তিন বছর ধরে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর এই যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়ে তোড়জোড় শুরু করেন। যার প্রেক্ষিতে দ্বিতীয়বারের মতো সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের রিৎজ-কার্লটন হোটেলে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতিনিধি দল। সৌদি মধ্যস্থতাকারীদের উপস্থিতিতে দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার এই বৈঠকের পর ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মত দিয়েছেন রুশ মধ্যস্থতাকারীদের প্রধান গ্রিগোরি কারাসিন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ ধরনের আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ওয়াশিংটন ও মস্কোর প্রতিনিধিদের এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল রাশিয়াকে সমুদ্রপথে বিশেষ করে কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো একে সিজফায়ার লাইট হিসেবে অভিহিত করেছে। এ বিষয়ে সব পক্ষ একমত হলে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই শস্য-জ্বালানি আনা নেওয়া করতে পারবে এবং আবারও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে। কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি উভয় পক্ষের আরও বড় আকারে যুদ্ধবিরতির খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, বৈঠকে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত ফেডারেশন কাউন্সিল কমিটির প্রধান গ্রিগোরি কারাসিন রুশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম তাসকে তিনি বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে জটিল ও গভীর আলোচনা হয়েছে। আমরা সম্ভাব্য প্রায় সবকিছু নিয়েই কথা বলেছি। যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া উভয়ের জন্যই এই আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা অনেকগুলো সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি। তবে এসব সমস্যার সমাধান এবং সব কিছুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে এখনো অনেক দেরি। তবুও, মনে হচ্ছে এ ধরনের আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফল আসতে পারে।
এ সময় সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন রুশ প্রতিনিধি গ্রিগোরি কারাসিন। তিনি বলেন, আমরা ধীরে ধীরে এই আলোচনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুক্ত করব। জাতিসংঘসহ সুনির্দিষ্ট কিছু দেশ এতে যুক্ত হবে। দ্রুতই এই বৈঠকের বিষয়ে ওয়াশিংটন-মস্কোর যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করার কথা রয়েছে। এর আগে, রবিবারও রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। তবে সে বৈঠক থেকে কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি দুই পক্ষই। কিন্তু সে বৈঠক শেষে গ্রিগোরি কারাসিনের মতো ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভও ফলপ্রসূ আলোচনার কথা জানিয়েছিলেন। বৈঠকে জ্বালানিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ২০২২ সাল থেকে চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দ্রুত অবসানের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন। তিনি আশা করছেন, সৌদি রাজধানীর এই আলোচনা থেকেই ওই সংঘাত অবসানের পথ সুগম হবে। তবে আলোচনার বিষয়ে জ্ঞাত সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের সার্বিক যুদ্ধবিরতির তুলনায় কৃষ্ণসাগরে অস্ত্রবিরতির পরিকল্পনাটি অনেকটা সীমিত পরিসরের।
রয়টার্সের মতে, যুদ্ধে সার্বিকভাবে বিরতি দেওয়াতে এখনো যে রাশিয়ার সম্মতি নেই, এই আলোচনা সেই ইঙ্গিতই দেয়। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কৃষ্ণসাগরে রুশ নৌবহরের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে ইউক্রেন। এসব হামলার কারণে এক পর্যায়ে ক্রিমিয়ার নৌঘাঁটি থেকে বেশ কিছু জাহাজ সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় মস্কো। ইউক্রেনীয় বন্দরগুলোতে রাশিয়া আক্রমণ চালালেও এখনো ওডেসা অঞ্চলের প্রধান তিনটি সমুদ্রবন্দর থেকে কৃষ্ণসাগর হয়ে শস্য, লোহা ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করে যাচ্ছে কিয়েভ। তবে যুদ্ধের আগে ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান রপ্তানি কেন্দ্র মাইকোলাইভ বন্দর এখনো বন্ধ আছে।
এদিকে, রিয়াদের বিলাসবহুল রিৎজ-কার্লটন হোটেলে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলও অবস্থান করছে। মস্কোর সঙ্গে আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তাদের। এএফপি জানিয়েছে, সেখানে তাদের মধ্যে দ্বিতীয় একটি বৈঠকেরও আয়োজন হতে পারে। রাশিয়া একদিকে শান্তি নিয়ে ফাঁপা বক্তব্য দিচ্ছে, অন্যদিকে ইউক্রেনে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েই যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে কিয়েভ। সোমবার উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এ কথা বলেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা। রাশিয়াও বিভিন্ন অঞ্চলে ইউক্রেনের ২২৭টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবিও করেছে। দক্ষিণ রাশিয়ার ক্রাসনোদরের ক্রোপোৎকিনস্কায়া তেল পাম্পে ড্রোন হামলা হয়েছে। লুহানস্কে কিয়েভের হামলায় দুই সাংবাদিক ও তাদের গাড়ির চালকসহ ৬ জন নিহত হয়েছে বলেও জানিয়েছে রুশ গণমাধ্যম।