বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

দ্বন্দ্বের জেরে সরিয়ে নেওয়া হলো স্কুল!

আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫০ এএম

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় ধলেশ্বরী নদীর পূর্বপাড় থেকে পশ্চিমপাড়ে স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে দুদিন ধরে তালা ঝুলছে শ্রেণিকক্ষে। এতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন অভিভাবকরা। বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হলে দুপক্ষের মধ্যে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্টদের প্রতি।

গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে দুটি টিনশেডের প্রত্যেক ক্লাসরুমে ঝুলছে তালা। শিক্ষার্থীরা চট, মাদুর বিছিয়ে বারান্দায় ও খোলা মাঠের নিচে রোদে বসে আছে। আর অভিভাবকরা নানা উৎকণ্ঠায় বাইরে বসে আছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের টয়লেটেও তালা। ফলে শিক্ষার্থীরা পানি পান ও টয়লেটের কাজ করছে পাশের বাড়ি গিয়ে।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান বিদ্যালয়টি নদীভাঙনের কথা বলে, নদীর পশ্চিমপাড়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন অনেক আগে থেকেই। গত শুক্রবার বিদ্যালয়টি নদীর পশ্চিমে ছনকা বাজারের পাশে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে। অন্যদিকে আমাদের বর্তমান স্কুল তালা ঝুলিয়ে দেয়। এতে দুদিন ধরে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে সর্বস্তরের জনসাধারণের কথা চিন্তা করে ছনকা গ্রামে ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে চরাঞ্চলের শত শত দরিদ্র শিক্ষার্থী সুবিধা পেতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়টি ২০২২ এমপিওভুক্ত হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শাহজাহান এবং প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম মিলে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে বিদ্যালয়টি ধলেশ্বরী নদীর পূর্ব পাশ থেকে পশ্চিম পাশে নেওয়ার পাঁয়তারা করেন। বিদ্যালয়টি বর্তমান স্থানে থাকলে বরাইদ ইউয়িনের পাঁচটি ওয়ার্ডের মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। আর পশ্চিম পাশে নিলে মাত্র একটি ওয়ার্ডের আংশিক লোক সুবিধা পাবে।

বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলে, আমরা স্কুল নিয়ে রাজনীতি চাই না। আমরা ক্লাস করতে চাই। আমরা নদীর পূর্বপাড়ে বসবাস করে আসছি। আমরা কেন পশ্চিমপাড়ে যাব।

ছনকা গ্রামের রোখসানা বলেন, বিদ্যালয়টি আমাদের জমিতে গড়ে ওঠা। আমাদের ঘাম, রক্ত মিশে আছে। তারা বিদ্যালয়টি তালা মারল। আরেক স্থানে নিয়ে জোর করে ক্লাস করতে চাচ্ছে। সেটা তো রেজল্যুশন করা লাগবে। আমাদের চরাঞ্চল দেখিয়ে বিদ্যালয় অনুমোদন আনল। এমপিওভুক্ত হলো। আর অন্য স্থানে নিয়ে যাবে সেটা তো হয় না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ২৬০ জন। ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় হলেও এমপিওভুক্ত হয়েছে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে। সেই হিসাব অনুযায়ী ১১ জন শিক্ষক ও ৫ জন কর্মচারী আছেন। নিয়ম মেনেই বিদ্যালয়ের স্থানান্তরের কাজ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেন বলেন, বিদ্যালয় স্থানান্তরে তাদের কাছে মন্ত্রণালয়ের চিঠি আছে। কিন্তু তারা যেভাবে স্থানান্তর করেছেন, সেটা সুন্দর হয়নি। নদীর দুই পাড়ের অভিভাবকদের সঙ্গে সমাঝোতা মাধ্যমে যেতে হবে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সেটা করেননি। এ বিষয়ে সরেজমিন গিয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আমি লিখিতভাবে জানিয়েছি।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে সব শিক্ষক নতুন স্থানে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করেছেন। এ বিষয়ে আমি নিজে বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎ নিয়েছি। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী চাচ্ছে বর্তমান স্থানে নদীর পূর্বপাড়েই বিদ্যালয় থাকুক। প্রধান শিক্ষককে আমি আইন মেনে কাজ করতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি আইন অমান্য করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত