মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

টাকা ছাড়া মেলে না সেবা

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৬ এএম

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস যেন ভোগান্তির অন্য নাম। বাড়তি টাকা দিলে স্বস্তিতে মেলে গ্রাহকসেবা। নামজারি, মিসকেসসহ বিভিন্ন সেবার জন্য বাড়তি টাকা দিলেই ২০-৩০ দিনের মধ্যেই মেলে সেবা। আর টাকা না পেলে বছরের পর বছর ঘুরেও পাওয়া যাচ্ছে না গ্রাহকসেবা।

সাটুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসে গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই ভূমি অফিসের গোলচত্বর ও অফিস আঙিনায় শত শত মানুষের জটলা। অপেক্ষা করছেন কখন কাদের শুনানির জন্য ডাক আসে। কিন্তু অভিযোগ আছে, সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমদ অফিসে এসে চা, নাশতা খাওয়ার নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রুমে বসে থাকেন। তার দপ্তরে যেতে হলে, গ্রাহকের এক-দুই ঘণ্টা বাইরে অপেক্ষা করতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে একটি শক্তিশালী দালালচক্র গড়ে উঠেছে। নামজারির ডিসিআর কাটতে সরকারি ফি লাগে মাত্র ১ হাজার ১০০ টাকা। কিন্তু দালালের মাধ্যমে কাজ করলে খরচ হয় ১০-১৫ হাজার টাকা। আবার কোনো ওয়ারিশ কিংবা রেকর্ডমূলে ঝামেলা থাকলে প্রতি শতাংশ জমির জন্য ১-২ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নেওয়া হচ্ছে।

গত বুধবার সাটুরিয়া ভূমি অফিসে আসা দরগ্রাম ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ১৫ বছর আগে একটি জমি কিনেছি। পরে আমার নামে খারিজ করে নিয়েছি। কিন্তু আমার খারিজের বিরুদ্ধে আরেকজন টাকা দিয়ে মিসকেস করেছে। তিন বছর ধরে শুনানিতে অংশ নিলেও আমার সমস্যা এখনো সমাধান হয়নি।’

ফুকুরহাটি ইউনিয়নের আব্দুস সামাদ সামু বলেন, ‘আমি যার কাছ থেকে জমি কিনেছি, আরএস রেকর্ডে তার নাম নেই। এ নিয়ে মানিকগঞ্জের জজ কোর্টে মামলা করি। এতে আমি রায় পাই। এর মধ্যে আমার কেনা জমি আরেকজনের নামে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এখন আমি ওই ভুয়া খারিজের নামে ১০ মাস আগে মিসকেস আবেদন করি। এখন আমার মিসকেস নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে।’

বালিয়াটি ইউনিয়নের গর্জনা গ্রামের ইমারত হোসেন বলেন, ‘৯ শতাংশের জায়গায় একজন খারিজ করে নিয়েছে ১২ শতাংশ। এখন আমি অনলাইনে নামজারির আবেদন করতে গেলে আবেদন নিচ্ছে না। জমির দলিল আছে, পর্চা আছে, কিন্তু আমি জমি খারিজের জন্য আবেদন করতে পারছি না।’

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সাটুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিস পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভূমি অফিসের যেকোনো সেবা নিতে গেলে হয়রানি করা হয়। তবে দালালের মাধ্যমে গেলে তা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই করে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথমে যেকোনো কম্পিউটার দোকান থেকে জমি খারিজের আবেদন করা হয়। সেটা দালাল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নিয়ে উপজেলায় নিয়ে আসেন। কিন্তু টাকা লেনদেন হয় গোপনে। টাকা পরিশোধ হয়ে গেলে আবেদন নম্বর লিখে রাখা হয়। সেটি সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমদের কাছে অফিসের স্টাফ সরবরাহ করলে তিনি খারিজের চূড়ান্ত অনুমোদন করে দেন। এমনভাবে এ অফিসের সব কাজ এখন দালালের মাধ্যমেই সম্পাদন করা হচ্ছে।

সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমদ বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে মিসকেসের রায় ধীরে ধীরে দিই। দ্রুত করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া নামজারির ক্ষেত্রে কোনো বাড়তি টাকা নেওয়া হয় না। কেউ নিলে অভিযোগ করলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত