রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দান

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:১১ এএম

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদগাহ ময়দান বাংলাদেশের দিনাজপুরে অবস্থিত। নাম ‘গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ ময়দান’। প্রায় ২২ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই ঈদগাহে একসঙ্গে সাত লাখের বেশি মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন। ১৯৪৭ সাল থেকে এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে স্থায়ী মিম্বার নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে।

ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ মাঠের নাম নিয়ে একাধিক মত প্রচলিত আছে। সেগুলোর মধ্যে গ্রহণযোগ্য মত হলো, সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের আমলে ৪০ জন সুফি এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে আসেন। তখন এক হিন্দু রাজা তাদের কাজে বাধা দেয়। ফলে হিন্দু রাজার সঙ্গে তাদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে সুফিদের একজন শহীদ হন। সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। কবর শব্দকে ফারসিতে বলা হয় গোর। ওই সময়কার মুসলিম শাসকের ভাষা ফারসি হওয়ায় মাঠটি পরিচিতি পায় ‘গোর-এ-শহীদ’ বা শহীদের কবর হিসেবে।

দেশভাগের পর ১৯৪৭ সাল থেকে দিনাজপুরের এই বিশাল মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতে থাকে। তবে দীর্ঘদিন এটি ছিল খোলা মাঠ। ২০১৫ সালে দিনাজপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম ঈদগাহটি উন্নয়নের উদ্যোগ নেন। সরকারের অর্থায়নে এখানে একটি স্থায়ী মিম্বার নির্মাণ করা হয়, যা ২০১৭ সালে সম্পন্ন হয়।

২০১৭ সালের ঈদুল ফিতরের জামাত থেকেই এটি দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ওই বছর এখানে প্রায় ছয় লাখের বেশি মুসল্লির সমাগম ঘটে। ঈদুল আজহাতেও এখানে বিপুলসংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ২০২২ সালে ঈদুল ফিতরের জামাতেও প্রায় ৬ লাখের বেশি মুসল্লি অংশ নেন। ২০২৪ সালের ঈদুল ফিতরের জামাতেও দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাতের রেকর্ড হয়। জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা শামসুল হক কাসেমী। গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ ময়দান মোগল স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত। এর মূল মেহরাবের উচ্চতা ৫৫ ফুট আর পুরো ঈদগাহে রয়েছে ৫২টি গম্বুজ। এ ছাড়া দুটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে, যেগুলোর উচ্চতা ৬০ ফুট। মূল প্রবেশদ্বারের প্রতিটির প্রস্থ ৪৭ ফুট, যেখানে ৩২টি খিলান রয়েছে। এগুলোর নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়েছে রড, সিমেন্ট, বালু ও সিরামিক টাইলস। প্রতিটি গম্বুজে বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে, যা সন্ধ্যার পর ঈদগাহকে আলোকিত করে তোলে। এর নকশায় মদিনার মসজিদে নববী, কুয়েত, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়।

গোর-এ-শহীদ ঈদগাহের পর দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ ময়দান কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া। শোলাকিয়ায় একসঙ্গে প্রায় ৩ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন, তবে আশপাশের রাস্তা ও ফসলহীন ক্ষেতে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ৪ লাখ পর্যন্ত পৌঁছে। শোলাকিয়া ঈদগাহের আয়তন ৭ একর, যেখানে গোর-এ-শহীদ ঈদগাহের আয়তন ২২ একর। আয়তনের দিক থেকে দিনাজপুরের এই ঈদগাহ তিনগুণ বড় এবং মুসল্লি ধারণক্ষমতায়ও এটি শীর্ষস্থান দখল করে আছে।

আশপাশের মুসল্লিদের পাশাপাশি এখানে নামাজ আদায় করেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লিরাও। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসে সবার সঙ্গে একত্রে নামাজ আদায় করতে পেরে নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন তারা। বৃহৎ এই জামাতে অংশ নেওয়ার সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করে। ঈদগাহে মুসল্লিদের জন্য স্থাপন করা হয় শৌচারগার, ওজুর ব্যবস্থা। বসানো হয় মেডিক্যাল টিম। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে নেওয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ শুধু একটি ঈদগাহ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের প্রতীক। স্থাপত্যশৈলী, বিশালতা এবং মুসল্লি সমাগমের দিক থেকে এটি দেশের শ্রেষ্ঠ ঈদগাহগুলোর মধ্যে অন্যতম। আধুনিক স্থাপত্যশৈলী ও সুপরিকল্পিত অবকাঠামোর কারণে এটি ঈদের জামাত আয়োজনের ক্ষেত্রে এক অনন্য নিদর্শন হয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত