বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

তাৎপর্যপূর্ণ বেজোড় রাত

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৪৮ এএম

আজ পঁচিশতম রোজা। রহমত ও মাগফিরাত অর্জন শেষে আমরা অবস্থান করছি নাজাত পর্বে। রমজানের শেষ দশ দিন নাজাত পর্বের বিশেষ একটি আমল ইতিকাফ। ইতিকাফ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ইতিকাফকারীরা মহান আল্লাহর ঘর মসজিদে অবস্থান নিয়েছেন। ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, লাইলাতুল কদর অন্বেষণে তৎপর থাকা এবং তাতে ইবাদত করার সুযোগ লাভ করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো। (সহিহ বুখারি)

পবিত্র কোরআনে লাইলাতুল কদরকে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। লাইলাতুল কদর অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমাময় একটি রাত। এই রাতের ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদা এক হাজার মাসের রাতগুলোতে ইবাদত-বন্দেগির চেয়েও বেশি। এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মত হিসেবে আমাদের ওপর বিশেষ এক অনুগ্রহ। কেননা এক হাজার মাসে ৮৩ বছর ৪ মাস হয়। আল্লাহতায়ালা এর মাধ্যমে আমাদের সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্কালে অধিক সওয়াব ও কল্যাণ অর্জনের সুযোগ দান করেছেন। সুরা কদর ও বাকারায় বর্ণিত আয়াত এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় লাইলাতুল কদর রমজান মাসে। কিন্তু এর সঠিক তারিখ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না। ইসলামি স্কলারগণ বিভিন্ন হাদিস পর্যালোচনা করে বলেন, লাইলাতুল কদর রমজান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে আসে। কিন্তু এরও কোনো তারিখ নির্দিষ্ট নেই। বরং যে কোনো রাতে হতে পারে। আবার প্রত্যেক রমজানে তা পরিবর্তিতও হতে পারে। সহিহ হাদিসের ভাষ্যমতে, শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো। (সহিহ মুসলিম ১১৬৯)

হাদিসের এসব বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়, রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই রমজান শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সম্ভাবনা থেকেই যায়। ফলে অবহেলা না করে রমজানের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাতের আশায় ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকা দরকার। কেননা এই রাতের ইবাদত-বন্দেগিতে রয়েছে বিশেষ ফজিলত। আল্লাহতায়ালা এই রাতে বান্দাদেরকে ব্যাপকহারে ক্ষমা করেন এবং অসংখ্য কল্যাণ দান করেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের আশায় কদরের রাতে নামাজ আদায় করতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ মুসলিম ৭৬০) অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, এতে (রমজানে) এমন এক রাত রয়েছে, যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে সে যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে। (মুসনাদে আহমাদ ২২৩০) কদরের রাত এই কারণেও গুরুত্বপূর্ণ যে, এই রাতে মানুষের পুরো বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। মানুষের পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য, অর্থাৎ তার সামনে যা যা আসবে বা তার জীবনে যা কিছু ঘটবে, সেসব নির্ধারণ করা হয়। তার বেঁচে থাকা কিংবা মৃত্যু, তার ভালো-মন্দ, তার রুটি-রুজি ইত্যাদি বিষয় নির্ধারণ করা হয় এই রাতে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘(কদরের) এই রাতে প্রত্যেক হেকমতপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’ (সুরা দুখান ৪) আমাদের থেকে লাইলাতুল কদরের সুনির্দিষ্ট তারিখ গোপন রাখা হয়েছে। তবে হাদিসে কিছু নিদর্শন বলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিরাট হেকমত ও রহস্য। এর দ্বারা মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য হলো, এই মহামূল্যবান রাতের অনুসন্ধানে বান্দারা সাধনা করুক। এক রাতের জন্য একাধিক রাত জাগ্রত থাকুক।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত