বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

গুনাহমুক্ত জীবনযাপনে সহায়ক মৃত্যুচিন্তা

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৯ এএম

মৃত্যু অনিবার্য, অবধারিত। মৃত্যু থেকে বাঁচার কোনো সুযোগ নেই। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ (সুরা আলে ইমরান ১৮৫) মৃত্যুর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তি ঘটে। শুরু হয় অনন্তকালের পথে যাত্রা। আমরা একদিন এই পৃথিবীতে থাকব না, বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতেই শরীরে ধাক্কা লাগে। অবশ্য সবার সেই অনুভূতি হয় না। কেননা সবাই অতটা চিন্তাশীল নয় যে, মৃত্যুচিন্তা তাদের মাঝে কোনো পরিবর্তন আনবে। তবে সবার উচিত, মৃত্যুর বিষয়টি গভীরভাবে অনুভব ও উপলব্ধি করা। এতে অসংখ্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়। একজন মানুষ যখন চিন্তা করবে, সে এই পৃথিবীতে চিরস্থায়ী নয়, বরং একদিন তাকে মৃত্যুবরণ করতে, এরপর তার সারা জীবনের হিসাব দিতে হবে। তখন সে গুনাহ করতে ভয় পাবে।

নফসের নিয়ন্ত্রণ ও আত্মশুদ্ধি : দৈনন্দিন জীবনে আমরা যদি সর্বক্ষণ মৃত্যুকে স্মরণ করি, তবে আমাদের দৃষ্টি হবে আখেরাতমুখী। এতে গুনাহ থেকে বাঁচার শক্তি অর্জিত হবে এবং আমলের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। কারণ যে ব্যক্তি মৃত্যুর কথা স্মরণ করে, সে জানে তার সময় সীমিত। তাই সে সময় নষ্ট করবে না। গুনাহের কাজে নিজের সময় ব্যয় করবে না। বরং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমল করবে। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মৃত্যুর স্মরণ বেশি বেশি করো, এটি সমস্ত আনন্দকে নষ্ট করে দেয়।’ (জামে তিরমিজি ২৩০৭)

কাজ-কর্মে মৃত্যুর প্রতিধ্বনি : আমাদের কাজ-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবার পরিচালনা, কথা-বার্তায় সবখানে মৃত্যুর কথা স্মরণ রেখে চলা উচিত। তবেই আমরা অন্যায়, প্রতারণা, অসততা, হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে পারব। কেননা মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, চিরস্থায়ী জীবন আখেরাতে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘জেনে রাখো, দুনিয়ার জীবন তো কেবল খেলাধুলা, বিলাসিতা, পারস্পরিক গর্ব, ধন-সম্পদ ও সন্তানাদিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র।’ (সুরা হাদিদ ২০)

মৃত্যুচিন্তা আমাদের প্রস্তুত রাখে : প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমরা দুনিয়ার যাবতীয় ব্যস্ততায় ডুবে থাকি। কিন্তু এই শত ব্যস্ততার মাঝেও একজন মুমিন সর্বদা তার জীবনে রবের সন্তুষ্টি ও মৃত্যুর কথা স্মরণ করে। কারণ সে ব্যক্তি সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়। প্রতিটি কাজের আগে সেভাবে, এটা কি আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হবে? নাকি তার অসন্তুষ্টির? এভাবেই একজন মুমিন তার জীবনকে গুনাহমুক্ত ও অর্থবহ করে তোলে এবং কাজ-কর্মে আল্লাহভীতি নিয়ে আসে।

সাহাবিদের জীবন থেকে শিক্ষা : সাহাবায়ে কেরাম তাদের জীবন চলার পথে আল্লাহভীতিকে প্রাধান্য দিতেন। কোনো কাজের মাধ্যমে যেন গুনাহের পথে চলে গিয়ে জাহান্নামে যেতে না হয়, এই ব্যাপারে তারা সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করতেন। তারা ছিলেন মৃত্যুর স্মরণে অতিশয় গুরুত্বারোপকারী। যেমন হজরত ওমর (রা.) বলতেন, ‘হিসাব নেওয়ার পূর্বে নিজের হিসাব নাও এবং নিজেরা নিজেদের আমলের হিসাব করে প্রস্তুত হও।’ অতএব মৃত্যু কেবল জীবনের সমাপ্তি নয়। বরং আখেরাতের সূচনা। তাই মৃত্যুর প্রতিধ্বনি আমাদের মনে এমনভাবে গেঁথে রাখা উচিত, যেন আমরা প্রতিটি কাজ ও সিদ্ধান্তে আখেরাতের হিসাবকে সামনে রেখে কাজ করতে পারি।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত