সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র-রুশ কর্মকর্তাদের বৈঠক

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৫ এএম

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করতে আবারও সৌদি আরবে বৈঠকে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। গতকাল সোমবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রিয়াদের রিৎজ-কার্লটন হোটেলে বৈঠকের আয়োজন করেছে সৌদি মধ্যস্থতাকারীরা। রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন আন্তর্জাতিক বিষয়-সংক্রান্ত ফেডারেশন কাউন্সিল কমিটির প্রধান গ্রিগোরি কারাসিন ও রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দপ্তরের (এফএসবি) পরিচালকের উপদেষ্টা সের্গেই বেসেদা। যুক্তরাষ্ট্রের আলোচক দলের নেতৃত্বে দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনাবিষয়ক পরিচালক মাইকেল অ্যান্টন ও হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ঊর্ধ্বতন পরিচালক অ্যান্ড্রু পিক। এবারের আলোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে রাশিয়াকে সমুদ্রপথ বিশেষ করে কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো একে সিজফায়ার লাইট হিসেবে অভিহিত করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বিতীয় বৈঠক এটি।

তিন বছর ধরে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই যুদ্ধ বন্ধ করার ব্যাপারে তোরজোড় শুরু করেন। ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে রিয়াদের এই আলোচনা অগ্রগতির পথ তৈরি করতে পারে। সোমবারের এই বৈঠক ফলপ্রসূ হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্পের বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফও। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেন, আমার বিশ্বাস, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী। আশা করি সোমবার বাস্তবসম্মত কিছু অগ্রগতি হবে।

কৃষ্ণসাগরে দুদেশের জাহাজ চলাচলের বিষয়ে একটা সমঝোতা তৈরি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে সামগ্রিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা দৃঢ় হবে। বৈঠকটি উভয়পক্ষের কাছাকাছি আসার আলোচনা বলে অভিহিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ।

গতকাল সোমবার রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা শুরুর আগে রিৎজ-কার্লটন হোটেল থেকে সব সাংবাদিকদের বের করে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা তাস। এরপর দুপক্ষ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে। বৈঠকে কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতি থাকবে আলোচনার শীর্ষে ছিল। এ বিষয়ে সব পক্ষ একমত হলে কৃষ্ণসাগরে মস্কো ও কিয়েভ উভয়ই শস্য, জ্বালানি আনা নেওয়া করতে পারবে এবং আবারও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে। কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি উভয়পক্ষ আরও বড় আকারে যুদ্ধবিরতির খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও কিয়েভ চাইছে কৃষ্ণসাগরে উভয়পক্ষ সব ধরনের হামলা থেকে বিরত থাকবে। তবে রাশিয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে ২০২২ সালে হওয়া শস্যচুক্তি পুনরুজ্জীবিত করা। যার আওতায় ইউক্রেনের শস্যবাহী নৌযান হামলার বাইরে থাকবে।

এর আগে রবিবারও রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। বৈঠকটি গভীর রাতে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে জ্বালানিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এই বৈঠকের পর যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে খুব একটা উচ্চাশা প্রকাশ করেনি রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যমকে বলেন, আমরা এই পথের কেবল শুরুতে আছি। গত মঙ্গলবার পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কৃষ্ণসাগরের বিষয়টি উত্থাপন করেন। রুশ প্রেসিডেন্ট এতে সমর্থন জানান এবং এ বিষয়টির বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আলোচনায় সম্মতি দেন।

যুদ্ধ অবসানের প্রাথমিক ধাপে জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হামলা বন্ধের বিষয়ে আলোচনা চলমান আছে। তবে যত আলোচনাই হোক না কেন, হামলা বন্ধে পুতিনের স্পষ্ট নির্দেশনা আসার আগ পর্যন্ত বাস্তবসম্মত অগ্রগতি অর্জিত হবে না বলে মত প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি। সৌদি আরবে এসব আলোচনার মধ্যেই পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। কিয়েভ বলছে, রবিবার রাতভর রাশিয়া ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ৯৯টি ড্রোন ছুড়েছে। যার ৫৭টিই ভূপাতিত করেছে তারা। ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনী জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া হিমারস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার বেলগোরদ অঞ্চলে চারটি রুশ সামরিক হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে। বড় ধরনের সাইবার হামলার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেলওয়ে কোম্পানি। অন্যদিকে মস্কো বলছে, তারাও ইউক্রেইনের ২৮ ড্রোনকে প্রতিহত করেছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত