েছে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতেও। অনেককেই হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা দিতে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ক্র্যাফট ইন্সট্রাক্টররা কারিগরি ব্যাকগ্রাউন্ডের না, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ল্যাবের সহকারী কর্মচারী। তারা মূলত অষ্টম শ্রেণি কিংবা এসএসসি পাস। তাদের ডিপ্লোমার শিক্ষক হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। তারা যদি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হন, তাহলে ডিপ্লোমা ছাত্ররা কতটুকু শিখবে। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর শুধু ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টদের জন্য। জেলা প্রশাসকের কাছে এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অধ্যক্ষের মাধ্যমে তারা দরখাস্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন।

৬ দফা দাবি হলো, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকতে হবে, ক্র্যাফট ইন্সট্রাক্টরসহ সকল পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ দিতে হবে, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের জন্য সকল বিভাগীয় শহরে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অতি শিগগিরই স্থাপন করতে হবে, কারিগরি শিক্ষা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর চাকরির আবেদন বাস্তবায়ন করতে হবে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য প্রাইভেট সেক্টরে সর্বনি¤œ বেতন স্কেল নির্ধারণ করে দিতে হবে এবং জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইন্সট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ কোটা অনতিবিলম্বে বিলুপ্ত করতে হবে।

দুই নম্বর গেইট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়কে সকাল থেকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে জড়ো হয়েছেন পলিটেকনিকের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। তারা মোড়ে জড়ো হয়ে প্রথমে সড়ক অবরোধ করেন। এরপর বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। ট্রাফিক পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সরানোর চেষ্টা করলেও দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

একপর্যায়ে একজন শিক্ষক হ্যান্ডমাইক নিয়ে আন্দোলন বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা গতকাল (বুধবার) মিটিং করেছি ডিসি স্যারের সঙ্গে। রায় পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আপনাদের দাবি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব।’

আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘যাদের দায়িত্ব ছিল ল্যাবের তালা খোলা আর বন্ধ করা, তারা এখন স্যার হবে। যাদের আমরা মামা ডাকতাম। একজন নার্স যেমন ডাক্তার হতে পারে না, তেমনি একজন অষ্টম শ্রেণি পাস ছাত্র ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হতে পারে না। চব্বিশের আন্দোলনের পরেও কিভাবে ৩০ শতাংশ কোটা থাকে? যদি এই কোটা বাতিল না হয় আমরা আবারও দেখিয়ে দেব কিভাবে বাতিল করতে হয়।’

প্রসঙ্গত, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হলো একটি সরকারি পদ। যেখানে মূলত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শিক্ষাদান করেন। সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি রায়ের মাধ্যমে ক্র্যাফট ইন্সট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি দিয়ে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর করা হচ্ছে। যেখানে তারা ১০ম গ্রেডে চাকরি পাবেন। কিন্তু এতে ৮ম শ্রেণি, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও এইচএসসি পাস ব্যক্তিরাও এই সুযোগ পাচ্ছেন বলে দাবি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত