বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ইরানের বন্দরে বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা

আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৮ এএম

ইরানের হরমোজগান প্রদেশের শাহিদ রাজাইয়ে বন্দরে বিস্ফোরণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আহতদের সংখ্যাও প্রাথমিক খবরের চেয়ে বেড়ে হয়েছে ৭০০ জন। গত শনিবারের এই বিস্ফোরণের সঠিক কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ওমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তেহরানের দ্রুত অগ্রসরমাণ পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তৃতীয় দফার আলোচনার মধ্যে এমন ঘটনায় দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। ইরান সরকারের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দরের কোনো এক গুদামে মজুদ রাখা রাসায়নিক থেকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, বিস্ফোরিত কনটেইনারগুলোয় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য আনা জ¦ালানি সংরক্ষিত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর সে কারণেই এ বিস্ফোরণের পেছনে ইসরায়েলের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ তাদের।

গতকাল রবিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রেস টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণটি এতটাই তীব্র ছিল যে এতে বন্দরের প্রশাসনিক ভবন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং অনেক যানবাহন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এর আগে বিস্ফোরণ ঘটনার কয়েকটি ফুটেজ, ছবি সোশ্যাল মিডিয়াসসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভাইরাল। ফুটেজগুলোয় দেখা গেছে, বিস্ফোরণের সময় লোকজন বন্দর থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন এবং অনেকেই রাস্তায় আহত অবস্থায় পড়ে আছেন। ভবন ও কয়েকটি দেয়াল ধসে পড়েছে। একটি ফুটেজে দেখা গেছে, কনটেইনার টার্মিনাল সাইটে দাউ দাউ করে আগুন জ¦লছে। বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ঘাটগুলো ওপর দিয়ে কালো ধোঁয়ার বিশাল মেঘ উড়ছে।

ইরানের এক স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শাহিদ রাজাইয়ে বন্দরের জেটি এলাকায় কয়েকটি কনটেইনারের সংরক্ষিত বিস্ফোরকই এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। তার সেই কথার সূত্র ধরেই এক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, বিস্ফোরিত কনটেইনারগুলোয় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য আনা জ¦ালানি সংরক্ষিত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এখানেই সন্দেহের তীর ইসরায়েলের দিকে মুখ ফেরাচ্ছে। কারণ এ ধরনের কাজ ইসরায়েল আগেও করেছে। 

অন্যান্য ক্ষেত্রে ইসরায়েল ‘মন্তব্য না করার নীতি’ পালন করলেও এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ইসরায়েল এই বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনার সময়কাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় সাত বছর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ইরানের সঙ্গে পূর্ববর্তী পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিলেন, তারপর প্রথমবারের মতো আবার বিশ্বনেতারা আলোচনার টেবিলে বসেছেন। ওমানে ২৬ এপ্রিল ওয়াশিংটন ও তেহরানের তৃতীয় দফার আলোচনা হয়, যেখানে উভয় পক্ষ ‘খুব ভালো অগ্রগতির’ কথা বলেছে। কিন্তু এ অবস্থানেই ইসরায়েলের উদ্বেগ প্রবলভাবে সামনে এসেছে।

ইসরায়েল মনে করে, যদি যুক্তরাষ্ট্র কোনো ধরনের সমঝোতায় পৌঁছায়, তবে সেটি ইসরায়েলের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। কারণ তাদের ধারণা, ইরান যদি পারমাণবিক শক্তি অর্জন করে এবং ইসরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকার না করে, তবে তা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগেই বলেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তিই গ্রহণযোগ্য নয়।

যদিও ইসরায়েল এই বিস্ফোরণের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছে, ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত