বন্দর নগরী চট্টগ্রামে জমে উঠেছে ঈদবাজার। বিপণিবিতানগুলোতে শেষ সময়ে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। এর মধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এক শ্রেণিক অসাধু ব্যবসায়ী। নানা কারসাজির মাধ্যমে ক্রেতাদের ঠকিয়ে পকেট কাটছেন তারা। দেশি পোশাকে বিদেশি স্টিকার ও ইচ্ছেমতো দাম বসিয়ে বিক্রি করছেন উচ্চমূল্যে। একইভাবে মেয়াদযুক্ত স্টিকার মেরে বিক্রি করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী। নগরীর একাধিক বিপণিকেন্দ্রে এ ধরনের জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সাধারণত ঈদের বাজারে বস্ত্রজাতীয় পণ্যের চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। এ সময় বিভিন্ন বয়সের লোকজন শার্ট, পাঞ্জাবি, টিশার্ট, থ্রিপিস, টুপিস, শাড়ি, লেহেঙ্গাসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় কিনে থাকেন। চাহিদার কারণে নানা নামে দেশি- বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের কাপড় বাজারে আসে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ঈদবাজারের চাহিদার সুযোগ নিয়ে নানা কারসাজির মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নেন। চট্টগ্রামের কয়েকটি খ্যাতনামা কাপড়ের শোরুমেও এভাবে কারসাজির মাধ্যমে ক্রেতাদের পকেট কাটার প্রমাণ মিলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবারের ঈদবাজারেও দেশে উৎপাদিত শার্ট, পাঞ্জাবি, থ্রিপিসসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি পণ্যের ওপর ভারতীয় ও পাকিস্তানি ট্যাগ লাগিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছে বেশ কিছু ব্যবসায়ী। এবারের ঈদবাজারে এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা প্রথম ধরা পড়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারের ‘সেলিম পাঞ্জাবি’তে। চট্টগ্রামে পাঞ্জাবির জন্য বিখ্যাত ‘সেলিম পাঞ্জাবি’র প্রধান শোরুমে গত ১৫ মার্চ বাজার মনিটরিংয়ে যায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একটি টিম। অভিযানকালে সেখানে দেশি পাঞ্জাবির ওপর ভারতীয় ট্যাগ লাগিয়ে বিক্রির বিষয়টি তাদের নজরে আসে। এ সময় ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা ভারতীয় ট্যাগ লাগানো কিছু পাঞ্জাবির ক্রয় রসিদ দেখতে চাইলে কর্র্তৃপক্ষ তা দেখাতে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে ভারতীয় ট্যাগ লাগানো পাঞ্জাবিগুলো দেশি পাঞ্জাবি বলে মালিকপক্ষ স্বীকার করে। তাৎক্ষণিকভাবে ওই দোকানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা। একই বাজারে অবস্থিত ‘পরিস্থান’ নামক আরেকটি পোশাক বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানেও একই ধরনের জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই দোকানকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গত সোমবার নগরীর দেওয়ানবাজার এলাকার ‘অর্ণব’ নামে একটি কাপড়ের শোরুমে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানেও দেশি পোশাক বিদেশি বলে বিক্রি করা, উচ্চমূল্যে পোশাক বিক্রি কিন্তু যথাযথ ক্রয় ভাউচার দেখাতে না পারা, বিভিন্ন পণ্যের নিজেরাই প্রাইস-গান ব্যবহার করে ইচ্ছেমতো মূল্যের স্টিকার লাগিয়ে ক্রেতাদের ঠকানোর প্রমাণ পায়। ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে রবিবার নগরীর মিমি সুপার মার্কেটও দেশি পোশাককে বিদেশি বলে বিক্রি করা এবং উচ্চমূল্যে বিক্রির দায়ে একটি দোকানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক ফয়েজ আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঈদবাজারে ক্রেতাদের ভোগান্তি লাঘবে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। তিনি বলেন, যেসব দোকানে আমাদের অভিযানকালে বিদেশি ট্যাগ ও ইচ্ছেমাফিক মূল্য লাগিয়ে কাপড় বিক্রি করতে দেখা গেছে, তারা কেউই ক্রয় রসিদ দেখাতে পারেননি। একপর্যায়ে এগুলো যে বিদেশি কাপড় নয়, সেটাও তারা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, রমজান মাসেও এসব ব্যবসায়ী অসাধুতার চরম সীমা লঙ্ঘন করছেন। ক্রেতাদের কাছ থেকে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিতে তারা এ কাজ করছে।